এই বিশ্বকাপ থেকে কী পেয়েছে বাংলাদেশ? রেকর্ড বলছে, তিন ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। সেমিফাইনালের স্বপ্ন ভেসে গেছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে কাল শেষ ম্যাচটাতেও শুধু আনুষ্ঠানিকতার আবরণ। শুধু সংখ্যা বিচার করলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন পুরোপুরি ব্যর্থ!
আসলেই কী তাই? সংখ্যার হিসেব একপাশে সরিয়ে মাশরাফির দৃষ্টিতে দেখুন, ছোট ছোট অনেক প্রাপ্তি দেখতে পাবেন। অনেক আশার গানও ভেসে আসবে কানে। এই বিশ্বকাপ সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ানে হয়তো বাংলাদেশের জন্য বেশি কিছু রাখেনি। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে আরও ভালো কিছু আসছে, এমন বিশ্বাসের রেণুও কী ছড়িয়ে দেয়নি?
অন্তত সুপার টেনের শেষ দুটি ম্যাচ তাই বলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ব্যাটে-বলে আসলেই ভালো খেলেনি বাংলাদেশ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে? অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে হারলেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে গেছে। আর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা তো এরই মধ্যে বাংলাদেশের ক্রিকেট পুরাণে অনেক বড় একটা দীর্ঘশ্বাসের নাম। পুরো ম্যাচে ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিংয়ে ভারতের মতো টুর্নামেন্ট পূর্ব ফেবারিটদের সঙ্গে দাপট দেখিয়েছেন মাশরাফি-সাকিবরা। শেষ ৩ বলে ২ রানের সহজ সমীকরণটাতে চাপের মুখে মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ ওভাবে ভেঙে না পড়লে তো এখনো সেমিফাইনালের স্বপ্ন সজীব হয়ে থাকত বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে।
সেমির স্বপ্ন মরে গেছে, তবে আরও অনেক স্বপ্নের জন্মও দিয়ে গেছে। যে স্বপ্ন হতাশা ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর, যে স্বপ্ন অন্ধকার কাটিয়ে আগামী দিনের সুন্দর সকালের। মাশরাফিও এই একই স্বপ্নে বুঁদ। নিউজিল্যান্ড ম্যাচকে সামনে রেখে আজ কলকাতায় সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। কিন্তু সেটি যেন হয়ে গেল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনেরই আরেকটি পর্ব, ঘুরেফিরে সেই ম্যাচেরই প্রসঙ্গ। ১ রানের যে অতলান্ত আক্ষেপের ব্যাখ্যা এখনো খুঁজে পাচ্ছেন না মাশরাফি, ‘সত্যি বলতে শেষ ম্যাচটা হারার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। এক রানে হারলে তো যেকোনো জায়গাতেই ত্রুটি খুঁজে বের করা যায়। এমন পরিস্থিতিতে না খেলার কিছুটা অনভিজ্ঞতা রয়েছে। হয়তো এ রকম পরিস্থিতিতে সব সময় আমরা অভ্যস্ত হতে পারি না। এটাও একটা কারণ হতে পারে।’
তবে কারণ যা-ই হোক, সব ভুলে আশার গানও শোনালেন মাশরাফি, ‘আমার বিশ্বাস এখান থেকে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারব। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে ভুলগুলো করেছি, সেগুলো কতটুকু শোধরাতে পেরেছি। এখান থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারলে আমার বিশ্বাস সামনে এমন পরিস্থিতিতে আমরা ম্যাচ বের করে নিতে পারব।’
মাশরাফিদের ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ কাজটা কাল নিউজিল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে শুরু হচ্ছে। আপাত ‘গুরুত্বহীন’ এই ম্যাচেও তাই ভালো কিছুর প্রতিশ্রুতি দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘পাকিস্তান ম্যাচটা বাদ দিলে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সঙ্গে ভালো ক্রিকেট খেলেছি। ভারতের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার রানরেট প্রয়োজন ছিল, এ জন্য নিজেদের অনেক পুশ করেছিল ওরা। তারপরও ওই অবস্থা থেকে আমরা খুব একটা খারাপ ক্রিকেট খেলিনি। শেষ দুই ম্যাচ থেকে অনেক ইতিবাচক জিনিস আমরা অর্জন করেছি। এই সব যদি আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও প্রদর্শন করতে পারি, তাহলে ভালো সম্ভাবনা আছে আমাদের।’