পেস বোলিং অলরাউন্ডার—ক্রিকেটের এ প্রজাতি বাংলাদেশ খুঁজে বেড়িয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন সে অভাব পূর্ণ করবেন, একসময় আশা করা হয়েছিল তেমন। তবে তাঁর চোট ঘুরেফিরে এসেছে বারবারই। চোটকে মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করার নেই, এ পেস বোলিং অলরাউন্ডারের কণ্ঠে এমন সুরই শোনা গেল আজ।
গত বছরের অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে পিঠের চোটের কারণে সর্বশেষ ছিটকে গিয়েছিলেন সাইফউদ্দিন। এরপর গত ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ দিয়ে মাঠে ফিরেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের সীমিত ওভারের সিরিজেও ডাক পেয়েছেন। টেস্ট দলের সদস্যরা চলে গেছেন আগেই, সীমিত ওভারের দলে থাকা ক্রিকেটাররা যাবেন আরও পরে। আপাতত মিরপুরের শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামেই নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা।
এমনিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেক হলেও এখন পর্যন্ত সাইফউদ্দিন খেলেছেন ৫৮টি ম্যাচ। এ সময়ে বাংলাদেশ সীমিত ওভারে খেলেছে ১৩০টি ম্যাচ। ফলে অর্ধেকের বেশি ম্যাচই খেলা হয়নি সাইফউদ্দিনের। এর পেছনে বড় একটা প্রভাব আছে চোটেরও।
অবশ্য পেস বোলার হিসেবে চোট থেকে রেহাই নেই, সাইফউদ্দিন মনে করিয়ে দিলেন সেটি। আজ মিরপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এখন পর্যন্ত নিজের ক্যারিয়ারকে বর্ণনা করলেন এভাবে, ‘প্রত্যেক মানুষের জীবনেই বিরতি থাকে। ঢাকায় যদি গাড়ি চালান, একই গতিতে চালাতে পারবেন না। ব্রেক দিতেই হবে। যারা অনেক ভাগ্যবান, তারা চোট ছাড়া অনেক দিন খেলে যেতে পারে। (তবে) বেশির ভাগ পেস বোলারেরই এমন (চোট) থাকে। জানি না আবার কয় দিন খেলতে পারব। পারফরম্যান্স ও চোটের ব্যাপার আছে। চেষ্টা করছি, কী হবে তা কারও হাতে নেই।’
প্রত্যেক মানুষের জীবনেই বিরতি থাকে। ঢাকায় যদি গাড়ি চালান, একই গতিতে চালাতে পারবেন না। ব্রেক দিতেই হবে। যারা অনেক ভাগ্যবান, তারা চোট ছাড়া অনেক দিন খেলে যেতে পারে।মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন
গত প্রিমিয়ার লিগের আগে তাঁকে চিকিৎসার জন্য ইংল্যান্ড পাঠিয়েছিল বিসিবি। সাইফউদ্দিন বলছেন, ইংল্যান্ড-যাত্রা কীভাবে সহায়তা করেছে, ‘এত দিন কিছুটা “কনফিউজড” ছিলাম যে আমার ভেতর কিছু আছে কি না। ইংল্যান্ডে গেলাম বিসিবির অধীনে, স্ক্যান করানোর জন্য। তো স্ক্যানে দেখা যায় আমার কিছু হয়নি। তাই কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বোলিং করছি এখন।’
চোট এড়িয়ে কত দিন খেলতে পারবেন, সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সাইফউদ্দিন নিজেও। তবে সামনের দিকেই তাকাচ্ছেন, ‘হয়তো আর পাঁচজন পেস বোলারের চেয়ে আমি কিছুটা দুর্ভাগা। কিন্তু এটা জীবনেরই অংশ। এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে। কত দিন সুস্থ থাকতে পারব জানি না। চেষ্টা করছি যত দিন খেলতে পারি…সামনে বিশ্বকাপ আছে। ২০২৩ বিশ্বকাপ আছে, তো পারফরম্যান্স (ধরে রাখার) পাশাপাশি সুস্থ থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমার জন্য।’
সাইফউদ্দিন সর্বশেষ যখন জাতীয় দলে খেলেছিলেন, এরপর কোচিং স্টাফেও পরিবর্তন এসেছে। নতুন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কাজ করা হয়নি তাঁর। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েই তাঁর অধীনে প্রথম কাজ করবেন, ‘শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টটা চট্টগ্রামে খেলা হয়েছিল, ওখানে অনুশীলনে গিয়েছিলাম আমি। ওখানেই কিছুটা হাই-হ্যালো আলাপ হয়েছিল। কথা হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে যদি থাকি…ওনার সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছি।’
সাইফউদ্দিনের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের অভিজ্ঞতাও প্রথম হতে যাচ্ছে এবার। তবে নিজের ‘হোমওয়ার্ক’ ঠিকই করে রেখেছেন বলেই জানালেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২১০৫ রান ও ৭২টি উইকেটের মালিক, ‘ক্রিকেট খেলুড়ে সব কটি দেশে আমি গিয়েছি, কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজে এবারই আমার প্রথম। হয়তোবা ওই কন্ডিশন বা উইকেট আমার জানা নেই। তারপরও যেহেতু ইউটিউবের যুগ, বিভিন্ন ম্যাচগুলোর হাইলাইটস দেখছি আসলে কত স্কোর হতে পারে। যেহেতু আমাদের আগে টি-টোয়েন্টি, ফলে যেসব টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ওরা খেলেছে, সেগুলো আমি দেখছি। যতটা ধারণা নেওয়া যায় ম্যাচগুলো দেখে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর সামনে রেখে স্কিল অনুশীলন এখনো শুরু করেননি। জিম, পুনর্বাসনের মধ্যেই আছেন। গত এপ্রিলের শেষ দিকে প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছিলেন, তবে সেটি ছিল ৫০ ওভারের। ফলে বিশ্বকাপের পর থেকে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে খেলা হয়নি তাঁর। সে ঘাটতি পোষাতে এর মধ্যে রাজশাহী গিয়ে একটা ম্যাচ খেলে এসেছেন। সাইফউদ্দিন অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাবেন খোলা মন নিয়েই, জানালেন এমন, ‘তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। সুযোগ পেলে ভালো করার চেষ্টা করব। কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করিনি। দলের জয়ে ১০ রানও গুরুত্বপূর্ণ হলে সেটা আমার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দলের জন্য উইকেট কাজে লাগলে, এটাই আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
আগামী ২ জুলাই শুরু হবে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে ১০ জুলাই।