প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া যতটা হতাশা ছড়িয়েছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসটা ২৬৫ রানে আটকে দিতে পেরে ঠিক ততটাই যেন আশাবাদী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ দল। এমনকি গতকাল শুক্রবার শেষ বেলায় দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাটিং করতে নেমে ৩৫ রানের মধ্যে দুই উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও সে আশাটা জীবন্ত। দিন শেষে অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে পেসার খালেদ আহমেদ শোনাচ্ছিলেন সে আশার কথাই।
দুই ইনিংস মিলিয়েই বাংলাদেশ এখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে ১১২ রানে পিছিয়ে। কাল ২ উইকেটে ৫০ রান নিয়ে দিন শেষ করা বাংলাদেশ দলের চিন্তায় এই টেস্টের ভবিষ্যতের ছবিটা কেমন? খালেদ যেন এমন প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিলেন। একটু নড়েচড়ে তাঁর উত্তর, ‘আমরা তো খেলব জেতার জন্যই। চেষ্টা থাকবে ব্যাটসম্যানরা যেন স্কোরবোর্ডে যতটা সম্ভব রান আনতে পারে। যেন খেলাটা পাঁচ দিনে গিয়ে শেষ হয়, এটাই লক্ষ্য।’
কাজটা কঠিন, তবে ক্রিকেটের অভিধানে ‘হবে না’ বলে কোনো কথা নেই। নিজেদের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও অল্প রানে আটকে বাংলাদেশের বোলাররা সেটাই দেখিয়েছেন। ওপেনার তামিম ইকবাল এবং মেহেদী হাসান মিরাজকে হারিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও নড়বড়ে শুরু, তবু খালেদ আস্থা হারাচ্ছেন না ব্যাটসম্যানদের ওপর থেকে, ‘আমাদের যে ব্যাটসম্যানরা আছে ওরা অনেক ভালো। জয় (মাহমুদুল)–শান্ত (নাজমুল) যদি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মুশফিক ভাই–লিটন যেরকম করেছিল সেরকম বড় জুটি করে...। কাল প্রথম দুই ঘন্টা খেলতে পারলে ওরা সারাদিনই ব্যাট করতে পারবে।’
খালেদ বারবারই কথাটা বললেন—অ্যান্টিগা টেস্টে জয়েরই লক্ষ্য তাদের। সেজন্য ব্যাটসম্যানদের কাছে যেমন তিনি দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো কিছু চান, তেমনি ভুলে যাচ্ছেন না নিজেদের দায়িত্বটাও, ‘আমাদের লক্ষ্য জেতার। বাকিটা ওদের (ব্যাটসম্যানদের) হাতে। ওরা ভালো রান এনে দিলে ইনশাল্লাহ আমরা বোলিং দিয়ে জেতার চেষ্টা করব।’
টেস্টের প্রথম দিনের উইকেট আর দ্বিতীয় দিনের উইকেটের আচরণ এক রকম নয়। প্রথম দিনে উইকেটে যে ময়েশ্চার ছিল, স্বাভাবিকভাবেই আজ সেটি ছিল না। বোলারদের জন্য সাহায্যটা তাই একটু কমই আছে এখন উইকেটে। তারপরও যে বোলাররা সফল, সেটির পেছনে প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে পারার গুরুত্বই বেশি দেখছেন খালেদ, ‘সাকিব ভাই বলেছিলেন উইকেট হয়তো শুকাবে, ময়েশ্চার থাকবে না। আমরা যেন আমাদের প্রক্রিয়া ঠিক রেখে বোলিং করি। আমরাও সেভাবেই বোলিং করার চেষ্টা করেছি।’
বোলারদের সফল বলার মূল কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান তাদের যে লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিলেন, সে লক্ষ্যের কাছাকাছি অন্তত তারা থাকতে পেরেছেন, ‘উনি (সাকিব) বলেছিলেন আড়াইশর কমে ওদের অলআউট করতে হবে। আমরা চেষ্টা করেছি, তবু হয়তো ১০–২০ রান বেশি হয়ে গেছে।’ এখন বাকি কাজটা ব্যাটসম্যানদের এবং তাদের সেটি উচিত বলেই খালেদ মনে করেন, ‘উইকেট এখনো ভালো, বোলারদের জন্য অতটা সাহায্য নেই। আমাদের ব্যাটসম্যানরা ইনশাল্লাহ ভালো খেলবে কাল।’
প্রশ্ন হলো, খালেদ ব্যটসম্যানদের প্রতি যে আস্থাটা রাখছেন, সেই আস্থা ব্যাটসম্যানদের নিজেদের ওপর নিজেদের আছে তো? না থাকলে খালেদের সূত্রটাই মেনে দেখতে পারেন তারা। প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশ এই টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, এমন বিশ্বাস ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি কিন্তু বলেছেন, ‘বিশ্বাস অবশ্যই ছিল, বিশ্বাস ছাড়া আবার ক্রিকেট খেলা হয় নাকি! বোলারদের বিশ্বাস ছিল আমরা পারব। যেহেতু ওরা পেরেছে আমরাও চাইলে পারব।’
বিশ্বাস অবশ্যই ছিল, বিশ্বাস ছাড়া আবার ক্রিকেট খেলা হয় নাকি! বোলারদের বিশ্বাস ছিল আমরা পারব। যেহেতু ওরা পেরেছে আমরাও চাইলে পারব।খালেদ আহমেদ
মিরাজের ৪ উইকেটের সঙ্গে বাঁহাতি স্পিনে সাকিব নিয়েছেন ১ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাকি ৫ উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তিন পেসার খালেদ, ইবাদত ও মোস্তাফিজ। খালেদের ২ উইকেটের মধ্যে একটি আবার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, ব্যক্তিগত ৯৪ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্রেগ ব্রাফেটকে ফেরানো।
সেটি এমনই যে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হোম সিরিজে নিজেকে খুঁজে ফেরা খালেদ যেন এবার নিজেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দই পাচ্ছেন, ‘আগের দুটি ম্যাচে আমি ভালো করতে পারিনি। এই ম্যাচের আগে ভেবেছি, যদি সুযোগ পাই যেন দক্ষিণ আফ্রিকায় যেরকম নিজেকে মেলে ধরেছিলাম, এখানেও সেরকম মেলে ধরতে পারি। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।’
খালেদ এখন আছেন আরো ভালো কিছুর অপেক্ষায়। অ্যান্টিগা টেস্ট যাবে পঞ্চম দিনে, জিতবে বাংলাদেশ—এই লক্ষ্য পূরণের অপেক্ষা।