বাংলাদেশের টেস্ট ও ওয়ানডে দলের অবস্থান বিপরীতমুখী
বাংলাদেশের টেস্ট ও ওয়ানডে দলের অবস্থান বিপরীতমুখী

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও বিশ্বকাপ সুপার লিগ: দুই মেরুতে বাংলাদেশ

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর বিশ্বকাপ সুপার লিগে শীর্ষস্থানটা আরেকটু ‘পোক্ত’ করেছিল বাংলাদেশ। দুইয়ে থাকা ইংল্যান্ডের সঙ্গে তাদের ব্যবধান দাঁড়িয়েছিল ২৫-এ। প্রসঙ্গ যখন আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ড সেখানেও আছে পাশাপাশিই। তবে ‘অবস্থান’ বদলে দুই দলই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তলানিতে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর এখন আটে আছে বাংলাদেশ, ১৬.৬৬ শতাংশ পয়েন্ট তাদের। ১২.৫০ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে সবার নিচে ইংল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগেও আটেই ছিল বাংলাদেশ। তবে তখন তাদের পয়েন্ট ছিল ২৫ শতাংশ।

ওয়ানডে সুপার লিগের ওপর নির্ভর করছে আগামী বছর ভারতে হতে যাওয়া বিশ্বকাপে সরাসরি খেলা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভারতসহ সুপার লিগের প্রথম আটটি দল সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপে, পরের দুটি দলকে পেরিয়ে আসতে হবে বাছাইপর্ব। শুরুতে ‘কাট-অফ’ সময় ছিল ৩০ মার্চ। বাংলাদেশের আয়ারল্যান্ড সফর পিছিয়ে যাওয়ার পর সেটিও পিছিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মে মাস পর্যন্ত। পরের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সরাসরি খেলা অবশ্য নিশ্চিতই হয়ে গেছে বলা যায়।

ওয়ানডে সুপার লিগে জ্বলজ্বল করলেও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রেও বাংলাদেশের চিত্রটা দুর্দশারই। গতবার কোনো ম্যাচ না জিতেই চ্যাম্পিয়নশিপ শেষ করেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের একটি ড্র করে প্রাপ্তি ছিল ২০ পয়েন্ট, ৪ দশমিক ৮ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ ছিল পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে।

এবারের চক্র বাংলাদেশ শুরু করেছিল গত বছরের শেষ দিকে দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২টি ম্যাচসহ তারা খেলেছে ৬টি ম্যাচ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচেই শুধু পয়েন্ট পেয়েছে তারা। বাকি ৫টি ম্যাচই হেরেছে মুমিনুল হকের দল।

এই চক্রে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে আছে অস্ট্রেলিয়া। এরপরই দক্ষিণ আফ্রিকা, যারা পেয়েছে ৭১.৪২ শতাংশ পয়েন্ট। গতবারের চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড ৩৮.৮৮ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে, ৫৮.৩৩ শতাংশ পয়েন্ট নিয়ে তিনে আছে গতবারের রানার্স-আপ ভারত।

করোনাভাইরাস মহামারির আগে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এক চক্রে প্রতিটি দলের ছয়টি সিরিজ ছিল—তিনটি দেশের মাটিতে, তিনটি বাইরে। তবে করোনাভাইরাসের সময়ে বেশ কিছু সিরিজ স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর নতুন পয়েন্ট পদ্ধতি চালু করে আইসিসি।

একটি ম্যাচ থেকে সর্বোচ্চ যত পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব, সে পরিমাণের শতকরা কত ভাগ পেয়েছে দলগুলো, সে অনুযায়ী নির্ধারিত হয়েছিল টেবিলে তাদের অবস্থান। ফলে মোট পয়েন্টসংখ্যায় নিউজিল্যান্ড (৪২০) ইংল্যান্ডের (৪৪২) চেয়ে পিছিয়ে থাকার পরও ৭০ শতাংশ (ইংল্যান্ডের ছিল ৬১.৪ শতাংশ) পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে এগিয়ে ছিল তারা। শেষ পর্যন্ত ভারতকে সাউদাম্পটনের ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কেইন উইলিয়ামসনের দল।

এ চক্রে এখন পর্যন্ত একটি টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ

আইসিসি অবশ্য এ চক্রে সে পদ্ধতিতেও খানিকটা পরিবর্তন এনেছে। আগে সিরিজে ম্যাচের সংখ্যা অনুযায়ী ভাগ করে দেওয়া হতো মোট ১২০ পয়েন্ট। অর্থাৎ ৫ ম্যাচের সিরিজের প্রতিটি ম্যাচে থাকত ২৪ পয়েন্ট, ৪ ম্যাচের সিরিজে ৩০, ৩ ম্যাচের সিরিজে ৪০, ২ ম্যাচের ক্ষেত্রে ৬০। জয়ের জন্য মিলত পুরো পয়েন্ট, টাই হলে অর্ধেক, ড্রয়ের ক্ষেত্রে এক-তৃতীয়াংশ।

নতুন নিয়মে সিরিজের ম্যাচসংখ্যা উপেক্ষা করে প্রতিটি ম্যাচেই রাখা হয়েছে ১২ পয়েন্ট করে। এই ১২ পয়েন্টের শতকরা কত অংশ পেল কোনো দল, সে অনুযায়ী নির্ধারিত হয় টেবিলে তাদের অবস্থান। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি জয়ে ১০০ শতাংশ পয়েন্ট পায় দলগুলো, টাইয়ের জন্য ৫০ শতাংশ, ড্রয়ের জন্য ৩৩.৩৩ শতাংশ। চক্র শেষে শতকরা পয়েন্টে শীর্ষে থাকা দুটি দল খেলবে ফাইনাল।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রে বাংলাদেশের পরবর্তী সিরিজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম ম্যাচটি শুরু হবে আগামী ১৫ মে, চট্টগ্রামে। ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্ট শুরু ২৩ মে। আগের ‘ভবিষ্যৎ সফরসূচি’ (এফটিপি) অনুযায়ী এ বছর বাংলাদেশের পরবর্তী সিরিজ ভারতের বিপক্ষে। আগামী নভেম্বরে বাংলাদেশে। আগামী বছর খেলা হওয়ার কথা নতুন ‘ভবিষ্যৎ সফরসূচি’ অনুযায়ী। আইসিসির সর্বশেষ বোর্ড সভায় এ নিয়ে আলোচনা হলেও এখনো তা ঘোষণা করা হয়নি।