বরিশালের কাছে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হারল খুলনা
বরিশালের কাছে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ হারল খুলনা

জ্বলে উঠতে দেরি করে সাকিবদের কাছে হার মুশফিকদের

এক, দুই, তিন, চার—ক্যাচটা নিতে গিয়ে যেন গুনতে শেখালেন বদলি ফিল্ডার জেকব লিনটট। ডোয়াইন ব্রাভোর শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২১ রান। দ্বিতীয় বলে চার মারার পর প্রসন্ন আবার তুলে মারতে গিয়ে লিনটটের চারবারের চেষ্টায় নেওয়া ক্যাচে পরিণত হলেন, শুধু খাতা-কলমে লড়াইয়ে টিকে থাকা খুলনা টাইগার্স আনুষ্ঠানিকভাবে ছিটকে গেল যেন সেখানেই।

ব্যবধানটা বলবে ৬ রান, তবে ফরচুন বরিশালের কাছে খুলনা ম্যাচটা আদতে হেরেছে আরও আগে। ১৪৫ রান তাড়ায় শুরু থেকেই খোলসের ভেতর ছিলেন খুলনা ব্যাটসম্যানরা, শেষে একটু নড়েচড়ে বসলেও দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে। এক ইয়াসির আলী ৩৪ বলে ৫৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন, তবে তাঁকে ঠিকঠাক সঙ্গ দিতে পারেননি ২২ বলে ৩৩ রান করা মুশফিকুর রহিম।

সেকুগু প্রসন্নর উইকেটের পর ব্রাভোদের উল্লাস

এক দিন বিরতির আগেই মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। ফরচুন বরিশাল ও খুলনা টাইগার্সের ফিরতি লড়াইয়ে অবশ্য বদলাল না চিত্রটা। বলতে গেলে চিত্রনাট্য থাকল একই—শেষের একটু ঝলক বাদ দিলে বরিশালের মোটামুটি একটা স্কোর তাড়া করতে নেমে গলদঘর্ম অবস্থা হলো খুলনার। মুশফিকের দল মূলত আটকে গেছে মুজিব উর রহমান ও সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে। দুজনের ৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে খুলনা তুলতে পেরেছে মাত্র ২৩ রান। ৫ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে বরিশাল এখন টেবিলের তিন নম্বরে, অন্যদিকে খুলনা পাঁচে আছে ৫ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে।

টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে পথ হারিয়েছিল বরিশালও। পাওয়ারপ্লেতে ২৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর সাকিব ও নাজমুল চতুর্থ উইকেটে ৫৯ বলে ৭৯ রানের জুটিতে ভালো একটা ভিতই এনে দিয়েছিলেন। তবে পরের ব্যাটসম্যানরা সুবিধা করতে পারেননি মোটেও। ৪২ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ৭ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় বরিশাল।

গেইল ফিরেছিলেন দ্রুতই

ক্রিস গেইলের সঙ্গে বরিশাল আজ ইনিংস উদ্বোধন করতে পাঠায় ডোয়াইন ব্রাভোকে। ৫১৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এ নিয়ে মাত্র ষষ্ঠবার ইনিংস উদ্বোধন করতে এসেছিলেন ব্রাভো। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে খালেদ আহমেদকে পরপর দুই বলে দুই চারের পরই ফিরেছেন অবশ্য উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। খালেদের বলেই বোল্ড হয়েছেন ৯ বলে ৪ রান করা গেইলও। সাকিবের সঙ্গে ভুল–বোঝাবুঝিতে এরপর তৌহিদ হৃদয়ের রানআউটে বিপদ আরও বাড়ে বরিশালের।

পাওয়ারপ্লের পরের ২ ওভারে নাজমুল ও সাকিবের ২ ছয়ে শুরু হয় বরিশালের পালটা আক্রমণ। অবশ্য সাকিবের ছয়টা হতে পারত ক্যাচ, বাউন্ডারির বেশ ভেতরে থাকা সিকান্দার রাজা দারুণ একটা লাফ দিয়েও নিতে পারেননি। সে সময় ৯ রানে ব্যাটিং করছিলেন সাকিব। পরে নাজমুলও জীবন পেয়েছেন প্রায় একইভাবে, তবে মেহেদী হাসানের কাছে গিয়েছিল সহজতম ক্যাচ। নাজমুলের জীবন অবশ্য ইনিংসের পরের দিকে, ব্যক্তিগত ৩৬ রানে।

২৭ বলে ৪১ রান করেছেন সাকিব

অবশ্য নাজমুল যে ওভারে জীবন পেয়েছেন, সাকিব ফিরেছেন সে ওভারেই। কামরুল ইসলামকে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেছেন ২৭ বলে ৪১ রান। ইনিংসে বরিশালের দ্বিতীয়বার পথ হারানোর শুরুটাও সেখানে। এক ওভার পর থিসারা পেরেরার বলে সাকিবের মতো করেই ক্যাচ দেন নাজমুলও—৪০ বলে ৪৫ রান করে। এরপর নুরুল হাসান, জিয়াউর রহমান, ইরফান শুক্কুররা ঝড় তুলতে পারেননি, ব্রাভোর অভাবটাও এ পর্যায়ে টের পেয়েছে বরিশাল। শেষ দিকে ১টি করে চার–ছয়ে ৬ বলে ১২ রানের ক্যামিও খেলেছেন মুজিব উর রহমান, তবে ফরহাদ রেজার বলে থামতে হয়েছে তাঁকে।

রান তাড়ায় সৌম্য সরকার ও আন্দ্রে ফ্লেচারের উদ্বোধনী জুটি খুলনাকে ঝোড়ো শুরু এনে দেওয়া দূরের কথা, রীতিমতো ভুগেছে। টি-টোয়েন্টিতে তিন হাজার রান পূর্ণ করা সৌম্য সাকিবকে টেনে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেছেন ২২ বলে ১৩ রান। বিপিএলে এখন পর্যন্ত নিজেকে হারিয়েই খুঁজছেন তিনি। এরপর রনি তালুকদারকেও বোল্ড করেছেন সাকিব।

অর্ধশতক পেয়েছেন ইয়াসির, তবে শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি সেটি

পাওয়ারপ্লেতে উইকেট না হারালেও ২২ রানের বেশি তুলতে পারেনি খুলনা। নিজের প্রথম ওভারে এসে জোড়া আঘাত করেছেন ডোয়াইন ব্রাভো—২৩ বলে ১২ রান করা আন্দ্রে ফ্লেচারের পর ফিরিয়েছেন থিসারা পেরেরাকেও। প্রথম ১০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৫ রান তোলে খুলনা।

সে চাপ থেকে বের হয়ে পুনর্গঠনের কাজটা করেছেন ইয়াসির, মুশফিককে পাশে রেখে। তবে গিয়ার বদলানোর কাজটা ঠিকঠাকমতো করা হয়নি তাঁদের। দুজনের জুটিতে উঠেছে ৫০ বলে ৭৯ রান। ১৮তম ওভারে মেহেদী হাসান রানার ওপর চড়াও হয়েছিলেন মুশফিক, তবে ততক্ষণে আদতে দেরি হয়ে গেছে। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফিরেছেন মুশফিক, এর আগেই শেষ ২ ওভারে খুলনার প্রয়োজনীয় রানরেট ১৮ ছুঁয়ে ফেলেছে।

ইয়াসির এরপর পেয়েছেন অর্ধশতক, টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে যেটি অষ্টম। তবে ঘরের মাঠে শেষ পর্যন্ত নায়ক হয়ে ওঠা হয়নি তাঁর, যেটি আরেকবার হয়েছেন সাকিবই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ফরচুন বরিশাল: ১৮.৫ ওভারে ১৪৫ (ব্রাভো ৯, গেইল ৪, হৃদয় ৫, সাকিব ৪১, শান্ত ৪৫, নুরুল ১০, জিয়াউর ৮, ইরফান ৬, উজিব ১২, মেহেদী রানা ০, শফিকুল ০*; মেহেদী হাসান ০/১৩, খালেদ ৩/৪১, কামরুল ২/২৫, পেরেরা ১/৩২, প্রসন্ন ০/১১, ইয়াসির ০/৮, ফরহাদ ২/১৪)

খুলনা টাইগার্স: ২০ ওভারে ১৩৯/৬ (ফ্লেচার ১২, সৌম্য ১৩, রনি ৬, মুশফিক ৩৩, পেরেরা ৪, ইয়াসির ৫৭, প্রসন্ন ৬, মেহেদী ৬; মুজিব ০/১৩, শফিকুল ১/৩৯, সাকিব ২/১০, ব্রাভো ৩/৪০, মেহেদী রানা ০/৩৬)

ফল: বরিশাল ৬ রানে জয়ী