২৭ বছর বয়সে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু, ৩৪ বছর বয়সে এসে আন্তর্জাতিক অভিষেক। মাঝে এখানে-সেখানে কত রকমের কাজ—কোচিং করানো, কলেজে পড়ানো। এজবাস্টনে রিচার্ড গ্লিসনের অভিষেকটা হলো স্বপ্নের মতোই। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, ঋষভ পন্ত—এ উইকেটগুলো যেকোনো বোলারের কাছেই দারুণ মূল্যবান। আর সেগুলো যদি পেয়ে যান অভিষেকে, সেটিও ৪ বলের মধ্যে! তবে সেই গ্লিসন যখন দশ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামলেন, ইংল্যান্ডের তখন জয়ের জন্য প্রয়োজন ২৭ বলে ৭৬ রান। এ ম্যাচের ফল কী হতে পারে, তাতেই সহজে অনুমান করে নেওয়া যায় সেটি।
এজবাস্টনে গ্লিসনের এমন স্বপ্নালু অভিষেকের দিনে আরেকবার ইংল্যান্ডকে দুমড়েমুচড়ে দিল ভারত। সাউদাম্পটনে ৫০ রানের পর এজবাস্টনে ইংল্যান্ডকে ভারত হারাল ৪৯ রানে। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জয় নিশ্চিত হলো রোহিত শর্মার দলের। আর টানা দুই হারে শুরু হলো পূর্ণমেয়াদে দায়িত্ব পাওয়া জস বাটলারের অধিনায়কত্ব। ২০১৮ সালের পর এই প্রথম দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারল ইংল্যান্ড।
বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা, ঋষভ পন্ত, যশপ্রীত বুমরা—টেস্ট ম্যাচের সদস্যরা ফেরায় চারটি পরিবর্তন আনে ভারত। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে রোহিত শর্মার সঙ্গে ওপেনিংয়ে আসেন ঋষভ পন্ত, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো। দুজন মিলে শুরুটা করেন দারুণ। ৪.৪ ওভারে ৪৯ রান তোলে ভারত, এরপর পড়ে গ্লিসনের তোপে। রোহিত, কোহলির পর পন্তকে ফেরান গ্লিসন। শেষ ২ উইকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে। ২০ বলে ৩১ রান রোহিতের, পন্ত করেন ১৫ বলে ২৬ রান। আর দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়া কোহলি ফেরেন ২ বলে ১ রান করে। যেভাবে আকাশে বল তুলেছেন, তাতে আরেকবার স্পষ্ট হয়েছে—কোহলি ছন্দে নেই।
গ্লিসনের পর ভারতকে আঘাত করেন ক্রিস জর্ডান। সূর্যকুমার যাদব ও হার্দিক পান্ডিয়াকে পর পর ২ বলে আউট করে তিনিও দাঁড়িয়ে যান হ্যাটট্রিকের সামনে। বিনা উইকেটে ৪৯ থেকে ভারত পরিণত হয় ৫ উইকেটে ৮৯ রানে। আগের ম্যাচে দীনেশ কার্তিককে পরে পাঠানো হলেও আজ সেটির উপায় ছিল না তাঁদের। কার্তিক অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি, ১৬তম ওভারে রান আউট হওয়ার আগে ১৭ বলে করেন মাত্র ১২ রান। ভারতের ওই সময় রান ছিল ১২২। এরপরও তারা ১৭০ পর্যন্ত যায় রবীন্দ্র জাদেজার ২৯ বলে অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংসে ভর করে।
গ্লিসন ৩ উইকেট নেন ১৫ রান দিয়ে। জর্ডান পরে ফেরান হার্শাল প্যাটেল ও ভুবনেশ্বর কুমারকেও। ৪ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন এ পেসার। ইনিংসের মাঝপথে ভারতের স্কোরটিকে মনে হচ্ছিল ‘লড়াই করার মতো সংগ্রহ’। তবে সেটিকে তারা বানিয়ে ফেলল তার চেয়েও বেশি কিছু।
রান তাড়ায় আবারও ভারতের দুর্দান্ত পাওয়ারপ্লে বোলিংয়ের সামনে পড়ে ইংল্যান্ড। এ সিরিজে প্রথম ৬ ওভারে ভারতের বোলারদের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১০.৩—কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজে যেটি তাদের সর্বনিম্ন।
আগের ম্যাচে জস বাটলার শূন্যতে ফিরেছিলেন ভুবনেশ্বর কুমারের বলে। এবার ফিরলেন জেসন রয়, সেটিও ইনিংসের প্রথম বলেই! তৃতীয় ওভারে জস বাটলারকেও ফেরান ভুবনেশ্বর। জীবন পাওয়া লিয়াম লিভিংস্টোনও ফেরেন পাওয়ারপ্লের মধ্যেই। ৬ ওভার শেষে বাটলারের দলের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৩৬ রান। এরপর একে একে ফেরেন হ্যারি ব্রুক, ডেভিড ম্যালান, স্যাম কারানরাও। তিনজনের কেউই ৮৮.৮৮-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করতে পারেননি।
অন্য পাশে মঈন আলী ছিলেন, ২১ বলে ৩৫ রান করে হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার তিনি। ইংল্যান্ড এরপর গুটিয়ে যেতে বেশি সময় নেয়নি। গ্লিসনকে নিজের তৃতীয় শিকার বানান ভুবনেশ্বর। তিনিও শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেট নেন ১৫ রানে। শেষ দিকে ২২ বলে ৩৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন ডেভিড উইলি, তবে তাঁর ইনিংস পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে শুধু। ৩ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন রঙিন পোশাকে ফেরা বুমরা। যুজবেন্দ্র চাহালও ২ উইকেট নিয়েছেন ১০ রানে, তবে তিনি করেছেন ২ ওভার। ১টি করে উইকেট পান্ডিয়া ও হার্শাল প্যাটেলের।
সিরিজের শেষ ম্যাচ আগামীকাল, নটিংহামে।