দিনটা আজও ভোলেননি সিদ্দিকুর রহমান। ২০১০ সালের ১ আগস্ট তিনি কীভাবে-ই বা ভুলে থাকবেন? ক্যারিয়ারের প্রথম এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা ব্রুনাই ওপেন সেদিনই জিতেছিলেন দেশসেরা এ গলফার। ওই একটা টুর্নামেন্ট জিততে না পারলে খেলাটাই ছেড়ে দিতেন সিদ্দিকুর।
ভারতীয় গলফার শিবশঙ্কর প্রসাদ চৌরাসিয়ার সঙ্গে ফেসবুক লাইভে আড্ডায় নিজের ক্যারিয়ারে আবেগময় মোড়টা কাল জানিয়ে দিলেন সিদ্দিকুর, '২০১০ সালের ওই টুর্নামেন্টের সঙ্গে আমার অনেক আবেগ জড়িয়ে। ওটা জিততে না পারলে আর খেলাই ধরে রাখতে পারতাম না।' পরক্ষণে কারণটাও জানালেন সিদ্দিকুর, 'আগের বছর এশিয়ান ট্যুরে যোগ দিয়েছি। কিন্তু সেবার যতটা খেলে উপার্জন করেছিলাম, এর চেয়েও বেশি খরচ হয়ে গিয়েছিল। আমার যত সঞ্চয় সব তখন শেষ। ভাবছিলাম আর কয়েক সপ্তাহ পর হয়তো খেলতেই পারব না। ওই টুর্নামেন্টের আগে অনেক আর্থিক সমস্যাও যাচ্ছিল। তখনই এটা জিতি। এটা আসলেই আমাকে অনেক উৎসাহ দিয়েছে। ওই টুর্নামেন্টের পর আমাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি।'
সিদ্দিকুর এরপরই জেতেন ২০১৩ সালে হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন। সেখানে সফল হলেও বাজে শট খেলার কারণে একবার রাগে গলফ ক্লাবটা ছুঁড়ে মেরেছিলেন গাছের মগডালে। সেই স্মৃতি মনে করে তিনি বলছিলেন, ' আসলে তখন বুঝতে পারিনি কি কাজ করেছি। রাগে ক্লাবটা ছুঁড়ে গাছের ডালের মধ্যে ফেলেছিলাম। পরে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম।'
যেখানেই খেলতে যান না কেন, বাংলাদেশের পতাকাটাই শুধু চোখের সামনে ভাসে সিদ্দিকুরের, 'যত টুর্নামেন্টেই খেলি, কখনোই নিজের নামের দিকে তাকাই না। যখন দেখি ওইসব দেশে বাংলাদেশের পতাকাটা উড়ছে তখন খুব গর্ব হয়। '
গলফভিত্তিক ম্যাগাজিন 'দি গলফ হাউজে'র আয়োজনে এ আড্ডায় উঠে আসে সিদ্দিকুর-শিবশঙ্করের ক্যারিয়ারের অজানা মজাদার গল্প। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন ম্যাগাজিনের সম্পাদক নজরুল হোসেন।
সিদ্দিকুরের সঙ্গে অনেক মিল শিবশঙ্করের। সিদ্দিকুর ছিলেন কুর্মিটোলা গলফ কোর্সের ক্যাডি। শিবশঙ্করও রয়্যাল কলকাতা গলফ ক্লাবে ক্যাডির কাজ করতেন শৈশবে। শিবশঙ্করের বাবা গলফ কোর্সের ঘাস কাটতেন, পরে গাড়ি চালিয়েছেন। জীবনের অনেক লড়াইয়ে শিবশঙ্করকে অনুপ্রেরণা মানেন সিদ্দিকুর। ২০১০ দিল্লি ওপেন গলফে শিবশঙ্করকে হারিয়েই জেতেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় এশিয়ান ট্যুর শিরোপা। গলফ কোর্সে প্রতিপক্ষ হলে কী হবে, কোর্সের বাইরে দুজন ভীষণ ভালো বন্ধু।
শিবশঙ্কর এ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান ট্যুর জিতেছেন চারবার। এশিয়ান ট্যুর ছয় বার।খেলেছেন রিও অলিম্পিক, ইউরেশিয়া কাপে।জিব মিলখা সিংয়ের পর শিবশঙ্করই একমাত্র গলফার যিনি ইউরোপিয়ান ট্যুরের চারটি শিরোপা জিতেছেন। জিতেছেন ভারতে সম্মানসূচক অর্জুন পুরস্কার। শিবশঙ্কর খেলা শুরুর অনেক আগে ১৯৭৫ সালে কলকাতার আরেক গলফার এসকে জামশিদ জেতেন এই পুরস্কার। সেটাই ছিল শিবশঙ্করের অনুপ্রেরণা।
আড্ডায় এসে কলকাতার এই গলফার ট্রফিটা দেখিয়ে বললেন, 'এই পুরস্কার আমার জীবনের স্বপ্ন ছিল। আমি উনার কথা এতবার শুনেছি যে উনার ছবি আমার ঘরের দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখতাম। খেলতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন একবার করে দেখতাম। ওটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।'
প্রতি বছর দিওয়ালি উৎসবে সিদ্দিকুরকে আমন্ত্রণ করেন শিবশঙ্কর। এটা যেন গত কয়েক বছরের নিয়মিত রুটিন হয়ে গেছে। আড্ডায় হাসতে হাসতে শিবশঙ্কর বলছিলেন, ' প্রতি বছর ম্যাকাওয়ের টুর্নামেন্ট চলার সময় দিওয়ালি উৎসবটা হয়। সিদ্দিকুরকে ওই উৎসবে না রাখলে যেন অনুষ্ঠানটা সার্থক হয় না।' বাংলাদেশের ইলিশ ভীষণ প্রিয় শিবশঙ্করের। আড্ডায় সে কথা বলতেও ভোলেননি তিনি।