‘ওহ ওহ ওহ, কী জঘন্য ২০২০’

এ ছবি দিয়েই নিজের কষ্টের কথা জানিয়েছেন এমবাপ্পে। ছবি: টুইটার
এ ছবি দিয়েই নিজের কষ্টের কথা জানিয়েছেন এমবাপ্পে। ছবি: টুইটার

না, কিলিয়ান এমবাপ্পে মোটেও ‘জঘন্য ২০২০’ বলেননি। ২০২০ শেষ হওয়ার আকুতি জানানো টুইটে তাঁর আবেগটা শুধু জঘন্য দিয়ে বোঝানো সম্ভবও নয়। ২০২০ সালটা আমাদের যা উপহার দিচ্ছে, সেটা বর্ণনায় এমবাপ্পের জঘন্য শব্দটায় তৃপ্ত থাকার কথাও নয়। তিনি আরও তীব্র কিছু বলেছেন, যে শব্দটায় কিছুটা হলেও মনের ক্ষোভ উগরে দেওয়া যায়, কাউকে উদ্দেশ না করেই রাগ প্রকাশ করা যায়। কিন্তু সে শব্দটা প্রকাশযোগ্য নয়। তাই জঘন্য ধরে নেওয়াটাই ভালো।    

প্রতিবছর ডিসেম্বর এলেই ক্ষণ গণনা শুরু হয়। কবে আসবে নতুন বছর? এই প্রথম ‘কাউন্টডাউন’টা বোধ হয় বছরের মাঝপথেই শুরু হয়েছে। বৈশ্বিক এক মহামারি এসে ২০২০কে ভয়ংকর এক দুঃস্বপ্ন বানিয়ে ফেলেছে। চেনা জগৎকে উলটে-পালটে দিচ্ছে। প্রতিদিন প্রিয় মুখ হারাচ্ছেন সবাই। বিনোদন, রাজনীতি, খেলা—বাদ পড়েনি কিছুই।

এর মধ্যেই ২০২০ সবচেয়ে বড় ধাক্কা দিল। সবাইকে হতভম্ব করে চলে গেলেন ম্যারাডোনা, ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। বিশ্বকে ফুটবলের উথাল প্রেমে মাতানো লোকটা চলে গেলেন কাল।

আর্জেন্টিনার প্রত্যেক মানুষ আজ কাঁদছেন।

কিছু খবর আসে, যা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে না। খবরটা শুনেও মনে হয়, কিছু ভুল হচ্ছে কোথাও। কাল ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর শুনে এমনটাই বোধ হয়েছিল ফুটবলসংশ্লিষ্ট লোকজনের। ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবরটা ইউরোপের সংবাদমাধ্যমগুলো প্রকাশ করছিল অনেক দ্বিধা নিয়ে। আর্জেন্টাইন পত্রিকা ‘ক্লারিন’-এর বরাত দিয়ে এমনভাবে খবর দেওয়া হচ্ছিল যে চাইলেই সেটা বদলে নেওয়া যায়।

অথচ ‘ক্লারিন’ কিন্তু শুধু যে খবর প্রকাশ করেছে তা নয়, তাঁর জন্য চোখে জল এনে দেওয়া এক শ্রদ্ধাঞ্জলিও লিখে বসেছে। একেবারে নিশ্চিত না হয়ে এমন কিংবদন্তির ব্যাপারে এমন ঝুঁকি কেউ নেয় না। তবু সবার মধ্যে কেমন বাধো বাধো ভাব। কেউই যেন জোর গলায় বলতে চাচ্ছিল না, ‘ডিয়েগো ম্যারাডোনা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’

ইংরেজিতে এমন পরিস্থিতি বোঝাতে বলা হয়, ‘ডিনাইয়াল’-এ থাকা। কোনো কিছু ঘটেছে সেটা অস্বীকার করে এর প্রতিক্রিয়া থেকে নিজেকে বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা। ম্যারাডোনা চলে গেছেন, এটা স্বীকার করে নিতে সবার তাই এত কষ্ট। যাঁকে দেখে বেড়ে ওঠা, যাঁর গল্প শুনে বড় হওয়া, যাঁর পায়ের ছোঁয়া স্বর্গসুখ এনে দেয়, তাঁকে বিদায় বলা যে খুব কঠিন। এই কঠিন কাজটা করতে তাই বেগ পেতে হয়েছে। একবার স্বীকার করে নেওয়ার পরই আসে পরের কাজটা, বিদায় জানানো।

তাঁর মতো করে আর্জেন্টিনাকে ভালোবাসেনি কেউ।

এমবাপ্পে বিদায়বার্তাতেই ক্ষোভটা জানালেন। বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলার হলেও ম্যারাডোনা প্রসঙ্গে এমবাপ্পেও সাধারণের মতোই একজন ভক্ত। আর তাঁর মনে হচ্ছে, বছরটা ২০২০ বলেই এমন কিছু ঘটল। এত প্রিয় একজনকে হারাতে হলো। টুইটারে আর্তনাদ করেছেন এমবাপ্পে, ‘শান্তিতে থাকুন কিংবদন্তি। ফুটবল ইতিহাসে আজীবন থাকবেন আপনি। সারা বিশ্বকে যে আনন্দ দিয়েছেন, ধন্যবাদ। ওহ ওহ ওহ, জঘন্য (অন্য কিছু পড়ুন) ২০২০।’

ম্যারাডোনা চলে গেছেন, এ কথা বিশ্বাস হচ্ছিল না ডিয়েগো সিমিওনেরও। আতলেতিকো মাদ্রিদের কোচ হিসেবেই এখন সবাই তাঁকে চেনে, কিন্তু তাঁর প্রথম পরিচয় তো তিনি ম্যারাডোনার সতীর্থ। কিংবদন্তির বিদায় মানতে পারছিলেন না সিমিওনের, ‘যখন কেউ বলে ডিয়েগো চলে গেছেন, তখন আপনি বলবেন “এটা হতে পারে না”। আমার কোনো সন্দেহ নেই, বিশ্বের প্রতিটি ফুটবল মাঠে তিনি বেঁচে থাকবেন। তিনি সর্বকালের সেরা ছিলেন, থাকবেন।’