সতীর্থ এরিকসেনের অসুস্থতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল ডেনমার্কের খেলোয়াড়েরা।
সতীর্থ এরিকসেনের অসুস্থতায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল ডেনমার্কের খেলোয়াড়েরা।

এরিকসেনের ঘটনার পর ডেনমার্কের খেলোয়াড়দের ‘দয়া’ করা হয়নি

ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের পরশু রাতে মাঠে লুটিয়ে পড়া কারও কল্পনাতেও ছিল না। ফুটবল মাঠে খেলার সময় কোনো খেলোয়াড়ের মাটিতে পড়ে যাওয়া, জীবন নিয়ে টানাটানি—এমন কিছু কেউ প্রত্যাশা করে না। একটিবার ভেবে দেখুন তো, এক মিনিট আগেও যে খেলোয়াড়টি মাঠে ছিলেন দলের অন্যতম ভরসা হয়ে, তিনিই যদি হঠাৎ করে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যান, তাহলে দলের খেলোয়াড়দের কেমন লাগে!

উয়েফাকে ধুয়ে দিলেন পিটার স্মাইকেল
ছবি: এএফপি

সেদিন ইউরোর ম্যাচে ডেনমার্ক-ফিনল্যান্ড ম্যাচে ডেনিশ খেলোয়াড়দের অবস্থা তেমনই ছিল। তাঁরা সবাই কাঁদছিলেন। প্রতিপক্ষ ফিনল্যান্ডের খেলোয়াড়েরাও এমন অনুভূতির বাইরে ছিলেন না। জীবন তো নিছক এক ফুটবল ম্যাচের চেয়েও অনেক বড় একটা ব্যাপার। এরিকসেনের মাঠে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়া সে কথা সবাইকে নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে।

ম্যাচটা স্বাভাবিকভাবেই স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। ওই অবস্থায় কারও খেলা মতো অবস্থায় থাকার কথা নয়। এমনকি এরিকসেন জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পরও দুই দলের খেলোয়াড়েরা যে খেলার অবস্থায় ছিলেন, সেটি বলা যাবে না। কিন্তু ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত মাঠে গড়ায়। ব্যাপারটা সবাইকেই অবাক করেছে। আর এ নিয়ে চলছে এন্তার সমালোচনা।

মাঠে পড়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে এরিকসেন।

উয়েফা প্রথমে ম্যাচটি স্থগিত ঘোষণা করেছিল। সবাই মনে করেছিলেন ম্যাচ আর হওয়ার সম্ভাবনা সেই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে ইউরোপীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা (উয়েফা) কিছুক্ষণ পর ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা জানায়। উয়েফা ঘোষণা দেয়, ‘দুই দলের খেলোয়াড়দের অনুরোধে’ ম্যাচটি আয়োজিত হচ্ছে। ম্যাচে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ডেনমার্ককে শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলে হারায় ফিনল্যান্ড।

কিন্তু এমন একটা পরিস্থিতিতে কেন ম্যাচ আয়োজন করতে হবে? এ নিয়ে উয়েফাকে সমালোচনায় ভাসিয়েছেন ডেনমার্কের কিংবদন্তি গোলকিপার পিটার স্মাইকেল। ১৯৯২ সালে বিশ্বকে চমকে দিয়ে ডেনমার্কের ইউরো জয়ের অন্যতম নায়ক এই স্মাইকেল। ২৯ বছর পর তাঁর ছেলে ক্যাসপার স্মাইকেল খেলছেন ডেনমার্কের এবারের ইউরো দলে। পিটার স্মাইকেল মনে করেন, এরিকসেনের অসুস্থতা, তাঁর জীবন-মৃত্যুর পরিস্থিতি, ডেনমার্ক দলের বাকি খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থা—সবকিছু বিবেচনায় নিলে কিছুক্ষণ পর খেলা শুরু করার ব্যাপারটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। উয়েফা খেলা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়ে খুব বাজে কাজ করেছে বলে মনে করেন তিনি, ‘খুবই বাজে একটা সিদ্ধান্ত। উয়েফা ওই মুহূর্তে পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্য কিছু ভাবতে পারত। সহজ ভাষায় তাদের কাছ থেকে আরও একটু মানবিকতা, একটু দয়া আশা করেছিলাম আমরা।’

দর্শকদের জন্যও ঘটনাটা ছিল ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা।

বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্মাইকেল বলেছেন, ‘ওই দুই ঘণ্টা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্ত। অমন একটা সময় উয়েফা খেলোয়াড়দের দুটি বিকল্প ভাবতে বলেছিল। একটা হচ্ছে খেলাটা তখনই চালিয়ে যাওয়া কিংবা কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে আবারও মাঠে ফেরা।’

স্মাইকেল ক্ষোভের সঙ্গে বলেছেন, ‘এটা কেমন কথা! ওটা কি ম্যাচ খেলার মতো পরিস্থিতি? এ ম্যাচের ফল সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। আমি নিশ্চিত, ওই সময় কারও ম্যাচের ফলটল নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো অবস্থা ছিল না। ওই সময় খেলাটা খেলোয়াড়দের জন্য কতটা কঠিন ছিল ভাবা যায়!’

ফিনল্যান্ডের খেলোয়াড়েরাও পড়েছিলেন স্তব্ধ।

ম্যাচটি ডেনমার্ককে কেন খেলতে হলো সেদিন—এ নিয়ে একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলটির কোচ হিউলমান্দ, ‘আমাদের দুটি বিকল্প ছিল। প্রথম ম্যাচটি আজ (গত পরশু রাত) খেলা আর দ্বিতীয়টি আগামীকাল দুপুর ১২টায় (স্থানীয় সময় গতকাল দুপুর ১২টা) খেলা। সবাই আজকেই (পরশু রাত) ম্যাচটি খেলতে রাজি হয়ে যায়।’

ডেনিশ খেলোয়াড়দের সামনে পরশু রাতে খেলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না বলেই জানিয়েছিলেন হিউলমান্দ। তিনি মনে করেন, মানসিকভাবে এমন বিধ্বস্ত হওয়া একটা রাত কাটিয়ে পরদিন ম্যাচ খেলা ডেনিশ ফুটবলারদের জন্য অসম্ভব ছিল, ‘এটা ঠিক যে এমন মানসিক অবস্থা নিয়ে আপনি একটি ম্যাচ খেলতে পারেন না। কিন্তু ম্যাচ না খেললেও (এরিকসেনের এমন অবস্থায়) কোনো খেলোয়াড়ই বাড়িতে যেতে পারত না। তারা ঘুমাতেও পারত না। এমন অবস্থায় আগামীকাল (গতকাল) আবার ঘুম থেকে ওঠাই কঠিন হতো।’