হুসনা হাবিবের ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা কীভাবে মিস করে গেলেন, সেটি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না এনামুল হক। এ মৌসুমে যে ফর্মে ছিলেন, তাতে তাঁর অবিশ্বাসটাকে যৌক্তিকই মনে হওয়ার কথা। ১৫ ইনিংসে ১২টিতেই কমপক্ষে ৫০ ছুঁয়েছেন প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব ওপেনার, শতক পেয়েছেন তিনটি। চতুর্থটি আজ পেয়ে যেতে পারতেন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষে লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে, ৪ রানের জন্য হাতছাড়া হয়েছে সেটি।
তবে অবিশ্বাস্য এক মৌসুমে এনামুলের পরিসংখ্যান এমন—৮১.২৮ গড়ে ১১৩৮ রান, ৯৮.৬১ স্ট্রাইক রেট। লিস্ট ‘এ’-তে কোনো টুর্নামেন্টের এক মৌসুমে এর আগে ১ হাজার রানই ছিল না কারও। এনামুলের এমন পারফরম্যান্সের পর মাশরাফি বিন মুর্তজাও বলছেন, এবার জাতীয় দলে তাঁকে ‘মূল্যায়ন’ করা উচিত।
ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত এনামুল ৪টি টেস্টের সঙ্গে ৩৮টি ওয়ানডে ও ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। সর্বশেষ জাতীয় দলের হয়ে খেলেছিলেন ২০১৯ সালে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডেতে। তবে এমন এক মৌসুমের পর জাতীয় দলে এনামুলের জায়গা পাওয়া উচিত, মনে করেন বাংলাদেশের ওয়ানডের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি, ‘একজন মানুষ যদি ১১০০ রান করে সুযোগ না পায়, তাহলে তার আর প্রমাণ করার জায়গা থাকে না। তাই এই সুযোগটা পাওয়া উচিত।’
এনামুলের পর এবার লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের নাঈম ইসলামের ৮৫৯। তালিকায় তিনে ৬৫৮ রান নিয়ে আছেন মোসাদ্দেক হোসেন। মাশরাফি বলছেন, এনামুলের সঙ্গে বাকিদের এই পার্থক্যের একটা স্বীকৃতি দেওয়া দরকার, ‘দেখেন একজন হচ্ছে ৬০০-৭০০ (নাঈম) রান করেছে, তার আশপাশে ৪০০-৫০০ রান করে আছে। আরেকজন হচ্ছে এক হাজারের ওপর রান করেছে। এটা তো অনেক ব্যবধান। এই পার্থক্যটার মূল্যায়ন করা উচিত।’
এনামুল দারুণ করেছেন ৫০ ওভারের সংস্করণে। তবে সেখানেই তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি পাকাপাকিই। মাশরাফির মতে, এনামুলকে অন্তত টি-টোয়েন্টিতে হলেও বিবেচনা করা উচিত, ‘লিটন-তামিমকে তো আপনি সরাতে পারবেন না। তারা সম্প্রতি পারফর্ম করে এসেছে। তাই বিজয়কে (এনামুল) যদি আনেনও, প্রথম একাদশে জায়গা কিন্তু নাই। টেস্টে জানি না কে ওপেন করবে, আবার জয় (মাহমুদুল হাসান) কিন্তু এক শ করে আসছে। এখানেও তামিম খেলবে। সুতরাং এখানেও কিন্তু কঠিন। তাই টি-টোয়েন্টির কথা আমি উল্লেখ করেছি। কারণ, এই ফরম্যাটে এখনোই বিজয়কে দলের নেওয়ার সুযোগ আছে। এটা আমার মতামত। এমন না অন্যকেও মেনে নিতে হবে।’
‘দেখেন পুরো একটা লিগ থেকে আপনি ১০-১২ জনকে আনতে পারেন। তবে জাতীয় দলকে ফোকাস করলে এক বা দুজনকে টার্গেট করতে হয়। সেটা যদি করেন, আমি মনে করি বিজয়। আগের দিনও বলেছি, আজকেও বলছি সে অসাধারণ ব্যাটিং করেছে, দাপট দেখিয়ে ব্যাটিং করেছে। বিজয়কে আমি মনে করি এখনই বিবেচনা করার সময়।’
এনামুলের সঙ্গে মাশরাফি আলাদা করে বলেছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক নুরুল হাসানের কথাও। ৮ ম্যাচ খেলেই ৪৮৩ রান এ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের, গড় ৯৬.৬০! মাশরাফি বলেছেন, ‘এরা দুজন অসাধারণ ছিল। সোহান (নুরুল) হয়তো ১ হাজার রান করেনি কিন্তু চাপের মধ্যে যে রান করেছে, ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছে—এগুলো বিবেচনায় আনা উচিত।’
নুরুল অবশ্য জাতীয় দলের সঙ্গে আছেন বেশ কিছু দিন ধরেই। তবে ২৮ বছর বয়সী নুরুল ও ২৯ বছর বয়সী এনামুলের বয়সটা পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে দারুণ, মনে করিয়ে দিয়েছেন মাশরাফি, ‘ওদের বয়সের কথা বলব। এখন ওদের বয়স পারফর্ম করার। এ সময়েই ওদের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। ক্রিকেটে একটা বিষয় আছে বয়স। এখন বিজয়-সোহানরা যে বয়সে আছে...ক্রিকেটে ২৮ থেকে ৩২-৩৪–এর একটা সময় থাকে, এখন কিন্তু ওরা ওই বয়সে রয়েছে। তাই এখানে শুধু অভিজ্ঞতা আছে, সিনিয়র খেলোয়াড়েরাও আছে—এসব চিন্তা না করে যদি ওদের কিছু ম্যাচে সুযোগ দেওয়া যায়, আমার মনে হয় ওরা ভালো করবে।’