আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা সবেমাত্র শুরু। কিন্তু অল্প সময়েই মাহমুদুল হাসান দেখিয়েছেন তাঁর সামর্থ্য। অক্লান্ত পরিশ্রম, দৃঢ়চেতা মনোবল আর ধৈর্যের ছবি ফুটে ওঠে তাঁর ব্যাটিংয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে দেশে ফিরে মুঠোফোনে দেওয়া প্রথম আলোর সাক্ষাৎকারে ছোট্ট ক্যারিয়ারের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন মাহমুদুল হাসান—
দেশের হয়ে ৪টি টেস্ট খেলেছেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই ছোট্ট সময়টায় কী শিখলেন?
মাহমুদুল হাসান: অনেক কিছুই। যে উপলব্ধিটা হয়েছে, সেটা হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে হলে আমাকে এখনো আরও অনেক কিছু শিখতে হবে। অনেক উন্নতি করতে হবে। আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করেছি খুব সহজেই। টেস্ট ক্রিকেট তেমন না। এখানে খারাপ বলের সংখ্যা খুব কম। খারাপ বলের জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। বড় শিক্ষা বলতে গেলে এগুলোই।
ছোট্ট ক্যারিয়ারে বড় সাফল্যও পেয়েছেন। আবার ব্যর্থতাও। মাউন্ট মঙ্গানুইতে ৭৮, ডারবানে ১৩৭। এরপর পোর্ট এলিজাবেথে দুই ইনিংসেই শূন্য।
মাহমুদুল: হ্যাঁ, সেটাই বলছিলাম আসলে। সব সময় মনোযোগ ধরে রাখা লাগে। মনোযোগে একটু ব্যাঘাত ঘটলেই আউটের সম্ভাবনা থাকে। ভুলের সুযোগটা খুব কম মনে হয়েছে।
একটু পেছনে যাই। গত ডিসেম্বরে যখন টেস্ট অভিষেক হলো, সেই অভিজ্ঞতাটা একটু বলবেন।
মাহমুদুল: খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম অবশ্যই। সবারই তো জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন থাকে। সেটা যখন পাকিস্তানের বিপক্ষে হয়ে গেল, খুবই রোমাঞ্চিত ছিলাম।
আপনি এর আগে মাত্র এক মৌসুমের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। খুব দ্রুতই টেস্ট দলে ডাক পাওয়া, অভিষেক—সব ঘটে গেল।
মাহমুদুল: আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে আমার সুযোগ হয়ে যাবে। কারণ, আমি তার আগে যা খেলেছি, সেখানে ভালো করেছি। আশা ছিল যে ডাক পাব।
টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা তো ভালো হয়নি… প্রথম ইনিংসে ০, পরেরটায় ৬ রানে আউট।
মাহমুদুল: আমি এটা নিয়ে খুব ভাবিনি। কারণ, খারাপ সময় আসবেই। এটাই স্বাভাবিক। বিষয়টাকে যতটা স্বাভাবিকভাবে দেখা যায়, ততই ভালো। পরিকল্পনাটা ধরে রাখাটাই আসল।
পরিকল্পনা সম্পর্কে একটু জানতে চাই। নিউজিল্যান্ডে ২২৮ বল খেলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩২৬ বল, সাধারণত বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের লম্বা সময় ক্রিজে থাকতে দেখা যায় না।
মাহমুদুল: উইকেটে টিকে থাকা, সময় কাটানো—আমার মূল ভাবনা থাকে এটাই। নতুন বলে একটু মুভমেন্ট থাকে। সেটা পুরোনো হলে আমি আমার মতো খেলতে পারি। এর বেশি কিছু না। আমার কাছে দলের চাওয়া থাকে যেন আমি লম্বা সময় ব্যাটিং করি। পাঁচ দিনের খেলা, অনেক সময় থাকে। আমি যদি শট খেলে আউট হয়ে যাই, তাহলে সেটা আমার দলের জন্যও ভালো না। আমার জন্যও না। তাই আমি লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করার চেষ্টা করি।
এই সামর্থ্যটা কি আপনার সহজাত নাকি আপনি নিজেকে এভাবে গড়ে তুলেছেন?
মাহমুদুল: এটা আসলে আমি বোঝাতে পারব না। খেলতে খেলতে হয়ে গিয়েছে হয়তো।
সাদা বলের ক্রিকেটে তো আপনি ভালো স্ট্রাইক রেটে খেলেন। এই ভারসাম্যটা কীভাবে এসেছে আপনার খেলায়?
মাহমুদুল: এটা মানসিকতার ব্যাপার। আপনি তিন সংস্করণের খেলার ধরনের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করেন। সেভাবে অনুশীলনও করেন। এভাবেই হয়তো এসেছে।
ডারবানে শতকের পর অবশ্য আপনার হাতে কত শট আছে, সেটা সবাই দেখেছে…
মাহমুদুল: আমি চাপের মুখে ব্যাটিং করছিলাম। দলের উইকেটও বেশি ছিল না। তখন দ্রুত যত রান করা যায়, সেই চেষ্টাই করেছি। ম্যাচের পরিস্থিতিই শট খেলা ডিমান্ড করছিল।
টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম শতকের পর কেমন লেগেছে?
মাহমুদুল: খুবই ভালো লেগেছে। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, সেটাও দেশের বাইরের কন্ডিশনে। খুব উপভোগ করেছি মুহূর্তটা।
আপনি সাধারণত শতকের পর উদ্যাপন করেন না। সেদিন এক শর পর লাফিয়ে বাতাসে ঘুষি মেরেছেন।
মাহমুদুল: ওরা অনেক স্লেজিং করছিল। তাই একটু উদ্যাপন করেছি (হাসি)।