জয়ও না, ড্র করলেই গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট পেয়ে যেত ইতালি। সেটা মাথায় রেখে শুরু থেকেই রক্ষণ সামলে সাবধানী হয়ে খেলছিল আজ্জুরিরা। কিন্তু ব্রাজিলের মাটিতে উরুগুয়ে যে ভালোই চমক দেখাতে পারে, সেই অভিজ্ঞতা তো ফুটবল বিশ্বের ১৯৫০ সালেই হয়েছে। আজ আরও একবার তেমনটাই করে দেখাল উরুগুয়ে।
১৯৫০ বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচেও শুধু ড্র করলেই প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়ে যেত ব্রাজিল। কিন্তু ৭৯ মিনিটের মাথায় গোল করে ব্রাজিলিয়ানদের স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন উরুগুয়ের উইঙ্গার ঘিঘিয়া। পুরো ব্রাজিলে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। আজও প্রায় একই কায়দায় ইতালির সমর্থকদের হতাশায় ডোবালেন উরুগুয়ের ফুটবলাররা।
ইতালি-উরুগুয়ের ম্যাচটি ৮০ মিনিট পর্যন্ত ছিল গোলশূণ্য। আর ১০টি মিনিট এভাবে পার করতে পারলেই প্রথম রাউন্ডের বাধা উতরে যেত ইতালি। কিন্তু ৮১ মিনিটের মাথায় দারুণ এক হেড থেকে গোল করে বসলেন উরুগুয়ের অধিনায়ক ডিয়েগো গডিন। শেষপর্যন্ত এই গোলটির সুবাদেই ১-০ ব্যবধানের জয় নিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকিট পেয়ে গেল উরুগুয়ে। বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিল চারবারের শিরোপাজয়ী ইতালি।
‘ডি’ গ্রুপ থেকে আগেই দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে ফেলেছিল কোস্টারিকা। প্রথম দুই ম্যাচেই হারিয়েছিল উরুগুয়ে ও ইতালিকে। আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবশ্য জিততে পারেনি কোস্টারিকা। তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রেখেছে অপরাজিতভাবেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোস্টারিকার ম্যাচটা শেষ হয়েছে গোলশূণ্য ড্র দিয়ে। গ্রুপ পর্বের একটি ম্যাচও না জিতে বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছে ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ড-কোস্টারিকা মাঠে নেমেছিল শুধুই সৌজন্য রক্ষার জন্য। দুই দলেরই ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল প্রথম দুই ম্যাচ শেষে। সত্যিকারের বাঁচা-মরার লড়াইটা ছিল ইতালি আর উরুগুয়ের। অনেকেই হয়তো আশা করেছিলেন যে, চরম উত্তেজনাপূর্ণ একটা ম্যাচই উপহার দেবেন সুয়ারেজ-পিরলোরা। কিন্তু হতাশই হতে হয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের। শুরু থেকেই ইতালি নিয়েছিল ‘গোল ঠেকাও’ নীতি। উরুগুয়েও বলার মতো কোনো আক্রমণই শানাতে পারেনি। ৩২ মিনিটে মাথায় একবারই শুধু পরীক্ষার মুখে পড়েছিলেন বুফন। উরুগুয়ের সেই গোল প্রচেষ্টা রুখে দিয়ে উতরেও গেছেন ভালোভাবেই।
দ্বিতীয়ার্ধে, ৫৯ মিনিটের মাথায় আরেভালো রিওসকে ইচ্ছাকৃতভাবে লাথি মেরে লাল কার্ড দেখেছিলেন ইতালিয়ান মিডফিল্ডার ক্লদিও মার্কিসিও। ম্যাচের বাকি সময় ১০ জন নিয়েই খেলতে হয়েছে ইতালিকে। কিন্তু সেই সুবিধাটাও ঠিকঠাক কাজে লাগাতে পারেনি উরুগুয়ে। ৬৫ মিনিটে সুয়ারেজ নষ্ট করেছেন দারুণ একটি গোলের সুযোগ। ৮১ মিনিটের মাথায় উরুগুয়ে ম্যাচের একমাত্র গোলটি পেয়েছে গডিনের দুর্দান্ত এক হেডের কল্যানে।
উরুগুয়ের অধিনায়ক গডিনের মূল দায়িত্ব রক্ষণ সামলানো। ১১ বছরের পেশাদারী ফুটবল ক্যারিয়ারে গোলও খুব কমই করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল করাটাই যেন অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন এই সেন্টার ব্যাক। সেটা জাতীয় দলের জার্সি গায়েই হোক, বা ক্লাবের হয়ে।
লা লিগার গত মৌসুমে বার্সেলোনার বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে গোল করেছিলেন গডিন। তাঁর গোলে ভর করেই সেই ম্যাচটা ড্র করে শিরোপা জিতেছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও অ্যাটলেটিকো এগিয়ে গিয়েছিল গডিনের গোলেই। খেলার একেবারে শেষ মুহূর্তে গোল হজম না করতে হলে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাটাও জমা হতো অ্যাটলেটিকোর ট্রফিকেসে। আজ বিশ্বকাপের প্রথম বাঁচা-মরার লড়াইয়েও উরুগুয়ে জিতে গেল ২৮ বছর বয়সী এই ডিফেন্ডারের গোলের সুবাদে।