আর্জেন্টিনার জয় দেখতে উন্মুখ সমর্থকেরা। সেটাই স্বাভাবিক। ধারেভারে এগিয়ে থাকা দলের কাছে প্রত্যাশা বেশিই থাকে।
সামনে বেলজিয়াম, এ ম্যাচ জিতলে সেমিফাইনাল। আর্জেন্টিনা তাই নিজেদের সেরা ফুটবলটাই খেলতে চাইবে।আজ মেসিদের জন্য বড় সম্পদ হবে তাদের অভিজ্ঞতা। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ভাস্বর খেলোয়াড়ও বেলজিয়ামের চেয়ে আর্জেন্টিনার বেশি।কাজেই দুবারের চ্যাম্পিয়নদের পক্ষে বাজি রাখাই যায়।
তা ছাড়া, জাদুকর যেখানে আছেন, আর্জেন্টিনার জয়ের সম্ভাবনাই লিখতে হবে। সেই তিনি, লিওনেল মেসি প্রতি ম্যাচেই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। একাই ম্যাচ জেতানোর ক্ষমতা রাখেন। শুধু মেসি-ঝলক নয়, আর্জেন্টিনার মাঝমাঠ ঠিকঠাক কাজ করলে জয়টা না পাওয়ার কারণ নেই। খুব উদ্ভাবনী কিছু করতে পারলে কথাই নেই।
দুবারের চ্যাম্পিয়নরা এগিয়ে ফাইনাল পাস এবং ক্লিনিক্যাল ফিনিশিংয়ে। একটা ফুটবল ম্যাচে শেষ কথা হলো গোল এবং গোল পেতে নিখুঁত থাকতেই হবে। মেসি-ডি মারিয়ারা এটা খুব ভালো পারেন। তা ছাড়া, আর্জেন্টিনা এখন পর্যন্ত হেডে একটা মাত্র গোল পেয়েছে এই বিশ্বকাপে। উইং থেকে বল কম আসছে। সেট পিসেও গোল তেমন দেখছি না। আজ এসব ঘাটতি হয়তো দূর হতে পারে। বেলজিয়ামকে এটি দুশ্চিন্তায় রাখবে।
সেটা দূর করার জন্য বেলজিয়াম নিশ্চয়ই ছক কষে নামবে? ওরা একটা ইউনিট হিসেবে খেলে আসছে। নতুন প্রজন্মের একঝাঁক মেধাবী খেলোয়াড়ের হাতে এখন দেশটির ফুটবল পতাকা।এখন পর্যন্ত নিজেদের বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরতে পেরেছে বিশ্বকাপে। মেগা তারকা ইমেজ হয়তো নেই, তবে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে কম যান না এই খেলোয়াড়েরা। খুনে মেজাজ দলটিকে এগিয়ে এনেছে এত দূর।
বেলজিয়ামকে জিততে হলে মাঝমাঠে একটু বেশিই সৃষ্টিশীলতা দেখাতে হবে। এমনিতেও ওদের মাঝমাঠ প্রচুর আক্রমণ গড়ছে, খেলাটা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে সাদামাটা কিছু করলে ফল আসবে না। চাই বিশেষ কিছু, অপ্রত্যাশিত একটা টাচ, একটা মুভ। এই কাজগুলো আর্জেন্টিনা বেশি করতে পারে বলেই ম্যাচের আগে তাদের পাল্লা ভারী। যেমন ধরা যাক, দারুণ ছন্দে ফেরা ডি মারিয়া চূড়ান্ত পাসটা হয়তো ডান পায়ে দিলেন, প্রতিপক্ষ ভাবল বাঁ পায়ে দেবেন। এমন উপস্থিত বুদ্ধি ম্যাচের ফলনির্ধারক হয়ে যায় অনেক সময়। বেলজিয়ানদের চেয়ে আজেন্টাইনরাই এটা বেশি করতে পারে। এ কারণেই আমার বিশ্লেষণে আজ আর্জেন্টিনা ৬০, বেলজিয়াম ৪০।
প্রতিপক্ষের শুটিং অঞ্চলে অনেক সময়ই বেলজিয়ানরা সাধারণ কিছু ভুল করছেন। শটে হয় জোর বেশি নয় কম। শটটা জায়গামতো থাকে না। আর্জেন্টিনা এই ভুলগুলো কম করে। বেলজিয়াম বেশি। ঝাঁকড়া চুলের ফেলাইনিকে এসব ভুল কমিয়ে আনার দায়িত্বটা বেশি নিতে হবে। এই বেলজিয়ান সারাক্ষণই বলের কাছাকাছি থাকেন। ম্যাচে তাঁর আত্মনিবেদন প্রশংসিত। আমার মনে হয়, ফেলাইনির নৈপুণ্য আজ একটু বেশিই দরকার বেলজিয়ামের। সেটা তারা পেলে ফল অনুকূলে যেতে পারে ডার্ক হর্সদের।
কিন্তু আমার বিশ্বাস আর্জেন্টিনা তেমন কিছু হতে দেবে না। চাপ দিতে দিতে মেসিরা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাবে ম্যাচটা, প্রতিপক্ষ ভুল করবেই। বেলজিয়াম যেমন গোল না পেয়ে চাপের পর চাপ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যাচ থেকে ছিটকে যেতে বাধ্য করল। শেষ পর্যন্ত ফলও পেয়েছে। তবে আজ সেটা তারা পারবে না বলেই আমার ধারণা।
শক্তিতে-ঐতিহ্যে এগিয়ে থাকা নীল-সাদা দলের রক্ষণে সমস্যা রয়েই গেছে। মাঝমাঠ ভুল করলে শোধরানোর সুযোগ মেলে। কিন্তু রক্ষণে ক্ষণিকের অসতর্কতায় সব শেষ হয়ে যেতে পারে । বিশেষ করে সেন্টারব্যাকদের ভুল করা চলবে না। প্রতিপক্ষ সেটা কাজে লাগাতে পারলে গোল খেতে হবে। আর্জেন্টিনার ডিপ ডিফেন্সে কিন্তু ফাটল তৈরি হচ্ছে। জাবালেতা এ পর্যন্ত দুটি বড় ভুল করেছেন, গোল খেয়ে দলও সেটার মাশুল দিয়েছে।
হল্যান্ড-কোস্টারিকা লড়াইয়ে জয়টা হল্যান্ডেরই পাওয়া উচিত। কোস্টারিকা যদিও সাবলীল এবং কার্যকর ফুটবল খেলে এ পর্যন্ত এসেছে, কিন্তু আমার ধারণা শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে হল্যান্ডই এগিয়ে। কোস্টারিকা নিশ্চয়ই রক্ষণে পাঁচ-ছয়জনকে দাঁড় করিয়ে রাখবে না। তারা খেলতে আসবে, সেই সুযোগে জায়গা তৈরি হবে রক্ষণে। ডাচ আক্রমণভাগ ফাঁকা জমিন পেলে কতটা ভয়ংকর হতে পারে, তা সবাই দেখেছেন। তা ছাড়া এই ডাচ দলটাকে আমার খুব কার্যকর লাগছে, পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে খেলতে পারছে ওরা। রোবেন-ফন পার্সিরাই এ ম্যাচে আমার ফেবারিট।