আগের ভুলটা যেন না হয়

জ্যাক ক্যালিস
জ্যাক ক্যালিস

অনেক ক্রিকেটার আছে যারা অতিপ্রাকৃত বিষয়গুলোয় বিশ্বাস রাখে। কারও বিশ্বাস কুসংস্কারে, কেউ মানে ভাগ্য। সন্দেহ নেই, প্রোটিয়াদের কেউ কেউ এবার এমন কিছু ‘লক্ষণ’ দেখছে যাতে তাদের মনে হচ্ছে সবকিছু এবার তাদের পক্ষে যাবে। তবে সমস্যা হলো, এ রকম খেলোয়াড় অন্য সাত-আটটি দলেও আছে এবং তাদের সবার পক্ষে কিন্তু বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব নয়।
তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি বিষয়টাকে একটু সহজ করে দেখতে চাই। খেলাটা তো শেষ পর্যন্ত ব্যাট-বলেরই। আমার কথাই বলি। আমি যখন নির্ভার থাকতাম, চিন্তাটা যখন পরিষ্কার থাকত, তখনই আমি ভালো খেলতাম।
বিশ্বকাপে এখন নকআউট পর্ব চলবে। সব দলই শিরোপার গৌরব থেকে মাত্র তিনটি ম্যাচ দূরে। যারা চ্যাম্পিয়ন হবে, চিরদিনের জন্যই বদলে যাবে তাদের জীবন। অনেক ক্ষেত্রে বদলে যেতে পারে তাদের দেশের ক্রিকেটও। দক্ষিণ আফ্রিকা সে রকমই একটি দেশ। অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে এই দেশের ক্রিকেটার-সমর্থকদের জীবনটাই বেশি হতাশা আর অবিশ্বাসের মধ্য দিয়ে কেটেছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এসসিজির কোয়ার্টার ফাইনালের এখনো দিন তিনেক বাকি। খেলোয়াড়দের তাই আপাতত নির্ভারই থাকার কথা। তারা খেলা নিয়েও নিশ্চয়ই চিন্তা করবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে উঠতে, বসতে, খেতে, ঘুমাতে শুধু ম্যাচের কথাই ভাববে। তবে হ্যাঁ, একটা সময়ে গিয়ে বেশির ভাগের ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা সে রকম হয়ে যাবে।
আশা করছি, খেলোয়াড়েরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলবে, একে অন্যের সঙ্গে আবেগ-অনুভূতি ভাগাভাগি করবে। এ ক্ষেত্রে আগের ভুলটা যেন তারা না করে। বিশ্বকাপের আগের আসরগুলোয় আমরা এই কাজ খুব একটা করিনি, বিশেষ করে ২০০৭-এ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনালের আগে। ম্যাচের প্রথম ঘণ্টাতেই আমরা শেষ হয়ে গিয়েছিলাম, হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল ম্যাচও। আমি আশা করব তারা খেলাটা উপভোগ করবে। বিশ্বকাপে ও রকম একটা ভেন্যুতে ৪৫ হাজার দর্শকের সামনে খেলার স্বপ্ন আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখেছি, যখন একটা লাঠি আর একটা টেনিস বল পেলেই ক্রিকেট খেলতে নেমে যেতাম। সেটা মাঠেই হোক কিংবা সৈকতে।
এবারের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এখনো ফেবারিট। তবে ভারত আছে দুর্দান্ত ফর্মে। টুর্নামেন্টে সব দলই যেখানে এক-দুবার ধাক্কা খেয়েছে, ভারতের যন্ত্র চলছে তো চলছেই। ভালো থেকে আরও ভালো হচ্ছে তাদের ফর্ম। তাদের হুমকি হতে পারে শুধু তারা নিজেরাই। যদি কেউ একটু ব্যতিক্রমী কিছু করতে চায় বা একটু বেশি মাত্রায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে, তাহলেই দলটা কক্ষচ্যুত হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মেজাজ ধরে রাখা আর হারিয়ে ফেলার ওপরই আসলে নকআউট পর্বের জয়-পরাজয় নির্ভর করে। চাপ কাটিয়ে উঠতে হবে, সেই সঙ্গে একে কাজেও লাগাতে হবে। ধরুন, প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ২৫ ওভার শেষে কোনো দলের রান ২ উইকেটে ১২০। নিশ্চিত তারা বড় রানের দিকে এগোচ্ছে। তবে এর পরের ৫ ওভার হয়ে উঠতে পারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর ৩০-৩৫টি রান যোগ করলেই প্রতিপক্ষকে এলোমেলো করে দিতে পারে তারা। কাজেই ওই সময়ের মেজাজটা ধরে রাখা জরুরি।
বিশ্বকাপের ফাইনালটা অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মধ্যে হলেই হয়তো ভালো হবে। তবে এটা শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতও হয়ে যেতে পারে। কী দারুণই না হবে তখন! মেলবোর্নে আবারও একই লড়াইয়ের পুনরাবৃত্তি। (হক-আই)।

আজকের খেলা

ওয়েস্ট ইন্ডিজ-আরব আমিরাত
(ভোর ৪টা, নেপিয়ার)
পাকিস্তান-আয়ারল্যান্ড
(সকাল ৯-৩০ মি., অ্যাডিলেড)

গতকালের ফল
জিম্বাবুয়ে: ৪৮.৫ ওভারে ২৮৭
ভারত: ৪৮.৪ ওভারে ২৮৮/৪
ফল: ভারত ৬ উইকেটে জয়ী

স্কটল্যান্ড: ২৫.৪ ওভারে ১৩০
অস্ট্রেলিয়া: ১৫.২ ওভারে ১৩৩/৩
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৭ উইকেটে জয়ী