দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক রকিবুল হাসান
দেশে ফিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক রকিবুল হাসান

অষ্টম হয়ে ফেরার কারণ জানাল বাংলাদেশ দল

গতবার রকিবুল হাসান ঢাকায় ফিরেছিলেন ‘বিশ্বজয়ী’ হিসেবে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই শুরু হয়েছিল সংবর্ধনা, সেটি ঠেকেছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পর্যন্ত। স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টার ছিল জনাকীর্ণ। তবে এবার রকিবুলরা ফিরলেন অনেকটা নিভৃতেই। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে গতবারের চ্যাম্পিয়নরা যে এবার দেশে এলেন টুর্নামেন্টে অষ্টম হয়ে।

আকবর আলীদের বিশ্বজয়ী দলের অংশ রকিবুল এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে। যে ভারতকে হারিয়ে গতবার শিরোপা এসেছিল, এবার কোয়ার্টার ফাইনালে সেই ভারতের কাছেই হার। এরপর স্থান নির্ধারণী দুটি প্লে-অফ ম্যাচ হেরে শেষ আটে ওঠা দলগুলোর মধ্যে সবার পেছনে থেকেই টুর্নামেন্ট শেষ করেছে রকিবুলের দল। দেশে ফিরে এমন ফলের পেছনে ব্যাটসম্যানদের বাজে ফর্মের দায় দেখছেন রকিবুল। তবে প্রস্তুতির ঘাটতি মানতে চান না তিনি।

গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৭ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টজুড়েই বেশ ধূসর ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্র। শেষ দুই ম্যাচে আরিফুল ইসলাম শতক করেছেন, শেষ ম্যাচে এসে প্রথমবার ২০০ পেরিয়েছে বাংলাদেশ। দল হিসেবে নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাটিং করতে পারেননি, রকিবুল বললেন সেটিই। সঙ্গে এল ভাগ্যকে পাশে না পাওয়ার ব্যাপারটিও।

গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৭ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ

আজ সন্ধ্যায় ফিরে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এ বাঁহাতি স্পিনার বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, গতবার চ্যাম্পিয়ন, এবার ভালোভাবে শেষ করতে পারিনি। প্রস্তুতি অনুযায়ী যে লক্ষ্য ঠিক করে গিয়েছিলাম, সেটা পূরণ করতে পারিনি। এখন বলতে গেলে, দল হিসেবে ব্যাটিংয়ের পরিকল্পনা ছিল, যে প্রক্রিয়া অনুযায়ী খেলার কথা ছিল, সেটি করতে পারিনি। বড় ম্যাচগুলোতে আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো করতে পারেনি। আগের সিরিজগুলোতে হয়তো ভালো ব্যাটিং করেছি, ভারতে গিয়ে ম্যাচ জিতেছি। ছন্দ তো সবারই কখনো কখনো কেটে যায়, ফর্ম চলে যায়। হয়তোবা এ টুর্নামেন্টে আমাদের ব্যাটসম্যানদের ফর্মটা অতটা ভালো যায়নি।’

এমনিতে নিজেদের ব্যাটিংকে শক্তির ঘাটতি দেখেন না রকিবুল, ‘এমন নয় যে আমাদের ভালো খেলোয়াড় ছিল না। ওরা ভালো খেলোয়াড়ই। হয়তোবা রান করতে পারেনি, এরপরও আরিফুল দুটি সেঞ্চুরি করেছে। দু-একজন শেষে এসে চেষ্টা করেছে। ভাগ্য পক্ষে আসেনি, পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’

গতবারের দলের সঙ্গে পার্থক্য করতে গিয়ে অবশ্য এবার কম ম্যাচ খেলার কথা বলেছেন দলের ব্যাটিং কোচ মেহরাব হোসেন (অপি)। ২০১৮ বিশ্বকাপের পর থেকে ২০২০ বিশ্বকাপের আগে ৩০টি যুব ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। অথচ এবারের দলটি বিশ্বকাপে গিয়েছিল মাত্র ১২ ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে।

বিশ্বকাপের সেরা দলে আছেন পেসার রিপন মণ্ডল

তবে এটিকে ‘অজুহাত’ হিসেবে দেখাতে চান না মেহরাব, ‘ওই দলে অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছিল। দুই বছরে তারা অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল। ওরা প্রস্তুতিতে ৪২টির (৩৭টি) মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল, সেটা আমরা করতে পারিনি।’ প্রস্তুতির শুরুতে গতবার আর এবারের দলে তেমন পার্থক্য ছিল না জানিয়ে বললেন, ‘গতবারের দলটিও শুরুতে এবারের দলের মতোই নড়বড়ে ছিল। তবে বিশ্বকাপের আগ দিয়ে ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে চিত্রটা বদলে যায়। সে ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে একটু এগিয়ে ছিল। তবে এটিকে কোনো অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাচ্ছি না।’  

অধিনায়ক রকিবুলের মুখেও একই কথা। গতবারের বিশ্বজয়ী দলের সঙ্গে এবারের অষ্টম হওয়া দলের শক্তিতে-প্রস্তুতিতে পার্থক্যের প্রশ্নে রকিবুলের উত্তর, ‘তেমন পার্থক্য নেই। এবারও বিশ্বকাপের আগে ২০টির মতো ওয়ানডে খেলেছি। আমার মনে হয় না প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। হয়তো গতবারের দলটি অনেক বেশি ম্যাচ খেলেছিল। বড় তিন জাতির টুর্নামেন্টে খেলেছিল, এশিয়া কাপের দুটি ফাইনাল খেলেছিল। তবে এবারও প্রস্তুতি আমাদের ভালোই ছিল। শুধু যে পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলার কথা ছিল, সেটি করতে পারিনি।’

ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সটা সব সময়ই ভালো লাগে। দল হিসেবে যদি আরও ভালো করতে পারতাম, প্রাপ্তিটা ভালো হতো। তবে যে যেখানেই খেলি না কেন, পরবর্তী সময়ে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।
রিপন মণ্ডল, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেসার

দলের পারফরম্যান্স খারাপ হলেও আইসিসির টুর্নামেন্টের সেরা দলে থাকা পেসার রিপন মণ্ডল অবশ্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার সঙ্গে বলছেন ভাগ্যকে পাশে না পাওয়ার কথাও, ‘শুরুতে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচে ব্যাটিংটা ভালো করতে পারিনি, যেটি আমরা মেনে নিয়েছি। ভারতের সঙ্গে কোয়ার্টার ফাইনালে টসটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ উইকেটটা অনেক ভেজা ছিল। টসটা জিততে পারলে ম্যাচের চিত্র অন্য রকম হতে পারত।’

বিশ্বকাপটা দল হিসেবে বাংলাদেশের জন্য স্মরণীয় না হলেও রিপনের জন্য দারুণ কেটেছে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের এমন টুর্নামেন্ট মানে বেশির ভাগের জন্যই নতুন অধ্যায়ে ঢুকে যাওয়া। রিপন অবশ্য ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ প্রত্যয়ই জানালেন, ‘ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সটা সব সময়ই ভালো লাগে। দল হিসেবে যদি আরও ভালো করতে পারতাম, প্রাপ্তিটা ভালো হতো। তবে যে যেখানেই খেলি না কেন, পরবর্তী সময়ে আমরা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’