For more cricket videos go to www.bongocricket.com.
আচ্ছা, ব্যাটসম্যানরা জানে কী বল আসছে, তার পরও ওকে খেলতে পারছে না কেন?
প্রশ্নটাতে কী যে স্বস্তি পেলেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে! এর আগ পর্যন্ত যে তাঁর দিকে প্রশ্ন নয়, যেন ছুটে যাচ্ছিল তির্যক বাক্যবাণ!
অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা সংবাদ সম্মেলনে আসেননি। না এসে ভালোই করেছেন। কয়েকজন ভারতীয় সাংবাদিকের প্রশ্ন শুনে মনে হলো, এমন একটা দিনের জন্যই বুঝি অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। বাংলাদেশ নাকি উন্নতি করেছে, কোথায় উন্নতি? মাঝখানে একটু ভালো করার পর বাংলাদেশ কি তাহলে আবার সেই পুরোনো দিনেই ফিরে গেল—এমন সব প্রশ্ন। এক সাংবাদিক ৫০ ওভারের গত বিশ্বকাপের কথাই ভুলে গিয়ে বলে ফেললেন, বাংলাদেশ কখনো বিশ্বকাপের নকআউট পর্বেই উঠতে পারেনি।
হাথুরুসিংহে খুব শান্তভাবে তাঁকে ২০১৫ বিশ্বকাপের কথা মনে করিয়ে দিলেন। অস্বস্তিকর অন্যসব প্রশ্নেরও উত্তর দিলেন ঠান্ডা মাথায়। চিন্নাস্বামীতে শেষ তিন বলের দুঃখের পর এমন একটা বাজে ম্যাচ—মাশরাফি কতটা পারতেন, কে জানে!
হাথুরুসিংহেকে একটু স্বস্তি দিল মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে প্রশ্নটা। জবাবে মুস্তাফিজের ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তার কথা বললেন। তাঁর বোলিংয়ে বৈচিত্র্যের কথা। ইয়র্কার, তীব্র গতি ও কাটার দারুণভাবে মিশিয়ে দেওয়ার কথা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক বছরও হয়নি। কিন্তু অনভিজ্ঞতা নিয়মিতই হার মেনে যাচ্ছে সহজাত প্রতিভা আর ক্রিকেটীয় বুদ্ধিমত্তার কাছে। ইডেনে বাংলাদেশের ভরাডুবির ম্যাচে একমাত্র আলোর রেখাও এই মুস্তাফিজ। যাঁর প্রশংসায় নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা পর্যন্ত পঞ্চমুখ। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বললেন, ‘মুস্তাফিজুর দুর্দান্ত, বিশেষ করে এ ধরনের উইকেটে। ওর স্লোয়ার বল এখানে আরও ভয়ংকর, সেটিকে ও ভালোভাবে কাজেও লাগিয়েছে।’
নিউজিল্যান্ড দল থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসে রস টেলরও মুস্তাফিজকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন। ইংলিশ কাউন্টিতে সাসেক্সে তাঁর সতীর্থ হতে যাচ্ছেন মুস্তাফিজ, এটা ভেবে রোমাঞ্চিত বলেও জানালেন। টি-টোয়েন্টি দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক। পাকিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকেই ২ উইকেট। এর পর থেকে ২ উইকেট নেওয়াটাকে একরকম নিয়মই বানিয়ে ফেলেছিলেন। পরের ১১ ম্যাচে আরও ছয়বার ২ উইকেট। সেই ‘২’-এর বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে কাল মুস্তাফিজ ৫ উইকেট নিয়ে ফেললেন।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের আর একজন বোলারই ম্যাচে ৫ উইকেট নিতে পেরেছেন। ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইলিয়াস সানির ৫ উইকেট এসেছিল ১৩ রান খরচে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পক্ষে সেরা বোলিংয়ের তালিকায় বাঁহাতি স্পিনার তাই বাঁহাতি পেসারের ওপরেই থাকছেন।
মুস্তাফিজুর পঞ্চম উইকেটটি নেওয়ার পরই এই রেকর্ড নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু হয়ে গেল। আরেকটি রেকর্ড নিয়েও যে এমন ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে, তখন তো আর সেটি অনুমান করার উপায় ছিল না। ৪৮ রানে ৭ উইকেট পড়ার পরই টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড খোঁজ পড়ল।
২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি। হ্যামিল্টনে খুব শীত পড়েছিল সেদিন। আর কাল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে কলকাতায় ভ্যাপসা গরম। দুই গোলার্ধের দুই শহরের নাম একই সঙ্গে উচ্চারিত হওয়ার মূলেও ওই রেকর্ড। হ্যামিল্টনে মাত্র ৭৮ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। চোখের পলকেই যা টপকে যায় নিউজিল্যান্ড। পুরো ম্যাচের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ২৫.৫ ওভার। এর ১৭.৩ ওভারই বাংলাদেশের ইনিংস।
হ্যামিল্টনেও ছিলেন, কলকাতায়ও আছেন—বাংলাদেশ দলে এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা চার। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ ৭৮ ও ৭০ দুটিতেই আছেন। তীব্র শীত, সবুজ উইকেট, অপরিচিত কন্ডিশনে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলেই মূল খেলায় ঢুকে পড়া—হ্যামিল্টনে এসব সান্ত্বনা ছিল। কিন্তু কলকাতায় ৭০ রানের কী ব্যাখ্যা? এখানে তো উইকেট-আলো-হাওয়া অনেকটা বাংলাদেশের মতোই ছিল।
ব্যাখ্যা হাথুরুসিংহের কাছেও নেই। বারবার শুধু বললেন, ‘আমাদের অ্যাপ্রোচে সমস্যা ছিল।’ ‘অ্যাপ্রোচে’র বাংলা কী হবে? আক্ষরিক অর্থ খুঁজে না পেলেও হাথুরুসিংহে যা বলতে চেয়েছেন, তা বুঝতে সমস্যা নেই। এই উইকেটে যে মেজাজে ব্যাটিং করা উচিত ছিল, সেভাবে করা হয়নি।
৩২ বলে ৪২ রান করেই যখন কোনো ব্যাটসম্যান (পড়ুন কেন উইলিয়ামসন) টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচসেরা হয়ে যান, তখন উইকেট বোঝাতে আর কিছু বোধ হয় বলতে হয় না। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেটির সঙ্গেই মানিয়ে নিতে পারলেন না। এমনকি এই ইডেনের উইকেটকে হাতের তালুর মতো চেনা সাকিব আল হাসানও না। হাথুরুসিংহে অবশ্য এর সম্ভাব্য একটা কারণ খুঁজে পাচ্ছেন, ‘উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো ছিল না। এখানে নিউজিল্যান্ডের রানটা একটু বেশি হয়ে গেছে। ১২০ হলে হয়তো অন্য রকম কিছুও হতে পারত।’
একের পর এক উইকেট পড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আস্কিং রেট। শট তাই খেলতেই হতো। কিন্তু পরিস্থিতি তা একটু হিসাব করে খেলার যে দাবি করছিল, তা মেটাতেই ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। নাকি চিন্নাস্বামীর শেষ তিন বলের ওই দুঃস্বপ্ন কালও তাড়া করছিল তাঁদের?
কে জানে!