চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা পাওয়ার আশা শেষ হয়েছে কবেই। এখন শীর্ষ ছয়ে থেকে ইউরোপা লিগে জায়গা করে নেওয়াটাই আসল চ্যালেঞ্জ। নতুন কোচ রায়ান গিগসের তত্ত্বাবধানে ইউনাইটেড এটিকেই পাখির চোখ করে এগোচ্ছে। এ জন্য লিগের শেষ তিন ম্যাচে তারা জয়ের জন্য আকুল। এই মুহূর্তে প্রচণ্ড রকমের মনঃসংযোগ প্রয়োজন, লাল সৈনিকেরা তাই যাবতীয় জনসংযোগমূলক কাজ থেকে দূরে থাকতে চাইছে।
ফলে এয়ারটেল উদীয়মান তারকারা একটু আশাহত। ইউনাইটেড তারকাদের সঙ্গে সম্ভবত হাত মেলানো আর কথা বলার সুযোগ হলো না। কত আশা নিয়ে বসে ছিল ইমন, সোহান, খোকন, অনীক, হাফিজ, মাহবুব, মাহদুদরা। রুনির সঙ্গে দেখা হবে, ফন পার্সি, ওয়েলবেক, ভিদিচ, রাফায়েল, মাতার সঙ্গে হাত মেলানো যাবে, কথাও বলা যাবে দু-একটা! কিন্তু বলেই দেওয়া যায়, সেটা আর হচ্ছে না। কী করে হবে? ওদের সঙ্গে দেখা করার জন্য নির্ধারিত দিন ছিল শুক্রবার। কিন্তু পরের দিন সান্ডারল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ বলে ওই দিনই তো দল হোটেলে উঠে যাবে। হোটেলে ওঠা মানে দেখা-সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ। এ জন্যই এআরএস প্রথম ব্যাচের প্রতি ঈর্ষা হচ্ছে এবারের শিক্ষার্থীদের। গতবার অনুশীলনের শেষ সেশনে ফার্ডিনান্ড, রাফায়েল ও রুনিরা খানিকটা সময় কাটিয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। ইউনাইটেড তারকাদের সঙ্গে ওই মুহূর্তটা তাদের কাছে ফ্রেমবন্দী হয়ে রয়েছে, চির-অমলিন স্মৃতি হয়ে রয়েছে মনের মধ্যে। এ রকম একটা ফ্রেম এবার পাওয়া যাবে না বলে এবারের শিক্ষার্থীদের মন খারাপ।
মন খারাপটা মাঠের বাইরে, ক্লাসের বাইরে। অনুশীলন ও কর্মশালায় এরাই আবার দারুণ খুশি। মিক বেনেট, অ্যান্ডি কানিংহ্যাম ও ড্যানি বারবার যেভাবে ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তা দরুন উপভোগ্য। কাল তৃতীয় দিনের অনুশীলনটাও যথারীতি আনন্দময় অভিজ্ঞতা হয়ে রইল ওদের কাছে। সকালে প্রথম সেশনের বিষয় ছিল রক্ষণ ও উইং প্লে। এক বনাম এক, দুই বনাম দুই, শেষে ফাইভ-এ-সাইড ম্যাচ খেলে কৌশলের প্রয়োগ দেখানো হলো। খেলোয়াড়দের বুঝতে অসুবিধা হলে কোচরাও তাদের সঙ্গী হয়ে গেলেন। ফুটবলের প্রতিটি পদক্ষেপে কত যে কৌশল লুকিয়ে থাকে, এটা দেখে বিস্মিত বাংলাদেশের খুদে ফুটবলাররা। ইমন বিশ্বাস সবিস্ময়ে বলেই ফেলল, ‘আমি বিকেএসপির ছাত্র। অনেক কিছুই আমাদের শেখানো হয়। কিন্তু এখানে এমন কিছু জানলাম যা আগে কখনো বুঝিনি।’
এই ইমন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসানের শহর মাগুরার ছেলে। আশ্চর্য যে, দেশে ক্রিকেটের এই পূর্ণগ্রহণের সময়েও ক্রিকেট তাকে টানে না। ইমন, তুমি সাকিবের শহরের ছেলে হয়েও ক্রিকেটার হলে না কেন? মাগুরার পাল্লার ছেলেটির মুখে ফুটে ওঠে একরাশ সারল্য, ‘আমি তো ক্রিকেট খেলে কোনো মজাই পাই না। ফয়সাল (সাকিব) ভাইও তো মাগুরায় ছুটি-ছাটায় এলে আমাদের সঙ্গে ফুটবল খেলেন। ওনার বাবাও এখনো আমাদের সঙ্গে খেলেন!’ এর মধ্যে তেমন শক্ত কোনো যুক্তি পাওয়া গেল না বুঝতে পেরে ইমন দৃঢ়তার সঙ্গে বলে যায়, ‘সাকিব ভাই যেমন মাগুরা থেকে ক্রিকেটার হিসেবে নাম করেছেন, আমিও ফুটবলার হিসেবে নাম করতে চাই। ফুটবল অনেক ভালো খেলা।’
ইমনের সঙ্গী বাকি ১১ জনেরই এক মত। কম্পিউটারের পরিভাষায় যেটিকে বলা যায় ‘কপি-পেস্ট।’
ভারতের ১১ জন খেলোয়াড়ও ফুটবল তারকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েই এসেছে ম্যানচেস্টারে। ওদের কয়েকজন রীতিমতো ক্রিকেট-বিদ্বেষী। কলকাতার ছেলে অর্ক দত্ত যেমন বলল, ‘আমরা তো সাধারণ ঘরের ছেলে, আমরা ফুটবলারই হতে চাই। বড়লোকের খেলা ক্রিকেট আমার ভালো লাগে না।’
ভারতীয় দলটির সঙ্গে বাংলাদেশের ছেলেদের জমেছে ভালো। একসঙ্গে অনুশীলন করছে ওরা। একসঙ্গে কর্মশালায় অংশ নিচ্ছে। শ্রীলঙ্কা দলটি এলে স্যালফোর্ড রেডসের প্রশিক্ষণ মাঠটা উপমহাদেশীয় চেহারাই নিত। ভিসা-জটিলতায় আসতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। অবশ্য এই দুই দলের খেলোয়াড়দের উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখেই বিস্মিত কোচরা। শ্রীলঙ্কা এলে চোখগুলো তাঁদের কপালেও উঠত কি না কে জানে। কর্মশালায় ফুটবল ছক নিয়ে আলোচনা হলো, কত ফর্মেশনে এখন খেলা হতে পারে, তার একটা তালিকা চাওয়া হলো বিভিন্ন গ্রুপের কাছে। সোহান ও অর্কের দল অনেকগুলোর মধ্যে একটা ছক দিল ৩-৩-৪। কোচরা জানতে চাইলেন, এ ছকে কোথায় খেলা হয়, সপ্রতিভ অর্ক ও সোহানের জবাব, ‘স্যার আমাদের পাড়ায় আমরা এই ছকে খেলি!’ কোচরা হেসে কুটিকুটি, ‘কী প্রতিভা, প্রতিভা!’
হ্যাঁ, ওদের মধ্যে প্রতিভা আছে। সেই প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলতে হবে। ওদের মহাভাগ্য যে, সেই প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলার কাজটা করছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সকার স্কুল!