বাংলাদেশ নিয়ে যাঁরা আশাবাদী, যাঁদের মধ্যে আমি নিজেকে সব সময় গণনায় রাখি, তাঁদের যদি কোনো মায়াবী সময়-ভ্রমণে ১৯৭১ সালের বিজয় দিবসে নিয়ে যাওয়া অথবা ফিরিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে একটা অদ্ভুত সময়ের মুখোমুখি তাঁরা হবেন, যাকে চার্লস ডিকেন্সের একটি উপন্যাসের বর্ণনাকারীর ভাষ্য অনুবাদ করে বলা যায়, ‘এটি ছিল সবচেয়ে ভালো সময়, এটি ছিল সবচেয়ে খারাপ সময়।’ দুই দশকের প্রস্তুতি নিয়ে, ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন হয়েছে, শীতের কুয়াশামাখা আকাশে উড়ছে সবুজ আর লাল পতাকা, উজ্জ্বল বাংলাদেশের মানচিত্রটাও আছে সেই পতাকায়। আজকাল একটা বড় কোনো খেলায় বাংলাদেশ জিতলে তরুণেরা উদ্বেলিত হয়ে পতাকা হাতে উদ্যাপনে নেমে পড়ে। সেই বিজয়ের দিনে যে আনন্দ আমাদের উদ্বেলিত করেছিল, সে ছিল একটি জাতির জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনের। স্বাধীনতা থেকে বড় অর্জন আর নেই, স্বাধীনতা উপভোগ করার আনন্দের থেকে বড় আনন্দ আর কিছু নেই। আজকের তরুণেরা সে আনন্দটা শুধু অনুমানই করতে পারবে, এটি নিজেদের ভেতর জাগানোটা তাদের জন্য কঠিন। তাদের অভিজ্ঞতায় এর তুল্য কিছু যেহেতু নেই।
স্বাধীনতার জন্য অবশ্য আমাদের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। লাখ লাখ প্রাণ, শূন্য বুকের চিরস্থায়ী বেদনা, সম্ভ্রম হারানোর ট্রমা। আনন্দের সঙ্গে মিশে গেছে কান্না আর হাহাকার। উদ্যাপনের প্রথম ঢেউটি কূলে পৌঁছে গেলে যে কিছুটা সময় পাওয়া গেছে সুস্থির চিন্তার, সেটি গেছে সেই কান্না আর বেদনা সামাল দিতে। এবং এই সত্য মেনে নিতে যে এই দেশে জন্ম নেওয়া, এর জল–হাওয়ায় বড় হওয়া কিছু মানুষ শত্রুদের সাহায্য করেছে আমাদের হত্যা করতে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিতে। তারা ঘরে ঘরে নিয়ে গেছে খাকি পোশাক পরা খুনি আর ধর্ষকদের। নিজেরাও এই অপকর্মে মেতেছে। অবিশ্বাস্য, কিন্তু সত্য।
সবচেয়ে খারাপ সময় বটে।
সেই সময়টাকে মেরামত করতে, সবচেয়ে ভালো সময়টাকে চিরস্থায়ী করতে আমরা কাজে নামলাম বটে, কিন্তু দেখা গেল চারদিকে শুধুই দেয়াল, শুধুই বাধা। একটা ভেঙে পড়া নগরকে বাসযোগ্য লোকালয়ে পরিণত করার জন্য অর্থ লাগে, বিনিয়োগ লাগে, সামগ্রী লাগে। এসবের কোনোটি না থাকলে একটা জাদুর চেরাগ অন্তত লাগে। আমাদের কিছুই ছিল না। তারপরও আমাদের যাত্রাটা শূন্য থেকে বিয়োগের দিকে যায়নি, যোগের দিকেই চলেছে। ধীরে ধীরে প্রাণটা জেগেছে। শরীরে বল এসেছে, ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করে একটা নতুন নির্মাণের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। দেশটাকে তলাহীন ঝুড়ি বলে বিদ্রূপ করেছেন পরাশক্তির এক মোড়ল। কিন্তু ঝুড়িটার তলার মেরামতি হয়েছে। ঝুড়ি ভরে ধান তোলার দিনের দিকে যখন যাচ্ছে দেশ, এর স্থপতিকে মেরে ফেলা হলো। তাঁর অরক্ষিত বাড়িতে তাঁকে হত্যা করতে যত সেনাসামন্ত পাঠানো হলো, তা দিয়ে একটা শত্রু শহরের দখল নেওয়া যায়। এবং যারা তাঁকে মারল, তাদের সহানুভূতি ছিল একাত্তরের সেই মানুষগুলোর জন্য, যারা শত্রুকে প্রভুর স্থান দিয়ে সেবা করে গেছে। অবিশ্বাস্য, কিন্তু সত্য।
সবচেয়ে খারাপ দিনই বটে।
খারাপ দিনের মিছিল শুরু হলো। সেই মিছিল যে কত অন্ধকার রাস্তা দিয়ে, নিকষ কালো সুড়ঙ্গ দিয়ে ভ্রান্ত দিকে, অচেনা দিগন্তে আমাদের নিয়ে গেল, তার হিসাব দেওয়াটাও কঠিন। তবে সেই অন্ধকারে মাসে মাসে আলো জ্বলল, শ্রেষ্ঠ সময়ের দাবিদার তরুণেরা ঝলসে উঠল। আমরা যে কঠিন তিমিরে তলিয়ে গেলাম না, তা এই তরুণদের জন্য।
একসময় গণতন্ত্র মুক্তি পেল। স্বৈরতন্ত্র নিপাত গেল। নূর হোসেনের মতো আলো ঝলসানো তরুণদের আত্মত্যাগ সময়টাকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনল, কিন্তু ভালো সময় কি ফিরল? অবিরাম হলো তার চলা?
না, তা হয়নি, এবং কেন হয়নি, তা মায়াবী ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে আমাদের সময়ে ফিরে এসে, আমরা অনুভব করি। এক রাজনীতিবিদ, পরিবহন ক্ষেত্রের ওজনদার এক নেতাও তিনি, হঠাৎ নূর হোসেন সম্বন্ধে অকারণ বিষোদ্গার করে বসলেন। অবিশ্বাস্য, কিন্তু সত্য। তিনি প্রমাণ করলেন, নূর হোসেন ও তাঁর মতো তরুণদের জন্য ক্ষমতা হারিয়ে আবার ক্ষমতায় এসেও তিনি (এবং তাঁর মতো অনেক রাজনীতিবিদ) ভালো-মন্দের পার্থক্যটা বুঝতে পারেন না। কেন সময় ভালো হয়নি, সবচেয়ে ভালো হওয়া তো দূরের কথা, তার একটি কারণ আমাদের রাজনীতি। এই রাজনীতিতে মূল্যবোধের জায়গা নেই, এই রাজনীতি ক্ষমতায় যাওয়ার এবং একবার গেলে, স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার। এই রাজনীতি গণমুখী নয়, সেবাধর্মী নয়, ত্যাগের নয়—এ রাজনীতি দল ও ব্যক্তিমুখী, শক্তি প্রদর্শনের এবং ভোগের। এ রাজনীতি যে অর্থনীতিকে লালন করে, তা পুঁজিনির্ভর, সে অর্থনীতি শোষণ এবং শোষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি জোগানোর। এই অর্থনীতি কলকারখানা তৈরিতে অর্থ জোগায়, যোগাযোগে, মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। এতে ধনীর সংখ্যা বাড়ে, তারা টাকার পাহাড় গড়ে, বিদেশের ব্যাংক ভরে দেয় দেশ থেকে পাচার করা টাকায়। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন–ভাতা দিতে এক শ রকমের আপত্তি তোলে। এদের অনেকে ব্যাংক লুট করে, কেউ কেউ মাদকের ব্যবসায় নামে। বাংলাদেশে ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার এখন এই উপমহাদেশের সব দেশের মধ্যে বেশি। ধনীরা এখন আর এক শ-দুই শ কোটিতে সম্পদ মাপে না, এখন তাদের পাল্লার বাটখারা শুরুই হয় হাজার কোটি দিয়ে। এই টাকা দিয়ে কেউ কেউ সংসদের আসন জোগাড় করে, মিডিয়ার আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিক হয়। লোভের এবং লাভের পাল্লায় ফেলে সবকিছু মাপলে যা হয়, দুর্নীতি বাড়ে। বাংলাদেশে এখন শস্যের চেয়ে বেশি ফলে দুর্নীতি।
ধনী যত ধনী হয়, গরিব তত গরিব হয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন অবশ্যই হয়েছে, অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবার ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। শহরগুলো চকচকে হয়েছে। রাস্তা হচ্ছে, পদ্মা সেতু হচ্ছে। পায়রা বন্দর হচ্ছে। এই উন্নয়নের যাঁরা কারিগর, যাঁরা এটি নিশ্চিত করেছেন, তাঁরা অবশ্যই আমাদের ধন্যবাদ এবং প্রশংসা পাবেন। কিন্তু উন্নয়নের সঙ্গে যে দারিদ্র্য বেড়েছে, বৈষম্য বেড়েছে, তার নিরসন কীভাবে হবে? বাংলাদেশ এখনো যে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ‘তীব্র ক্ষুধার’ দেশের কাতারে, তার কী হবে?
২.
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশের সংবিধান রচনার কাজটি শুরু করলেন, তাঁর সারা জীবনের রাজনীতির অভিজ্ঞতার আলোকেই তিনি তা করতে চাইলেন। তিনি বুঝেছিলেন, সমাজতন্ত্রের পথে অর্থনীতির চলা উচিত, যেমন গণতন্ত্রের পথে সরকারের ও রাষ্ট্রের এবং অসাম্প্রদায়িক পথে রাষ্ট্রের ও সমাজের। এসব অনুধাবন স্থান পেল সংবিধানে সন্নিবেশিত চার মূলনীতিতে। যদি নীতিগুলো বাস্তবায়ন শুরু হতো, তাহলে এই সময়ে এসে আমরা বলতে পারতাম, একাত্তরে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম, দেশ নিয়ে যা চেয়েছিলাম, যে পরিবর্তন, নতুন চিন্তা, নতুন নির্মাণ প্রত্যাশা করেছিলাম, সেসব অর্জন করার পথে আমরা আছি। এবং তা যদি ক্রমাগত করা যেত, তাহলে সবচেয়ে ভালো সময়টাতে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করতে পারতাম।
আবারও বলি, এই ৪৮ বছরে আমরা অর্জন কম করিনি—শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি—এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে আমাদের দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। এবং এই উন্নতির একটি বড় কৃতিত্ব আজকের সরকার দাবি করতেই পারে। কিন্তু উন্নতি—অথবা উন্নয়ন—তখনই অর্থবহ হয়, যখন দেশের সব মানুষ তার সুফল পায়, কেউ দরজার বাইরে থাকে না, কেউ বঞ্চিত হয় না। আর উন্নয়নকে শুধু অর্থনীতি বা পরিসংখ্যানের ফিতা দিয়ে মাপলে তো হয় না, উন্নয়ন হতে হয় নৈতিকতায়, শৃঙ্খলা ও আইনমনস্কতায়, সামাজিক আচারে, শিক্ষায় ও শিক্ষার সংস্কৃতিতে, মানবিকতা ও মূল্যবোধে, পরিবেশচিন্তায়। আরও কত ক্ষেত্রে। উন্নয়নের পরিসংখ্যানে কি পথশিশুরা জায়গা পায়, বয়স্ক, নারী এবং প্রতিবন্ধীরা গণ্য হন? উন্নয়ন কি নারীর সুরক্ষা ও সক্ষমতায়নকে গণনা করে? অথবা সুবিধাবঞ্চিত, নিপীড়িত পাহাড়ি জনগোষ্ঠী এবং আদিবাসীরা, প্রান্তে অবস্থান করা সংখ্যালঘুরা?
বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং কারাগারের রোজনামচায় তাঁর দেশ ও রাজনীতিচিন্তা, সমাজ ও নানা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, এবং দরিদ্রদের সেবা ও সুরক্ষা নিয়ে তাঁর চিন্তাগুলো তিনি তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু একটি কল্যাণরাষ্ট্র চেয়েছিলেন, এবং একটি সুষম ও বৈষম্যহীন অর্থনীতি। তাঁর প্রস্তাবিত ছয় দফাতে এর সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এবং দিকনির্দেশনা আছে। তিনি গণতন্ত্র চেয়েছিলেন, যে গণতন্ত্রে মূল দৃষ্টি থাকবে মানুষের দিকে, যেখানে বিরোধীকণ্ঠ স্তব্ধ হবে না, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও থাকবে অবারিত। তিনি ধনীর শোষণকে শ্রমিক-কৃষকের উন্নতির পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ভাবতেন, স্বার্থপরতাকে একটি রোগ হিসেবে দেখতেন, ভোগের চেয়ে ত্যাগকে ব্যক্তিগত জীবনে যেমন, রাজনীতিতে তেমন একটি অনিবার্য শর্ত হিসেবে দেখতেন। তিনি তো তাঁর রাজনৈতিক জীবনের এক–তৃতীয়াংশের বেশি সময় কাটিয়েছেন কারাগারে। একবার মুক্তি পেয়ে কারাফটক থেকে আরেক মামলায় ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। তিনি তো ভেঙে পড়েননি। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তিনি সংগ্রাম করেছেন। লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। মানুষ তাঁর সঙ্গে ছিল বলে তিনি তাঁর সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছেন।
একাত্তরে আমরা যে বাংলাদেশ চেয়েছিলাম, আজকের বাংলাদেশ যে তা নয়, আমাদের চারদিকে একবার চোখ বোলালে তা দেখতে পাই। কেন সেই বাংলাদেশ আমরা পাইনি, তার একটা ব্যাখ্যা ওপরে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন যদি আরও কিছু কারণ তুলে ধরতে হয়, বলা যায়, একটা দেশে গরিব মানুষ ন্যায়বিচার না পেলে, রাজনীতি বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করলে সমাজ স্থবির হয়ে পড়ে। আরও বলা যায়, প্রশাসনও এখন রাজনীতির দখলে, ফলে প্রশাসনে জবাবদিহির ও স্বচ্ছতার অভাব। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হয়ে পড়লে শুদ্ধাচার ও সুনীতিচর্চা কীভাবে বাড়ে? নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন—সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগ ওঠে। জাতীয় সংসদে কোনো কার্যকর বিতর্ক হয় না। নির্বাচনেও স্বচ্ছতা নেই। এই সব অস্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচারের অভাব তো চলছে সরকারের পর সরকারের আমল ধরে। এখনো ধর্ম নিয়ে রাজনীতি হয়, উগ্রপন্থার বিস্তার হয়। শুধু বিকাশ হয় না সুনীতির আর নৈতিকতার।
কেন সবচেয়ে ভালো সময়ের দেখা আমরা এখনো পাইনি, তা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সরকারগুলোর দিকে, রাজনীতির দিকে আমরা অভিযোগের আঙুল তুলি। এই আঙুল আমাদের নিজেদের দিকেও তো তুলতে হয়। আমরাও তো দুর্নীতি আর নানা অপচর্চাকে প্রতিদিনের আচরণে জায়গা করে দিয়েছি। যে মানুষ দুর্নীতির স্বাক্ষর রাখেন, সব কাজে, পরিবার থেকে কি তাঁর বিরুদ্ধাচরণ হয়, নাকি তিনি সমর্থন পান, যেহেতু তাঁর কাজে পরিবারের সম্পদ আর বিলাস বাড়ে?
সবচেয়ে খারাপ সময় নিশ্চিত করতে হলে আমাদের সবাইকে বদলাতে হবে।
৩.
১৯৭০-এর নির্বাচনে, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এই বিনিয়োগ যে জিডিপির অন্তত ৪ শতাংশ হওয়া উচিত, তিনি তা–ও বলেছেন। আমরা শিক্ষা থেকেই শুরু করতে পারি আমাদের বদলানোর উদ্যোগ। শিক্ষাকে, যাকে বলে ঢেলে সাজাতে হবে, শিক্ষাকে সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প হিসেবে দেখতে হবে। একই সঙ্গে সংস্কৃতিকে সতেজ করতে হবে। দুই বড় মেগা প্রকল্প, দুই বড় উদ্যোগ। কিন্তু শুরু করতে হবে। প্রকৃত শিক্ষা পারে একটি শিশুকে জীবনের জন্য তৈরি করে দিতে, তাকে আলোর পথটা দেখিয়ে দিতে। এখন যে শিক্ষা তারা পাচ্ছে, যে পদ্ধতিতে, যে পরিবেশে, এই কাজটি তা করতে পারবে না। সংস্কৃতি পারে ওই শিশুর ভেতর নৈতিকতা আর মানসিকতার বিকাশ ঘটাতে। এ দুই সাফল্য যদি আমরা আগামী ১০ বছরে অর্জন করতে পারি (এবং একজন শিক্ষক হিসেবে আমার বিশ্বাস, যদি রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক পর্যায় থেকে নিয়ে ব্যক্তিপর্যায়ের সদিচ্ছা একত্র হয়, সেটি সম্ভব), তাহলে আগামী বছর তার পরের বছর সবচেয়ে ভালো সময়টি উদয় না হলেও ১০ বছর পরে হবে।
দুটি সমন্বিত, আন্তরিক উদ্যোগ; দীর্ঘমেয়াদি, ঐকান্তিক উদ্যোগ, কিন্তু তাদের অভিঘাত বিশাল। এই দুই উদ্যোগ আমরা অবশ্যই নিতে পারি।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর এক লেখায় লিখেছিলেন, আমাদের পিপাসা আছে, পানীয় জলও আছে, কিন্তু আমরা পিপাসা মেটাতে ব্যর্থ। এবং তা দেখে দুনিয়া হাসে।
এই বিজয় দিবস থেকে শুরু হোক পিপাসা আর পানিকে মেলানোর আমাদের চেষ্টা।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম কথাসাহিত্যিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক