ভালো–মন্দে কেটে গেল ২০১৯। কেমন গেল, তা নিয়ে ইতিমধ্যে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। ২০২০ শুরু। সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য বছরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছর বিগত কয়েক দশকের মধ্যে ব্যস্ততার মধ্যে কাটবে সংস্কৃতি অঙ্গন। এর মূল কারণ মুজিব বর্ষ। বিদায়ী বছর থেকেই পরিকল্পনা, সভা, মতবিনিময় চলেছে। এ বছর সেসব বাস্তবায়ন হবে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করার জন্য দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি হলো ১০২ সদস্যবিশিষ্ট জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর সভাপতি। আরেকটি ৬১ সদস্যের জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি। জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এর সভাপতি।
সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা নিয়েছে। দেশের নামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। রয়েছে বেশ কিছু নতুন চলচ্চিত্র, উৎসবের খবর।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে দেশজুড়ে বছরব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ তথ্য জানিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। ৭ মার্চ থেকে সারা বছর চলবে নানা রকমের সাংস্কৃতিক আয়োজন। পাশাপাশি শিল্পকলা একাডেমি বেশ কিছু গবেষণা ও স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকাশ করবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতার বইও।
২০২০ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হবে। সেদিন থেকেই শুরু হবে মুজিব বর্ষের নানা আয়োজন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী জানান, এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলা উৎসর্গ করা হবে তাঁর নামে। তাঁর জন্মশতবর্ষকে মূল থিম ধরেই সাজানো হবে মেলার সব আয়োজন। প্রতিদিনের মেলা মঞ্চের আলোচনায় থাকবে শেখ মুজিবের কথা। মেলার বিন্যাসে কিংবা অঙ্গসজ্জায় ফুটে উঠবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি। সব মিলিয়ে বইমেলা হয়ে উঠবে মুজিবময়। আয়োজন সফলের লক্ষ্যে চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। হাতে নেওয়া হয়েছে জাতির জনককে নিয়ে রচিত ১০০টি গবেষণাধর্মী বই প্রকাশের বিশেষ কর্মসূচি। এসব বইয়ের মাধ্যমে উঠে আসবে বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন থেকে ছাত্র আন্দোলন, চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর অনুরাগ, উপন্যাস-কবিতায় চিত্রিত জাতির জনকের রূপকসহ বিবিধ বিষয়। এর মধ্যে ২০২০ সালের গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী দিনে প্রকাশিত হবে বঙ্গবন্ধু রচিত নতুন গ্রন্থ নয়াচীন ভ্রমণসহ ৩০টি বই। নয়াচীন ভ্রমণ গ্রন্থটির সম্পাদনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও বইটি প্রকাশ করবে বাংলা একাডেমি।
দেশের বাইরেও সাহিত্যের আলোয় উদ্যাপিত হবে মুজিব বর্ষ। সেই বাস্তবতায় ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার থিম কান্ট্রি হবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষকে উপজীব্য করে প্রথমবারের মতো এই মেলা কারও নামে উৎসর্গ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব
বছরটি শুরুই হবে সাংস্কৃতিক উৎসব দিয়ে। ৩ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দাবি, এটিই হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সাংস্কৃতিক উৎসব। সারা দেশ থেকে সংস্কৃতিকর্মীরা এখানে অংশ নেবেন। থাকবে অঞ্চলভিত্তিক আয়োজন। এ ছাড়া জাতীয় যন্ত্রসংগীত উৎসব, শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্য উৎসব, বিভাগীয় পর্যায়ে যাত্রা উৎসবের আয়োজন করবে শিল্পকলা একাডেমি।
ঢাকা আর্ট সামিট, দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী
বছরের শেষ মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে ১৯তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। ১৯৮১ সালে বরেণ্য শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনায় শুরু হয়েছিল এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে এই প্রদর্শনীর বৈশিষ্ট্য। শ্রীবৃদ্ধির ঘটার পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে প্রদর্শনীর কলেবর। সেই ধারাবাহিকতায় আগামী বছর হবে ১৯তম আসরটি।
এর আগে ফেব্রুয়ারির ৭ তারিখ থেকে জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হবে ঢাকা আর্ট সামিট। চলবে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশনের আয়োজনে চিত্রকলার এ আয়োজনে দেশ–বিদেশের ৫ শতাধিক শিল্পী অংশ নেবেন।
সুফি ফেস্ট হবে এ শীতে
বেশ কিছু উৎসবের কথা শোনা যাচ্ছে। জয় বাংলা কনসার্টের প্রস্তুতি চলছে, তবে তারিখটা জানা যায়নি। ব্লুজ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরহাদুল ইসলাম জানালেন, আনুশকা শঙ্করের একটা একক সন্ধ্যার পরিকল্পনা আছে তাঁদের। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে সুফি ফেস্ট। অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে এ দুটো অনুষ্ঠান হবে। ‘জয় বাংলা’ শিরোনামে কনসার্টটি বড় পরিসরে হতে পারে এ বছর। এ ছাড়া নভেম্বরে হতে পারে ঢাকা আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসব ‘ফোক ফেস্ট ২০২০ ’।
চলচ্চিত্রের মন্দাভাব কাটবে
গেল বছরটা মোটেও ভালো যায়নি। বছরটা বেশ কিছু বড় পরিসর বা আলোচনা করা যায়, এমন চলচ্চিত্র মুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে। নতুন বছরের প্রথম ছয় মাসে ডজনখানেক বড় বাজেটের ছবির মুক্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে অমিতাভ রেজা চৌধুরীর রিকশা গার্ল, গিয়াস উদ্দিন সেলিমের পাপ পুণ্য, ‘চয়নিকা চৌধুরীর বিশ্বসুন্দরী, মাহমুদ দিদারের বিউটি সার্কাস, ‘রুবাইয়াত হোসেনের মেড ইন বাংলাদেশ, কাজী হায়াতের বীর, ‘সৈকত নাসিরের ক্যাসিনো, মেজবাউর রহমানের হাওয়া, রবিন খানের মন দেব মন নেব, রায়হার রাফির দুটি ছবি পরাণ ও ইত্তেফাক, এম এ রাহিমের শান যৌথভাবে ফয়সাল আহমেদ ও সানী সানোয়ারের মিশন এক্সট্রিম, নুরুল আলম আতিকের পেয়ারার সুবাস, নাদের চৌধুরীর জ্বীন, শামীম আহমেদের দুটি ছবি শাহেনশাহ ও বিক্ষোভ, দীপংকর দীপনের অপারেশন সুন্দরবন, হাবিবুর রহমানের অলাতচক্র, শাহিন সুমনের একটু প্রেম দরকার, অঞ্জন আইচের আগামীকাল ও সাইফ চন্দনের ওস্তাদ নার্গিস আক্তারের যৈবতী কন্যার মন, রেজওয়ান শাহরিয়ারের নোনাজলের কাব্য, কামার আহমাদের নীল মুকুট ইত্যাদি।
দুই বছর আগে প্রথমবার সিনেমা প্রযোজনা করে বাজিমাত করেছেন অভিনয়শিল্পী জয়া আহসান। মুক্তির পর প্রশংসা কুড়িয়েছে ছবিটি, ব্যবসায়িক সফলতাও পেয়েছে। গুণী এই অভিনয়শিল্পীর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সি-তে সিনেমা থেকে এবার নির্মিত হবে ফুড়ুৎ। এবার তিনি একেবারে মৌলিক গল্পের পথে হাঁটছেন। ফুড়ুৎ সিনেমার প্রি-প্রোডাকশনের কাজ শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে ছবিটির বিস্তারিত কাজ শুরু হবে।