লন্ডনে প্রথম সংবাদ সম্মেলন

'মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধে আমরা এ মুক্তি অর্জন করেছি'

>
পািকস্তানের কারাগার থেকে মুক্তির পর লন্ডনে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে করমর্দনরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুিজবুর রহমান, ৮ জানুয়ারি ১৯৭২। ছবি: সংগৃহীত
পািকস্তানের কারাগার থেকে মুক্তির পর লন্ডনে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে করমর্দনরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুিজবুর রহমান, ৮ জানুয়ারি ১৯৭২। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের জেলবন্দী অবস্থা থেকে মুক্তির পর স্বাধীন দেশের নেতা হিসেবে এটিই বঙ্গবন্ধুর প্রথম সংবাদ সম্মেলন। স্থান লন্ডন, তারিখ ৮ জানুয়ারি ১৯৭২। ইংরেজিতে দেওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নোত্তরের উৎস ইউটিউব। সাংবাদিকদের করা অধিকাংশ প্রশ্নই শ্রুতিগম্য নয়। বঙ্গবন্ধুর কিছু উত্তরও অস্পষ্ট। অস্পষ্ট অংশে ‘...’ ব্যবহার করা হয়েছে। অনুবাদ করেছেন জাভেদ হুসেন

সাংবাদিক বন্ধুরা,

আজ মুক্তির সীমাহীন আনন্দ আমার দেশের মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে আর কোনো বাধা নেই। এক মহাকাব্যিক মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা এ মুক্তি অর্জন করেছি। বাংলাদেশের জনগণের এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় এ লড়াইয়ের চূড়ান্ত অর্জন। আমি যখন মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের জন্য এক সেলে বন্দী, তখন এ রাষ্ট্রের জনগণ আমাকে তাদের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে। আমি ছিলাম ফাঁসির দড়িতে প্রাণদণ্ডের অপেক্ষায়। বাংলাদেশের মানুষের মতো আর কেউ মুক্তির জন্য জীবন আর দুর্ভোগ দিয়ে এত মূল্য দেয়নি। আমার দেশের মানুষের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য আর একটি মুহূর্তের বিলম্বও আমি সইতে পারছি না।

দেশে-বিদেশে থাকা আমার বীর জনতাকে অভিনন্দন জানাই। বিশেষ করে অভিনন্দন জানাই মুক্তিবাহিনীর প্রতিটি অংশকে, যারা জনগণকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে গেছে তাদের বহু লালিত স্বাধীনতার লক্ষ্যে। আর আজ আমি শোক জানাচ্ছি মুক্তির সংগ্রামে প্রাণ হারানো লাখো শহীদের পবিত্র স্মৃতির প্রতি। সর্বশক্তিমানের কাছে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ হিসেবে এমন এক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা জন্ম নিয়েছি, যা এখন এক প্রশ্নাতীত বাস্তবতা। আমি সেই সব মুক্তিপ্রিয় রাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা আমাদের জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে সহায়তা করেছে, বিশেষ করে ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশ, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। আর সেই সঙ্গে ধন্যবাদ জানাই যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর সেই সব মুক্তিপ্রিয় জনগণকে, যাঁরা আমাদের লক্ষ্যকে সমর্থন করেছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানাতে, এর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে এবং অবিলম্বে জাতিসংঘে আমাদের অন্তর্ভুক্তি সমর্থন করতে এখন আমি সব রাষ্ট্রের কাছে আবেদন করছি।

পাকিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট জনাব ভুট্টোর সঙ্গে আমার আলোচনার সাপেক্ষে বলতে চাই, তিনি আমার এবং আমার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আমাদের মাঝখানে সম্ভাব্য যোগসূত্র বিবেচনা করতে খোলা আবেদন জানিয়েছেন। আমি বলেছি, আমার জনগণের মাঝখানে ফিরে যাওয়ার আগে এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি জোর দিয়ে বলেছি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অস্তিত্ব এক প্রশ্নাতীত বাস্তব। অবশ্যই যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ভিত্তি হবে এই মৌলিক বাস্তবতা।

ধন্যবাদ, ভদ্র মহোদয়গণ।

উত্তর: ১
কেন আমি লন্ডন হয়ে যাচ্ছি? আপনি কি জানেন না যে আমি একজন বন্দী ছিলাম?...এটা পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করেছে, শেখ মুজিবের ইচ্ছার ওপর নয়। অবশ্যই আমি ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা স্বাগত জানাব। কারণ, আমি এখানকার জনগণের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। আমি যখন জেলে ছিলাম, আমার জনগণ যখন বাংলায় নির্দয়ভাবে নিহত হচ্ছিল, তখন তাঁরা আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। কী ঘটেছে, সে ইতিহাস আপনারা সবাই জানেন। বাংলায় যা ঘটেছে, সেই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা শুনলে আপনারা বিস্মিত হয়ে যাবেন। তারা আমাকে...মার্চে গ্রেপ্তার করে, আর তা জারি থাকে অনেক মাস। নিষ্পাপ বালক-বালিকা, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীদের কী নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা অসম্ভব। আমার মনে হয়, এমনকি হিটলারও আজ বেঁচে থাকলে লজ্জা পেত।

উত্তর: ২
জেল খাটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আমি প্রায় ১০-১১ বছর জেল খেটেছি।...মানসিকভাবে আমি এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। একটা কথা মনে রাখবেন, যে মরতে প্রস্তুত, তাকে কেউ মারতে পারে না।

উত্তর: ৩
প্রশ্ন:
জনাব প্রেসিডেন্ট, কোন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, তা বিবেচনা না করে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে ইচ্ছুক পৃথিবীর যেকোনো দেশের সঙ্গে কি আপনি সম্পর্ক রাখতে ইচ্ছুক হবেন?
উত্তর: এ রকম যে কাউকেই আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাব।
প্রশ্ন: উদাহরণ হিসেবে ধরুন ইসরায়েল?
উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তর এখনই দিতে পারব না। আগে আমার জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

উত্তর: ৪
প্রশ্ন:
আপনার সঙ্গে কি দুর্ব্যবহার করা হয়েছে?
উত্তর: দুর্ব্যব্যহার বলতে কী বোঝাতে চাচ্ছেন? আপনি জানেন, আমি কোথায় ছিলাম? এর চেয়ে জঘন্য জায়গা আর হয় না। একে বলে মিয়ানওয়ালি জেল। কনডেম সেল, নির্জন কারাবাস। ইয়াহিয়া খানের সরকার আমাকে কোনো পত্রিকা দিত না। আমার পরিবারের কারও আমার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি ছিল না। কোনো রেডিও ছিল না। পৃথিবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। তবে যখন ভুট্টো এলেন, তিনি এগুলো দিলেন। এটা আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে।

উত্তর: ৫
আমি প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ধরে রাজনীতি করছি। যেদিন আমি জেলে গেলাম, সেদিন থেকেই জানি, আমি বেঁচে থাকি বা না থাকি, আমার বাংলাদেশের জনগণ মুক্ত হবেই। কেউ তা রুখে দিতে পারবে না।

উত্তর: ৬
প্রশ্ন:
বাংলাদেশ যে স্বাধীন হয়েছে, কীভাবে তা জানতে পারলেন?
উত্তর: এটা আপনি বুঝতে পারবেন...আমার মনে হয় জনাব ভুট্টো যখন আমার কাছে এলেন, তাঁর আলোচনা আর আমার সঙ্গে তাঁর কথা থেকে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে বাংলাদেশ তার নিজের সরকার গঠন করেছে। তার আগপর্যন্ত পৃথিবীতে কী হচ্ছে, তার কিছুই জানতাম না। চীন যে জাতিসংঘের সদস্য হয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ পেয়েছে, তার কিছুই জানতাম না।...আমি জানতাম যে সেনা বিমান নিযুক্ত হচ্ছে, আর যাকে বলে...ব্ল্যাক আউট হচ্ছে...এটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।

উত্তর: ৭
দুর্ভাগ্যজনকভাবে...আমি পৃথিবীর কাছে আবেদন করেছিলাম। লাখো লোক মারা যাবে, আমার সব সড়ক ও যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। আমার রেল যোগাযোগ ধ্বংস করা হয়েছে। হাজার হাজার গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার অর্থনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। আপনারা জানেন, বাংলা একটি সুন্দর দেশ। এটি সম্পদশালী। এর মাটি অসম্ভব উর্বর। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, বিদেশি শক্তির হাতে দেশটি শত বছর ধরে শোষিত হয়েছে। আমি মনে করি, আপনারা যাঁরা যুক্তরাজ্যের নাগরিক, তাঁরাও বাংলাদেশের দায় এড়াতে পারেন না। কারণ, আপনাদের সম্পদের ভান্ডারে আমরা বহু অবদান রেখেছি। আপনাদের বহু শিল্প বাংলার ওপর নির্ভরশীল ছিল। আমি আপনাদের কাছে আবেদন করি, মানবতার খাতিরে পৃথিবীর সব সম্পদশালীকে আহ্বান করি, আমার লাখ লাখ ক্ষুধার্ত জনতাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসুন; কারণ, তারা মারা যাচ্ছে। আমি জানি না কীভাবে তা হলো...

উত্তর: ৮
প্রশ্ন:
জনাব শেখ মুজিব, আপনি কবে বাংলাদেশে ফেরার পরিকল্পনা করছেন?
উত্তর: এখনো আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। কাল হতে পারে, পরশু হতে পারে, আরও দু-তিন দিন পরেও হতে পারে। কীভাবে গোছাতে পারি, তার ওপর নির্ভর করছে।

উত্তর: ৯
আমি পৃথিবীর সবার সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রাখব।

উত্তর: ১০
প্রশ্ন:
জনাব শেখ মুজিব, আপনি কি মনে করেন, পাকিস্তানিদের করা অপরাধের জন্য কারও বিচার হওয়া উচিত?
উত্তর: আমি মনে করি, জনাব ভুট্টো তা করবেন। তাঁর সেটা করা উচিত।...(নুরেমবার্গ ট্রায়ালে) যুদ্ধের পরেও বহু মানুষকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে। ইয়াহিয়ার শাসনে বাংলায় যা হয়েছে, আমি মনে করি তারও কিছু একটা হওয়া উচিত। আর সেটা তাঁদের ওপরই নির্ভর করে।...কারও বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া...আমার জনগণ স্বাধীন। পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের ওপর আমার কোনো বিদ্বেষ নেই। আমি তাদের ভালোবাসি, শ্রদ্ধাও করি। তাদের প্রতি আমার সহানুভূতি আছে। আমার দায়িত্বে যেসব কর্মকর্তারা ছিলেন, তারা সুন্দর ও নম্রভাবে আমার সেবা করেছে। তবে ইয়াহিয়া খানের অভিপ্রায় অবশ্যই মন্দ ছিল। কিন্তু জনগণের বিরুদ্ধে আমার কোনো বিদ্বেষ নেই। তবে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, আর একসঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। তারা আমার জনগণের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, ভদ্র মহোদয়গণ, তা আমার পক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আপনারা জানেন, আমাকে গ্রেপ্তার করার সময় আমার বাড়িতে মেশিনগানের গুলি চালানো হয়েছে? আপনারা জানেন, তারা আমার সন্তানদের গ্রেপ্তার করেছে, আটকে রেখেছে? আপনারা কি জানেন, আমার সব নেতার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে? আপনারা জানেন, শত শত হাজার হাজার গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, শিশুদের হত্যা করা হয়েছে? কীভাবে তা সম্ভব, বলুন আমাকে? বলুন আমাকে? আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, সমগ্র পাকিস্তানে আমরা ছিলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ। ভদ্র মহোদয়গণ, আপনারা জানেন, সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগুরুর নেতা ছিলাম আমি। আর আমার দলটি ছিল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। বাঙালিরা যে পাকিস্তান শাসন করবে, তারা সেটা সহ্য করতে পারেনি। আমি তো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলাম। নিজেদের শাসন চিরস্থায়ী করতে, ঔপনিবেশিক শক্তি হয়ে বাংলাকে শোষণ করতে তারা আমার সঙ্গে খেলা খেলেছে, নোংরা খেলা। বাংলাকে তারা চিনতে পারেনি। ব্রিটিশরা তাদের চেনে। এখন থেকে পশ্চিম পাকিস্তানও জানবে, বাংলা মানে কী?

উত্তর: ১১
জনাব ভুট্টোর জন্য আমার শুভকামনা। আমি আশা করি, জনাব ভুট্টো সেখানে তার প্রশাসন চালিয়ে যেতে পারবেন। তাঁর জন্য আমার শুভকামনা রইল।

উত্তর: ১২
আমি তিনটি জিনিসে বিশ্বাস করি—গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের অর্থনীতি।

উত্তর: ১৩
আমি সবে জেল থেকে বের হয়েছি। আমি বন্দী ছিলাম, অনেক কিছুই আমার জানা নেই। আমাকে দেখতে হবে। এই দশ মাসে কী হয়েছে, তা আমার জনগণের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তারপর আমি বলতে পারব। তবে যতটা আমি জানি, আমি বিশ্বাস করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ অবশ্যই বাংলার মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে। তাদের প্রশাসন কী করেছে, আমি জানি না। এটা তাদের দায়।

উত্তর: ১৪
আমার জনগণকে পুনর্বাসন করতে সারা বিশ্বের সবাইকে, সব বিদেশিদের আমি স্বাগত জানাই। এর মানে এই নয় যে কেউ আমাদের ওপর কিছু চাপিয়ে দিলে আমি তা মেনে নেব।...লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে, অনেকে মারা যেতে পারে। কিন্তু আমি আবার স্বাধীনতা হারাতে চাই না।

উত্তর: ১৫
আশা করি আমি বলব। আমি এখন পর্যন্ত যতটা বুঝতে পারছি; কারণ, আমি ফিরে যাচ্ছি। আর মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর আচরণ যতটা বুঝতে পারছি, নিশ্চিতভাবে তিনি বাংলা থেকে তাঁর সেনা প্রত্যাহার করবেন।

উত্তর: ১৬
বাধ্য হয়েছেন। তিনি নিজেই দিয়েছেন। কেন যে তিনি আমায় ছেড়ে দিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন। আমি তাঁর পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলতে চাই না। তাঁকে আমি শুধু শুভকামনা জানাতে চাই।

উত্তর: ১৭
আমি ঢাকায় যাচ্ছি। বিমানের জন্য এক ঘণ্টা থামলাম। আমাকে সেই পথে যেতে হবে। এটা আমার...যদি সেখানে নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। কিছু বলতে পারছি না, আমার পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

উত্তর: ১৮
শারীরিকভাবে বলতে আপনি কী বোঝাচ্ছেন? যা সম্ভব ছিল, তারা তা-ই করেছে। আপনি কি জানেন...একটা সেলে, ফাঁসির আসামির জন্য রাখা সেলে, নির্জন কারাবাসে, একটা মরু এলাকায়, তীব্র গরমে...এটা কি শারীরিক নির্যাতন নয়? এটা যদি শারীরিক নির্যাতন হয়, তাহলে তারা আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে। তবে কেউ আমাকে স্পর্শ করেনি, এটা অবশ্যই বলতে হবে।

উত্তর: ১৯
না, কোনো চিঠি নয়, কোনো তথ্য নয়।...ব্ল্যাক আউট, আর এক সাজানো বিচার।

উত্তর: ২০
একটা কথা, সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আমি সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে সহযোগিতার সব...। যারাই আমার জনগণ বা আমার সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, অবশ্যই আমি তাদের পাশে দাঁড়াব।

উত্তর: ২১
আমি বাংলায় যাচ্ছি। আমি এ বার্তা পৌঁছে দেব।

উত্তর: ২২
আপনারা জানেন...এই গত রাতে, এই সকালে আমি এসেছি। আমি একজন স্বাধীন মানুষ...। আপনারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির ব্যাপারে, দেশের পরিস্থিতির ব্যাপারে জানেন। আমি তো পুরো বিশ্ব থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আমাকে সবকিছু পড়তে হবে, কী অবস্থান আমাকে দেখতে হবে। তবে একটা কথা আপনাদের খোলাখুলি বলি, আমার জনগণ খুব শান্তিপ্রিয়। তারা যে প্রচারণা চালাচ্ছে, সেটা সঠিক নয়। আমি নিশ্চিত, ওখানে বাস করা একজন অবাঙালিকেও আমার জনগণ স্পর্শ করবে না। আমি জানি, আমার জনগণ তাদের জীবন, তাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে।

উত্তর: ২৩
আমি দেখা করতে পারি। সম্ভাবনা আছে।...গতবার যখন আমি দেখা করি, আমি কেউ ছিলাম না। কিন্তু যুক্তরাজ্য সরকার সব সময়ই আমার প্রতি সদয়াচরণ করেছে।

উত্তর: ২৪
(বাংলাদেশে) বিশেষভাবে অর্থনৈতিক সমস্যা।

উত্তর: ২৫
তাহলে আমাকে দর্শন, অর্থনীতি—এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে হবে। সরকার...তারা যেভাবে দেশকে উন্নত করেছে...জনগণকে...বাংলাতেও তা করা হবে।

উত্তর: ২৬
প্রশ্ন:
জনাব শেখ মুজিব, ঢাকা থেকে আমাদের খবরে জানছি, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম ঘোষণা করেছেন যে সরকার সব ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স, বৈদেশিক ব্যবসা ও অন্যান্য...শিল্প রাষ্ট্রায়ত্ত করবে। আপনি কি এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করবেন?
উত্তর: আপনার কি মনে পড়ে, এটা আমার দলীয় ইশতেহার ছিল যখন নির্বাচনে লড়ি? এই মানুষগুলো...তারা যে সরকার গঠন করেছে, তার ওপর আমার আস্থা আছে। তারা আমার সহকর্মী, আমার সমর্থক। তারা যা-ই করবে, তার ওপর আমার পূর্ণ আস্থা আছে। কারণ, তাদের আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তাদের প্রায় প্রত্যেকেই বহু বছর জেল খেটেছে। বহু বিপত্তি পার হয়ে তারা এসেছে।

উত্তর: ২৭
আমি আপনাদের আগেই বলেছি। আমার মনে হয় আপনার তো সন্তুষ্ট হওয়ার কথা, যখন আমি বললাম যে আমি একজন বন্দী ছিলাম। এটা তো আমার ইচ্ছায় বা আকাঙ্ক্ষায় হয়নি।

উত্তর: ২৮
হ্যাঁ, সে বিষয়ে আমি অনুসন্ধান করছি (পাকিস্তানে কোনো বাংলাদেশি আটকে আছে কি না)। অনেকেরই থাকার সম্ভাবনা আছে।

উত্তর: ২৯
দেখা যাক। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব। তা ছাড়া জনসংখ্যার সাপেক্ষেও এটি পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। এর জনসংখ্যা সাড়ে আট কোটি। আর যদি মুসলিম দেশের কথা বলেন, তাহলে এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। অবশ্যই আমি চাই মধ্যপ্রাচ্যসহ সব মুসলিম রাষ্ট্র অবিলম্বে আমাদের স্বীকৃতি দিক, আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করুক।

উত্তর: ৩০
এ বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাই না। জনাব ভুট্টো জানেন; কারণ, তাঁরা আমাকে ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিলেন।...ইয়াহিয়া খান তা করার চেষ্টা করেছিলেন। আমার মনে হয়, নতুন সরকার এসে সেটি করতে অস্বীকৃতি জানায়।

উত্তর: ৩১
আপনারা জনাব ভুট্টোর কাছে এসব রিপোর্ট পেতে পারেন যখন সেগুলো...। আমি সেগুলো দেখিনি; কারণ, তারা আমাকে কিছুই দেখায়নি...

উত্তর: ৩২
বিচারের মাঝখানে আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানাই। আমি বলি, এটা একটা সাজানো বিচার। আমি আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করিনি। আমি জনাব ব্রোহিকে আদালত কক্ষ ছেড়ে যেতে বলি; কারণ, আমার পক্ষে কোনো আইনজীবীর প্রয়োজন নেই। অভিযুক্ত আত্মপক্ষ সমর্থন করতে অস্বীকৃতি জানাল। কিন্তু ইয়াহিয়া খানের পাকিস্তান সরকার বলল, না, তাঁকে অবশ্যই আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে। জনাব ব্রোহিকে অভিযুক্তের পক্ষে নিযুক্ত করা হলো। কিন্তু অভিযুক্ত বলল, আমার পক্ষে কোনো কৌঁসুলির দরকার নেই। আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে চাই না; কারণ, আমি ন্যায়বিচার আশা করছি না। বুঝতেই পারছেন, একে বলে সাজানো বিচার।

উত্তর: ৩৩
প্রশ্ন:
এ বিচারের কীভাবে সুরাহা হলো, জনাব প্রেসিডেন্ট?
উত্তর: একজন বেসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল।

উত্তর: ৩৪
আমার মনে হয়, এখন আর দরকার নেই। কারণ, নির্বাচনের এক বছর আগে ৯৮ শতাংশ, ৯৮.৭ শতাংশ আসন আমি পেয়েছি, আমার দল পেয়েছে।

উত্তর: ৩৫
হতে পারে। আমি তেমন আশা করি। যদি সুযোগ পাই, অবশ্যই আমি দেখা করব।

উত্তর: ৩৬
এখনো না। হতে পারে, আমি বিদায় নেওয়ার আগে। যদি তিনি সময় বের করতে পারেন। তার চেয়ে বড় কথা, তিনি তো ব্যস্ত থাকেন।

উত্তর: ৩৭
প্রশ্ন:
আপনি কত দিন থাকবেন?
উত্তর: এখনো বলতে পারছি না। সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।...ধন্যবাদ ভদ্র মহোদয়গণ। আপনারা জানেন, যে সারা রাত ভ্রমণ করে সকালে পৌঁছেছি। ক্ষমা করবেন।