‘শুধু আশরাফুল একা নন’। লাল হরফে মোটা শিরোনাম। সঙ্গে সম্পুরক আরও দুটি প্রতিবেদন। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে সেদিন প্রচণ্ড এক ঝাঁকুনি দিয়েছিল প্রথম আলোর প্রথম পাতার বোমা ফাটানো সে খবর।
২০১৩ সালের ৩১ মে প্রথম আলোর সেই প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্ধকার এক জগতের কথা। বিপিএলে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের ক্রিকেটার ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। আইসিসির তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে শুধু নিজে স্বীকারোক্তি দেননি, বলেছেন এর সঙ্গে জড়িত আরও অনেকের নামই। আর বিপিএল তো শুধু নয়, আশরাফুল স্বীকার করে নেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও এই অপকর্ম করেছেন তিনবার।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত সেই চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন শুধু ক্রিকেটের অন্ধকার জগৎকেই আলোতে আনেনি, উৎপল শুভ্রর ওই প্রতিবেদন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যও সেটি ছিল বড় এক সতর্কবার্তা। তখনই বাংলাদেশের ক্রিকেটের নীতিনির্ধারকেরা অনুধাবন করতে পারেন, দুর্নীতি দমন আইন প্রয়োজন এই দেশের ক্রিকেটেও। আশরাফুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি তাই পরের বছরই করা হয় বিসিবির দুর্নীতি দমন নীতিমালা।
প্রথম আলো এর আগেও একবার বাংলাদেশের ক্রিকেটকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ২০০৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম পাতায় ছাপা হয় ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে আইসিএলের থাবা।’
এই ঘটনা আগে থেকে জানতেন শুধু ১৪ জন ক্রিকেটার, যাঁরা দেশের ক্রিকেটের মায়া ত্যাগ করে আইসিএলে পাড়ি জমিয়েছিলেন। উৎপল শুভ্র তাঁর প্রতিবেদনের প্রথম লাইনে লিখেছিলেন, ‘আজকালের মধ্যেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে বড় এক বিস্ফোরণ ঘটতে যাচ্ছে।’
সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে জাতীয় দলের বেশ কয়েকজনসহ ১৪ জন ক্রিকেটার নাম লেখান ভারতের নিষিদ্ধ লিগ আইসিএলে। এর মধ্যে যাঁরা বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন, তাঁরা ওই দিন সকালেই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে গিয়ে চিঠি দিয়ে আসেন।
‘বিদ্রোহী’রা চলে গেলেন বিদ্রোহী লিগে। অসহায় অবস্থায় পড়ে গেল বাংলাদেশের ক্রিকেট। বিসিবি জানাল কঠিন সিদ্ধান্ত, আইসিএলে যাওয়া ক্রিকেটাররা ১০ বছরের জন্য বহিষ্কার। এদিকে জাতীয় দলকে নতুন করে গঠনের চ্যালেঞ্জও সামনে। সে কাজটি অবশ্য বিসিবি মোটামুটি খারাপ করেনি। আইসিএলে ১৪ ক্রিকেটার চলে যাওয়ার পর প্রথম ম্যাচেই তারুণ্য নির্ভর বাংলাদেশ দল হারিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ডকে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আইসিএলে চলে যাওয়ার খবর সেদিন শুধু প্রথম আলোতেই ছাপা হয়েছিল। এরপর বছরজুড়ে ধারাবাহিক ফলোআপ চলল প্রথম আলোসহ সব সংবাদমাধ্যমে। চাঞ্চল্যকর এই প্রতিবেদন শতভাগ সঠিকভাবে কাগজের পাতায় তুলে আনতে সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করেছে প্রথম আলোর ক্রীড়া বিভাগ।
আইসিএল বন্ধ হয়ে গেলে পরের বছরের জুনে। বিসিবি ১৪ ক্রিকেটারের ওপর থেকে বহিষ্কারাদেশ তুলে নিলেও আজ ১১ বছর পরও যখন ওই ঘটনা আলোচনায় আসে, কথা হয় প্রথম আলোর প্রথম পাতার সেই সাড়া জাগানো খবর, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে আইসিএলের থাবা’ নিয়েও।