পরিব্রাজক টাভারনিয়ার লিখেছেন, ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহম্মদ আলী ভারতবর্ষ থেকে দেশে ফেরার সময় সম্রাটের জন্য অনেকটা উটপাখির ডিমের মতো একটি নারকেলের খোল নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা খোলার পর দেখা গেল, এর ভেতর রয়েছে ৬০ হাত দীর্ঘ ঢাকাই মসলিন। সে সময় একটি সরু আংটির ছিদ্রের ভেতর দিয়ে ৩ গজ প্রস্থ ও ২০ গজ দৈর্ঘ্যের কাপড় টেনে নেওয়া যেত—এমন গল্প প্রচলিত আছে। এসব কিংবদন্তির সত্য-মিথ্যা নিরূপণ করা দুরূহ। কিন্তু একটা বিষয় বেশ স্পষ্ট—বাংলার মসলিন এমন এক উৎকর্ষে পৌঁছেছিল, যা প্রায় অবিশ্বাস্য!
প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ড যেসব কারণে পৃথিবীব্যাপী আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছিল, তার অন্যতম প্রধান হলো বয়নশিল্প। খ্রিষ্টপূর্বকাল থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত কালপর্বকে বলা যায় বাংলাদেশের বয়নশিল্পের সোনালি সময়, যা আজও বাংলাদেশের মানুষকে স্মৃতিকাতর ও গৌরবান্বিত করে। শত শত বছর ধরে অতিসাধারণ স্থানীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে গর্ত তাঁতে বাংলাদেশের তাঁতিরা যেসব উৎকৃষ্ট বস্ত্র বয়ন করতেন, তা ভেবে বিস্মিত হতে হয়। শুধু তা–ই নয়, বিভিন্ন দেশের বণিক ও পর্যটকদের বিবরণ থেকে জানা যায়, এর পরিমাণও ছিল বিপুল এবং তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হতো। জন টেলর আঠারো শতকের মাঝামাঝি (১৭৪৭) ঢাকাই মসলিন বাণিজ্যের যে বিবরণ দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, এর পরিমাণ ছিল বছরে প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ আর্কট টাকা (আর্কট টাকা=১৭০ থেকে ১৭১ গ্রেনের খাঁটি রুপার মুদ্রা)। উল্লেখ্য, সে সময় টাকায় সোয়া এক মণ ভালো মানের চাল পাওয়া যেত। ফলে টাকার হিসাবে সংখ্যাটা উল্লেখযোগ্য বটে। আর দেশি-বিদেশি বণিকদের মাধ্যমে এই বস্ত্র ছড়িয়ে পড়ত সারা পৃথিবীতে। কোনো কোনো গবেষক সে জন্য মনে করেন, সে সময় বাংলা ছিল ‘পৃথিবীর তাঁতঘর’।
অবিভক্ত বাংলায় ঠিক কবে তাঁতশিল্পের সূত্রপাত হয়েছে, তা অবশ্য নির্দিষ্ট করে জানা যায় না। তবে বিভিন্ন প্রত্ন-প্রমাণ, সাহিত্যিক সূত্র ইত্যাদি পর্যালোচনা করে মনে হয়, অন্তত আড়াই হাজার বছর আগে এই ভূখণ্ডে তাঁতশিল্প বেশ ভালোভাবেই বিকশিত হয়েছিল। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর গ্রন্থ। এ ছাড়া মেগাস্থিনিসের ইন্ডিকা, অজ্ঞাত লেখকের দ্য পেরিপ্লাস অব ইরিথ্রায়েন সি ইত্যাদি গ্রন্থে তাঁতবস্ত্র ও বাণিজ্যবিষয়ক নানা তথ্য জানা যায়। তাঁতযন্ত্র ও তাঁতির উল্লেখ আছে চর্যাপদে। বিভিন্ন মঙ্গলকাব্যেও নানা ধরনের তাঁতবস্ত্রের কথা জানা যায়।
২.
খ্রিষ্টপূর্বকাল থেকে একুশ শতক—এই দীর্ঘ কালপর্বে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বয়নশিল্প নানা পরিবর্তন ও বিবর্তনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আজও স্বমহিমায় বিদ্যমান। আঠারো শতকে ইউরোপে শিল্পবিপ্লব, ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের বৈরী বাণিজ্যনীতি ইত্যাদি নানা কারণে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বয়নশিল্প উনিশ শতকে সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছিল। মোটামুটি বিশ শতকের আগেই সূক্ষ্ম মসলিনের বিলুপ্তি ঘটেছিল।
কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি আত্মস্থ করেন বাংলাদেশের বয়নশিল্পীরা এই শিল্পের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন। কৃৎকৌশলের নিরিখে তেমন কোনো পরিবর্তন ছাড়াই ধারাবাহিকভাবে যা একই কৌশলে উৎপাদিত হয়, তা হলো জামদানি। নকশাদার জামদানি হলো মসলিনের একটি ধরন। এটা আজও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ-সোনারগাঁ-সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় তৈরি হয় সনাতন গর্ত তাঁতে। নকশাদার জামদানি হলো মসলিনের একটি ধরন। মোগল সম্রাটেরা, বিশেষত সম্রাজ্ঞী নুরজাহান মসলিন ও জামদানির বিশেষ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সম্প্রতি ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলে উৎপাদিত জামদানি ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি হিসেবে ইউনেসকো থেকে স্বীকৃতি লাভ করেছে। এমনকি ২০১৬ সালে জামদানির জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন) বা ভৌগোলিক নির্দেশক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে বাংলাদেশ।
বিশ শতকের প্রথমার্ধে তাঁতশিল্পের উন্নতিকল্পে ঔপনিবেশিক শাসকদের উদ্যোগে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বয়ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন নতুন প্রযুক্তি (যেমন ফ্লাই শাটল লুম বা ঠকঠকি তাঁত, কৃত্রিম রঞ্জনপদ্ধতি, ডবি, জ্যাকার্ড মেশিন ইত্যাদি) প্রচার ও প্রসারে এই বয়ন বিদ্যালয়গুলোর বিশেষ ভূমিকা আছে। আর এই নতুন প্রযুক্তি আয়ত্ত করে নান্দনিক বস্ত্রবয়নে টাঙ্গাইলের বসাক বয়নশিল্পীরা বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। টাঙ্গাইলের বয়নশিল্পীরা আসলে ঢাকা ও ধামরাই অঞ্চলের মসলিন তাঁতি, যাঁরা উনিশ শতকে বস্ত্র ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলে পৃষ্ঠপোষকের সন্ধানে ভ্যাগ্যান্বেষণে টাঙ্গাইলে চলে গিয়েছিলেন। এই দেশান্তরি বয়নশিল্পীদের একটা অংশ আবার দেশভাগ ও মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে (ফুলিয়া, নবদ্বীপ) চলে গিয়ে সেখানে নতুন আবাস গড়ে তুলেছে। টাঙ্গাইল শাড়ির খ্যাতি সর্বজনবিদিত। এ ছাড়া রয়েছে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা, কুষ্টিয়া ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তাঁতকেন্দ্র। পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের গামছা, লুঙ্গি, শাড়ি; নরসিংদীর চাদর, গামছা, থান কাপড়; কুমিল্লার খাদি; কুষ্টিয়ার গামছা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি বিখ্যাত। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কমবেশি তাঁতের প্রচলন আছে। প্রধানত বিভিন্ন হাটের মাধ্যমে এসব তাঁতপণ্য বিক্রয় ও বিপণন হয়ে থাকে। ঢাকার ডেমরা ও তারাব, নরসিংদীর বাবুর হাট, টাঙ্গাইলের বাজিতপুর ও করটিয়া, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও বেলকুচি, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও পোড়াদহ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তাঁতের হাট।
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষেরা একসময় নিজেরাই নিজেদের জন্য প্রয়োজনীয় সব বস্ত্র তৈরি করত কোমর তাঁতে। প্রায় সব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর আছে নিজস্ব নকশা ও মোটিফ। তাদের মধ্যে তাঁতি হিসেবে নারীদের আধিপত্য একচেটিয়া। পার্বত্য এলাকায় পুরুষেরা তাঁতের কাজ করেন না। তবে সাম্প্রতিক কালে নরসিংদী অঞ্চলের কিছু দেশান্তরি পুরুষ বয়নশিল্পী পার্বত্য এলাকায় কাজ করছেন।
সিলেটের মণিপুরিদের তাঁতের সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে এবং তারা সেটা কিছু মাত্রায় এখনো চর্চা করে। তবে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ঘটেছে প্রায় সবখানেই। ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা অঞ্চলের মান্দিদের তাঁতযন্ত্রটি কিছুটা ভিন্ন। মান্দিরা ব্যবহার করে ভূমিতে সমান্তরাল তাঁত। তবে বর্তমানে (২০১৯) এই তাঁতের প্রচলন প্রায় নেই বললেই চলে।
৩.
আগেই বলা হয়েছে, আঠারো-উনিশ শতক পর্যন্ত বাংলা ছিল ‘পৃথিবীর তাঁতঘর’। বিশ্বব্যাপী নানা এলাকায় তখন বাংলায় উৎপাদিত তাঁতবস্ত্র রপ্তানি হতো। সতেরো ও আঠারো শতকে বাংলার বস্ত্রশিল্প বিপুল পরিমাণে ইংল্যান্ডের বাজার দখল করলে ব্রিটিশ তাঁতিদের ভেতর এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট তাঁতিদের প্রতিবাদের মুখে আইন করে কয়েকবার কয়েক জাতের মসলিন ও রেশমবস্ত্র ব্যবহার সে দেশে নিষিদ্ধ করেছিল। এমনকি এর জন্য তারা জরিমানা ও শাস্তির বিধান করেছিল। কিন্তু উনিশ শতকেই এই রমরমা রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়েছিল। বরং বাংলাদেশ বা ভারতবর্ষ পরিণত হয়েছিল ব্রিটেনে উৎপাদিত সুতা ও কাপড়ের বাজারে। তারপরও বিশ শতকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাংলাদেশের বয়নশিল্পীরা কাজ অব্যাহত রেখেছে। এর প্রমাণ আমরা দেখি জামদানি ও টাঙ্গাইল শাড়ি এবং আরও অনেক তাঁতবস্ত্রে (গামছা, লুঙ্গি, চাদর ইত্যাদি)। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে ঐতিহ্যবাহী তাঁতবস্ত্রের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হয়। সত্তর ও আশির দশকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নাগরিক মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত সমাজ বাংলার লোকশিল্প, বিশেষ করে বয়নশিল্পের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে। কারিকা, আড়ং, কুমুদিনী, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের জন্ম ও বিকাশ ঘটেছে এই কালপর্বে। পরবর্তীকালে নব্বইয়ের দশকে (এবং তারপর) আরও অনেক নাগরিক উদ্যোক্তা (যেমন কে ক্র্যাফট, অঞ্জন’স, দেশাল, সাদা কালো ইত্যাদি) বয়নশিল্প নিয়ে কাজ শুরু করে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বয়নশিল্পে।
গত এক শ বছরের বয়ন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি, যে তুলা বয়নশিল্পের জন্য অত্যন্ত জরুরি, তা উনিশ শতক পর্যন্ত দেশে উৎপাদিত হলেও এখন এর চাষ খুব কম হয়। আমরা এখন তুলা মূলত আমদানি করি। কিছু সুতা দেশের বিভিন্ন মিলে তৈরি হয় বটে, কিন্তু বেশির ভাগ সুতা আসে বিদেশ থেকে। বিশ শতকের গোড়ায় স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ারে চরকায় সুতা কাটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এখন চরকায় সুতা কাটার পরিমাণ খুবই কম। বলাই বাহুল্য, মিলে সুতা উৎপাদনের প্রযুক্তিগত কৌশলটি আমরা বিদেশ থেকে ধার করেছি। একসময় বাংলাদেশে উৎপাদিত সুতা ও বস্ত্র প্রাকৃতিক রঞ্জন প্রক্রিয়ায় রং করা হতো। দেশে বর্তমানে প্রাকৃতিক রঞ্জনপদ্ধতির প্রচলন খুবই সীমিত, বরং কৃত্রিম রঞ্জনপ্রক্রিয়ায় সারা দেশে সুতা ও কাপড় রং করা হয়। এমনকি যেসব তাঁতযন্ত্র এখন বেশি ব্যবহৃত হয় (ফ্লাই শাটল বা ঠকঠকি তাঁত, ফ্রেম লুম, চিত্তরঞ্জন বা জাপানি তাঁত ইত্যাদি), সেগুলোও ঔপনিবেশিক শাসনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে প্রচলিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশের বয়নশিল্প এখন ঐতিহ্যের স্মারক শুধু নয়, বরং এই শিল্পে ঔপনিবেশিক প্রভাবে প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন ঘটেছে। আর এসব বিচিত্র ও বিভিন্ন পরিস্থিতি ও পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে হস্তচালিত বয়নশিল্প যে এখনো টিকে আছে, এর প্রধান কৃতিত্ব দিতে হবে এ দেশের বয়নশিল্পীদের। বয়নশিল্পীরাই বাংলাদেশের বয়নশিল্পের মূল প্রাণশক্তি, যাঁদের কারণে এ দেশের গৌরবময় এই শিল্পধারা ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আজও বিদ্যমান। ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে, বাংলাদেশে তাঁতশিল্প বিকশিত হওয়ার একটি বড় কারণ ছিল এখানে প্রয়োজনীয় সব কাঁচামাল বা উপকরণ (সুতার জন্য তুলা ও রেশম; রঙের জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান, সনাতন তাঁতযন্ত্রের জন্য বাঁশ-কাঠ ইত্যাদি) সহজেই পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে তাঁতশিল্পের জরুরি উপকরণ তুলা, সুতা, রং ইত্যাদির জন্য আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা অত্যধিক। আমাদের তাঁতিরা আজও অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে নানা রকম বস্ত্রবয়নে পারদর্শী। কিন্তু কাঁচামাল ও উৎপাদন-উপকরণ সুলভ ও সহজপ্রাপ্য না হলে কোনো শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশ সম্ভব নয়। পাশাপাশি সমকালীন বাস্তবতায় বিশ্বব্যাপী যে ফ্যাশন ট্রেন্ড চলছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রুচি ও চাহিদা অনুযায়ী বৈচিত্র্যময় তাঁতপণ্য উৎপাদন করা এবং বিশ্ববাজারে এর প্রচার ও প্রমোশন অতি জরুরি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বর্তমানে জামদানির উৎপাদন ও ব্যবহার শুধু শাড়িতেই সীমাবদ্ধ। অথচ ঐতিহ্যবাহী নকশাদার এই তাঁতবস্ত্র দিয়ে আরও নানা বৈচিত্র্যময় পণ্য ও পোশাক উৎপাদন সম্ভব, যা এই শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আশার কথা, তরুণ উদ্যোক্তা ও ডিজাইনাররা এ বিষয়ে এগিয়ে আসছেন। বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বাংলাদেশের তাঁতশিল্পেও নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। ক্রমশ একুশ শতকে বাংলাদেশের তাঁতশিল্প হয়ে উঠেছে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার এক অপূর্ব সমন্বয়।
পুনশ্চ: সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার বিলুপ্ত মসলিনের পুনরুদ্ধার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যদিও এই প্রকল্প এখনো পুরোপুরি সাফল্য লাভ করেনি, তবু এ উদ্যোগ আমাদের আশাবাদী করে। এই উদ্যোগ সফল হলে, অর্থাৎ নিজেদের দেশে ফুটি কার্পাস চাষ করে তা থেকে সূক্ষ্ম সুতা হাতে কেটে হস্তচালিত তাঁতে সূক্ষ্ম বস্ত্রবয়ন সম্ভব হলে তা হবে বাঙালি জাতির জন্য একটি বড় অর্জন।
শাওন আকন্দ শিল্পী ও গবেষক