ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ১ নম্বরে। অথচ খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন এ দেশের মানুষকে প্রধানত বনজঙ্গল থেকেই ফল সংগ্রহ করে খেতে হতো। সামন্ত সভ্যতার সময় জমিদার–জোতদারেরা আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফলের বাগান তৈরি করেছিলেন। সাধারণ কৃষকেরা বাড়ির আশপাশে, পুকুরপাড়ে ফলগাছ লাগিয়ে ফল উৎপাদনে সচেষ্ট থাকতেন। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অনিবার্য পুষ্টি উপাদান হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফল খাওয়ার ব্যাপারে মোটেই সচেতন ছিলেন না। শহর বা গ্রামে বড় ফলের বাজারও তেমন ছিল না। শুধু হাসপাতালের আশপাশে রোগীর পথ্য হিসেবে ফলের দোকান দেখা যেত। অথচ এখন শহরগুলোতে, পাড়ায় পাড়ায়, এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ের বাজারেও ফল বিপণনের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এতে প্রমাণিত হয়, ফল এখন আমাদের দৈনন্দিন খাবারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। চলতি বছর আমরা উৎপাদন করেছি সর্বোচ্চ পরিমাণ ফল—১ কোটি ২১ লাখ মেট্রিক টন।
কী করে এই বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হলো? এই প্রশ্নের জবাব হলো আমাদের সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত কর্মপ্রয়াস। আমাদের পরিশ্রমী কৃষক, নার্সারিমালিক, কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষি সম্প্রসারণকর্মী এবং সরকারের সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত চেষ্টার ফলে এসেছে এই অর্জন। আমাদের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ৩৪ প্রজাতির ফলের ৮১টি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জার্মপ্লাজম সেন্টার ২৫ প্রজাতির ফলের ৮৪টি উচ্চ ফলনশীল জাতসহ এসব ফলের দ্রুত প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এসব প্রযুক্তি কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং প্রায় ১২ হাজার নার্সারিমালিকের এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ফল উৎপাদন বৃদ্ধির পেছনে মৌলিক অবদান রেখেছে। বেশ কিছু বিদেশি ফল বাংলাদেশে সফলভাবে চাষ করার প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ফল এখন বাংলাদেশের অন্যতম পুষ্টিসমৃদ্ধ বাণিজ্যিক কৃষিপণ্য।
মো. হামিদুর রহমান কৃষিবিদ