পুরো ব্যাটালিয়নের দায়িত্বে নারী

বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে ১১ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নারী সদস্যরা। পুলিশের সৌজন্যে
বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে ১১ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের নারী সদস্যরা।  পুলিশের সৌজন্যে
>

• দেশে নারী পুলিশের সংখ্যা ১৩ হাজার ২৩০
• মোট পুলিশের সাড়ে সাত শতাংশ নারী
• ১১ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠিত হয় ২০১১ সালে
• ১১ আর্মড পুলিশে দায়িত্ব পালন করছেন ৩৭১ নারী

২৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টা। গাজীপুরের শ্রীপুর সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার। অনুষ্ঠান চলার সময় খবর এল এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। দ্রুত তিনি ছুটলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্বজনদের মাথায় হাত বুলিয়ে ও দিকনির্দেশনা দিয়ে চলে গেলেন নিহত যুবকের বাড়িতে। এরপর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন, কথা বলেন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে।

এসপি শামসুন্নাহারের দিনের (২৫ অক্টোবর) শুরুটা হলো এভাবেই। সেদিন তিনি দুপুরে চলে যান গাজীপুরের শ্রীপুর মডেল থানা প্রাঙ্গণে ওপেন হাউস ডেতে অংশ নিতে। জনশৃঙ্খলা রক্ষায় মানুষের সহযোগিতা চেয়ে বক্তব্য দেন। বিকেলে কার্যালয়ে ফিরে এসে দেখেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে আসা মানুষের জটলা। একে একে সবার কথা শোনেন তিনি। এক ফাঁকে প্রথম আলোকে জানালেন, সাড়ে ছয় বছর বয়সী মেয়ের জ্বর, তাকে সে অবস্থায় রেখেই সকালে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নারী পুলিশ সদস্যরা দেশে জননিরাপত্তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। শুধু নারী সদস্যদের নিয়েই গঠিত হয়েছে পুলিশের একটি ব্যাটালিয়ন। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এই ব্যাটালিয়ন ১১ আর্মড পুলিশ নামে পরিচিত।

১১ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠিত হয় ২০১১ সালে। এতে দায়িত্ব পালন করছেন ৩৭১ নারী। ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক পুলিশ সুপার শাহীনা আমীন প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের সাধারণ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নিজেদের আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয় ১১ আর্মড পুলিশকে।

বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা ছাড়াও মাদক ও জঙ্গিবিরোধী অভিযানেও সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন নারী পুলিশ সদস্যরা।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট পুলিশ সদস্যের সংখ্যা ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৫। এর মধ্যে নারী পুলিশ সদস্য ১৩ হাজার ২৩০ জন, যা মোট পুলিশের ৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। বর্তমানে পুলিশের ডিআইজি পদে দায়িত্ব পালন করছেন একজন নারী। তাঁর নাম রোউশন আরা। ১৯৯৮ সালে মুন্সিগঞ্জের প্রথম নারী এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের চাকরিতে টিকে থাকতে হলে নিষ্ঠা, সততা, আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা নারী পুলিশ সদস্যরা বাড়তি কোনো সুবিধা পান না। পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এবং বিভিন্ন ধাপ পাড়ি দিয়েই তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন আসমা সিদ্দিকা। তিনি বলেন, প্রতিদিনই নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। নতুন নতুন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাহস ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সব পরিস্থিতিই মোকাবিলা করতে হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুলিশ বাহিনীতে নারীরা প্রথম নিয়োগ পান ১৯৭৪ সালে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে নারীরা দায়িত্ব পালন শুরু করেন ১৯৭৬ সালে।

বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপপুলিশ কমিশনার ফরিদা ইয়াসমীন। তাঁর অধীনে পুলিশের বিভিন্ন র‍্যাঙ্কের ১০৬ জন নারী পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন।

ফরিদা ইয়াসমীন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার ৫০টি থানার নারী ও শিশু নির্যাতনসংক্রান্ত জটিল মামলাগুলোর তদন্ত করে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। মাসে গড়ে ১০০টির বেশি মামলা তদন্ত করতে হচ্ছে তাদের। গত অক্টোবর মাসেই ৩৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে তারা।

নারী পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, নেতৃত্ব ও দক্ষতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ পুলিশ নারী নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আমেনা বেগম। ট্রাফিক বিভাগ, র‍্যাব, হাইওয়ে, জাতিসংঘ শান্তি মিশন, নরসিংদীর পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

আমেনা বেগমের মতে, পুলিশ বাহিনীতে হঠাৎ করে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। মাঠপর্যায় থেকে কাজ করে ধাপে ধাপে দক্ষতা অর্জন করতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে নারী পুলিশ সদস্যদের। পুলিশের চাকরিতে অভিজ্ঞতাটাই বেশি জরুরি।