খবর সংগ্রহের কাজেই সেদিন বেলা ১১টার দিকে (২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন হাজতখানা থেকে একে একে আসামিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল আদালতের এজলাসকক্ষে।
আদালতের হাজতখানায় কর্তব্যরত এক পুলিশ কনস্টেবল আমাকে বললেন, ‘ভাই, জাহালম নামের এক আসামি কারাগারে আছে, যার নামে ৩৩টি দুদকের মামলা। সোনালী ব্যাংকের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু জাহালম আমাকে প্রায় কেঁদে বলছে, সে নির্দোষ। গরিব মানুষ। আজ সেই জাহালমকে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬–এ হাজির করা হয়েছে।’
সঙ্গে সঙ্গে ওই আদালতে গেলাম। দেখলাম জাহালম আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর মামলার শুনানির সময় বিচারকের উদ্দেশে জাহালম বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না। আমি পাটকলশ্রমিক। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ।’
শুনানি শেষ হলে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে জাহালমের ছবি তুলি। সেদিন আদালতে হাজির ছিলেন জাহালমের বড় ভাই শাহানূর। তাঁর কাছ থেকে জানলাম, জাহালমের দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার কাহিনি।
সেই জাহালমের কারাভোগ নিয়ে প্রথম আলোয় ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি ‘৩৩ মামলায় ভুল আসামি জেলে, স্যার, আমি জাহালম, সালেক না…’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে জাহালমকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। জাহালমের কারাভোগের জন্য যারা দায়ী, তাদের খুঁজে বের করতেও নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের আদেশে ১ হাজার ৯২ দিন পর ছাড়া পান জাহালম।
জাহালমের কারামুক্তির খবর তখন দেশের গণমাধ্যমের প্রধান শিরোনামে পরিণত হয়। জাহালম হয়ে ওঠেন পরিচিত মুখ। নির্দোষ ব্যক্তির আসামি হওয়া কিংবা কারাভোগের ঘটনা এখন জাহালম–কাণ্ড বলে বিবেচিত হচ্ছে। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ কয়েকজন ব্যক্তির ভুলের কারণে জাহালমকে জেল খাটতে হয়।
গত ২১ আগস্ট দুদক হাইকোর্টে আরেক প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, জাহালমের কারাভোগের ঘটনায় তদন্ত প্রক্রিয়ায় জড়িত দুদকের ১১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে দুদক।
হাইকোর্টের আদেশে জাহালম মুক্তি পেলেও পাননি ক্ষতিপূরণ। এ নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি চলমান।
সম্প্রতি জাহালম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাকরি করতাম নরসিংদীর ঘোড়াশালে বাংলাদেশ জুট মিলে। বিনা দোষে আমাকে তিন বছর জেল খাটতে হলো। ছাড়া পাওয়ার পর চাকরি আবার ফিরে পেয়েছি কিন্তু দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। আমি ক্ষতিপূরণ চাই।’