আমাদের এ জগতে ধর্মের ব্যাপারে যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁদের পরিত্রাণের বা ত্রাণ লাভের অজ্ঞাতসংখ্যক সুযোগ বা পথ রয়েছে। এর সোজা-সরল ব্যাখ্যা হলো এই যে, কোনো ধর্মের যদি আরাধনা করা হয়, তাহলে তোমার মোক্ষলাভের সুযোগ থাকে। সব ধর্মেরই একটিমাত্র চূড়ান্ত সুর হলো, পরম স্রষ্টা তোমাকে তৈরি করেছেন এবং ধরাধামে পাঠিয়েছেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো। তাঁর প্রতি আস্থাশীল থাকো। তার মানে ধর্ম মানেই আস্তিক্যবাদে নিরঙ্কুশ বিশ্বাস। কিন্তু ঈশ্বরচিন্তা নেই এমন ধর্ম কি নেই? আছে এবং হয়েছিল। সেটি তথাগত গৌতম বুদ্ধের ধর্ম। তাঁকে ঈশ্বরের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন, আমি তো তাঁকে দেখিনি, ফলে আমি তাঁর কথা কী করে বলব। আমি জানি কেবল আমার মতো দেহধারী মানুষকে। ফলে আমি মানুষেরই ভালো-মন্দ সুখ-দুঃখ এসব চিন্তা করি, এসব নিয়েই ভাবি। এবং সবার কী করে ভালো হবে সেই চিন্তাই আমাকে তাড়িত করে। সব প্রাণী সুখী হোক এটাই আমার একমাত্র কাম্য। গৌতম বুদ্ধের চেয়ে প্রাচীন ধর্ম বর্তমান পৃথিবীতে সম্ভবত আর নেই। সকল প্রাণী সুখী হোক, এর চেয়ে মহান উচ্চারণ আর হয় না।
বাংলাদেশে প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে বৌদ্ধধর্ম অত্যন্ত প্রধান একটি ধর্ম। বলা দরকার, এ ভূখণ্ডের প্রাচীনতম ধর্মও বটে। আমার ব্যক্তিগত বন্ধুবান্ধবের মধ্যেও তাঁরা একাধিক আছেন। আমরা স্পষ্টতই দেখতে পাই বাঙালি বৌদ্ধরা যেমন চট্টগ্রামে আছেন, কুমিল্লায়ও যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের দৈনন্দিন জীবনধারা বা প্রাত্যহিক অভ্যাস বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলমানের মতো পুরোটা নয়। অনেক মিলও অবশ্য রয়েছে। তবে আমি তাঁদের জীবনযাত্রা লক্ষ করে দেখেছি, তাঁরা আত্যন্তিকভাবে সেবাধর্মে খুবই বিশ্বাসী। এবং মানুষের কল্যাণ ছাড়া অন্য কোনো চিন্তা তাঁদের অসুখী করে। এ রকম চিন্তা করা কারও উচিত নয় বলেই তাঁরা মনে করেন। বৌদ্ধরা এসব কথাতেই বিশ্বাস করেন এবং পালন করার চেষ্টা করেন।
হায়াৎ মামুদ: লেখক ও শিক্ষাবিদ।