শিক্ষক দিবসে আমি যাকে নিয়ে লিখব, তিনি আমার প্রিয় শিক্ষক নুরুল ইসলাম স্যার। আমার মাধ্যমিক স্কুলের স্যার। আজ তাঁর সঙ্গে কাটানো মধুর সময়ের পরিবর্তে তাঁর সঙ্গে করা আমার কিছু ভুল, আমার কিছু দোষের কথা লিখব।
স্যার ছিলেন আমাদের বিজ্ঞান আর গণিত শিক্ষক। অনেক ভালো একজন মানুষ। অনেক নরম ভাষায় বোঝাতেন আমাদের। আমি যখন ক্লাস টেনে উঠি, আব্বু একজন গৃহ শিক্ষক নিযুক্ত করলেন। তিনি কেমন আমি জানতাম না। আমার সঙ্গে আমার আরও তিনজন বান্ধবী পড়তে আসত আমাদের বাসায়। ম্যাথ করাতেন তিনি। তিনিও নুরুল ইসলাম স্যারের ছাত্র ছিলেন। তবে তিনি স্যারকে অপছন্দ করতেন। জানি না কেন!!
তবে আমার প্রিয় স্যারকে কেউ অপছন্দ করলে খারাপ লাগত। স্যার জানতে পারেন আমাদের প্রাইভেট পড়ার কথা। কার কাছ থেকে পড়ছি তাও জানেন। ওই ছেলেটির কাছ থেকে পড়ছি শুনে মনে হয় খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। দেখতে দেখতে আমাদের প্রতি স্যারের ভালোবাসাটা কমে যেতে থাকল। আগে স্যার আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। আমি বুঝতে পারতাম স্যার আমাকে আগের মতো স্নেহ করেন না। খুব কষ্ট লাগত। আমি অনেক লাজুক ছিলাম। তাই সাহস করে স্যারকে কিছু বলতে পারতাম না।
ওই হোম টিউটর হঠাৎ করে আমার এক বান্ধবীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। তিনি ওকে নিজেই বলেছেন ওর বাসায়। আমরা জানতাম না। পরে জেনেছি। বান্ধবী ওর নিজের বাসায় কয়েক দিন ম্যাথও করেছে ওনার কাছে। সেটাও পরে জানতে পারি।
হঠাৎ একদিন। একটা ফ্রেন্ড এসে বলে, তোদের স্যার ডেকেছেন। আমি অনেক ভয় পাই। স্যার তখন আমাদের ব্যাচের কিছু ছাত্রদের পড়াচ্ছিলেন। আমরা গিয়ে স্যারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। স্যার অনেকক্ষণ চুপ করে ছিলেন, আমরা কিছু বলি কিনা দেখার জন্য। কিন্তু আমরা ভয়ে সেদিন কিছুই বলতে পারি নি। চলে আসছি। ওদিনই স্যার আমাদের ভুল বোঝেন। আমার অনেক কান্না আসছিল। এরপর স্যার আমার বান্ধবীকে ডেকে পাঠালেন। ও গিয়ে নাকি স্যারকে বলেছে, আমাদের মাধ্যমেই প্রস্তাবটা সে পেয়েছে। আমরা সেটা পরে জানতে পারি। ওর কথা কতটুকু সত্য, স্যার যাচাই করেন নি। ওদিন থেকেই স্যার আমার সঙ্গে একটা কথাও বলেন নি। ওই বান্ধবী আমার সবচেয়ে ভালো বান্ধবী ছিল, তাই সত্যি টা বলতে পারিনি। সাহসও ছিল না। অনেক বার স্যারের সামনে গেছি, কিন্তু স্যার একবারও ফিরে তাকান নি। হয়তো কষ্ট পেয়েছিলেন বেশি। কিন্তু আমার কোনো দোষ ছিল না। প্রতিদিন নামাজে বসে কাঁদি। আজও কাঁদি। এতদিন কিছুই বলতে পারি নি।
আজ আমি স্নাতক শেষ করেছি। আমি এত দুর এসেছি স্যারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে।
লেখাটা যদি স্যারের কাছে যায়, তাহলে স্যারের কাছে আমার একটা অনুরোধ। স্যার, আপনি আমাকে আর ভুল বুজবেন না। তখন তেমন কিছু বুঝতাম না। তাই হয়তো ভুল করেছি। স্যার, মাফ করে দিয়েন। আমি আজও কাঁদি ওই দিনগুলোর জন্য। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, আমি আর সামনে এগোতে পারব না। আমার চলার পথের প্রেরণা আপনি। আর লিখতে পারলাম না। ক্ষমা করে দিয়েন স্যার।