আজকে মোরা বাঁধনহারা

কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা....
কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা....

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। তা উপেক্ষা করেই একটার পর একটা বাস ছাড়ছে । প্রতিটি বাস থেকেই ভেসে আসছে শিক্ষার্থীদের চিৎকার। বাবা-মায়ের চোখ রাঙানি আর নিত্যদিনের পড়াশোনার বাইরে নিজেদের ইচ্ছামতো একটা দিন। আর তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হাজার খানেক শিক্ষার্থী জড়ো ঢাকার আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলার মাঠে। এখান থেকেই ছাড়ছে বাসগুলো। যার গন্তব্য সাভারের নন্দন পার্ক। ঘণ্টা দেড়েক সময় নিয়ে সর্বশেষ ৮০তম বাস যখন আগারগাঁও ত্যাগ করছে, প্রথম বাসটি তখন নন্দনের গেটে। সারা পথজুড়ে গান আর চিৎকার শেষ করে সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে সবগুলো বাস এসে পৌঁছাতে সকাল ১০টা। এরই মধ্যে পার্কের বাইরে মস্ত লাইন মূল রাস্তা ছুঁয়েছে। ৪ অক্টোবর সাভারের নন্দন পার্কের এই চেহারা ছিল পরের দিনও।

বৃষ্টি আর কাদায় লুটোপুটি...

মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকের সহায়তায় প্রথম আলো দেশজুড়ে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই আয়োজন শুরু করে এ বছরের ২০ আগস্ট থেকে। সারা দেশের আয়োজন শেষে ঢাকা মহানগর, গাজীপুর ও সাভারের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছিল সর্বশেষ এই আয়োজন (৪ ও ৫ অক্টোবর)। প্রথম দিন সাত হাজার ৩০০ এবং দ্বিতীয় দিন ছয় হাজার ৮০০-সহ মোট ১৪ হাজার ১০০ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় নন্দন পার্কে।

ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সংবর্ধনা নিতে আসা শিক্ষার্থী অহনা ফাইরুজ বলল, ‘গত বছর আমার বড় ভাই এই সংবর্ধনা নিতে এসেছিল। বাসায় ফিরে তার সেকি গল্প। শুনে অনেক লোভ লেগেছিল। আজ বুঝতে পারছি ভাইয়া মিথ্যা বলেনি। পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল করার পর থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম। আজ মনে হচ্ছে আমার সেই ইচ্ছেটা পূরন হলো।’

এত বড় উত্সব, আর সেখানে ইগলুর ফ্রি আইসক্রিম থাকবে না, তাই কি হয়!

আবেগ আর উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না কারও মধ্যে। বন্ধুদের নিয়ে সব শিক্ষার্থী সেই দিন বাঁধনহারা। গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের একটি দল। বন্ধুদের নিয়ে রোলারকোস্টারে ওঠার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এই দলটির সঙ্গে কথা হলো। সাজিদ হোসেন বলল, ‘সকাল ছয়টায় বাস ছাড়বে শুনে রাতে কেউ ঘুমাইনি। যদি বাস চলে যায়! বন্ধুরা মিলে তাই রাতে আড্ডা দিয়েছি আরেক বন্ধু রোহানের বাসায়। বারবি কিউ নাইট করে সোজা রাত পোহানোর আগে এসে বাসে চড়ি। এখানে এসে অনেকগুলো রাইডে চড়েছি আমরা। খুব মজা হচ্ছে।’ দুপুর পর্যন্ত রাইডে চড়া আর ক্রেস্ট-সার্টিফিকেটের লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা যখন ক্লান্ত, ঠোঁট ভেজাতে পাশে চলে এল ইগলুর আইসক্রিম। নিবন্ধনের সময় দেওয়া টোকেন দেখিয়ে বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীরা গলা ভেজায় আইসক্রিমে। এবারই প্রথম ক্রেস্ট ও সনদ ছাড়াও টেলিটকের একটি বিশেষ নম্বর সিরিজের সিমকার্ড।

দুপুরের পর নন্দনের মূল মঞ্চে বসে তারার মেলা। দর্শক সারিতে থাকা হাজারো মেধাবী। আর মঞ্চে তাদের অনুপ্রেরণা দিতে এসেছিলেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের দেশসেরা তারকারা। দুই দিন মঞ্চে গান আর অনুপ্রেরণা দিয়ে যাঁরা শিক্ষার্থীদের মাতান তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, সাংসদ তারানা হালিম, ম্যাগসাইসাই পুরস্কারবিজয়ী বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান এবং সাবেক ও বর্তমান মহাব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান ও ফারুক আহমেদ, নন্দন পার্কের পরিচালক এনামুল হক চৌধুরী, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, অভিনেতা জাহিদ হাসান, কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, ব্যান্ডদল মাইলস, দলছুট নিয়ে বাপ্পা মজুমদার ও প্রমিথিউস ব্যান্ডের বিপ্লব, ফুটবল তারকা আমিনুল হক, ক্রিকেট তারকা জাভেদ ওমর বেলিম, প্রথম আলোর যুব কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান, আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের দুবার ব্রোঞ্জজয়ী নূর মোহাম্মদ শফিউল্লাহ। দুই দিনের পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর ফিচার সম্পাদক সুমনা শারমীন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্প্রচার-সহযোগী ছিল চ্যানেল আই, এবিসি রেডিও ও প্রথম আলো ডটকম। এই আয়োজনে সহায়তা করেছে প্রথম আলো বন্ধুসভা ও নন্দন পার্ক।