সময় এসেছে কুসংস্কার বা ভ্রান্ত ধারণা ভাঙার

ময়মনসিংহের শহীদ শাহাবুদ্দিন মিলনায়তনে গত ২৫ আগষ্ট ‘কৈশোর ও যুববান্ধব প্রজননস্বাস্থ্য সেবা’ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত।

কৈশোর ও যুববান্ধব প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীরা। গত ২৫ আগষ্ট ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের শহীদ শাহাবুদ্দিন মিলনায়তনে

মাসিক হলে মাছ–মাংস খাওয়া যাবে না, এক বিছানা ভাগাভাগি করে ঘুমানো যাবে না, এমনকি স্কুলে যাওয়া যাবে না—এখনো অনেকের মধ্যেই রয়েছে এমন সব ভ্রান্ত ধারণা। অথচ মাসিক কোনো রোগই নয়। 

এদিকে বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদেরও কিছু শারীরিক পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু লজ্জা ও সংকোচে তারা এগুলো কাউকে বলতে পারে না। যদিও সেগুলো বাবা, মা, ভাই-বোনকে অনায়াসে বলা যায়। কাউকে বলতে না পেরে অনেক কিশোর কবিরাজের কাছে যায় চিকিৎসার জন্য। এটা একেবারেই ঠিক নয়। এখন সময় এসেছে এসব কুসংস্কার বা ভ্রান্ত ধারণা ভাঙার। কিশোর–কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা সম্পর্কে জানতে হবে, সংকোচ ভেঙে কথা বলতে হবে।

গত ২৫ আগষ্ট বিকেলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের শহীদ শাহাবুদ্দিন মিলনায়তনে ‘কৈশোর ও যুববান্ধব প্রজননস্বাস্থ্য সেবা’ বিষয়ক এক কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির ‘সুখী জীবন’ প্রকল্পের সহযোগিতায় পাথফাইন্ডার বাংলাদেশ ও প্রথম আলো আলো বন্ধুসভা যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। কর্মশালার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন পাথফাইন্ডারের ফ্যামিলি প্ল্যানিং ও কমপ্লায়েন্স কো–অর্ডিনেটর জাকিয়া রেজওয়ানা। তিনি বলেন, কিশোর এবং তরুণ বয়সীরা শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যার কথা এখনো সংকোচ ভেঙে কোথাও বলতে পারেন না। এতে তাঁদের স্বাস্থ্যগত নানা সমস্যা হয়। অথচ ওই সময়ের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সময় সব কথা পরিবারের কাছে সহজে বলা উচিত। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া উচিত।  

সুখী জীবন প্রকল্পের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শারমিন সুলতানা বলেন, সারা দেশে প্রজননস্বাস্থ্য সেবার জন্য সরকারের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। কিশোর ও যুব বয়সীদের সেসব কেন্দ্র সম্পর্কে জানতে হবে। এসব কেন্দ্রে যাঁরা সেবা দেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। 

কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা করেন পাথফাইন্ডারের অ্যাডালসেন্ট ও ইয়ুথ কো–অর্ডিনেটর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রজননস্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে জানার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি সংকোচ ও ভয় ভেঙে পরিবারকে সমস্যার কথা বলতে হবে। বিষয়টি এখন শুধু মেয়েদের জন্য নয়, ছেলেদেরও প্রজননস্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে জানতে হবে। 

অতিথিদের বক্তব্য উপস্থাপন শেষে অনুষ্ঠিত হয় অংশগ্রহণকারীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ পর্বে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বই উপহার দেওয়া হয়। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীদের চারটি গ্রুপে ভাগ করে পৃথক বিষয়ে প্রশ্ন ও সমাধানের প্রস্তাব জানতে চাওয়া হয়। ১৫ মিনিটের এ পর্বের পর চারটি গ্রুপই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে প্রজননস্বাস্থ্য সেবা বিষয়ে নিজেদের মত উপস্থাপন করে। 

শিক্ষার্থীরা কর্মশালা শেষে জানায়, এখানে এসে তারা যা জেনেছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মশালা থেকে ফিরে গিয়ে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে জানাবে। 

কর্মশালার সমাপনী পর্বে বক্তারা অংশগ্রহণকারীদের প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে ধারণা ও উপস্থাপনায় মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করেন। পাথফাইন্ডারের আঞ্চলিক প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ টি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, কিশোর ও যুব বয়সীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরামর্শ দেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন সেবাকেন্দ্র থাকলেও সেসব কেন্দ্রে তাঁরা তেমন আগ্রহ নিয়ে যান না। তাঁদের অবশ্যই বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে ও সেবাকেন্দ্র যেতে হবে। 

কর্মশালায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ইভেন্ট অ্যান্ড অ্যাকটিভেশন বিভাগের সাইদুজ্জামান রওশন, পাথফাইন্ডারের কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সাহা, রেজওয়ান তালুকদার, ময়মনসিংহ বন্ধুসভার উপদেষ্টা ছৈয়দ রায়হান উদ্দিন ও আলী ইউসুফ, সভাপতি সুব্রত কুমার সিংহ। 

কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদ বিতরণ করা হয়।