ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প ও প্রথম আলোর উদ্যোগে ‘কৈশোর ও যুববান্ধব প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা: স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল অনুষ্ঠিত হয় ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩। অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্যের সারমর্ম এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।
প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট, জনসংখ্যা স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিভাগ, ইউএসএআইডি।
ইউএসএআইডির বর্তমান ইয়ুথ ইন ডেভেলপমেন্ট পলিসি ও পজিটিভ ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট অ্যাপ্রোচের লক্ষ্য হলো তরুণেরা তাদের নিজেদের জীবনের লক্ষ্য অর্জনে সিদ্ধান্ত নিতে ও অংশগ্রহণ করতে পারবে এবং এর মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ পাবে। ইউএসএআইডি তরুণদের জন্য যেসব প্রকল্পে অর্থায়ন করে, সেখানে এ বিষয়গুলোকে উৎসাহিত করে৷
বাংলাদেশে যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পে ইউএসএআইডি দীর্ঘদিন সহায়তা করে আসছে৷ বিগত পাঁচ বছরে ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প ৩২ জেলায় কৈশোর ও যুববান্ধব স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে যে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জিত হয়েছে, তা যেন প্রকল্প শেষ হওয়ার পর থেমে না যায়। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেন এগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, এটি আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। আলোচনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা এসেছে৷ প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মাল্টিসেক্টরাল ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
কেবল প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নয়, যেকোনো স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গুণগত মান ও সাম্য নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিশোর-কিশোরী ও তরুণ জনগোষ্ঠী যেন তাদের সুবিধামতো এবং বৈষম্য ছাড়া স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এটি বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোও কাজ করছে। স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান নিশ্চিত করা ও বৈষম্য দূর করতে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো, তথ্য ও উপাত্তের ব্যবহার এবং তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত গ্রহণ। ইতিমধ্যে আমাদের অনেক তথ্য ও গবেষণা রয়েছে। ন্যাশনাল অ্যাডলসেন্ট হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং সার্ভের বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ রয়েছে। পঞ্চম সেক্টর প্রোগ্রাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এগুলো বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের একার পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়। এর পাশাপাশি সুশীল সমাজ, দায়িত্বশীল নাগরিক ও গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
উপপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
আমরা যারা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে কাজ করছি, তাদের কাছেই অনেক তথ্য নেই। এটা আমাদের সবার জন্য পীড়াদায়ক। আমরা পারিবারিক সচেতনতার কথা বলছি৷ কিন্তু অভিভাবকদের কাছে তো সেই তথ্য নেই যে তারা কীভাবে কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে আচরণ করবে। এই তথ্যকে সহজলভ্য করতে হলে আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে। আমাদের কৌশলপত্র আছে, সেবাকেন্দ্র আছে, কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আছে, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আলাদা করে জায়গা করা হয়েছে, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রকে কৈশোর ও যুববান্ধব করা হয়েছে। সেবা প্রদানকারীদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনগুলো সরকারের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে৷ আমাদের অনেক কিছু আছে, কিন্তু এর যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা দেখা জরুরি। আমাদের সব কাজে স্থানীয় সরকারকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
সরকারের কার্যক্রমে কৈশোর ও যুববান্ধব স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবাকে গুরুত্ব দিয়ে পঞ্চম স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে আলাদা একটি প্রকল্প তৈরি করা হচ্ছে। কৈশোর স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মপরিকল্পনাও তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিটি পর্যায়ে তথ্যগুলো সহজলভ্য করতে হবে। আমরা কিশোরীদের ঋতুস্রাব ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক কথা বলছি, বিপরীতে কিশোরদের বিষয় আমরা সেভাবে দেখছি না। কিন্তু সরকারের প্রতিটি পরিকল্পনায় কিশোর ও কিশোরী উভয়ের কথাই বলা আছে। কেবল কিশোরীদের প্রাধান্য দিতে গিয়ে কিশোরদের প্রজননস্বাস্থ্যের আলোচনা যেন পিছিয়ে না পড়ে, সেদিকেও নজর দিতে হবে।
কৈশোর ও যুববিশেষজ্ঞ, ‘ইউএসএআইডি সুখী জীবন’ প্রকল্প, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল।
ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প ২০১৮ সালের জুলাই মাসে যাত্রা শুরু করে। সে সময় মাত্র ৩২ শতাংশ অবিবাহিত কিশোরী ও ২১ শতাংশ কিশোর সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা গ্রহণ করত। ২০১৭-১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, ৫৬ শতাংশ কিশোরী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। সমন্বিত প্রজনন স্বাস্থ্যতথ্য প্রদানের জন্য কোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তখন ছিল না। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে না যাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে সেবা প্রদানকারীদের দক্ষতা এবং সেবা কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ অন্যতম কারণ।
সে সময়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের ৫৯ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগে এবং ৩১ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৬ বছরের আগে। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীর প্রতি চারজনের মধ্যে একজন কখনো না কখনো গর্ভবতী হয়েছে। বিবাহিত কিশোরীরা তাদের স্বামীর দ্বারা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয় এবং অবিবাহিত কিশোর-কিশোরীরাও এর বাইরে নয়।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং সার্ভের তথ্যমতে, ২০১৯-২০ সালে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রতি চারজন কিশোরীর মধ্যে একজন তাদের ঋতুস্রাবের সময় অন্তত এক দিন স্কুল কামাই করেছে।
এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনসহ অন্যান্য সেবা অঙ্গীকার পূরণে দেশের কৈশোর ও যুববান্ধব প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার গুণগত উন্নয়ন প্রয়োজন। বিগত পাঁচ বছরে ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৬৮৮০ স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রের সবাইকে নিয়ে অবহিতকরণ সভা আয়োজন, ২২২৭ সেবা প্রদানকারীর কৈশোরবান্ধব প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের দক্ষতা উন্নয়ন এবং ১১১১ সেবা প্রদানকারীর স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং–বিষয়ক দক্ষতার উন্নয়ন, ৩৭৪২ জন মাঠকর্মীর কমিউনিটি পর্যায়ে কিশোর-কিশোরী ও যুব বয়সীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সেবা প্রদানের দক্ষতার উন্নয়ন।
এ ছাড়া ১১ হাজার ৪৬৬ জন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সম্পৃক্ত করা, ৩ হাজার ৪০০ হন নবদম্পতিকে তথ্যবাক্স প্রদান এবং উঠান বৈঠক ও উন্নত স্যাটেলাইট ক্লিনিক পরিচালনায় সরকারকে সহায়তা করার মাধ্যমে দেশের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প।
স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র, কমিউনিটি ও বিদ্যালয়ভিত্তিক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রকল্পের সহায়তাপুষ্ট ৩২ জেলায় বিগত পাঁচ বছরে সেবা নিয়েছেন অন্তত ১২ লাখ ১০-১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরী এবং ৮ লাখ ৭৪ হাজার বিবাহিত কিশোরী ২০২২ সালে পরিবার পরিকল্পনার আধুনিক পদ্ধতি নিয়েছে।
আবার ডিজিটাল মাধ্যমে কিশোর–কিশোরী ও যুব সম্প্রদায়ের তথ্যসেবা নিশ্চিত করতে কানেক্ট– কিশোর বাতায়ন প্ল্যাটফরমে প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্নার করা হয়েছে। এ ছাড়া কানেক্ট ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন তথ্যনির্ভর প্রচারণা ও লাইভ আলোচনায় সহযোগিতা করে ইউএসএআইডি সুখী জীবন প্রকল্প, যা ৮০ লখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এ ছাড়া আমরা ৬টি জাতীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করেছি, যেমন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, চা–বাগানের কমিউনিটি, বেদে জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা কিশোর-কিশোরী।
প্রজেক্ট ডিরেক্টর, ‘ইউএসএআইডি সুখী জীবন’ প্রকল্প ও কান্ট্রি ডিরেক্টর, পাথফাইন্ডার ইন্টারন্যাশনাল।
ইউএসএইড সুখী জীবন প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা নানা কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে সহায়তা প্রদান করি। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা। আমরা সবাই জানি, বর্তমানে বাংলাদেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার তুলনায় কিশোর–যুবদের সংখ্যা অনেক বেশি—৪২ শতাংশ। এ সুবিধা ২০৩০ সালের পর ধীরে ধীরে কমে যাবে। তাই আর্থসামাজিক উন্নয়নের কিশোর ও যুব জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে হবে।
প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সুস্থ কৈশোর ও যুব জনগোষ্ঠী তৈরি না করা গেলে সার্বিক সম্ভাবনা হুমকির মুখে পড়বে। ১৮ বছর হওয়ার আগেই দুই–তৃতীয়াংশ কিশোরীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে কিশোরীদের সব সম্ভাবনার দরজা বন্ধ হয়ে যায়৷ বিয়ের পর তারা স্কুল থেকে ঝরে পড়ে, অল্প বয়সে মা হয়, প্রসবজনিত জটিলতায় মাতৃমৃত্যুর সংখ্যাও কম নয়। বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার এখনো অনেক উচ্চ।
এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমরা আমাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছি। বিগত পাঁচ বছরে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা কর্ম এলাকা ও জাতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি। তারা আগের তুলনায় এখন কৈশরবান্ধব সেবা প্রদানে দক্ষ হয়েছেন। এ–সংক্রান্ত কাউন্সেলিংয়েও তঁারা আগ্রহী হচ্ছেন। কমিউনিটি পর্যায়েও তঁারা উঠান বৈঠকে কিশোর-কিশোরীদের আরও বেশি পরিমাণে সম্পৃক্ত করছেন, সুবিধাবঞ্চিত কিশোর-কিশোরীদের সঙ্গে কথা বলছেন। আমাদের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে তঁারা এখন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে তঁাদের ব্যক্তিগত সমস্যার কথা তুলে ধরছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে। সমন্বিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের গুরুত্ব তঁারা আগের তুলনায় অনেক বেশি অনুভব করছেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যুব ও ক্রীড়া এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় তরুণ জনগোষ্ঠীকে কীভাবে আরও ভালো সেবা দেওয়া যায়, তা নিয়ে অনেক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।
স্বেচ্ছাসেবক, কিশোর আলো।
প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আমি প্রথম স্কুল থেকে জানতে পারি৷ আমাদের স্কুলের শিক্ষকেরা ক্লাসে পিরিয়ড বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। কিন্তু স্কুলে মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলার মতো কোনো কাউন্সেলর না থাকার অভাব বোধ করেছি।
স্বেচ্ছাসেবক, কিশোর আলো।
কৈশোর ও যুববান্ধব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের আন্তরিক হওয়া জরুরি। কিশোর-কিশোরীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্যান্য বয়সী রোগীদের চেয়ে আলাদাভাবে বিবেচনা করতে হবে। তা ছাড়া চিকিৎসকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।
আমি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মশালায় অংশ নিয়েছি। কর্মশালার শুরুতে কিশোর-কিশোরীরা প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে শুনতে ও বলতে সংকোচ বোধ করেছিল। তবে কর্মশালা শেষে সবাই খোলাখুলিভাবেই কথা বলেছে এবং সবারই ধারণা পরিষ্কার হয়েছে।
প্রতিনিধি, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা।
কৈশোর ও যুববান্ধব স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে আমরা কেবল মূলধারার কিশোর-কিশোরীদের কথা বলছি। কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের একটা জনগোষ্ঠীও তো আছে, যারা এ আলোচনার সম্পূর্ণ বাইরে। তাদের প্রজননস্বাস্থ্য নিয়েও ভাবতে হবে।
প্রতিনিধি, সিলেট বন্ধুসভা।
সিলেট অঞ্চলে কর্মশালায় আমি অংশগ্রহণ করেছি। কর্মশালায় অনেক নারী শিক্ষার্থী বলেছে, তাদের স্কুলে প্রজননস্বাস্থ্য–সংক্রান্ত অধ্যায় পড়ানো হয় না। তাহলে কীভাবে সবাই তা জানবে? না জানলেই তো ভুল হবে।
প্রতিনিধি, সিলেট বন্ধুসভা।
আমি সিলেট বিভাগীয় কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি, যা আগে আমি জানতাম না; অনেক কিছু অস্পষ্ট ছিল। এ ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি প্রান্তিক পর্যায়েও ছড়িয়ে দিতে হবে।
প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ বন্ধুসভা।
আমি ময়মনসিংহ বন্ধুসভার কর্মশালায় ছিলাম। কর্মশালা থেকে সবাই বুঝতে পেরেছে, এখন কুসংস্কার ভাঙার সময় এসেছে। নতুনদের জন্য এই রকম কর্মশালা নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন।
প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।
চট্টগ্রামের কর্মশালায় অনেকে বলেছে, সামাজিক ও ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ওই কর্মশালার মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী কিশোর-কিশোরী এবং যুবদের প্রজননস্বাস্থ্য–সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণা ও সংশয় দূর হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাতা, ঋতু।
‘ঋতু’ পিরিয়ডের ট্যাবু ভাঙতে কাজ করছে। কিশোরীদের জন্য আমাদের একটি কমিক বই আছে৷ বাবারা কীভাবে তাদের মেয়েদের সঙ্গে ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলবেন, তা নিয়ে একটি গাইডলাইনও আমাদের আছে।
প্রতিষ্ঠাতা, সাইবার টিনস।
আমরা কিশোর-কিশোরীদের সাইবার সহায়তা দিতে থার্টিন–টু–নাইনটিন (১৩২১৯) হেল্পলাইন চালু করতে যাচ্ছি।
আমার মনে হয় ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি– অনলাইন ও অফলাইন দুই ক্ষেত্রেই।
এক্সিকিউটিভ কো–অর্ডিনেটর, ইয়ুথ ফর ক্লাইমেট জাস্টিস।
আমি ক্লাইমেট জাস্টিস নিয়ে কাজ করি। আমাদের মেয়েরা যে পরিমাণ তথ্য পায়, ছেলেরা সে পরিমাণ তথ্য পায় না। জলবায়ু পরিবর্তন উপকূলীয় অঞ্চল, চরাঞ্চল, হাওর অঞ্চলের মেয়েদের প্রজননস্বাস্থ্যে আঘাত করে৷ উপকূলীয় একজন নারীকে তিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার হেঁটে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। সে পানি থেকে কতখানি পানি তিনি মাসিক ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ করতে পারেন! সেখানের অনেক মেয়ে ট্যাবলেট সেবন করে মাসিক বন্ধ রাখে। অন্য যে নারীরা লবণাক্ত পানির সংস্পর্শে আসেন, তঁাদের প্রজননস্বাস্থ্যে অনেক বেশি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের সময় এসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।
অভিনয়শিল্পী।
আমি বেশ আধুনিক একটা পরিবারে বড় হয়েছি। কিন্তু আমার মা আমাকে ঋতুস্রাবসংক্রান্ত বিষয়ে কিছুই বলেননি। এ বিষয়টি আমি আমার এক বান্ধবীর কাছ থেকে জেনেছি। তার এ অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ের। তখন আমার বয়স ১০ বছর হবে। ঋতুস্রাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি এভাবে আমাদের শেখা উচিত নয়। আমার যখন প্রথম পিরিয়ড হয়, তখন আমি স্কুলে। সেই স্কুলে ছেলে–মেয়ে উভয়ই পড়ত। স্কুলে যাওয়ার পর সকালবেলায় এ বিষয়টির মুখোমুখি হওয়া আমার জন্য ছিল বিব্রতকর।
আমি মনে করি, এসব বিষয় কিশোর–কিশোরীর আগে তাদের মা–বাবাকে সচেতন হতে হবে। বাসায় এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার চর্চা করতে হবে। ঋতুস্রাবের শুরুর আগেই মা–বাবাকে অবশ্যই তঁার মেয়েকে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন উপহার হিসেবে দিতে হবে। পাশাপাশি তাকে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত বলতে হবে যে কিছুদিন পরে তার কী পরিবর্তন হবে। ভাই-বোনদের মধ্যে পিরিয়ড নিয়ে আলোচনার পরিবেশটা ঘর থেকেই তৈরি করতে হবে।
গ্রাম বা মফস্সলের স্কুলগুলোর শিক্ষকেরা এ বিষয়ে সচেতন নন। এমনকি শহরের অনেক স্কুলের শিক্ষকেরাও সচেতন নন। স্কুলে পড়ার সময় ঋতুস্রাব নিয়ে বইয়ের ৪২ পৃষ্ঠায় একটি অধ্যায় ছিল, যা আমরা পিনআপ করে রাখতাম। আমাদের বান্ধবীদের কারও যখন পিরিয়ড হতো, তখন তা আমরা বোঝাতাম ‘৪২ পৃষ্ঠা’ বলে। আমাদের ছেলে বন্ধুরা বিষয়টি বুঝতে পারত না। তারা জানার জন্য কৌতূহল দেখালেও আমরা বলিনি। এখন আমার মনে হচ্ছে, তখন যদি আমরা ছেলেদের বলতাম, তাহলে তারাও সচেতন হতো। এটি নিয়ে আলোচনা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আমি বলব, শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদের কৈশোরকালীন পরিবর্তন নিয়েও ভাবতে হবে এবং মানসিক সহায়তা দিতে হবে।
জাতীয় নারী দলের সাবেক ক্রিকেটার।
একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর থেকে কিশোরীদের ঋতুস্রাব হয়। এ বিষয়ে তাদের আগে থেকেই সচেতন ও প্রস্তুত করতে হবে। এ বিষয়গুলো পরিবার থেকেই অভ্যাস করানো উচিত। আমার ভাই যদি তার স্ত্রীর জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনে আনতে পারেন, তাহলে তিনি আমার জন্যও আনতে পারবেন। অন্যদিকে আমার স্বামী যদি আমার জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন আনতে পারে, তাহলে সে তার বোনের জন্য কেন আনতে পারবে না!
প্রজননস্বাস্থ্যের বিষয়গুলো প্রচারের জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। কারণ, আমরা একঘেয়ে কথা বা উপদেশ শুনতে পছন্দ করি না। এর পরিবর্তে আমরা যদি এ বিষয়গুলোকে আকর্ষণীয়ভাবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রচার করতে পারি, তাহলে তা ফলপ্রসূ হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের তারকারা ভূমিকা রাখতে পারেন। ক্রিকেটার সাকিব কিংবা অভিনেত্রী জয়া আহসানের মতো বড় তারকারা তঁাদের পেশার পাশাপাশি সচেতনতামূলক ভিডিও বার্তা দিলে তা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি নির্দিষ্ট দিনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব ভিডিও দেখানো যেতে পারে। তাহলে তারা আনন্দের সঙ্গে এ–সংক্রান্ত বিষয়গুলো জানতে পারবে।
সংগীতশিল্পী ও শিক্ষক, প্লেপেন স্কুল।
শহরের ভালো স্কুলগুলোতে শিক্ষকেরা প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু সিলেট কিংবা চট্টগ্রামের
মতো অনেক জায়গা আছে, যেখানে ধর্মীয় ও সামাজিক রক্ষণশীলতার জন্য এই কথাগুলো বলার সুযোগ হচ্ছে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সুযোগ নেই বললেই চলে। মা–বাবা সচেতন হলেও তঁারা এই বিষয় নিয়ে সন্তানের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন, সে বিষয়টি এখনো সহজ হয়নি। শিক্ষার্থীরা চাইলেই রসায়ন বা পদার্থবিজ্ঞানের কোনো শিক্ষকের কাছে গিয়ে তাদের প্রজননস্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো আলোচনা করতে পারে না।
আমি যে স্কুলে কাজ করি, সেখানে একটি কাউন্সেলিং বক্স আছে। আমি মনে করি, বিদ্যালয়ে কিশোরদের জন্য একজন পুরুষ এবং কিশোরীদের জন্য একজন নারী কাউন্সেলর থাকা প্রয়োজন। তঁার কাছে শিক্ষার্থীরা শারীরিক পরিবর্তনের পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তন নিয়েও কথা বলার সুুযোগ পাবে।
কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইপাস বাংলাদেশ।
আমাদের কিশোর–কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ন্যায়বিচার। প্রথমত, এটি পরিবার থেকে নিশ্চিত করা হচ্ছে না। তাদেরকে যথাযথভাবে তথ্য জানানো হচ্ছে না, স্কুল থেকে হচ্ছে না। কেউ যখন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা নিতে যাচ্ছে, সেখানে তার সঠিক যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। সেবা প্রদানকারীরা নিজেদের পক্ষপাতদুষ্টতা ও গোঁড়ামিকে আরোপ করছে। গণমাধ্যমও সব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।
এই পরিস্থিতিতে কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে খণ্ডিতভাবে চিন্তা করলে এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না। এ অবস্থার পরিবর্তন করতে চাইলে আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের সংলাপ করতে হবে। আমাদের শিক্ষক ও ইমামদের প্রশিক্ষণের জন্য কাজ করতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের পক্ষপাতদুষ্টতা ও গোঁড়ামি দূরীকরণের পাশাপাশি প্রতিটি জায়গায় আমাদের কী কী সীমাবদ্ধতা আছে, তা শনাক্ত করতে হবে।
সরকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করে, তা দিয়ে মানসম্মত স্বাস্থ্য ও শিক্ষা আশা করা সম্ভব নয়। উন্নয়ন মানে স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, উন্নয়ন মানে শিক্ষার উন্নয়ন—এ বিষয়টি ধারণ করতে হবে। এটি করা গেলে সত্যিকারের পরিবর্তন সম্ভব। আমাদের এক–চতুর্থাংশ কিশোরীর বিয়ে হয় ১৬ বছরের আগে; অর্ধেকের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে; এক–চতুর্থাংশ কিশোরী গর্ভবতী হয় বয়ঃসন্ধিকালে। এই অবস্থায় পরিবর্তন না এনে আমরা মুষ্টিমেয় কিছুসংখ্যক পরিবর্তন আনলে নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকব।
পরিবার পর্যায়ে, ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যশিক্ষার ক্ষেত্রে এবং গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে কী করণীয়, তা নির্ধারণের জন্য একটি কমিশন গঠন করতে হবে। এ কমিশন সমস্যাগুলোর মূল কারণ চিহ্নিত করবে। এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য সমন্বিতভাবে কী করা প্রয়োজন, তার একটা সুপারিশ তঁারা করবেন৷ এ সুপারিশ অনুযায়ী আমাদের জাতীয় কৈশোর স্বাস্থ্য কৌশলপত্রকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানো উচিত। এটি বাস্তবায়নের জন্য পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনাও থাকা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ, ইউনিসেফ বাংলাদেশ।
কিশোর–কিশোরীদের জন্য যা করা হবে, তা তাদের পরামর্শ নিয়েই করতে হবে। তাদের কাছ থেকে শুনে, তাদের মতো করে কর্মপরিকল্পনা করা দরকার। ইউনিসেফ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। ১৩টি জেলার ১১৮টি কেন্দ্রে প্রায় ১২ লাখ কিশোর-কিশোরী সেবা গ্রহণ করেছে৷ এ সংখ্যা আশাজাগানিয়া। কিন্তু এরপরও এটি পর্যাপ্ত নয়। কারণ, এর বাইরেও অসংখ্য কিশোর-কিশোরী আছে।
সরকারের সঙ্গে কাজ করে আমরা বয়ঃসন্ধি নিয়ে একটি অ্যাপ তৈরি করেছি। ১০ কোটি মানুষ এখানে তথ্য জানার চেষ্টা করেছে৷ কিশোর-কিশোরীদের কেবল স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই আনতে হবে, তার কোনো প্রয়োজন নেই। যে মাধ্যমে সে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সেখানেই তাকে সেবা দিতে হবে। কেউ যদি কল সেন্টারে কথা বলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তাকে সে সুযোগ দিতে হবে। তারা তাদের চাহিদা ও সময়মতো যোগাযোগ করবে। আর যারা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে সেবা নিতে চাইবে, তারা সেটিই করবে। সব ধরনের সুযোগই অবারিত থাকা দরকার।
বয়ঃসন্ধিকালীন মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য বলছে, বিবাহিত নারীদের ১৫ শতাংশ, অবিবাহিত নারীদের ১১ শতাংশ ও অবিবাহিত ছেলেদের ৫ শতাংশের বেশি গুরুতর হতাশায় আছে। এ রকম ক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসক ও কাউন্সেলর অথবা উভয়ের পরামর্শ প্রয়োজন। ইউনিসেফ এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে।
স্কুল, মাদ্রাসা, এতিমখানা—সব মাধ্যমের কিশোর–কিশোরীদের সেবার আওতায় আনা দরকার। এ জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
পরিচালক, জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি, ব্র্যাক।
প্রজননস্বাস্থ্য মানেই কেবল মেয়েদের মাসিক স্বাস্থ্য নয়—এ কথাটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক বছরের কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। গ্রামে উঠান বৈঠকে মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে বসে আলোচনা করছে, অভিভাবকেরা পেছন থেকে শুনছেন৷ এ দৃশ্যের সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত হয়েছি।
প্রজননস্বাস্থ্যের সঙ্গে শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েদের শরীর সম্পর্কে জানার কৌতূহল থাকাটা স্বাভাবিক। এ সময়ে তাদের কীভাবে পরামর্শ দেওয়া যায়, তা কি আমাদের বাবা-মায়েরা জানেন? তঁারা হয়তো ঋতুস্রাব নিয়ে বলতে পারেন। কিন্তু শারীরিক পরিবর্তনের বিষয়টি আলাদা। তার কৌতূহল কী করে সামলে রাখা যাবে এবং এর সম্ভাব্য কী কী ঝুঁকি আছে এবং কত দিন তার অপেক্ষা করা উচিত—সে বিষয়টা জানাতে হবে।
প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনায় আমরা অনেক ভাসা-ভাসা কথা বলি। ঋতুস্রাব ছাড়া আর কোনো বিষয়ে খোলাখুলি বলতে পারি না। শারীরিক পরিবর্তন, কিশোর-কিশোরীদের কী করা উচিত, কী করে তা সামলে তারা একটি সুস্থ–স্বাভাবিক জীবন যাপন করবে। তারা পর্নোগ্রাফি থেকে শিখবে না। কোথা থেকে শিখবে, সেগুলো আমাদের নির্ধারণ করা উচিত। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমরা একে সহজ করতে পারি। সঠিক বার্তাগুলো জায়গামতো পৌঁছাতে হবে এবং ইন্টারনেট সবার জন্য সহজলভ্য করা উচিত।
সাধারণ সম্পাদক, বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ।
আমি বন্ধুসভার চট্টগ্রাম কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেছি। সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহে দুর্দান্ত কর্মশালা হয়েছে। প্রজননস্বাস্থ্য বিষয়ে তরুণদের আগ্রহ আমাদের মুগ্ধ করেছে। এসব কর্মশালায় কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণ আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ছিল। এই কর্মশালাগুলো উন্নয়ন সহযোগীদের দীর্ঘদিনের কাজের ফল বলে আমি মনে করি। প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বন্ধুসভা একটি করে ভালো কাজ করে। গত বছর দিনাজপুর বন্ধুসভা স্থানীয় দুটি বালিকা বিদ্যালয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন বক্স স্থাপন করেছে। গাজীপুর বন্ধুসভা ভালো কাজ হিসেবে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কথা বলেছে। সম্প্রতি আমরা আত্মহত্যা প্রতিরোধে প্রতিটি জেলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মশালা করছি।
সভাপতি, ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা।
আমাদের অধিকাংশ শিক্ষক ও অভিভাবক কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সচেতন নন। এ–সংক্রান্ত তথ্য বইয়ে লেখা আছে, কিন্তু তারা সেটিও পড়ান না। ফলে আমাদের জানার সুযোগ সীমিত হয়ে যাচ্ছে। বলা হয়, পিরিয়ডের সময় মাছ, মাংস, ডিম খেতে পারবে না। এই কুসংস্কারগুলো ভাঙতে হবে। প্রজননস্বাস্থ্য বলতে আমরা যেন কেবল নারীদের পিরিয়ড ও গর্ভকালীন সমস্যাকে না বুঝি। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেদেরও অনেক ধরনের শারীরিক পরিবর্তন হয়। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি। শিক্ষাক্ষেত্র থেকে এর সূচনা করতে হবে। বর্তমান কারিকুলামেও এ বিষয়টিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। সহশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন জরুরি।
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, প্রথম আলো।
সম্প্রতি খবরের কাগজে একটি সংবাদ দেখলাম আমাদের স্কুলগুলোর শৌচাগারের দুরবস্থা সংক্রান্ত। ওগুলো ভয়াবহ রকমের নোংরা। তাই শিক্ষার্থীরা স্কুলের শৌচাগার ব্যবহার করতে চায় না। এটি তাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ রকম মৌলিক জায়গায় আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রজননস্বাস্থ্য–সংক্রান্ত বিষয়ে এখন আমরা খোলাখুলি কথা বলতে পারি। এসব বিষয় নিয়ে অভিভাবকেরাও আপত্তি করেন না। যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য–সম্পর্কিত কোন তথ্যগুলো কিশোর-কিশোরীদের সচেতন করতে জানানো প্রয়োজন, তা আমাদেরকে দিন। আমরা আমাদের কিশোর আলো ম্যাগাজিনের মাধ্যমে তা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেব। কিন্তু আমরা কী লিখব, তা-ই তো জানি না। এ জন্য আগে আমাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্ধুসভার সঙ্গে আপনারা যেসব কর্মশালার আয়োজন করেছেন, তা আরও বেশি পরিমাণে হওয়া উচিত। তাহলে আমাদের সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার ভেঙে যাবে। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।