নাহিম রাজ্জাক
সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
মো. আব্দুর রহিম খান
মহাপরিদর্শক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই)
টুমো পটিআইনেন
কান্ট্রি ডিরেক্টর, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)
আব্দুল্লাহ হিল রাকিব
ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিজিএমইএ
মোহাম্মদ হাতেম
নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
শাকিল চৌধুরী
সেক্রেটারি জেনারেল, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন-বাংলাদেশ কাউন্সিল
আশরাফ আহমেদ
সভাপতি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)
শহীদুল্লাহ বাদল
জেনারেল সেক্রেটারি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)
মোহাম্মদ জাহিদুল্লাহ
চিফ সাসটেইনেবিলিটি অফিসার, দুলাল ব্রাদার্স লি (ডিবিএল)
লেটিশিয়া ওয়েবল রবার্টস
ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, আইএলও
মাহ্ফুজ আনাম
সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
গবেষণা পরিচালক,
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
সঞ্চালনা:
তানজিম ফেরদৌস
ইন-চার্জ অফ এনজিও অ্যান্ড ফরেন মিশন, দ্য ডেইলি স্টার
নাহিম রাজ্জাক
সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উচিত কমপ্লায়েন্সের পাশাপাশি উৎকর্ষ বিকাশে উদ্যোগী হওয়া। বাংলাদেশ সরকার সব অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে শ্রম ও ইপিজেড বিষয়ক আইনগুলোকে অভিন্ন একটি ধারায় আনতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শিগগিরই এটি চূড়ান্ত হবে।
সরকার ট্রেড ইউনিয়ন গঠনকে উৎসাহিত করতে পারে, তবে কারখানাগুলোকেও তা সমর্থন করতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত ইউনিয়ন চায়, কিন্তু কম্বোডিয়ায় পোশাক খাতে ইউনিয়নের বিরূপ প্রভাব দেখা গেছে। তাই এ ক্ষেত্রে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ এবং সবচেয়ে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরিও আমাদের দেশেই রয়েছে। তবু কমপ্লায়েন্সের জন্য বাংলাদেশ প্রায়ই বাড়তি কোনো মূল্য পায় না। আইএলও, আইএফসি ও গণমাধ্যমগুলোর এ ব্যাপারে ভূমিকা নিতে হবে। বেটার ওয়ার্ক মডেল অনুকরণযোগ্য হলেও সব কারখানায় এটি বাস্তবায়ন করা জরুরি নয়; বরং কারখানাগুলো নিজেদের সফলতার অভিজ্ঞতাগুলো থেকে উদাহরণ নিয়ে নিজেদের এগিয়ে নিতে পারে।
টুমো পটিআইনেন
কান্ট্রি ডিরেক্টর, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)
পোশাক খাতে পেশাগত নিরাপত্তা, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, দুর্ঘটনার ঝুঁকি প্রশমন, ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা ও প্রাতিষ্ঠানিক সার্বিক মানদণ্ড উন্নয়নের মতো ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা দেখেছি। এমন পরিবর্তন এ খাতের উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা প্রমাণ করে। তবে কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে ইতিবাচক চর্চার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ, কেননা শ্রম আইন পরিস্থিতির উন্নয়নের পাশাপাশি উন্নত কর্মপরিবেশ, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও সার্বিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সেখান থেকেই নিশ্চিত হবে। সরকার প্রণীত আইনগুলো বাস্তবায়নে যেসব বাধা রয়েছে, তা অতিক্রম করতে বেটার ওয়ার্ক প্রকল্প একটি সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করছে, যা বৈশ্বিক ইতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলোকেও সামনে নিয়ে আসছে।
গত এক দশকে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আন্তরিকভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও কমপ্লায়েন্ট শিল্প হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। অদূর ভবিষ্যতে সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যা সমাধানের মতো সক্ষমতা এখন এ শিল্পের বেড়েছে। বেটার ওয়ার্ক প্রকল্প সরকার, কারখানা এবং বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর মতো প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কারখানা পর্যায়ে বাস্তবসম্মত চর্চা সুপারিশ ও বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে। দেশের অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও তা অনুসরণ করতে পারে।
অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান বিশ্ববাজারে ঢুকতে চায়, তাদের উচিত পোশাক খাতের উদ্যোগগুলো খতিয়ে দেখে সেভাবেই পদক্ষেপ নেওয়া। সামাজিক ও পরিবেশগত শর্তগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করলে খাদ্য ও কৃষি, নির্মাণশিল্প, ওষুধশিল্প, আসবাবশিল্পসহ আরও অনেক খাতেই বাংলাদেশের বড় কিছু করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য এসব প্রতিষ্ঠান, তাদের কর্মী, ট্রেড ইউনিয়ন, শিক্ষাবিদ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় জরুরি।
মো. আব্দুর রহিম খান
মহাপরিদর্শক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর
গত এক দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের অগ্রগতির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা উন্নয়নে ‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ’ প্রকল্পের সাফল্য আরও ব্যাপকভাবে এমন উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা। তবে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে এবং বাংলাদেশে বিদ্যমান শ্রম আইন (বিএলএ) ও শ্রমনীতি বাস্তবায়ন সরকার ও মালিক-শ্রমিক একসঙ্গে কাজ করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) স্ট্যাটাস থেকে উন্নীত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের রপ্তানিনির্ভর শিল্প, বিশেষ করে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতকে উৎপাদনের ক্ষেত্রে নৈতিকতা বজায় রাখা এবং উন্নত মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
আব্দুল্লাহ হিল রাকিব
সহ সভাপতি, বিজিএমইএ
‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ’ ২০১৪ সালে যখন যাত্রা শুরু করে, তখন নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথম দিকে অনেক সংশয় থাকলেও আইএফসি, আইএলও ও অন্য অংশীদারদের সহযোগিতায় সফলতা আসে। কারখানার মালিকেরা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও আরও বেশি স্বীকৃতি ও প্রণোদনা ভবিষ্যতে উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রানা প্লাজার ঘটনা আমাদের অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে; আমরা এখন অগ্নিনিরাপত্তার ক্ষেত্রে যেমন উন্নতি করেছি, তেমনি কর্মীদের স্বাস্থ্যগত বিষয়গুলোর দিকেও মনোযোগ দিয়েছি।
সাফল্যের এ ধারাবাহিকতার কারণে অনেক কারখানাই এখন বেটার ওয়ার্ক কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায়। এ প্রকল্পের সুবিধাগুলো অনুধাবন করার এবং কারখানা পর্যায়ে সুস্থ চর্চা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করার জন্য সরকারের প্রতি আমাদের আবেদন থাকবে। এ ক্ষেত্রে সামাজিক, পরিবেশগত এবং ব্যবস্থাপনা–সংক্রান্ত একটি একক ও সমন্বিত নীতি থাকা দরকার। সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। সরকারের উচিত আর্থিকভাবে, সচেতনতা তৈরিতে ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এ ক্ষেত্রে সমর্থন দেওয়া। টেকসই উন্নয়নের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পর্যন্ত সম্পূর্ণ ব্যবস্থাকে এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আশরাফ আহমেদ
সভাপতি, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি
‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ প্রোগ্রাম’–এর মূল লক্ষ্য হলো প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, মজুরি বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলা। এ ব্যবস্থাপনায় এটি নিশ্চিত করা হবে যে এখানে শ্রমিকদের কথাগুলো শোনা হবে, তাদের অভিযোগ নিষ্পত্তি হবে এবং প্রতিষ্ঠানের সার্বিক পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে।
শ্রমিকদের যথাযথ মর্যাদা দিলে এবং তাঁদের অসুবিধার সমাধান করলে এমনকি তাঁদের মজুরি বৃদ্ধি না করেও উৎপাদনশীলতা বাড়ে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনের সক্ষমতা দৃশ্যমান হারে বাড়ে।
বিনিয়োগ নয়, বরং এখানে চ্যালেঞ্জ হলো ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নানা ধরনের চর্চার কার্যকর প্রয়োগ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণের মতো বিষয়। সারা দেশের হাজারো প্রতিষ্ঠানের নিজস্বতার সঙ্গে সংগতি রেখে একেবারে কনিষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা দরকার। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ প্রোগ্রাম’-এর একটি মডেল অনুসরণ করা দরকার।
শাকিল চৌধুরী
সেক্রেটারি জেনারেল, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন-বাংলাদেশ কাউন্সিল
‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ’ গত ১০ বছরে দৃশ্যমান ও উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের মধ্য দিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি লাভ করেছে। দেশে বর্তমানে ৭৩ দশমিক ৬৯ মিলিয়ন কর্মী রয়েছে। আরএমজি খাতে আগের তুলনায় অনেক উন্নতি হলেও আরও কাজ বাকি রয়েছে। বর্তমানে মাত্র ৪৭৪টি কারখানা এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে যেখানে আরও প্রায় ৩ হাজার কারখানায় উন্নয়নের প্রয়োজন।
গত ১০ বছরে আরএমজি খাতে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ১৫ শতাংশ বেড়েছে এবং রাজস্ব বেড়েছে ৫৫ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারকে পরিণত হয়েছি। তবে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং সমন্বিতভাবে সমঝোতার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অপর্যাপ্ত।
মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি, কিন্তু ইউনিয়ন ছাড়া এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলা কষ্টসাধ্য। এ ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে আইন সংশোধনের মতো নীতিগত পরিবর্তনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারখানা পরিদর্শন সংক্রান্ত বিষয়াদির ক্ষেত্রেও অনেক উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন গঠিত হলে তা শুধু যে শ্রমিকদেরই সুবিধা দেবে, তা নয়, বরং পুরো শিল্প খাতের জন্যই তা হবে লাভজনক।
আরএমজি খাতে ট্রেড ইউনিয়ন ও সমন্বিত আলোচনার বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে অনেক জটিল সমস্যা প্রাথমিক পর্যায়েই সমাধান করা সম্ভব। শ্রম আদালতের পক্ষে এককভাবে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়; অনেক সমস্যা কারখানা পর্যায়েই সমাধান করা উচিত, যা ট্রেড ইউনিয়নের মাধ্যমে সম্ভব।
মোহাম্মদ হাতেম
নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
বেটার ওয়ার্ক প্রজেক্টের বেশ কিছু ভালো দিক আমার দৃষ্টিতে এসেছে। বেশ কিছু ইমপ্রুভমেন্ট আছে। এটা একটা ভালো কাজ, আমরা এটিকে এপ্রিশিয়েট করতে চাই। তবে আরো কিছু করার আছে, সেটাও বলা দরকার।
আমরা ঘনিষ্ঠভাবে এই প্রকল্পের সঙ্গে কাজ করছি। আমরা বেটার ওয়ার্ক প্রজেক্টের ভূমিকাকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এ প্রকল্পের আওতায় থাকা কারখানাগুলোকে নিরীক্ষক বা ক্রেতাদের দাবিগুলো পূরণ করতে হয়। একজন উদ্যোক্তার জন্য বিষয়টি সব সময় মেনে চলা কঠিন।
বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ’ প্রকল্পের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে আমরা সহযোগিতা করি, তবে ক্রেতাদের নিজস্ব শর্ত আরোপ ছাড়া সেগুলো গ্রহণ করা উচিত। এ ছাড়া, ক্রেতাদের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে এবং তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
শহীদুল্লাহ বাদল
জেনারেল সেক্রেটারি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল (আইবিসি)
তৈরি পোশাক খাতে দেশে প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭৪টি রয়েছে ‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ’ প্রোগ্রামের আওতায়। কারখানা পর্যায়ে নিবন্ধিত ১৬০টি ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে থাকলেও এর মধ্যে মাত্র ৬০টি কার্যকর। কারখানা পর্যায়ে এ ধরনের ইউনিয়ন গঠন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ প্রোগ্রাম’ এ ধরনের ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলেছে, তাই আরও বেশি কারখানার এ প্রোগ্রামের আওতায় আসা উচিত।
বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রামের আওতায় পরিচালিত কারখানাগুলোর কার্যক্রম নজরদারির জন্য নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একটি তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা দরকার। এতে এ প্রোগ্রামের আওতায় থাকা এবং এর বাইরে থাকা উভয় ধরনের কারখানাগুলোর কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা দরকার। এ তথ্যভান্ডার তৈরি ও পরিচালনার জন্য সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে।
সক্ষমতা তৈরি ও দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা জরুরি। বিবাদ সমাধানের জন্য সামাজিক পর্যায়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করা জরুরি। সামাজিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে কারখানার অনেক সমস্যারই সমাধান সম্ভব। স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে অনেক শ্রমিক কাজ হারাচ্ছেন। এ কারণে তাঁদের এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহারের সঙ্গে পরিচিতি ও তা ব্যবহারের দক্ষতা গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ।
মোহাম্মদ জাহিদুল্লাহ
চিফ সাসটেইনেবিলিটি অফিসার, দুলাল ব্রাদার্স লি. (ডিবিএল)
দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড (ডিবিএল) এর স্পিনিং মিল ও পোশাক কারখানার জন্য এনএসডিএ স্বীকৃত কিছু ইন্ডাস্ট্রি-বেজড ট্রেনিং (আইবিটি) সেন্টার গড়ে তুলেছে। এসব সেন্টারে কারখানার চলমান সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে অন্য কারখানাগুলোরও আইবিটিভিত্তিক সমাধানের ব্যবস্থা করা উচিত।
তৈরি পোশাক খাতে বিগত বছরগুলোতে নারী কর্মীদের অনুপাত ৮০% থেকে ৫০-৫৫%-এ নেমে গেছে। এ থেকে বোঝা যায়, হসপিটালিটি খাতের মতো অন্যান্য ক্ষেত্রে নারী কর্মীরা পোশাক খাতের চেয়ে ভালো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। পোশাক খাতে নারীদের ধরে রাখতে হলে এখানেও তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।
২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের কার্বন নিঃসরণের মাত্রা কমাতে হবে। এ জন্য মূলত নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশে ভবনের ছাদগুলোতে সৌরশক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গার সংকট রয়েছে। এ কারণে সরকারি সহযোগিতা খুব জরুরি।
মাহফুজ আনাম
সম্পাদক ও প্রকাশক, দ্য ডেইলি স্টার
‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ’ প্রোগ্রামের মতো এ গোলটেবিলের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে টেকসই, নৈতিক ও লাভজনক একটি খাত হিসেবে গড়ে তোলা। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়ন ও নৈতিকতার গুরুত্বকে বিবেচনায় নিয়ে এসব উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায় দ্য ডেইলি স্টার।
বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অগ্রগতি বেশ আশাব্যঞ্জক। তবুও খুব কাছ থেকে বা বিশ্লেষণমূলকভাবে দেখলে আমাদের উন্নয়ন-প্রচেষ্টার মধ্যে থেকে যাওয়া দুর্বলতাগুলো চোখে পড়ে। এ ধরনের আলোচনার আয়োজন এবং আইএলওর মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্ব এসব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার একটি ভালো উপায়।
বাংলাদেশে শ্রমিকদের অধিকারবিষয়ক নীতিমালা তৈরিসহ অনেক ক্ষেত্রেই আইএলওর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমি নিশ্চিত করতে চাই, এ আলোচনা বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা হয়ে থাকবে না; আমাদের সম্পাদকীয় নীতিমালার প্রতিশ্রুতি এবং টেকসই বাংলাদেশের প্রতি আমাদের চলমান অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে এমন উদ্যোগ আমরা ভবিষ্যতেও চালিয়ে যাব।
লেটিশিয়া ওয়েবল রবার্টস
ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার, আইএলও
কাজের ধরনে পরিবর্তনশীলতা ও প্রতিষ্ঠানের উন্নতির বিষয়টি আইএলওর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আইএলও বিশ্বাস করে, এ খাতের সাফল্যের জন্য দক্ষ লোকবল খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং এর উন্নয়নের জন্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলোকে কাজে লাগানো দরকার। এ শিল্পের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যমান ঘাটতি পূরণে কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
বেটার ওয়ার্ক প্রকল্পের সঙ্গে আমাদের সক্রিয় সহযোগের ফলে গত এক দশকে এ খাতে অনেক উন্নয়ন সাধন করা গেছে। আমরা দেখেছি নন-কমপ্লায়েন্স উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, উৎপাদনশীলতা ও শ্রমিকদের মধ্যে সন্তুষ্টি বেড়েছে। তবে টেকসই প্রকল্প নিশ্চিত করতে আমাদের লক্ষ্য মূলত ত্রিমুখী।
প্রথমত, আমাদের উদ্দেশ্য হলো কারখানা কর্তৃপক্ষকে বেটার ওয়ার্ক ফ্রেমওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে ও নন-কমপ্লায়েন্স কমিয়ে আনতে সক্ষম করে তোলা। পাশাপাশি, আমরা হাইব্রিড সেবা চালু করেছি, যেগুলো ঝুঁকি মূল্যায়ন করে তা প্রশমন করতে কারখানাগুলোর কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমন কৌশলের মাধ্যমে কারখানাগুলো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের মাধ্যমে তাদের অপচয় কমিয়ে এনে সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে। আমরা ফ্যাক্টরি অ্যাম্বাসেডর প্রোগ্রামও চালু করেছি, যার মাধ্যমে নন-কমপ্লায়েন্স ইস্যুগুলোকে মোকাবিলা করা সহজ হবে। এর মাধ্যমে কেবল ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটিই নয়; বরং নন-কমপ্লায়েন্সের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে এর স্থায়ী সমাধানও নির্দেশ করা হচ্ছে।
আমাদের কৌশলের দ্বিতীয় দিকটি হচ্ছে সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অংশীদারি উৎসাহিত করা। এ জন্য শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষক তৈরি ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ধারাবাহিক উন্নয়নের মতো বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তৃতীয়ত গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বেটার ওয়ার্ক প্রকল্পের বিজনেস মডেল ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার উন্নয়নের ওপর। এ জন্য আমরা আলোচনার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিতরণের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। এ খাত যেন বিরামহীনভাবে এগিয়ে যেতে পারে, এ জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির বিষয়টিকে একটি উপায় হিসেবে বিবেচনার পাশাপাশি পরস্পরের মধ্যে সহযোগের নতুন নতুন উপায় সন্ধানও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আমাদের ফোকাস হলো অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতের জন্য কর্মপন্থা ঠিক করা, যা তৈরি পোশাক খাতের বাইরে অন্যান্য খাতেও কাজে লাগানো যাবে।
তানজিম ফেরদৌস
ইন-চার্জ অফ এনজিও অ্যান্ড ফরেন মিশন, দ্য ডেইলি স্টার
আজকের গোলটেবিল আলোচনায় শ্রম অধিকার, তৈরি পোশাক খাতে কমপ্লায়েন্স, শ্রমের মান উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা ও আদর্শ ব্যবসায়িক চর্চার মতো বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে।
এ ছাড়াও গত এক দশকের সফলতা, তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়ন এবং ‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ’ প্রোগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। আগামী দশকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ খাতের আরও উন্নয়নের জন্য নীতিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রায়োগিক পরিবর্তনের সুপারিশও উঠে এসেছে। আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)
গত এক দশকে তৈরি পোশাক খাত পেশাগত ঝুঁকির বিষয়টিতে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন করেছে। এটি অবশ্যই আমাদের একটি অর্জন, তবে আরও অনেক ক্ষেত্র রয়ে গেছে যেখানে উন্নতির প্রয়োজন। এলডিসি থেকে উত্তরণসহ নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের কথাও ভাবতে হবে। আগামী দশকে এ শিল্পের দক্ষতা ও উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি শ্রম অধিকার এবং সামাজিক ও পরিবেশগত ইস্যুগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের বিষয়টি গুরুত্বপুর্ণ হবে। এ ক্ষেত্রে ‘বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ’ প্রকল্প গত এক দশকে কাক্ষিত উন্নয়ন চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রেখেছে।
বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম শুরু হয় ২০১৪ সালে। ওই সময় এ প্রকল্পে এমন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়, যেগুলো আগে আমাদের ভাবনায় ছিল না। আইএলও এবং আইএফসির এই যৌথ উদ্যোগের প্রথম দশক পার হয়েছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য কেবল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি নয়, পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে পরামর্শ প্রদান, প্রশিক্ষণ প্রদান, সামাজিক পর্যায়ে আলোচনা ও অংশীজনদের অন্তর্ভুক্ত করার মতো নানা রকমের কাজ এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
গত এক দশকে ৫০টি ব্র্যান্ডসহ ৪৭০টি পোশাক কারখানা এবং ১৩ লাখ শ্রমিককে (যা এ খাতের মোট শ্রমিকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ) এ প্রকল্পের আওতায় সেবা দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য এ থেকে সুবিধাপ্রাপ্তদের ৫১ শতাংশই নারী।
বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রামের প্রভাব বুঝতে এর আওতায় থাকা কারখানাগুলোর সঙ্গে এ প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন কারখানাগুলোর তুলনা করে দেখা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়—এই প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত কারখানাগুলোর ন্যূনতম মজুরি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি, প্রতি মাসে যা গড়ে ৪৫০ টাকার সমান। এসব কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে সঞ্চয়ের হারও এ প্রোগ্রামের বাইরে থাকা শ্রমিকদের তুলনায় বেশি।
যেসব কারখানার ব্যবস্থাপনা ভালো এবং শ্রমিকরা ভালো সুবিধা পায়, সেখানে দেখা যায় তাদের কর্মপরিবেশ ও মজুরির পরিমাণ ভালো। বেটার ওয়ার্ক প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ নিয়ে তারা সন্তুষ্ট বা তাদের উচ্চমাত্রায় সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। এসব কারখানায় মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রাপ্তির হার ১০ শতাংশ এবং শিশুদের দিবাযত্ন কেন্দ্র থাকার হার ৩০ শতাংশ বেশি।
বেটার ওয়ার্কের মূল প্রকল্পগুলোর দিকে যদি তাকাই, তাহলে দেখা যাবে: প্রথমত, এটি সামাজিক পর্যায়ে আলোচনা ও অভিযোগ নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্ব দেয়। এসব আলোচনায় শ্রমিক, ব্যবস্থাপক ও সুপারভাইজারদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হয় যে শ্রমিকদের দাবিগুলো উচ্চপর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ একটি অর্জন হলো দ্বিপক্ষীয় কমিটি ও কারখানাগুলোর নন-কমপ্লায়েন্সের হার ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে।
বেটার ওয়ার্ক প্রকল্পের কারণে কমিটিগুলোতে গত পাঁচ বছরে নারী সদস্যের প্রতিনিধিত্ব প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় থাকা কারখানাগুলোর ক্ষেত্রে সক্রিয় কমিটি ১৩ শতাংশ, যেখানে প্রকল্পের বাইরের কারখানার ক্ষেত্রে এ হার মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ।
গত প্রায় এক দশকে (২০১৪-২২) পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য ইস্যুতে নন-কমপ্লায়েন্স ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। দুর্ঘটনার তথ্য জানানো ও আগুন থেকে সুরক্ষা বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ বেড়েছে এবং নিরাপত্তা কমিটি ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় নন-কমপ্লায়েন্স কমেছে। এসব উন্নতি থেকে বোঝা যাচ্ছে, সার্বিকভাবে নন-কমপ্লায়েন্স উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এমন কারখানার সঙ্গেই ব্যবসা করতে পছন্দ করে, যারা শ্রমিকদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধাকে গুরুত্ব দেয়। কেননা, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির পেছনে অর্থ ব্যয়কে তারা খরচ বা অপচয় নয়; বরং বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকা কারখানাগুলোতে অন্য কারখানার তুলনায় ৮০ শতাংশ বেশি প্রবৃদ্ধি, শ্রম ব্যয় হ্রাস, নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধি, চাকরিতে কর্মীদের দীর্ঘস্থায়িত্ব ও পণ্যের ভালো দাম পাওয়ার মতো কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে।
বেটার ওয়ার্ক প্রকল্পের আওতায় জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি রিটার্নস প্রোগ্রামের মতো বিশেষায়িত উদ্যোগ রয়েছে, যার মাধ্যমে নারীদের সুপারভাইজারের মতো পদে উন্নতি ও বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়। এ ছাড়া ১০৩টি কারখানার ২ লাখ ৮০ হাজার শ্রমিককে মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আনা
হয়েছে। মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কমপ্লায়েন্সের ২ হাজার কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ব্রেস্টফিডিংয়ের সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়ার মাধ্যমে সদ্য মা হওয়া কর্মীদের মধ্যে অনুপস্থিতির হার কমিয়ে আনা গেছে।
এসব উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে দায়িত্বশীলতার মধ্যে আনা হচ্ছে। এর পাশাপাশি শ্রম ও সামাজিক ইস্যুতে
উন্নত মানদণ্ড নিশ্চিত করা এবং কারখানাগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়ানোও সম্ভব হচ্ছে।
টেকসই পদ্ধতির চর্চা ও দায়িত্বশীলতা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এসব উদ্যোগ নেওয়া কারখানাগুলো ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো দাম পাওয়ার দাবিদার। সরকার, নিয়োগদাতা ও শ্রমিকদের মধ্যে সমন্বয়ের ভিত্তিতে নীতিমালায় সংস্কার সাধন দরকার হতে পারে।
পরিশেষে, ব্যবসা খাতে টেকসই পদ্ধতির চর্চা ও দায়িত্বশীলতা উৎসাহিত করার মাধ্যমে শ্রম ও সামাজিক ইস্যুতে উচ্চতর মানদণ্ড নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে দেশের পোশাকশিল্পকে আরও ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেটার ওয়ার্ক প্রকল্পের রয়েছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য আরএমজি খাতকে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে, শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং সামাজিক ও পরিবেশগত ইস্যুগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে।
আরএমজি খাতের শ্রমিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্যভান্ডার গড়ে তুলতে হবে।
প্রতিটি কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলতে দিতে হবে, যারা শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে কথা বলবে।
বেটার ওয়ার্ক প্রকল্পের সাফল্যের অভিজ্ঞতাগুলো অন্যান্য কারখানায় প্রয়োগ করতে হবে। প্রকল্পের নানা উদ্যোগ ও এদের সাফল্যের তথ্য-উপাত্ত একটি তথ্যভান্ডারে সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, শ্রমিকের সার্বিক জীবনমান ও জেন্ডারের মতো ইস্যুতে আরও কাজ করতে হবে।
দ্বন্দ্ব নিরসনে কারখানা পর্যায়েই আলোচনার ক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে।
শিল্প খাতে ব্যবহৃত প্রযুক্তির বদলের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে।
আরএমজি খাতে নারী কর্মীদের ধরে রাখতে তাদের জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট কমিটি ও অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং এসব কমিটি ও কারখানায় তদারকি পর্যায়ের দায়িত্বে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
বিশেষায়িত দক্ষতা গড়ে তুলতে কারখানাগুলোতে ইন্ডাস্ট্রি-বেজড ট্রেনিং (আইবিটি) সেন্টার গড়ে তোলা জরুরি।