এমবাসি অব সুইজারল্যান্ড ইন বাংলাদেশের সহায়তায়, ইউএনডিপি বাংলাদেশের স্ট্রেনদেনিং ইনস্টিটিউশনস পলিসিজ অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রকল্প ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘জনবান্ধব নীতি প্রণয়নে সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রস্তাব’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয় ২১ নভেম্বর ২০২৪। এ আয়োজনে গবেষণা সহায়তা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসি (সিবিপি)।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সংস্কারে আসা সব পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নিচ্ছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাজের মূল ভিত্তি পরিসংখ্যান আইন ২০১৩। এ আইনে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে পরিসংখ্যান প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী বিবিএসের পরিসংখ্যানই বাংলাদেশের অফিশিয়াল পরিসংখ্যান হবে। দেশের সব কাজে আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। বিবিএসের পরিসংখ্যান দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও গবেষণাপ্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। এসডিজির ২৩১টি সূচকের মধ্যে ১১১টি সূচকের তথ্য বিবিএস দেয়। অবশিষ্ট সূচক যেগুলো অন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের দায়িত্বে আছে, সেগুলো বিবিএস সত্যায়ন করে। বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশে ব্যবহৃত উপাত্তগুলোও বিবিএস থেকে নেওয়া। সুতরাং পরিসংখ্যানগুলোর সব তথ্য অশুদ্ধ, ঢালাওভাবে এ অভিযোগ করা ঠিক হবে না। শুমারি ও জরিপের ক্ষেত্রে ইউএন গাইডলাইন অনুসরণ করে কাজ করা হয়। প্রশ্নপত্র তৈরিতে সব অংশীদারের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়। উপাত্ত সংগ্রহকালীন মাঠপর্যায়ে তিন স্তরে কার্যক্রম তদারক করা হয়। সরকারি অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সম্পৃক্ত থাকেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাজের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার কোনো ঘাটতি নেই। উপাত্ত পরিবর্তন বা প্রভাবিত করার কোনো চাপ বিবিএসের ওপর আসে না। তবে বিবিএসের প্রাতিষ্ঠানিক কিছু সমস্যা রয়েছে। বিবিএসের অর্গানোগ্রাম আপডেট করা প্রয়োজন। কর্মকর্তাদের দুটি ধারা রয়েছে—ক্যাডার ও নন-ক্যাডার। একটি ধারায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। বিবিএসের বাজেট স্বল্পতা রয়েছে। জরিপ করার জন্য বেশির ভাগ কাজ প্রকল্পভিত্তিক। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নেওয়ার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া নতুন কিছু নয়। আমরা সব সময় কারিগরি সহযোগিতা নিয়ে থাকি। উন্নয়ন সহযোগী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতায়ও কিছু জরিপ পরিচালনা করা হয়। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সংস্থার সংশ্লিষ্টতা বিবিএসের কাজের মান বৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বিবিএসের সাংগঠনিক কাঠামো হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সাংগঠনিক কাঠামোতে ৮টি পরিচালকের পদের স্থলে ১৫টি পরিচালকের পদ প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিসংখ্যান আইন সংশোধনের কাজ চলমান আছে। উইং–ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিকে যুক্ত করা হবে। এ কমিটি জরিপের চূড়ান্ত ফলাফল পর্যালোচনা করে অনুমোদন করবে, মন্ত্রী বা সচিবের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে না।
উপাত্ত বিতরণ নীতিকে আরও আধুনিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরিসংখ্যান প্রশিক্ষণ একাডেমি করার জন্য ইতিমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ একাডেমির জনবলকাঠামো অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্যরা সম্প্রতি পরিসংখ্যান ব্যুরোর ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইংয়ের কার্যক্রমে ও মেথডোলজি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখেছেন। পরিসংখ্যান ব্যবস্থা ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উন্নয়নে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি কোনো সুপারিশ দিলে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে।
আমরা জাতিসংঘের গাইডলাইন অনুযায়ী জিডিপি হিসাব করি। জিডিপির এ উপাত্তের ৮০ শতাংশই মাধ্যমিক উৎস (সেকেন্ডারি সোর্স) থেকে আসে। ২০ শতাংশ প্রাথমিক উৎস ও বিবিএসের জরিপ থেকে আসে। ওই ৮০ শতাংশ উপাত্তে কোনো সমস্যা থাকলে বিবিএসের কিছু করার থাকে না। কারণ, ওই উপাত্তগুলো সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রকাশিত উপাত্ত। প্রকাশিত উপাত্তই জিডিপিতে বেশি ব্যবহৃত হয়।
আমাদের ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। আমরা নমুনা নকশা করে বাজার বৃদ্ধি করতে পারি। অনেক পরিবর্তনশীল (ভোলাটাইল) উপাদান আছে, এগুলো বাদ দিয়েও সিপিআই করার সুযোগ আছে। একসময় আমরা উদ্দেশ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত খরচের শ্রেণি বিভাগ (সিওআইসিওপি) ব্যবহার করতাম না। ফলে সিপিআইয়ে এর প্রতিফলন থাকত না। এখন আমরা এটি ব্যবহার করছি। আমরা সিপিআই মেথডোলজিতেও পরিবর্তন নিয়ে আসছি। এখন আর সেভাবে আমাদের পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন হবে না। আমাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাস্কেট পরিবর্তন হয়ে যাবে, ওজন নিয়ে নেবে।
২০১৩ সালে করা পরিসংখ্যান আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হবে। মাইক্রো উপাত্ত উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনাও আমাদের আছে। আলোচনা এসেছে উপাত্ত জনগণের জন্য হলে আবার বিক্রি করা হয় কেন। আসলে অর্থ বিভাগের একটা নির্দেশনা আছে, প্রতিটি সংস্থাকেই নিজেদের কিছু অর্থসংস্থান করতে হয়। এর মাধ্যমে হয়তো বিবিএস খুব বেশি টাকা পায় না, কিন্তু এ সুযোগে নীতি পুনর্মূল্যায়ন করাও হয়ে যাচ্ছে।
মানোন্নয়ন একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস হিসেবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কিছু বিষয় কঠোরভাবে অনুসরণ করে। আমাদের প্রধান শক্তিই হচ্ছে আমাদের মেথডোলজি। আমরা নতুন কোনো নমুনার নকশা করার ক্ষেত্রে মেথডোলজির বিষয়ে খুব সচেতন থাকি এবং ন্যূনতম ছাড় দিই না। বিবিএস এককভাবে কোনো মেথডোলজি প্রণয়ন করে না, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরও সহায়তা নেওয়া হয়। একক বৈঠকে মেথডোলজি ঠিক করা হয় না। এ ক্ষেত্রে অন্তত তিনটি বৈঠক করা হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাস্টার স্যাম্পল নকশা তৈরির ক্ষেত্রে ৩০টি বৈঠক হয়েছিল।
আলোচনায় উপাত্ত বিতরণ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। প্রাথমিক প্রতিবেদনে কেবল শিরোনাম সূচকগুলো দেওয়া হয়। মূল প্রতিবেদন প্রকাশের পরই উপাত্ত বিতরণ করা হয়।
মাইক্রো উপাত্ত বিতরণে বিবিএস অনেক বেশি নমনীয়। স্থানীয় গবেষকদের জন্য আমরা মাত্র পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে সম্পূর্ণ সেট মাইক্রো উপাত্ত সরবরাহ করি। বিবিএস কখনো আংশিক মাইক্রো উপাত্ত উন্মুক্ত করে না, সম্পূর্ণ সেট মাইক্রো উপাত্ত একসঙ্গে উন্মুক্ত করে। আর জরিপের ক্ষেত্রে পৃথিবীর কোথাও পুরো সেট মাইক্রো উপাত্ত প্রকাশ করা হয় না। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান সম্পর্কিত মৌলিক নীতি ও আমাদের পরিসংখ্যান আইন অনুযায়ী অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত উপাত্ত কখনোই প্রকাশ না করার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। জরিপের ক্ষেত্রে আমরা ৫ শতাংশ নামহীন মাইক্রো উপাত্ত প্রকাশ করি।
বিবিএসের হয়তো কিছু যোগাযোগ দুর্বলতা রয়েছে। সে জন্য গবেষক ও অংশীদারদের কাছে আমাদের উপাত্ত নিয়ে ঠিকমতো পৌঁছাতে পারছি না। এর ফলে আমরা অনেক সমালোচনার শিকার হচ্ছি। এখানে আরও কাজ করার সুযোগ আছে।
উপাত্তের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা নেই বললেই চলে। উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে উন্নয়নের একটা বয়ান তৈরি করা হয়েছিল। উন্নয়নের সে বয়ানের জায়গায় একটা ধাক্কা এসেছে। কীভাবে তথ্যের ব্যবহার-অপব্যবহার, তথ্যের ঘাটতির সুযোগ নিয়ে এ বয়ান তৈরি করে হয়েছে, তা জানতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে এ ভুলগুলো আমরা করব না।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি–সংক্রান্ত বা জাতীয় হিসাবের উপাত্তে বড় রকমের সমস্যা আছে। এ নিয়ে এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরও সন্দেহ ছিল, কিন্তু তা প্রকাশ্যে আসেনি। বিগত সরকারের সময়ে প্রবৃদ্ধির হার কত হবে, তা বলে দেওয়া হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। কখনো প্রবৃদ্ধির হার কম হওয়ার ঝুঁকি দেখা দিলে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ অভিযোগ নিয়ে বিবিএসকে ভাবতে হবে। বিবিএস খানার আয়-ব্যয় জরিপ (এইচআইইএস), শ্রমশক্তি জরিপসহ খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু জরিপ করে থাকে। এসডিজির অনেক সূচকে এ জরিপগুলো থেকে তথ্য নিতে হয়। কিন্তু এ জরিপগুলোর কোনোটিই নিয়মিত হয় না।
জরিপের উপাত্ত সংগ্রহপদ্ধতি পরিবর্তন হতেই পারে, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো ধারাবাহিকতা দেখা যায়নি। অন্যান্য দেশে উপাত্ত সংগ্রহপদ্ধতি উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবর্তন করে এবং পেছনের উপাত্তগুলোর সঙ্গে একটা সংযোগ রাখে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি। ২০১৬ সালে ৪২ হাজারের মতো খানা জরিপ হয়েছিল, ২০২২ সালে তা কমে এসেছে ১০–১২ হাজারে। নমুনার সংখ্যা বৃদ্ধি করলেই আরও নিখুঁত ও ভালো তথ্য পাওয়া যায়, এমনটি নয়। উপাত্তের আকার বাড়ানো-কমানো নিয়েও অভিযোগ আছে। এটা খুব বেশি সচেতনভাবে করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে কারও ইচ্ছা বা প্রভাব খাটানোর বিষয়গুলো বড়ভাবে এসেছে। ২০১৭ সালে ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে ভালো ফল না আসায় এ রকম জরিপ আর করা হয়নি, এমনও হয়েছে।
মূল্যস্ফীতির উপাত্ত নিয়ে যথেষ্ট রকমের টালবাহানা বা নয়ছয়ের ঘটনা ঘটেছে। মূল্যস্ফীতি হিসাবের ক্ষেত্রে বিবিএস ২০০৫-০৬–এর বাস্কেট ব্যবহার করছে। আমরা এর সমালোচনা করেছি। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যা ভোগ করে, এ বাস্কেট তার কতটা প্রতিফলন করে, সে নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন ছিল। অবশেষে ২০২২ সালে বিবিএস ২০১৫-১৬ সালের বাস্কেট ব্যবহার শুরু করে। মূল্যস্ফীতির উপাত্তকে একটু কাটাছেঁড়া করলে অনেক অসংগতি খুঁজে পাওয়া যাবে। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত মূল্যস্ফীতির হার বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। আমরা এমনও শুনেছি যে মূল্যস্ফীতি বেশি হলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে মূল্যস্ফীতিকে কম দেখানোর চাপ আসত।
বিবিএসের সব উপাত্তই প্রশ্নবিদ্ধ, এমনটি নয়। মূল্যস্ফীতি, দারিদ্র্য, কর্মসংস্থান, জিডিপির প্রবৃদ্ধি—এ সূচকগুলো নিয়ে সরকার ভয়ে থাকে। এসব নিয়ে পূর্বের সরকারের মধ্যে একধরনের অস্থিরতা কাজ করেছে। বাস্তবতা যা–ই হোক, তারা সব সময় জনগণকে অর্থনীতির একটা ভালো চিত্র দেখানোর চেষ্টা করেছে। এ জন্য তারা অনেক সময়ই বিবিএসকে রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের প্রভাবিত করেছে বলে অভিযোগ আছে।
২০২২ সালের জরিপে দেখা যায়, চরম দারিদ্র্যের হার বেশ কমেছে, যা ব্যাখ্যা করা কঠিন। কারণ, তার আগের দুই বছর করোনা মহামারি ছিল। এসব অনিয়মের দায় কেবল বিবিএসের একার নয়। নীতিনির্ধারক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত সবাই এ জন্য দায়ী।
বিবিএসের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর একটা পুনর্বিন্যাস জরুরি। বিবিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্পষ্ট কাঠামো প্রয়োজন। একটা জাতীয় পরিসংখ্যান কমিশন করা যায় কি না, তা ভাবতে হবে। বিবিএসের নিজস্ব কোনো প্রশিক্ষণ একাডেমি করা সম্ভব কি না, তা–ও ভেবে দেখা যেতে পারে।
দিন শেষে এই সবকিছুই নির্ভর করবে দেশের রাজনৈতিক অবস্থার ওপর। আমাদের রাজনীতিবিদদের মাথায় নিজেদের স্বার্থে উপাত্তকে বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করার সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে আমাদের কোনো প্রচেষ্টাই সফল হবে না।
বিবিএসের কৃষি উইং শস্যের মৌসুমি ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে মাঠপর্যায়ে জরিপ করে। উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে শস্যকে প্রধান ও অপ্রধান—এ দুটি ভাগ করা হয়। প্রধান শস্যে থাকে ছয়টি ফসল—আউশ, আমন, বোরো, পাট, গম ও আলু। প্রধান শস্যের ক্ষেত্রে অবজেক্টিভ ও সাবজেক্টিভ মেথডে কাজ করা হয়। মাঠপর্যায় ফসল কর্তন ও কৃষক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে আমরা তথ্য সংগ্রহ করি। পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে ফসলের হিসাব প্রাক্কলন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়ে থাকে।
এরপরও কেন খাদ্য কিনতে হচ্ছে, সে প্রশ্ন এসেছে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদিত ফসলের বা খাদ্যের নন–হিউম্যান কনজাম্পশন বা মানুষের বাইরে বিভিন্ন খাতে খাদ্যের ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় আসছে না। পাশাপাশি খাদ্যের ব্যবস্থাপনাগত ক্ষতি ও অপচয় রয়েছে। নীতিনির্ধারক ও গবেষকদের বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ করছি।
আমরা নন–হিউম্যান কনজাম্পশন এবং ফসলের ক্ষতি ও অপচয় জরিপ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ভুট্টার প্রায় ৮০ শতাংশই নন–হিউম্যান কনজাম্পশনে চলে যায়। পাশাপাশি চালও এখন পশুখাদ্যে যাচ্ছে। কৃষকের গোলা পর্যন্ত যেতেও পদ্ধতিগত অপচয় হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতা ও আড়তদারের কাছেও ব্যবস্থাপনাগত অপচয় হয়। এসব কিছু মাথায় রেখে হিসাব করতে হবে।
বিবিএসের প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত জনবলের অভাব রয়েছে। ২০১৩ সালের আগে বিবিএসের জেলা কার্যালয় ছিল না। ২৩টি আঞ্চলিক কার্যালয় ছিল। ২৩টি কার্যালয় থেকেই ৬৪ জেলার সব কাজ সম্পন্ন করতে হতো। পরবর্তী সময়ে জেলা কার্যালয় করা হলেও আমাদের মোট প্রস্তাবকৃত জনবলের মাত্র ৫৭ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। চাহিদামাফিক ও সময়মতো পরিসংখ্যান সরবরাহের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত জনবলকাঠামো এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় লজিস্টিকসের গুরুত্বের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিবেচনায় রাখার অনুরোধ করছি।
বাংলাদেশের তথ্য-উপাত্তের বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে ভয়াবহ বিপর্যয় হয়েছে। জিডিপি, কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভসহ বড় উপাত্তগুলো বানানো বলে অনেকেই মনে করেন। তথ্য–উপাত্তের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রভাব খাটানো হয়েছে কি না, তা বের করতে হবে। এ জন্য বিষয়টিকে খতিয়ে দেখতে প্রথমেই একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার সুপারিশ করব।
এ ছাড়া কোনো উন্নয়ন সহযোগীর কাছ থেকে বিবিএস যেন সরাসরি কোনো কারিগরি বা অর্থসহয়তা না নেয়, সে সুপারিশ করব। দাতাগোষ্ঠী অবশ্যই আমাদের সহয়তা করবে। সে ক্ষেত্রে দাতাগোষ্ঠীর উচিত সরকারকে সরাসরি বাজেট সহায়তা দেওয়া। সরকার ঠিক করবে সেখান থেকে বিবিএস কত টাকা পাবে। বিবিএসের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা আসবে। এতে তারা জবাবদিহির আওতায় থাকবে।
তৃতীয় সুপারিশ হচ্ছে উপাত্ত যাচাইকরণ। বিবিএস বড় ধরনের জরিপ করে, তখন জরিপ প্রস্তুতির সময় একটা যাচাই পর্ব থাকে। তারা এটি সরকারি সংস্থাগুলোকে দিয়ে করায়। এখানে বেসরকারি বা স্বতন্ত্র কাউকে যুক্ত করা যেতে পারে। এতে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে।
কেবল তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করে প্রকাশ করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং এগুলোকে বিশ্লেষণ করার সক্ষমতাও থাকতে হয়। যিনি জরিপ করেন, সংগ্রহকৃত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করাও তাঁরই দায়িত্ব। কিছু জায়গায় নিজেদের উদ্যোগী হতে হবে। কোনো জরিপ বা উপাত্ত উপস্থাপন শেষে এ–সংক্রান্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে।
ওয়েবসাইট থেকে স্ক্যান করা উপাত্ত নামিয়ে কোনো কাজ করা যায় না। রাজনৈতিক বয়ানে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, যেন দেশকে উন্নত দেখানো যায়। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্ষতির শিকার হয়েছে। রাজনৈতিক বয়ান থাকবেই। রাজনীতিবিদদের কাজ হচ্ছে স্বপ্ন দেখানো। বিবিএসের কাজ স্বপ্ন দেখানো নয়। বিবিএসের কাজ হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠভাবে বিষয়টিকে দেখানো। বাংলাদেশের আমলাতন্ত্র নিজেদের রাজনৈতিক বয়ানের সেঙ্গ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ফেলে। এ জায়গা থেকে বিবিএসকে মুক্তি দিতে হবে। এ জন্য একটি স্বাধীন কমিশন করার কোনো বিকল্প নেই।
সরকারি পর্যায়ে বিবিএসের তথ্য-উপাত্তের সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। জিইডি থেকে সরকারের সব দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা, নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। জিইডি এসডিজির জাতীয় ফোকাল পয়েন্ট। আমরা অনেক দিন ধরেই উপাত্তনির্ভর নীতি নির্ধারণ করার চেষ্টা করছি। এ জন্য যেসব প্রতিবেদন বা জাতীয় উপাত্ত ব্যবহার করা হয়, তার বড় অংশ বিবিএস থেকে সংগ্রহ করা।
২০১৬ সালে আমরা উপাত্তের ফারাক নির্ণয়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) মূল্যায়ন করি। এতে ২৩১টি সূচকের মধ্যে মাত্র ৭০টি সূচক ছিল। বর্তমানে যা ২০৬–এ এসে পৌঁছেছে৷
জিইডির পক্ষ থেকে আমরা প্রতি দুই বছর পর জাতীয়ভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করি। এখানে আগের চেয়ে অনেক বেশি উপাত্ত যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
২০১৫ সালের পর থেকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) ১২, ১৩ ও ১৪ সূচকের উপাত্তগুলো পাওয়া যেত না; কিন্তু এখন এ সূচকের তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অনেক উপাত্ত পাঁচ-ছয় বছর অন্তর পাওয়া যায়। এসব উপাত্ত আরও কম সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা হলে প্রতিবেদন প্রকাশে সুবিধা হবে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিগ ডেটা সেন্টার বা বিগ ডেটা বিশ্লেষণ সেল গঠন করা হয়ে থাকে। এসব সেল জাতীয় উপাত্তকে প্রতিস্থাপন না করে পরিপূরক করে। এ বিষয়ে ভাবা প্রয়োজন।
বিবিএসকে প্রথমে ঠিক করতে হবে সব তথ্য–উপাত্ত কার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। যদি বিবিএস মনে করে তথ্য–উপাত্ত সরকারের জন্য তৈরি হচ্ছে, তাহলে এটি একটি অসম্পূর্ণ চিন্তা। এখন তথ্য-উপাত্তের মালিক যদি জনগণ হয়, তাহলে একে অবশ্যই উন্মুক্ত করতে হবে। আজ থেকে ১০ বছর আগের বিবিএসের রিপোর্ট থেকে সরাসরি কপি করা যেত। আর এখন রিপোর্টগুলো সব ছবি দিয়ে ভরা। মূল্যস্ফীতির উপাত্ত আপনি উন্মুক্ত করে দেন, কোন বাজার থেকে কত নিয়েছেন। তার সঙ্গে এক্সেল শিটসহ তুলে দিন গত তিন বছরের, এখান থেকে মূল্যস্ফীতি এটা এসেছে। তারপর আমরা তা নিয়ে বিতর্ক করি। স্বচ্ছতা একটা বড় জায়গা। বিবিএস বলুক, তার তথ্য-উপাত্ত উন্মুক্ত আছে, যেকোনো গবেষক চাইলেই ব্যবহার করতে পারেন। বিষয়গুলো সংশোধনে কোনো আইন পরিবর্তন করতে হবে না, নীতিমালার প্রয়োজন হবে না, অর্থ খরচও করতে হবে না। বিবিএস পদক্ষেপ নিলেই হবে।
যেকোনো সংস্কার ভাবনার প্রথম শর্তই হচ্ছে সমস্যা স্বীকার করে নেওয়া। আমাদের সক্ষমতা কম, এটা বিবেচনায় নিয়েই আমরা সামনে এগোতে পারি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সংকটগুলোর অন্যতম হলো এর উপাত্তের বিশ্বাসযোগ্যতা, উপাত্ত সংগ্রহ ও হিসাবের পদ্ধতিগত স্বচ্ছতা এবং এই উপাত্তের দুষ্প্রাপ্যতা। এই সংকটগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের দেশের সামগ্রিক উপাত্ত ব্যবস্থাপনার ইকোসিস্টেম নিয়ে ভাবতে হবে। অর্থাৎ বিবিএসের প্রধান সমস্যাগুলো সমাধানে বিবিএসের বাইরের, বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে হবে। সংক্ষেপে বলা যায়, উপাত্ত সংগ্রহ-বিশ্লেষণ এবং প্রকাশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনতে হব। প্রাথমিক উপাত্তগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
উপাত্ত প্রকাশিত হলে মানুষ তা বিশ্বাস করতে চায় না। সে জন্য বিবিএসে নিয়মিত গণশুনানির আয়োজন প্রস্তাব করা যেতে পারে। বিবিএসের উপাত্ত বিষয়ে জনসমক্ষে কথা বলতে হবে এবং মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। বিবিএসের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিসিএসের কর্মীরা অসাধারণ কাজ করছেন। কিন্তু প্রতিনিয়তই অনেক প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
বিবিএসের জনবলসংকটের সমাধান করতে হবে। এখানে মেথডোলজির কারিগরি জায়গায় একটা ঘাটতি রয়েছে। বিবিএস আরও উন্মুক্ত করতে হবে। যেন আমরা সবাই প্রশ্ন করতে পারি। কারিগরি কমিটির কর্তাদেরও প্রশ্ন করার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
আমরা বিবিএসের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে উপাত্তে প্রবেশাধিকার ও স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করি।
মাইক্রো উপাত্তে প্রবেশাধিকার পাওয়ার পরই উপাত্ত তৈরির পদ্ধতি সঠিক কি না, তা যাচাই করা সম্ভব।
উপাত্তে প্রবেশাধিকার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান কাঠামোয় উপাত্তে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে দেশে উপাত্তে থিঙ্কট্যাংক ও গবেষকদের প্রবেশাধিকার এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা দরকার।
উপাত্তের মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। আমরা মানসম্পন্ন যথেষ্ট উপাত্ত সংগ্রহ করছি না। এ–সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধানে সমস্যার সঠিক উৎস বের করা জরুরি। আমরা বিবিএসের সঙ্গে মেথোডোলজি পুনর্বিবেচনার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি। কেবল প্রতিষ্ঠান ও কারিগরি সহায়তা প্রদানকারী পর্যায়ে নয়, এ আলোচনা আরও বিস্তৃতভাবে করা প্রয়োজন।
উপাত্তের মান নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ যাচাইপ্রক্রিয়া ও সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এর সহজ উপায় হলো মাইক্রো উপাত্ত উন্মুক্ত করা।
পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ তৈরির মাধ্যমে বিবিএসকে শক্তিশালী করা হয়েছে। এ আইনে বিবিএসকে যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে যেকোনো উপাত্ত সংগ্রহের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়নি। পরিসংখ্যান আইনে উপাত্ত ব্যবহারকারীদের ওপর জোর দেওয়া হয়নি। উপাত্ত প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো মন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে, এমন কিছু আইনে নেই। কিন্তু বিষয়টি বিবিএসের চর্চার মধ্যে রয়েছে। এসব চর্চা ভাঙতে পারলেই বিবিএস প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে।
উপাত্তের ব্যবহার ও উৎপাদন—এ দুটো দিক রয়েছে। উপাত্ত ব্যবহারকারীকে ব্যবহারের ও উৎপাদনকারীকে উৎপাদনের স্বাধীনতা দিতে হবে। মন্ত্রী বা ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা এ উপাত্ত ব্যবহার করবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত তাঁদের। এ জন্য পরিসংখ্যান আইনের সংশোধন করা দরকার। এমনভাবে আইন সংশোধন করতে হবে, যেন বিবিএস কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া উপাত্ত প্রকাশ করতে পারে। বিবিএসে ঊর্ধ্বতন পরিসংখ্যানবিদদের চাকরির নিশ্চয়তা দিতে হবে। উপাত্ত প্রকাশে গণচাহিদার স্বীকৃতি দিয়ে তা প্রকাশ করতে হবে। বৈশ্বিক মান অনুযায়ী মাইক্রো উপাত্ত ও প্রতিবেদন একসঙ্গে প্রকাশ করা জরুরি। প্রয়োজন অনুযায়ী বিবিএসের কাছে তথ্য চাওয়ার অধিকার থাকা দরকার। এ সংস্কারগুলো করা গেলে বিবিএস আরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। বিবিএসের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হবে।
ইউএনডিপি বেশ কয়েক বছর আগে বিবিএসের সঙ্গে কাজ করে একটা কৌশলগত পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। আজকের আলোচনায় আসা সুপারিশগুলোর বেশির ভাগই সেখানে ছিল। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। কারণ, সেগুলো বাস্তবায়ন করার মতো রাজনৈতিক ইচ্ছা ছিল না।
বিবিএসের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা আমাদের অঙ্গীকার। এ জন্য আমাদের প্রথম সুপারিশ বিবিএসের পরিচালনাগত ও আর্থিক স্বাধীনতা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন করার প্রয়োজন আছে কি না, তা দেখা দরকার।
তৃতীয়ত, বিবিএস একটা স্বাধীন সংস্থা হিসেবে কাজ করলেও সরকারের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে বুদ্ধিভিত্তিক সমন্বয়, সিমলেস ডেটা শেয়ারিং, পলিসি ইন্টিগ্রেশনের জায়গায় অনেক দুর্বলতা রয়েছে।
চতুর্থত, আপনাদের চিন্তা করতে হবে কীভাবে একটা কৌশলগত অংশীদারত্ব তৈরি করা যায়। প্রতিষ্ঠান, থিঙ্কট্যাংক ও উন্নয়ন–সহযোগীদের সঙ্গে অংশীদারত্ব তৈরি করতে হবে। সর্বশেষ বিগ ডেটা বিকশিত হচ্ছে। এখানে অনেক সম্ভাবনা আছে। এ জায়গায়ও কাজ করা যেতে পারে।
এ ছাড়া গোলটেবিল বৈঠকে আরও অংশগ্রহণ করেন: শুভাশিস্ বড়ুয়া, সহযোগী অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আবুল বাশার মো. ওমর ফারুক, সহকারী অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মালিক ফিদা এ খান, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস। মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল, কো–অর্ডিনেটর, ডেটা অ্যান্ড ফিল্ড ম্যানেজমেন্ট, ব্র্যাক আইজিডি। আসজাদুল কিবরিয়া, প্লানিং এডিটর, দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস। নুবায়রা জেহিন, প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট, ইউএন উইমেন। সঞ্চালনায়: ফিরোজ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো
রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিশ্চিত করে, এমন একটি সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে বিবিএসের সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
বিবিএসকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা।
বিবিএস আইন ২০১৩ পুনর্মূল্যায়নপূর্বক যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও বিবিএসের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পুনর্বিন্যাস করা।
সঠিক উপাত্ত সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় একটি স্বাধীন কমিশন গঠন ও বিবিএসকে সাংগঠনিক ও আর্থিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজের সুযোগ তৈরি করা।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর নিজস্ব প্রশিক্ষণ একাডেমি গঠনের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করা।
বিবিএসের পরিসংখ্যানবিদদের পেশাগত উৎকর্ষের সুযোগ তৈরি করার মাধ্যমে সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পদায়নের সুযোগ নিশ্চিত করা।