বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম কাজ হলো গবেষণালব্ধ নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি। এ জন্য দরকার স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি পর্যায়ের গবেষক শিক্ষার্থী। কিন্তু দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডি গবেষণার কোনো সুযোগ নেই। সীমিত পর্যায়ে হলেও এই সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।
নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
আজকের এই উৎসব প্রমাণ করে আমরা বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষায় কতটা এগিয়েছি। এটা সত্যি যে দেশের বেশির ভাগ সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা নিয়ে ভালো কাজ করছে। তবে গবেষণা কিংবা পিএইচডি তেমন একটা হচ্ছে না, যার মাধ্যমে আমরা দেশের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারি। গণমাধ্যমের খবরে দেখেছি, ২৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় কোনো বিনিয়োগ করা হয়নি। এ জায়গায় আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার সুযোগ রয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কিছু মিথ ছিল। বলা হতো এত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেন হচ্ছে। এটা এখন প্রমাণিত যে চাহিদা আছে বলেই হয়েছে। আরেকটি হচ্ছে ধনীর সন্তানেরাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বাস্তবতা এখন ভিন্ন। অন্য মিথটি ছিল কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নেই। এগুলো এখন মিথ্যা প্রমাণিত। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে এখনো প্রশ্ন রয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কী করে যেন প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে। এটি হওয়া উচিত ছিল না। এ বিষয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বাস করছে না, তা নিয়েও কাজ করতে হবে। শিক্ষা ও গবেষণায় সরকার যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে, তা যথেষ্ট নয়। ঢালাওভাবে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়ার অনুমতি না দিয়ে মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া যেতে পারে। আর ক্রাইটেরিয়াগুলো আপনাদের ঠিক করতে হবে। নিজেরা নীতিমালা করে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
পিএইচডি শিক্ষার্থী না থাকলে গবেষণা হবে কী করে। শিক্ষকদের জন্য সম্মানীর বিষয়টিও আসে। সারাক্ষণ যদি পড়াতেই থাকেন, তাহলে গবেষণা করবেন কখন! বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে।
উপাচার্য, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমতি দেওয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। এ জন্য সরকারকে ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে দিতে হবে। বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই কি পিএইচডি করানোর অনুমতি দিতে হবে? অবশ্যই নয়। যারা ক্রাইটেরিয়া পূর্ণ করবে, তারাই পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করতে পারে। সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই কিছু সবল ও দুর্বল দিক রয়েছে। যে বিষয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা আছে, তারা সে বিষয়ে পিএইচডি চালুর আবেদন করতে পারে। রেগুলেটরি কমিটিকে সবকিছু যাচাই করে দেখতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা কি সত্যিই গবেষণায় আগ্রহী? গত কয়েক বছরে তারা কী কাজ প্রকাশ করেছে। এগুলো দেখতে হবে।
সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৈষম্য করা যাবে না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি দ্বিতীয় শ্রেণির—এমন ধারণা মোটেও যৌক্তিক নয়। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেশ ভালো করছে। হার্ভার্ড, জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু বেসরকারি। আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছি। আমরা কেন পিছিয়ে আছি, তা খুঁজে বের করতে হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমতি দিতে হবে। তা না হলে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারব না। অনেক আন্তর্জাতিক সূচকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পিছিয়ে আছে গবেষণা না থাকার কারণে। টাইম হায়ার এডুকেশন র্যাঙ্কিংয়ে স্নাতক ও পিএইচডি শিক্ষার্থীর অনুপাত স্কেলে আমরা পাই শূন্য নম্বর। শিক্ষকদের সঙ্গে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের অনুপাত স্কেলেও আমরা কোনো নম্বর পাই না। সুতরাং আমাকে তো হাত-পা বেঁধে প্রতিযোগিতায় নামানো হচ্ছে—ভালো করব কীভাবে? ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিক সম্পর্ক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ডাস্ট্রি সমস্যা চিহ্নিত করবে, একাডেমিক তা সমাধান করবে। এ প্রবণতা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে দেখা যায় না।
উপাচার্য, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি
বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞান অর্জন করা, নতুন জ্ঞান তৈরি করা ও জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা জ্ঞান অর্জন করছি ও তা ছড়িয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আমরা নতুন জ্ঞান তৈরি করছি না। পিএইচডি পর্যায়ে গুণগত গবেষণা করে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা যায়। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা পার্থক্যই আমি দেখি, তা হচ্ছে অর্থায়নের বিষয়টি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার জনগণের করের টাকায় অর্থায়ন করে। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থায়ন করতে হয়, যা জোগান আসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়। আমরা কঠোর নিয়মকানুনের মধ্যে আছি। কিন্তু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেসব নেই। তাদের গুণগত মান নিয়ে কথা হয় না। প্রয়োজনে আগে ক্রাইটেরিয়া ঠিক করা হোক, এরপর আমাদের পিএইচডি ডিগ্রি করানোর সুযোগ দেওয়া হোক। ৩০ বছর ধরে প্রথম সারির কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের গবেষণার সক্ষমতা দেখাচ্ছে। তাদের অন্তত সুযোগ দেওয়া হোক। নিয়ন্ত্রক কমিটি মানদণ্ড ঠিক করবে। বিদেশি বিশেষজ্ঞদেরও যুক্ত করা যেতে পারে।
উপাচার্য, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে গবেষণা করতে বছরে এক কোটি টাকা প্রয়োজন। এই টাকার সংস্থান হবে কী করে? আমাকে ল্যাবের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনার সময়ও সরকারকে কর পরিশোধ করতে হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এটি বড় একটি চ্যালেঞ্জ। গবেষণা কার্যক্রমের জন্য আমাদের শিক্ষকদের আরও বেশি প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন। মানসম্পন্ন গবেষণা প্রকাশের জন্য তরুণ শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা গেলে তঁারা আরও উৎসাহ পাবেন।
সরকারের কাছে অনুরোধ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে যেন করারোপ না করা হয়। কর দেওয়া বন্ধ রাখার জন্য হাইকোর্টের আদেশও আছে। আমাদের হাত–পা না বেঁধে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু করার সুযোগ দিতে হবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উক্তি মনে পড়ছে—‘খোলো খোলো দ্বার, রাখিয়ো না আর/ বাহিরে আমায় দাঁড়ায়ে।’ তেমনি আমাদের বাইরে দাঁড় করিয়ে, বেঁধে রাখলে আমরা পিএইচডি কার্যক্রম শুরু করতে পারব না।
উপাচার্য, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি
কিছুদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর বিষয়ে তাঁদের পূর্ণ সম্মতি রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি ইউজিসিকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন। ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান যখন ইউজিসির চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন থেকে শুরু করে এর পরবর্তী সব চেয়ারম্যানকেই বলেছি, আপনারা ক্রাইটেরিয়া ঠিক করে দিন, যারা পারবে, তারাই চালু করবে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কেউই তা বাস্তবায়ন করেননি।
আমি প্রায় আড়াই বছর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছি। সে সময় আমরা সেখানে পিএইচডি প্রোগ্রামের ডিজাইন করেছিলাম। শুরুতে বিজনেস স্কুল করার কথা থাকলেও পরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এর জন্য কারিকুলাম ঠিক করে জমাও দেওয়া হয়েছিল। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কিছু জটিলতার কারণে সেটি আর হয়নি।
মন্ত্রণালয়ের যেহেতু সম্মতি আছে, সেহেতু ইউজিসির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। দ্রুতই যেন নীতিমালা ঠিক করে প্রোগ্রাম চালু করা যায়। আর পিএইচডি সুপারভিশন তো সমস্যা নয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই তো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন। তাঁদের পিএইচডি সুপারভিশনের অভিজ্ঞতা আছে। নবীন শিক্ষকদের গবেষণার প্রতি তেমন আকর্ষণ নেই। তাঁরা পারছেন না এমন নয়, তাঁরা করছেন না। তাঁদের অভিযোগ, পড়ানো শেষে তাঁরা গবেষণার জন্য সময় পান না। অভিযোগ কিন্তু সত্যি। তাঁদের কাজের চাপ কমাতে হবে।
উপাচার্য, এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
আমাদের দেশের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেশ ভালো করছে। এরা র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে গেছে। এক বছর আগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে আমার কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। আমি দেখেছি, তারা গবেষণা–সুবিধাগুলো অনেক উন্নত করেছে। পাশাপাশি তাদের অনেক ভালো ফ্যাকাল্টিও রয়েছে। গণহারে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি পিএইচডি চালুর অনুমতি দিতে বলছি না। তবে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুমতি দেওয়াই যায়। এর জন্য প্রয়োজন সবার সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পাশাপাশি ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও গণমাধ্যমকে এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশেরও অনেকে আছেন, যাঁরা বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ ভালো করছেন। আমাদের পিএইচডির মান বাড়াতে তাঁদেরও আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তার মান বজায় রেখেই শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দু-একটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়তো এর ব্যতিক্রম। তাদের বিষয়টি রেগুলেটরি বডির স্বচ্ছভাবে দেখা উচিত।
উপাচার্য, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
আমাদের আগে ভাবতে হবে যে পিএইচডি গবেষকের দরকার আছে কি নেই। যদি থাকে, তাহলে একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করলেই হবে। এটি হচ্ছে সরকার ও ইউজিসি আমাদের বিশ্বাস করছে না। এ থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে। বাংলাদেশে আমরা সংখ্যার দিকে জোর দিচ্ছি, মানের দিকে গুরুত্ব কম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি হাসপাতাল—যখনই বেসরকারি শব্দটি আসে, তখনই মানের প্রশ্ন আসে।
সরকার মানের বিষয়ে সচেতন। কিন্তু দেশের সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সক্ষমতা রয়েছে কি না, সে প্রশ্ন থেকে যায়। একসময় এ দেশের মানুষ ভাবতে পারত না যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন আছে কি না। ৩০ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের শীর্ষ পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করছেন। অথচ তাঁরা আমার দেশে গবেষণা করতে পারছে না—এটি কি আমাদের জন্য লজ্জার নয়? আমি সব বিশ্ববিদ্যালয়কে শুরুতেই পিএইচডি গবেষণার অনুমোদন দেওয়ার কথা বলছি না। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে ও সক্ষমতা আছে, তাদের পিএইচডি প্রোগ্রামের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। এতে বিদেশে আমাদের সুনাম বাড়বে।
উপাচার্য, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্র। চাকরির বর্ণনায় আমরা শিক্ষকতা ও গবেষণার কথা উল্লেখ করি। কিন্তু দেখা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবল শিক্ষার সঙ্গেই যুক্ত থাকে। গবেষণার দিকটি এখানে অনুপস্থিত। আমাদের শিক্ষকেরা হয়তো ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু গবেষণা করছেন বা পিএইচডি করছেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁদের গবেষণা করার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পাচ্ছে না। এটি আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে।
আমার কাছে মনে হয়, পিএইচডির ক্ষেত্রে সুপারভাইজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের এখানে ভূমিকা কম। সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে অনেক বড় কর্মকর্তা পিএইচডি করেছেন। কিন্তু তাঁদের গবেষণা দেশের উন্নয়নে কী অবদান রাখছে। কেবল নামের আগে ড. যোগ করতেই যেন পিএইচডির উদ্দেশ্য না হয়।
ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
কিউএস বিশ্ববিদ্যালয় র্যাঙ্কিংয়ের বাংলাদেশের ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি সরকারি ও ৭টি বেসরকারি। প্রথম চারটির মধ্যে সরকারি ও বেসরকারি দুটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। আর শীর্ষ দশের মধ্যেও পাঁচটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বাকি পাঁচটি বেসরকারি। সুতরাং আস্থার জায়গায় আমি কোনো সংকট দেখি না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা ইংরেজিতে বলছি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এটি হওয়া উচিত ছিল নন-গভর্নমেন্ট, তাহলে সমস্যা অনেক কম মনে হবে। এটি মানসিক একটি বিষয়। প্রাইভেট বললে অনেকে ভাবে প্রাইভেট কোম্পানি বা এ রকম কিছু। এ চিন্তাধারা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
অধ্যাপকেরা নিজে গবেষণা করবেন কীভাবে? তাঁদের ক্লাস থাকে, পরীক্ষার খাতা দেখতে হয়, অ্যাসাইনমেন্ট দেখতে হয়। গবেষণা তো করবে শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে পিএইচডির শিক্ষার্থীরা। সরকারের উচ্চপর্যায় ইতিবাচক থাকলেও কোনো এক অদৃশ্য কারণে এটি করা হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় তিন ধরনের ডিগ্রি দেয়—স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক-স্নাতকোত্তর পড়াতে পারে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা কেবল পিএইচডির ক্ষেত্রে? অন্য দুই ডিগ্রির ক্ষেত্রে কি আস্থার সংকট নেই! সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কি আস্থার সংকট নেই? অবশ্যই আছে। এ পরিস্থিতির উত্তরণে আমাদের একটি গাইডলাইন প্রয়োজন। এই গাইডলাইন সরকারি-বেসরকারি উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য হবে। যারা এই গাইডলাইন মানতে পারবে, তারাই পিএইচডি করাতে পারবে। আমি বলব, আমাদের হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিন, দেখেন আমরা সাঁতরাতে পারি কি না।
উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ
আমি এবং আরও কয়েকজন টাইমস হায়ার এডুকেশনের একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখানে ভারত-পাকিস্তানের অতিথিরা এটা জেনে আশ্চর্য হলেন যে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি ডিগ্রি দিতে পারে না। তাঁরা আরও আশ্চর্য হয়েছিলেন এটা জেনে যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদেরও নিয়োগ দেয় সরকার। যদিও এটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। গবেষণার বৈশ্বিক মানদণ্ডে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি।
আমাদের সাইটেশন সবচেয়ে কম। অথচ ১৯২০–এর দশকে আমাদের সত্যেন্দ্রনাথ বোস কিংবা মেঘনাদ সাহার মতো অধ্যাপকেরা ছিলেন। তাঁরা সারা বিশ্বে নিজেদের কাজ দিয়ে পরিচিত ছিলেন। গত ২০ থেকে ৩০ বছরে উচ্চশিক্ষার বড় উন্নয়নগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই হয়েছে। আমরা দ্রুতই কাজ করতে পারি। এখানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কম। সুযোগটা আমরা গ্রহণ করতে পারি।
উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
আমাদের মানসিকতা অনেকটা এ রকম, যেসব শিক্ষার্থী কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়নি, তারাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ১৯৯২ সালের পর থেকেই আমরা এ ধারণা লালন করে আসছি। এ ধারণা বদলাতে হবে। অনাস্থার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। অনাস্থা থেকে হতাশাও কাজ করছে। সত্যিকার অর্থে খতিয়ান নেওয়া হলে দেখা যাবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা রয়েছে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা থাকলে তাঁরাও ধারণা পেতেন যে আমরা কী বলতে চাইছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষ শিক্ষকের সত্যিই অভাব রয়েছে। মেধাবীরা বাইরে পিএইচডি করতে গিয়ে আর ফিরে আসে না। কিন্তু আমরা এখানে পিএইচডি করাতে পারলে মেধাবীরা দেশেই থাকবে।
আপনারা সবাই জানেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পরিমাণ শিক্ষকসংকট আছে। এ সংকট উত্তরণে আমরা পিএইচডি চালু করতে পারি। এর মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষক তৈরি সম্ভব। এটি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ অবশ্যই থাকবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা বলার মতো একটা প্ল্যাটফর্ম থাকা উচিত।
প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টি, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ
আমিই সম্ভবত এখানে একমাত্র সদস্য, যে একজন বোর্ড অব ট্রাস্টি। শুরুর দিকে যাঁরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁরা শিক্ষাবিদ ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তি ছিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক। পরবর্তীকালে এতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য যোগ হয়। রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা একত্র হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বোর্ড অব ট্রাস্টিরা অনেক সময় অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করে, যা কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
এত বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হয়নি। কারণ, সবাই মনে করছে পিএইচডির নামে বাণিজ্য হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই কিন্তু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি সুপারভাইজার ছিলেন। তাঁরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত আছেন, আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা আছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে বোঝানো সম্ভব হচ্ছে না।
দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিতে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত নয়। দ্বিতীয়ত, পরিচালনার জন্য যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়, সেখানেও সতর্ক থাকতে হবে। কেবল গাইডলাইন থাকলেই হবে না।
সাবেক উপাচার্য, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
আমি বুয়েটে থাকাকালে একজন শিক্ষার্থীর পিএইচডি সুপারভাইজার ছিলাম। কিন্তু এখন পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা থাকতেই পারে। নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রশ্ন, এ সমস্যা কি সমাধান করা যায় না? সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে কিছু মানদণ্ড কি নির্ধারণ করে দেওয়া যায় না? উদাহরণস্বরূপ, পিএইচডি গবেষণা কমপক্ষে দুটি কিউ ওয়ান ও কিউ টু জার্নাল প্রকাশ করতে হবে। পিএইচডি করার জন্য প্রয়োজন দক্ষ সুপারভাইজার, ল্যাব বা লাইব্রেরি। কারও লাইব্রেরি থাকতে পারে, তবে গবেষণা সাহিত্যে প্রবেশাধিকার না–ও থাকতে পারে। এর বাইরে আইটি সুবিধাও গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণাটি মানসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশিত হতে হবে। বাংলাদেশের এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যেখানে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করা নিয়ে কোনো নিয়মের কথা বলা নেই। আমার অনুরোধ থাকবে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পিএইচডি উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক। মান নিয়ে ভীত হলে মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া হোক। মাথাব্যথা হলে দয়া করে মাথা কেটে ফেলবেন না।
ফিজিক্যাল সায়েন্স বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
জ্ঞানের ক্ষেত্রে উৎস গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা যখন নিউটনের সূত্র লিখি, আমরা বলি না যে এটা নিউটনের পাবলিক সূত্র, আর এটা প্রাইভেট সূত্র। ডিগ্রি হচ্ছে মূলত সার্টিফিকেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হচ্ছে সার্টিফিকেশন দেওয়া। কেউ যদি জ্ঞান উৎপাদন করতে চায়, তাকে পাবলিক-প্রাইভেট বিভাজন করা উচিত নয়। আমি নিজেও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছি। এটা নিয়ে আমাকে কেউ কখনো প্রশ্ন করেনি।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। তারা অনেক বড়, কিন্তু ধীর। সময়ের পরিবর্তনে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ অবস্থায় এসেছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বড়, সময়ের সঙ্গে নিজেকে পরিবর্তন করা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিষয় পরিবর্তন করতে চার থেকে পাঁচ বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি করা বেশ সহজ। গবেষণার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বেশি দ্রুত কাজ করতে পারবে বলে আমি মনে করি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে দ্রুত সফলতা িঅর্জন করতে পারবে বলে মনে করি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে শর্তসাপেক্ষে হলেও পিএইচডি ডিগ্রি করানোর সুযোগ দিতে হবে। তাহলে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিদেশে পিএইচডি করতে যাবে না।
রেজিস্ট্রার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
আমি যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চল পরিদর্শন করেছি। অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের মধ্যে গবেষণা নিয়ে সমন্বয় রয়েছে। কিন্তু একটা অদ্ভুত বিষয় নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। এটি হচ্ছে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের অধিকার নেই। এটা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। আমি মনে করি, স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের উচিত এই প্রতিবন্ধকতা নিরসন করা। এর মাধ্যমে পিএইচডি ডিগ্রির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অনেক আকর্ষণীয় কাজ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আমরা উল্লেখ করছি। বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী পিএইচডি করার জন্য বিদেশে যায়। তাদের অনেকে দেশে ফিরে আসার কথা চিন্তাও করে না। এটা দেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতি। ইউরোপ, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় অগ্রগতি করছে, তাদের গবেষণা অবকাঠামো ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে।
প্রভোস্ট, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ শাখা
ইউসিএসআই মালয়েশিয়াভিত্তিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, কুচিং এবং পোর্ট ডিকসনে তিনটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। অনেকেরই প্রশ্ন যে আমরা কেন বাংলাদেশে এসেছি। আমরা এখানে উচ্চশিক্ষায় জ্ঞানচর্চায় অবদান রাখতে চাই। এ দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। শিক্ষার গুরুত্ব আমরা সবাই অনুধাবন করতে পারি। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে চলে যায়। এভাবে মেধা পাচার হচ্ছে। অথচ দেশে সুযোগ পেলে তারা প্রবাসে যেত না। আমরা এ দেশে অবদান রাখতে চাই, তা হোক উচ্চশিক্ষা বা পিএইচডি—এটিই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
অধ্যক্ষ, তেজগাঁও কলেজ
তেজগাঁও কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ২ হাজার ২৫২টি কলেজের মধ্যে একটি বেসরকারি কলেজ। এখানে ২০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। আমি দায়িত্ব নিয়েছি ১ বছর ২ মাস। আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, আমার শিক্ষার্থীদের সাফল্যের পথে নিয়ে যাব। তারা যেন বেকার হয়ে না থাকে।
পিএইচডি গবেষণায় একটি শিরোনাম থাকবে, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থাকবে। গবেষণায় উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে কিছু ফলাফল থাকবে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু সুপারিশ থাকবে। এটি না থাকলে তো কোনো ডিগ্রিই হলো না। তিন বছর পর একটা সার্টিফিকেট নিলেই হয় না। ওই সুপারিশ জাতির জন্য কাজে লাগতে হবে। এটা যেনতেন কোনো ডিগ্রি নয়, পিএইচডি। আমরা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করি। আমাদের শিক্ষার্থীরা দক্ষ, বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা তাদের আছে।
যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যে যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছে, সরকার ও ইউজিসির সঙ্গে আলাপ করে তাদের পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানের সুযোগ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি না। তবে গবেষকের সংখ্যা বাড়ানো উচিত বলে আমার মনে হয়।
ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রম, প্রথম আলো
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষণার নানা দিক আজকের আলোচনায় উঠে এসেছে। আলোচনার মূলকথা হলো আগামী দিনের জন্য দেশের পিএইচডি গবেষণায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি সুপারিশও আমরা পেয়েছি। আশা করি, কর্তৃপক্ষ এ দিকে নজর দেবে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
সুনির্দিষ্ট শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার অনুমতি দেওয়া হোক।
পিএইচডি ডিগ্রির মান বাড়াতে প্রবাসী বিশেষজ্ঞ গবেষকদের যুক্ত করা যেতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে পিএইচডি গবেষণার অনুমতি দিলে দেশীয় গবেষণা বাড়বে।
পিএইচডি গবেষণায় সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি চালু হলে মেধা পাচার অনেকাংশে কমবে।
মানসম্পন্ন গবেষণা কার্যক্রমের জন্য শিক্ষকদের বাড়তি প্রণোদনা দেওয়া উচিত।
পিএইচডি ডিগ্রির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অনেক আকর্ষণীয় কাজ করা সম্ভব হবে।