৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘কমিউনিটি বেইজড মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস: শিশু ও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্প’ এবং প্রথম আলোর আয়োজনে ‘সকলের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবা: জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যনীতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই আয়োজনে সহায়তায় রয়েছে ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট ও ডিজঅ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন। আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।
আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম
মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
নাজমুল হক খান
অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল অনুবিভাগ), স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়
শবনম মুস্তারী
উপসচিব (এনডিডি ও অটিজম), সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
মো. শফিকুল ইসলাম
কান্ট্রি ডিরেক্টর, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
মনিরা রহমান
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশন (আইডব্লিউএফ)
শামীম এফ করিম
সভাপতি, বাংলাদেশ এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি সোসাইটি
মাহমুদুর রহমান
সভাপতি, বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতি
ফারুক আলম
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। সহসভাপতি, বাংলাদেশ মেন্টাল হেলথ নেটওয়ার্ক
কামাল চৌধুরী
অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
হাসিনা মমতাজ
জাতীয় পরামর্শক (মানসিক স্বাস্থ্য), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
হেলাল উদ্দিন আহমেদ
সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলেসেন্ট মেন্টাল হেলথ
নাজিশ আরমান
লিড কো–অর্ডিনেটর, কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট, সূচনা ফাউন্ডেশন
মো. হাবিবুর রহমান
ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন, বাগেরহাট
মুনা আফরিণ
জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তা, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, যশোর
নাসরিন জাহান
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিজঅ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন
আরাফাত সুলতানা লতা
সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্টারপ্রেটার
সূচনা বক্তব্য
আব্দুল কাইয়ুম
সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
সঞ্চালনা
ফিরোজ চৌধুরী
সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো
■ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারি বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
■ মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে আলাদা ইউনিট গঠন করা দরকার।
■ প্রতিবন্ধী মানুষদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।
■ মানসিক স্বাস্থ্যসেবাদাতাদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার।
■ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার দূর করতে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
■ জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য আইন, নীতিমালা ও কৌশলপত্র বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি, আন্তমন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন
■ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখা জরুরি
■ প্রান্তিক জনগণ, প্রবীণ ব্যক্তি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।
■ দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ চালু করে বিশেষজ্ঞ তৈরি করে এই স্বাস্থ্যসেবা বাড়ানো দরকার।
■ দেশে মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোনো সঠিক তথ্য নেই। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় থাকা ব্যক্তিদের বিষয়ে পৃথক তথ্যভান্ডার থাকা উচিত। আসন্ন জনশুমারিতে এই তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
■ মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলোকে একীভূত করে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিয়ে যাওয়া দরকার।
আব্দুল কাইয়ুম
আমাদের দেশের প্রায় এক–তৃতীয়াংশ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু তাদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থার অভাব রয়েছে। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে কতগুলো নীতি ও আইন আছে। কিন্তু এসব বাস্তবায়নের জন্য বরাদ্দ অনেক কম। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে মানুষের আরও সচেতনতার প্রয়োজন। এ জায়গাগুলোয় দৃষ্টি দেওয়া দরকার।
এডিডির কমিউনিটি বেইজড মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যে তিনটি উল্লেখযোগ্য কাজ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে একটি বেইজলাইন সার্ভে, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে মানুষ কোথায় যায় এবং শিশু ও যুবাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কোভিডের কী প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো এ প্রকল্পকে এগিয়ে নিতে ও সামগ্রিকভাবে প্রকল্পের প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশে সাত থেকে সতেরো বছর বয়সের শিশু–কিশোরদের প্রায় ১৭ ভাগের কোনো না কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশের মানসিক স্বাস্থ্যের তথ্যচিত্র খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। আমাদের একটি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যনীতি-২০১৮ রয়েছে। একই সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের কৌশলগত পরিকল্পনাও রয়েছে, যা ২০৩০ সাল পর্যন্ত চলবে। বাংলাদেশে সামগ্রিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষার জন্য আমাদের একটি আইন আছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইনেও মানসিক স্বাস্থ্যকে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধিতার ধরন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সঠিক সময়ে চিহ্নিত করা গেলে আমরা যেকোনো মানসিক সমস্যা নিরাময় করতে সমর্থ হব। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিরাময়ে মানুষকে বর্তমানে প্রচলিত সুযোগ–সুবিধার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে আসা প্রয়োজন।
সারা বিশ্বে মোট মৃত্যুর ১ দশমিক ৩ শতাংশ হলো আত্মহত্যা। ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের মানুষের মৃতু্যর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো আত্মহত্যা। বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ মানসিক রোগে ভুগছে। সারা বিশ্বে যত ধরনের মানসিক রোগ আছে, তার ৫০ শতাংশই শুরু হয় ১৪ বছর বয়সে। বাংলাদেশে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ ২০১৮-১৯–এর তথ্য অনুযায়ী ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশুদের ১৪ শতাংশ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ মানসিক রোগে ভুগছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বিষণ্নতা রোগে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ এবং উদ্বিগ্নতা রোগে ভুগছেন ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। মানসিক রোগে ভোগা শিশুদের ৯৪ দশমিক ৫ শতাংশ কোনো চিকিৎসা পান না। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এ হার ৯২ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২০ সালে এসব অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণায় চিকিৎসকদের মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টিও এসেছে। কোভিডকালে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশুরা মানসিক সমস্যায় আছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে প্রথমেই মানুষ পীর, ফকির ও কবিরাজের কাছে যায়। মনোরোগচিকিৎসকদের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটা দ্বিধা কাজ করে। কেননা তাদেরকে পাগলের ডাক্তার মনে করা হয়। এ ছাড়া আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবাও পর্যাপ্ত নয়। কমিউনিটিভিত্তিক মনঃসামাজিক সহায়তাও আমাদের দেশে দেখা যায় না। ১০৬ বছর পরে লুনাসি আইন, ১৯১২ রদ করে মানসিক স্বাস্থ্য আইন, ২০১৮ প্রবর্তন করা হয়েছে। এটা আমাদের একটা অর্জন।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) তিন নম্বর অ্যাজেন্ডায় সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য বাদ দিয়ে আমরা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন করতে পারব না। ২০১৯ সালে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য নীতিমালার খসড়া করা হলেও তা এখনো সংসদে পাস হয়নি। আইনে বায়ো সাইকো সোশ্যাল মডেলের পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি। এখন পর্যন্ত আমাদের চিকিৎসাসেবা বড় শহরকেন্দ্রিক। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ করে উপশহর, গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষ জনবল তৈরিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ জরুরি। জেলা হাসপাতাল থেকে শুরু করে কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কেউ যেন মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতার বাইরে না থাকে। এখন পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পেতে জরুরি হেল্পলাইন নম্বর আমরা পাইনি। তাই জরুরি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা হেল্পলাইন চালু করা প্রয়োজন। বেসরকারি সংস্থাগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ সেবা দিচ্ছে। তাই সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতা আরও বাড়াতে পারব। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি আলাদা বিভাগ চালু করার অনুরোধ করছি। প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা দূর না হলে তা নীতিমালা বাস্তবায়নে একটা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কুসংস্কার ও প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা দূর করতে দেশে একটা সম্মিলিত আন্দোলন তৈরি করতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এগিয়ে যাওয়ার পথের বাধাগুলো দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক রোগের চিকিৎসা নিতে রোগীরা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাছে সবচেয়ে বেশি আসেন। এরপর বেশি আসেন সরকারি হাসপাতাল ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের কাছে। আমাদের দেশে তিনটি পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা আছে। টারশিয়ারি পর্যায়ে রয়েছে মেডিকেল কলেজ ও ইনস্টিটিউটগুলো। জেলা শহরের হাসপাতালগুলো দ্বিতীয় (সেকেন্ডারি) পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। প্রাথমিক (প্রাইমারি) পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় ইউনিয়ন হেলথ কমপ্লেক্স উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। দেশে জেলা পর্যায়ে কোনো মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেই। তাই জেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দেশের বেশির ভাগ টারশিয়ারি হাসপাতালেই মানসিক বিভাগ নেই। দেশে সরকারি–বেসরকারি মিলিয়ে মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। তবে অল্প কয়েকটি মেডিকেল কলেজ ছাড়া কোথাও মানসিক স্বাস্থ্যের বিভাগ নেই। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে আলাদা ইউনিট দরকার। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য ঠিক করে মানসিক স্বাস্থ্যের কৌশলগত পরিকল্পনায় নজর দিলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব।
আমাদের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যনীতি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। যখন আমরা সারা দেশে পুরোদমে কাজ শুরু করব, তখন অবশ্যই আমাদের বরাদ্দ লাগবে। এ ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নের পর তা বাস্তবায়নে বরাদ্দের কোনো অসুবিধা হবে না। মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। সে লক্ষ্যে অনেক কাজও হচ্ছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য জেলা হাসপাতালগুলোতে একজন ডাক্তার ও দুজন নার্সকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের স্নাতকোত্তর ইনস্টিটিউটে পরিণত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। পরবর্তী সময়ে আমরা হয়তো প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগে এ ধরনের আরও হাসপাতাল করতে পারব।
এডিডি ইন্টারন্যাশনালের অধীনে আমরা আটটি জোনে কাজ করছি। কমিউনিটিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আমরা মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। বেশির ভাগ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানে না। প্রতিবন্ধী মানুষ ও তাদের পরিবারও মানসিকভাবে ভালো থাকার বিষয়টা অতটা জানে না। মানসিক অসুস্থতায় কোথায় যেতে হবে—সেটাও তারা জানে না। মানসিক অসুস্থতাজনিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়। তারাও এ সেবার আওতার বাইরে রয়েছে। তাই প্রতিবন্ধী মানুষদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় নিয়ে আসতে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা দরকার।
আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য নীতিমালা যেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানসিক স্বাস্থ্য কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়, সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি। যেন তা টেকসই হয়। মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরের কার্যক্রম অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় আছে। মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্যতম অগ্রাধিকার তালিকায় রাখার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম; যা অনেক উন্নত রাষ্ট্রেও আমরা এখনো দেখিনি। কৌশলগত কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় রাখতে হবে। যেটা আমরা আমাদের পরিকল্পনায় নিশ্চিত করেছি। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আরও শক্তিশালী করতে যাঁরা এসব সেবা নেন, তাঁদের পরামর্শ নিয়েছি। আশা করছি, এ পরিকল্পনা সহজে বাস্তবায়নযোগ্য হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের অর্জনের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য আইন, ২০১৮, মানসিক স্বাস্থ্যনীতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের কর্মকৌশল রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যনীতিতে সমতা ও ন্যায়বিচার, সমন্বিত সেবা, প্রমাণভিত্তিক পরিচর্যা এবং মান নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলো রয়েছে। এ নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে মানসিক স্বাস্থ্যের কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যে আমাদের অর্জন নেহাত কম নয়। ২০২০ সালে আমরা একটি রূপরেখা (ম্যাপিং) করেছিলাম। সেখানে এসেছে, ২২৬টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের কর্মকৌশলটি সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের প্রতি আস্থা রাখুন। আমরা নিশ্চয়ই একটি ভালো স্বাস্থ্যনীতি ও কর্মকৌশল উপহার দিতে পারব।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি বড় বড় হাসপাতাল তৈরির পরিবর্তে বিদ্যমান বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উন্নয়নের ওপর জোর দেন। পাবনার মানসিক হাসপাতালের ওখানে আন্তর্জাতিক মানের একটা মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট তৈরির পরিকল্পনা আছে। যেখানে সব মেডিকেল কলেজের স্নাতক–পূর্ব শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ইন্টার্ন করবে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা বিভাগে পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছে। এ কাজে ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত জাতীয় মানসিক ইনস্টিটিউটেরও সংশ্লিষ্টতা আছে। আমরা আমাদের কোর্স, কারিকুলাম ও প্রশিক্ষণে জোর দিতে চাই। এ বিষয়গুলো সঠিকভাবে নির্দেশ করা না গেলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে উন্নতি হবে না।
আমাদের ১৬ কোটি মানুষের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অনেক বেশি অবহেলিত। সে জন্য আজকের এ গোলটেবিল একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। মানসিক প্রতিবন্ধিতা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, মস্তিষ্কের বিকাশের সমস্যার জন্য যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন, সবাইকে আমরা এক কাতারে ফেলছি। সবাই একই রকমের মানসিক রোগী নয়। এদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেটাকে মাথায় রেখে আলোচনা করলে তা ফলপ্রসূ হবে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সব রকম সহযোগিতার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
দেশে কাউন্সেলিং ও শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীর চাহিদা রয়েছে। সে আঙ্গিকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ খোলা হয়েছে। সরকারি স্কুল ও কলেজে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী ও কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞানীর পদ তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। যেন শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় তাদের শরণাপন্ন হতে পারে। এর ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা, মাদকাসক্তি, স্কুল থেকে ঝরে পড়াসহ আরও অনেক ধরনের মানসিক সমস্যা ঠেকানো যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি স্কুলগুলো শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী ও কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞানীর পদ তৈরি করেছে। কিন্তু সরকারি স্কুলগুলোতে এ পদ নেই। অথচ বেশির ভাগ শিক্ষার্থী সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেন। স্কুলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া প্রয়োজন। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে মনোবিজ্ঞান বিষয় রয়েছে। অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যক্রমেও মনোবিজ্ঞান বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি, যেন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়। তারা যেন বুঝতে পারে যে কখন মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সাহায্য চাইতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সরকার এবং বেসরকারি অনেক সংগঠনের অগ্রাধিকার তালিকায় আছে। এটি খুব আশাজাগানিয়া। তবে এ ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা একটি প্রতিবন্ধকতা। ধাপে ধাপে বরাদ্দ পেলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। আমাদের দেশে এখন মনোবিজ্ঞানী তৈরি হচ্ছে। তবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার মতো সমাজকর্মী ও নার্সের অভাব রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হলে বিভিন্ন পর্যায়ে লোকবল তৈরি করতে হবে।
আমাদের দেশে আত্মহত্যার ঘটনা ও কিছু মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বেশি। এর কারণগুলো জেনে বিশেষ প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা কমে যাবে। আমাদের একটি কেয়ারিং সমাজ তৈরি করতে হবে। সর্বোপরি আমাদের দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মী প্রয়োজন।
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রশিক্ষণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। ইতিমধ্যে আমরা বেশ কিছু প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তারদের নিয়ে ৫ দিন ও ২৮ দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবায় মানসিক স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা সরকারের সঙ্গে কাজ করছি।
আমাদের সুশীল সমাজ ও এনজিওগুলো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জও আছে। আমাদের দক্ষ জনবল ও বাজেট স্বল্পতা আছে। এ বিষয়গুলো নির্দেশ করেই আমরা পরবর্তীকালে কাজ করতে চাচ্ছি। ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় দক্ষ সেবাদাতা বাড়াতে আমরা বেশ কিছু প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে যাচ্ছি।
বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অনেক কুসংস্কার ও অসচেতনতা রয়েছে। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোয়ালিটি রাইটস টুল কিট আছে, যা ইতিমধ্যে অনেক দেশে বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা যায় কি না, সেটি আমরা বিবেচনা করছি। কোভিডকালে মানসিক স্বাস্থ্যসংকট ও আত্মহত্যার হার অনেক বেড়ে গেছে। সে জন্য আমরা কিছু বাংলা অ্যানিমেশন ভিডিও, লিফলেট প্রকাশ করেছি। তাই টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় অনগ্রসর ও ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকে নিয়ে কাজ করে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনেকগুলো শিশু পরিবার আছে। আমাদের ২১৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে ২০ হাজারের মতো নিবাসী আছে। ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণি বলতে শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নয়, এসব শিশুর পরিবার ও নিবাসীরাও এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা তারা আর্থসামাজিক ও মানসিক দিক থেকে একটা দুর্বল অবস্থায় থাকে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবীণদের নিয়েও কাজ করে। প্রবীণদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ১০৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্যকেন্দ্র আছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এ কেন্দ্রগুলো রয়েছে। এসব কেন্দ্রে থেরাপিসেবা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের একটি অটিজম রিসোর্স সেন্টার আছে। প্রতিকার নয়, প্রতিরোধের দিকেই আমাদের যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করতে হবে।
আমাদের তথ্যভান্ডারে ২৩ লাখের বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তালিকাভুক্ত আছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও নজর দিতে হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আলাদা একটা ইউনিট করা জরুরি। আজকের আলোচনায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের করণীয় বিষয়ে সুপারিশ এলে তা আমরা অবশ্যই বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।
কিশোর বয়সে শিশুরা তাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যাগুলো ঠিকমতো বলতে পারে না। বাক্প্রতিবন্ধীদের জন্য বিষয়টি আরও কঠিন। এসব শিশু অনেক ধরনের নির্যাতনের শিকারও হয়। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই। প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রগুলোতে আমরা প্রশিক্ষিত জনবল রয়েছি। আমরা সবকিছুতে আপনাদের সর্বাত্মক সহায়তা করব।
গত বছরের মার্চ মাস থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৩৬ জন আত্মহত্যা করেছেন। ঠিক একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ হাজার ৪৬২ জন। এ সময়ে আমাদের সব নজর ছিল কোভিডের ওপর। অথচ এ সময়ে আত্মহত্যায় কোভিডের প্রায় দ্বিগুণ মৃত্যু হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণের বিষয়টি মানসিক স্বাস্থ্য আইনে আছে। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোথাও একটা বাধা রয়েছে। করোনার টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে পড়েছে। যেহেতু তাদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। যা প্রতিবন্ধী পরিবারগুলোর ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।
আমরা সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসছে কি না, তা জানতে হবে। আমাদের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এসেছে, এসব জনগোষ্ঠীর একটা বৃহৎ অংশ করোনা মহামারির ফলে নানা রকম মানসিক সমস্যায় ভুগছে। তাদের দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
মানসিক স্বাস্থে্যর বিষয়টিতে আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিই না। এটা বরাবরই অবহেলিত হয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ঝাড়ফুঁক ও বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার তার মধ্যে অন্যতম। বাগেরহাটে কোনো মানসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। ফলে সেবা দিতে সমস্যায় পড়তে হয়। সদর হাসপাতালে এ বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিলে জনগণ আরও উপকৃত হতো।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা অনেক সময় অনেক কিছু বুঝতে পারেন না। ফলে তারা বিষণ্নতা ও বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভোগেন। তাই স্কুলে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হলে এ সমস্যাগুলো কমে আসবে। আমাদের যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যনীতি হচ্ছে, সেখানে সব পর্যায়ের ভূমিকা রয়েছে। পরিবারের ভূমিকা ও দায়িত্ব-কর্তব্যও এ নীতিতে উল্লেখ থাকবে। এ নীতি থেকে আরও অনেক পরিপত্র ও দিকনির্দেশিকা তৈরি হবে। সেখানে বিষয়গুলো আরও বিস্তারিত থাকবে।
আলোচনায় এমন অনেক বিষয় এসেছে, যেগুলো আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্য আইনে নেই। সেগুলো আমরা দেখব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় আমরা একটি কৌশলগত পরিকল্পনা করছি। এটা অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা ধাপে ধাপে এগোতে থাকব। কোথাও ঘাটতি থাকলে আমরা তা পূরণ করব। আলোচনার সুপারিশ অনুযায়ী আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনা, গাইডলাইনে কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা পূরণের ব্যবস্থা নেব।
মো. শফিকুল ইসলাম
মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষের চিন্তাভাবনায় অনেক আগেই পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এখন এ বিষয়টিকে একটা সঠিক গন্তব্যের দিকে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে এ গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি আছে। সরকার এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এগিয়ে নিতে চায়। এসব বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনেকগুলো দিকনির্দেশনা আলোচনায় এসেছে। সব মিলিয়ে যা অত্যন্ত আশাজাগানিয়া।
আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য আইন, নীতিমালা ও বাস্তবায়ন কৌশল রয়েছে। এর মধ্যে নীতিমালাটি সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে মতামত দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত আছে। মানসিক স্বাস্থ্য আইন, নীতিমালা ও বাস্তবায়নের কৌশলকে অংশীজন বা জনগণের মতামত যুক্ত করে আন্তমন্ত্রণালয়ভিত্তিক সমন্বয় করা প্রয়োজন।
মানসিক স্বাস্থ্য শুধু স্বাস্থ্যসংক্রান্ত নয়, এর সঙ্গে আর্থসামাজিক বিষয়সহ অনেক কিছু যুক্ত আছে। তাই এসব আইন, নীতিমালা ও কৌশলপত্র সঠিকভাবে বাস্তবায়নে আন্তমন্ত্রণালয় সমন্বয় ও সবার সহযোগিতা দরকার। এ জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। সে জন্য বরাদ্দ ও বরাদ্দের সঠিক ব্যয় নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। আশা রাখছি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কর্তাব্যক্তিরা বরাদ্দের বিষয়টি আগামী জাতীয় বাজেট বরাদ্দে প্রতিফলনের চেষ্টা করবেন।
আমাদের দেশের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অবস্থা একেবারে হতাশাব্যঞ্জক নয়। দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক কাজ হয়েছে। এখনো অনেক কাজ চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও কাজ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা বাস্তবসম্মত করতে বৃহত্তর জনগণের অংশগ্রহণের বিষয়টি জরুরি। জনগণের মতামত, সরকারি-বেসরকারি ও বিভিন্ন অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার দুষ্ট চক্র ভাঙতে পারব।
ফিরোজ চৌধুরী
একযোগে কাজ করার বিকল্প নেই। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা একক কোনো বিষয় নয়। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি—এটি সবার জন্যই প্রযোজ্য। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরিসর আরও বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সরকারি সুবিধা কাজে লাগানোর পাশাপাশি বেসরকারি উদে্যোগকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। আজকের গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।