এবিসি রেডিওর গোলটেবিল

শ্রমিকের স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রে প্রকল্প টেকসই করার তাগিদ

আলোচনায় বক্তারা বলেন, বর্তমানে তিনটি বেসরকারি সংস্থার আলাদা তিনটি প্রকল্পের আওতায় ৬০ হাজার শ্রমিক বিমার আওতায় এসেছেন।

শেখ মজিবুল হক, মো. নুরুল আমিন ও সৈয়দ আব্দুল হামিদ
শেখ মজিবুল হক, মো. নুরুল আমিন ও সৈয়দ আব্দুল হামিদ

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমা সুবিধা দিতে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। বেসরকারি তিনটি সংস্থা আলাদাভাবে এ তিনটি প্রকল্প চালু করেছে। এ তিন প্রকল্পের আওতায় ৬০ হাজার শ্রমিককে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা সম্ভব হবে। তবে চলমান এ তিনটি প্রকল্প ২০২৩ সালের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাবে। স্বাস্থ্যবিমার চলমান প্রকল্পগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং পর্যায়ক্রমে পোশাকসহ অন্য শিল্পের শ্রমিকদেরও স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনার জন্য সরকারি পর্যায়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

এবিসি রেডিওর আয়োজনে ‘তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমা নীতি’ শীর্ষক এক অনলাইন গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল আয়োজনে সহযোগী ছিল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ব্র্যাক আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ও এসএনভি বাংলাদেশ। সঞ্চালনা করেন এবিসি রেডিওর প্রোডিউসার এবং রেডিও হোস্ট নাদিয়া ইসলাম।

সভায় বক্তারা বলেন, ন্যাশনাল হেলথ সিকিউরিটি অফিস গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পোশাকশ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিমার চলমান পরীক্ষামূলক প্রকল্পগুলো টেকসই করতে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘সোশ্যাল হেলথ ইনস্যুরেন্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিট (শিমু) ’ নামে প্রতিষ্ঠান গড়া যায়। প্রতিষ্ঠানটি গঠনের জন্য ওয়ার্কিং কমিটি ও স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করতে হবে। ওয়ার্কিং কমিটিতে সরকারের কর্মকর্তা থাকলেও স্টিয়ারিং কমিটিতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধি রাখতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক, এসএনভি ও বিএডিএএসের আলাদা তিনটি পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে পোশাক খাতের প্রায় ১ শতাংশ শ্রমিক স্বাস্থ্যবিমার আওতায় এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আসা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শ্রমিকদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতাও বাড়ে। তবে ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করা প্রকল্পগুলো এগিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের মধ্যে নেই। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এই প্রক্রিয়ার মধ্যে নেই।

স্বাস্থ্য খাতে মানসম্মত বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোনো উন্নয়নই টেকসই হয় না। করোনাভাইরাস সেটিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। বিমার কথা শুনলে অনেকে আঁতকে ওঠেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আমাদের সক্রিয় হতে হবে। বিমা আধুনিক ব্যবস্থা। এটির সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক রয়েছে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যবিমার উদ্যোগগুলো বিচ্ছিন্নভাবে চলছে। একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করে সেগুলো এক ছাতার মধ্যে আনতে হবে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি নীতিমালা করা দরকার। আর তহবিলের জন্য শ্রম ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারে।

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) মো. নুরুল আমিন বলেন, রাতারাতি সব ধরনের শিল্প খাতের শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা ব্যবস্থা চালু করা যাবে না। ধাপে ধাপে করতে হবে। তারই অংশ হিসেবে সমাজের দরিদ্র মানুষের জন্য স্বাস্থ্যবিমার পাইলট প্রকল্প টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলায় চলছে। সেটি আরও কয়েকটি উপজেলার পাশাপাশি ঢাকায় বর্ধিত করা হবে। তা ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার প্রস্তাবনা তৈরির কাজ চলছে।

নুরুল আমিন আরও বলেন, হঠাৎ করে কোনো কর্মসূচি টেকওভার বা অধিগ্রহণ করা সরকারের পক্ষে কঠিন। তাই সরকারকে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেটি করা গেলে আর্থিক বিষয়টি বড় বাধা হবে না। কারণ, দেশে বর্তমানে পাঁচ–ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট হয়। আর নীতিগত সিদ্ধান্ত আর আর্থিক সমস্যা সমাধান হলে দপ্তর ও দক্ষ জনবল ধীরে ধীরে হয়ে যাবে।

বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের আরবান ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক শেখ মজিবুল হক বলেন, ২০১৭ সাল থেকে তিনটি এক দরজায় সেবা বা ওয়ান–স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া শুরু হয়। পরে তার সঙ্গে বিমা যুক্ত করার পর শ্রমিকেরাও আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাঁরা টাকা দিয়েও বিমা নিতে রাজি। বিমা সুবিধা নেওয়ার পর শ্রমিকদের কারখানায় অনুপস্থিতির হার কমেছে। তাঁদের উৎপাদনশীলতাও বেড়েছে। তিনি বলেন, পোশাকশিল্পে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। সে জন্যই নারীদের সংখ্যা ৮০ থেকে ৬০ শতাংশে নেমে গেছে। নারীদের বঞ্চনা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন্য স্বাস্থ্যবিমা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। নতুন প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিমার কর্মসূচি এগিয়ে নিলে তার সঙ্গে ব্র্যাক থাকবে বলে জানান তিনি।