পারিবারিক সহিংসতা: ন্যায়বিচার ও আইনি প্রতিকারের প্রেক্ষাপট

একশনএইডের আয়োজনে ‘পারিবারিক সহিংসতা: ন্যায়বিচার ও আইনি প্রতিকারের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় ২ ডিসেম্বর ২০২০। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

গোলটেবিলে অংশগ্রহণকারী

নাছিমা বেগম

এনডিসি, চেয়ারম্যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

আরমা দত্ত

সংসদ সদস্য

মেঘনা গুহঠাকুরতা

নির্বাহী পরিচালক, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিব)

সারা হোসেন

অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট

রুমানা আক্তার

বিশেষ পুলিশ সুপার (ফরেনসিক), সিআইডি, ঢাকা

শাহনাজ মুন্নী

লেখক ও সাংবাদিক

কোহিনুর বেগম

স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি (এসইউএস)

মূল প্রবন্ধ

তাসলিমা ইয়াসমীন

সহকারী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সঞ্চালনা

ফারাহ্ কবির

কান্ট্রি ডিরেক্টর, একশনএইড বাংলাদেশ

আলোচনা

তাসলিমা ইয়াসমীন

তাসলিমা ইয়াসমীন

আমাদের পারিবারিক সহিংসতা সুরক্ষা ও প্রতিরোধ আইন রয়েছে। এ বছর পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ (ডিভিপিপি আইন) কার্যকর হওয়ার এক দশক পূর্ণ হলো। এ আইন করার পেছনে সবার একটা সম্মিলিত প্রয়াসও ছিল। ১০ বছরে আইনটি পারিবারিক সহিংসতার স্কীকার ব্যক্তিদের কতটুকু প্রতিকার দিয়েছে, তা গবেষণায় দেখা হয়েছে। আমরা অক্টোবরের শেষ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ গবেষণা করেছিলাম। গবেষণায় সংশ্লিষ্ট মোট ৬০ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন ছিলেন ভুক্তভোগী নারী। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাঁরা কোনো না কোনো পর্যায়ে কোনো আইনি প্রতিকারের জন্য কোনো ফোরামে গিয়েছেন, তাঁদেরই আমরা অন্তর্ভুক্ত করেছি।

এ ছাড়া কয়েকটি জেলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট থেকে বেশ কয়েকটি মামলার নথিপত্র সংগ্রহ করেও পর্যালোচনা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনের প্রয়োগ দেশের বেশির ভাগ জেলাতেই অত্যন্ত দুর্বল। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শেরপুর ও ভোলা থেকে তথ্য পাওয়া গিয়েছে যে গত ১০ বছরে এ আইনের অধীনে কোনো ধরনের মামলা হয়নি। বরিশালের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আনুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী সেখানে শুধু একটি মামলা (পিটিশন) হয়েছে। তবে সিলেট, যশোর ও দিনাজপুরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মামলা হয়। এসব জেলায় আইনটির প্রয়োগ বেশি হওয়ার পেছনে রয়েছে আইনি সুরক্ষা সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর ভূমিকা।

এ আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোরও ভূমিকা পালনের কথা বলা হয়েছে। বিচারকেরাও আছেন। কিন্তু সব ক্ষেত্রে আইনটি জানার ঘাটতি রয়েছে। এ আইনের ওপর আলাদাভাবে জোর দিয়ে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। ভুক্তভোগীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফৌজদারি প্রতিকার চেয়ে থাকেন। বিভিন্ন ফোরামে তাঁদের ফৌজদারি আইনে উৎসাহিত করা হয়। এ আইন শুধু স্বামী-স্ত্রীর নির্যাতনসংক্রান্ত নয়। এখানে পরিবারের সবার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। কিন্তু পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার কথা খুব কম শোনা গেছে।

সাক্ষাৎকার নেওয়া একজন শুধু এ ধরনের অভিযোগ করার কথা বলেছেন। কিন্তু একজন নারী পিতামাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, সেটাকে আদালত থেকেও খুব ভালোভাবে নেওয়া হয়নি। এ আইনে নারী ও শিশু প্রত্যেকেই প্রতিকার পেতে পারে। কিন্তু এ আইনে শিশুদের পুরোপুরি আলাদাভাবে নির্দেশ করা হয়নি। একটি শিশু পরিবারের ভেতর এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে পরিবারের বিরুদ্ধে কীভাবে অভিযোগ করবে? অভিযোগ করার ক্ষেত্রে একজন স্কুলশিক্ষকের কী ধরনের ভূমিকা হতে পারে, এ বিষয়গুলোতে আইনে খুব কম মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতায় সাহায্য চাওয়া নারীদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সবকিছু ঠিক করে আবার স্বামীর সংসারে পাঠিয়ে দেওয়ার ওপর জোর থাকে। এর একটা কারণ আমাদের বিকল্প ব্যবস্থাও নেই।

পারিবারিক সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের ক্ষেত্রে কী ধরনের পুনর্বাসন, আইনি ও সামাজিক সহায়তা দেওয়া যায়, বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। সেখানে অর্থায়নেরও অভাব রয়েছে। ভুক্তভোগীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এ আইন প্রয়োগের জন্য যে পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ প্রয়োজন, সেখানেও ঘাটতি রয়েছে। গবেষণায় আইন বাস্তবায়নে তদারকির ঘাটতির বিষয়টিও এসেছে। সাক্ষাৎকার নেওয়া ২০ ভুক্তভোগীর মধ্যে ১৯ জন জানিয়েছেন, তাঁরা এ আইন সম্পর্কে কখনো শোনেননি। একজন শুধু বলেছেন, সহিংসতার শিকার হওয়ার অনেক পরে একশনএইডের কর্মীর মাধ্যমে এ আইন সম্পর্কে শুনেছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই সহিংসতা মারাত্মক আকার ধারণ করার পর প্রতিকার চাইতে গেছেন।

এ ক্ষেত্রে যাঁদের কাছে তাঁরা সাহায্যের জন্য গেছেন, তাঁরা এ আইনে প্রতিকার পাওয়ার বিষয়টি জানাননি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৫ সালের জরিপ অনুযায়ী ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ বিবাহিত নারী তাঁদের জীবদ্দশায় কোনো না কোনো পর্যায়ে স্বামীর দ্বারা সহিংসতার শিকার হন। এ আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। আইন বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত প্রশিক্ষণব্যবস্থা রাখা দরকার। বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারী, যাঁরা সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তাঁদেরও আইনের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।

পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে শিশুদের সুরক্ষার বিষয়েও আইনে গুরুত্ব দিতে হবে। ভুক্তভোগীদের জন্য আলাদা তহবিল রাখা দরকার। ডিভিপিপি আইনের প্রদত্ত সব আদেশ লঙ্ঘনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। ভুক্তভোগীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র, মানসিক-সামাজিক পরামর্শ, চিকিৎসাসেবা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। আইন বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিরীক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। পারিবারিক সহিংসতাসম্পর্কিত ঘটনার তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণে কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার প্রয়োজন।

শাহনাজ মুন্নী

শাহনাজ মুন্নী

যখন থেকে সাংবাদিকতা করছি, তখন থেকেই শুনে আসছি যে আমাদের ভালো আইন আছে। কিন্তু সেসব আইনের প্রয়োগ ও কোনো বাস্তবায়ন আমরা দেখতে পাই না। আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা যায়, এসবের কোনো তদারকি নেই। আইন আছে, তা মানুষ জানে না, এটাও একটা চ্যালেঞ্জ।

প্রথমত, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে তাঁরা হতভম্ব হয়ে যান যে কী করবেন, কোথায় যাবেন, কার কাছে যাবেন। যাওয়ার পর ন্যায়বিচার পাবেন কি না। সে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ পাবেন কি না। যাওয়ার পর কত টাকা খরচ হবে, সেটাও তিনি জানেন না। সবকিছু মিলিয়ে সহিংসতার শিকার হওয়া ব্যক্তি খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়ে যান। এসব কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি অনেক সময় আইনের কাছেই যেতে চান না। বিশেষ করে প্রান্তিক অবস্থানের নারী-পুরুষের মধ্যে এ সমস্যা প্রবল।

মধ্যবিত্তদের মধ্যে আবার আরেক ধরনের সমস্যা। জানাজানি হোক, এটা তাঁরা চান না। সে কারণে তাঁরা আইনের কাছে যেতে চান না। উচ্চবিত্তদের ব্যাপারে আমরা অতটা জানি না। তাঁরা হয়তো নিজেদের মতো করে মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। সে জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার কোনো বিকল্প নেই। সে ক্ষেত্রে দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে গণমাধ্যমের কাজ করতে হবে। গণমাধ্যমের কাজই হলো মানুষকে ঘটনাগুলো জানানো ও সচেতন করা। গণমাধ্যম কাজটি করছেও। সহিংসতার প্রাথমিক তথ্যগুলো আমরা গণমাধ্যম থেকেই পাই। আইনটির ছোট ধারাগুলো খুব সহজ ভাষায় লিখে মানুষকে জানাতে হবে। এগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক সময় ব্যয়ও করছে। এর মাধ্যমে মানুষকে সঠিক তথ্যটা দেওয়া যেতে পারে। চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে নির্ধারণ করা গেলে সমাধানের একটা পথ আমরা পাব।

কোহিনুর বেগম

কোহিনুর বেগম

সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নির্যাতনের শিকার নারীর কথা সাধারণত কেউ শুনতে চায় না। তিনি বুঝতে পারেন না কোথায় গিয়ে সহায়তা চাইবেন। শুরুতেই নির্যাতিত নারীর সঙ্গে পরিবার, প্রতিবেশী, সিভিল নাগরিক সমাজ, গ্রাম্য মাতবর, ইউনিয়ন পরিষদ যুক্ত থাকে। সেখানে সে কোথাও সে রকম সমাধান ও সহযোগিতা পায় না।

আমাদের কাছে অধিকাংশ মামলা-মোকদ্দমা করার অনেক পরে আসে। অনেক দিন পরও যখন কোনো ন্যায়বিচার পায় না, তখন আমাদের কাছে আসে। আমরা একশনএইডের সঙ্গে ২০০১ সাল থেকে কাজ শুরু করি। আমাদের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, মানবাধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, নারীসমাজসহ জেলা, উপজেলা ও গ্রামপর্যায়ে অনেকগুলো কমিউনিটি বেজড অর্গানাইজেশন (সিবিও) আছে। তাদের মাধ্যমে আমরা সত্যানুসন্ধান করি। পুরো বিষয়টি জানার পর আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে থাকি। আইনি সহায়তার প্রয়োজন হলে লিগ্যাল এইড কমিটির সঙ্গে সংযোগ করিয়ে দিই।

আমাদের প্রশিক্ষিত মানবাধিকারকর্মী আছেন। মানবাধিকার ও বিভিন্ন আইন সম্পর্কে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সালিসের মাধ্যমে সমাধান প্রয়োজন হলে এসব কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিই। নেত্রকোনা, জামালপুর ও ময়মনসিংহে পারিবারিক সহিংসতার অনেক ঘটনা ঘটলেও পারিবারিক সুরক্ষা আইনে কোনো মামলা হয়নি। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নির্যাতিত ও বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারীর মালামাল পুলিশের সাহায্যে আমরা অহরহ উদ্ধার করে দিচ্ছি। কিন্তু এটা যে আইনের অন্তর্ভুক্ত, তা আমাদের জানা ছিল না।

সরকারের অনেক ভালো উদ্যোগ আছে। ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) করা হয়েছে, যেটা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অধীনে। কিন্তু ওসিসির সঙ্গে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের সে রকম সমন্বয় নেই। সে জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় দরকার।

জেলাভিত্তিক একটা সাধারণ প্ল্যাটফর্ম করা দরকার, যেখানে সব অভিযোগ জমা করা হবে। তাহলে এ বিষয়ের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ করতে না পারলে তা চরম আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশকে নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ও যৌতুকমুক্ত করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ খুব জরুরি।

রুমানা আক্তার

রুমানা আক্তার

ভুক্তভোগী থানায় এলে পুলিশ কী দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে, তা আইনে লেখা আছে। এসব ক্ষেত্রে সচেতনতা অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আইন সম্পর্কে সচেতন না হলে মানুষ থানায় অভিযোগ করতেই আসবে না। আর থানায় অভিযোগ না হলে পুলিশ ভূমিকা নিতে পারবে না। এখন বেশির ভাগ থানায় নারী ও শিশু হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। আগের তুলনায় অনেক বেশি শুনানি (হিয়ারিং) নেওয়া হচ্ছে।

ভুক্তভোগীকে কোথায় যেতে হবে, কোথায় চিকিৎসা নিতে হবে—এসব বিষয়ে আইনি সহায়তা পাওয়ার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। তা ছাড়া আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি মানুষের একটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়ে গেছে। আমাদের নিজেদেরই দৃষ্টিভঙ্গি ভাঙতে হবে।

আইনি সহায়তার জন্য পুলিশের কাছে আসুন, অভিযোগ করুন, আমরা সর্বোচ্চ সাহায্য করব। আমাদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ও ভুক্তভোগীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। গণমাধ্যম থেকে আমরা জানতে পারছি করোনাকালে পারিবারিক সহিংসতার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। এসব বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগের সংখ্যাও বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের কাজগুলো করার চেষ্টা করছে। করোনা মহামারিতে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে। ডিএনএ ল্যাবে আসা নমুনার সংখ্যাও আগের থেকে বেড়েছে।

মেঘনা গুহঠাকুরতা

মেঘনা গুহঠাকুরতা

আমাদের সংস্কারে নারী–পুরুষ ভিন্ন কাজ করেন। নারী করেন গৃহস্থালির সেবামূলক কাজ। আর পুরুষেরা বাইরে উপার্জন করেন। সমস্যা হলো, নারীর করা এসব গৃহস্থালি কাজকে কাজ বলেই স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। না সমাজে, না রাষ্ট্রীয় চিন্তায়। নারীদের ঘরের কাজের জন্যই অধিকাংশ পারিবারিক সহিংসতা দেখা যায়। ঠিকমতো রান্না করছেন না, তরকারিতে লবণ কম হয়েছেম এ ধরনের অজুহাতে আগে মেয়েদের মারধর করা হতো।

ঘরের কাজে মেয়েরা অনেক সময় ব্যয় করে। প্রায় সাত ঘণ্টা সময় মেয়েরা বাসায় কাজ করেন। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষেরা মেয়েদের চেয়ে কম সময় কাজ করেন। অর্থাৎ নারীরা অনেক বেশি কাজ করছেন। তবু তাঁরা নিগৃহীত হচ্ছেন। নারীদের অনেক কাজ একসঙ্গে করতে হয়। একই সময়ে সন্তান সামলানো ও রান্নার কাজ করতে হয়। ফলে কাজটা গোছানো হয়ে ওঠে না। ফলাফল হিসেবে স্বামীর কাছে তাঁকে মৌখিক ও শারীরিক নিগ্রহের শিকার হতে হয়।

এসব নিরসনে একশনএইডের একটা পাওয়ার নামে একটি প্রজেক্ট আছে। ডে-কেয়ার সেন্টার করে নারীদের একটু রেহাই দেওয়া, স্বামী যেন কাজ ভাগ করে নেন ইত্যাদি সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। সাত ঘণ্টার কাজ নারীরা পাঁচ ঘণ্টায় নামিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু কোভিডের কারণে এ অগ্রগতি আরও পিছিয়ে গেছে। একই সঙ্গে কোভিডের কারণে পারিবারিক উপার্জনক্ষমতাও কমে গেছে। ফলে ঝগড়াঝাঁটি ও অশান্তি বেড়ে গেছে। স্কুল ও কলেজ বন্ধ হওয়ায় গ্রামে বাল্যবিবাহের সংখ্যা বেড়ে গেছে।

সারা হোসেন

সারা হোসেন

উচ্চ আদালতে নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা আসবে। গত ১০ বছরে উচ্চ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে প্রতিকার চাওয়ার ঘটনা নেই বললেই চলে। এটা ইঙ্গিত দেয় যে ভুক্তভোগী নারীরা শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন না। আইন কেন অকার্যকর হচ্ছে, সেটা একটা প্রশ্ন। আইনে কী সমস্যা, কোনো ফাঁক রয়ে গেছে কি না, সেটা আরেকটা প্রশ্ন। তৃতীয় হলো আইনের বাইরে আর কী কী করণীয় আছে। একজন নারীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেলে তিনি আর এ আইনে প্রতিকার পাচ্ছেন না। এটা বুঝতে ১০ বছর সময় লাগেনি। প্রথম বছরেই তা বোঝা গেছে। অনুমোদনের জন্য যে খসড়া আইন করা হয়েছিল, সেখানে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারীদেরও প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। চূড়ান্ত আইনে দেখা গেল, বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারী কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। আবার যখন আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব করব, তখন কোন ধাপে কী হচ্ছে, তা সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হবে। অনেক আদেশ লঙ্ঘিত হলে অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না। এখানে যেকোনো আদেশ লঙ্ঘিত হলে যেন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।

আলোচনায় ফৌজদারি আইন আরও জোরদার করার কথা এসেছে। সবকিছুতে ফৌজদারি আইন আরোপ করতে গেলেও কিছু সমস্যা আছে। আমরা মানবাধিকারের আলোকে কাজগুলো করতে চাই। পারিবারিক সহিংসতার প্রতিকার করতে গিয়ে নতুন কোনো সমস্যা যেন না করি। আমাদের কারাগারগুলোয় এখন ধারণক্ষমতার তিন থেকে চার গুণ বেশি মানুষ আছে। একজন গরিব মানুষকে কারাগারে নিলে তিনি কি তাঁর পরিবারের ভরণপোষণ দিতে পারবেন? দুই দিনের জন্য হয়তো নির্যাতন বন্ধ থাকবে। তারপর কী হবে, তা স্পষ্ট নয়।

বেশি ফৌজদারি আইন প্রয়োগে পারিবারিক ও সামাজিক প্রভাব কী হবে, তা চিন্তা করা দরকার। আইনের সংশোধন করা প্রয়োজন আছে। প্রতিটা থানায় নারী ও শিশু ডেস্ক থাকার কথা। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে এ উদ্যোগ নেওয়ার কথা শুনছি। কিন্তু বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, এখনো অনেক থানায় নারী ও শিশু ডেস্ক বলে কিছু নেই। এ আইন সম্পর্কে ভুক্তভোগীদের জানাতে এবং আইনি সহায়তা দিতে ঘটনার প্রাথমিক পর্যায়ে কাজ করার জন্য প্যারা লিগ্যাল কর্মী রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

প্যারা লিগ্যাল কর্মীরা জানেন কোথায় একজনকে নিয়ে যেতে হয় ও কী কী প্রতিকার দিতে হয়। তাঁরা আইনজীবীর সব কাজ করেন না। পারিবারিক প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন নারী নির্যাতন আইন, শিশু আইন এবং বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আলোচনায় যৌন নির্যাতনের বিষয়টি এসেছে। ধর্ষণের বাইরে শিশুরাও যৌন হয়রানির শিকার হয়। কিন্তু এ পর্যায়ের কেউ এ আইনে কোনো যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আসেননি। আইনটি কার্যকর করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সহায়তা (ফ্রন্টলাইন সাপোর্ট) ও প্রচার-প্রচারণা করা দরকার।

নাছিমা বেগম

নাছিমা বেগম

মানবাধিকার কমিশন থেকে পুলিশদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পুলিশ একাডেমির সঙ্গে আমাদের ভালো যোগাযোগ আছে। তারাও এসব বিষয়ে সহযোগিতা করে। সব জায়গায় যেন নারীবান্ধব পুলিশ ডেস্ক গড়ে ওঠে, তা নিয়ে আমরা কথা বলেছিলাম। কিছুদিন আগে খুবই নিকৃষ্ট একটা নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে স্বামী তাঁর স্ত্রীর স্পর্শকাতর অঙ্গে অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেন এবং পরে পোড়া জায়গার চামড়া ডলে ওঠাতে থাকেন। স্ত্রী চিৎকার শুরু করলে তা ফোনে তাঁর মা–বাবাকে শোনাতে থাকেন। তাঁর কী শাস্তি হওয়া উচিত?

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি সবার নজরে নিয়ে আসেন। ওই নারীকে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেন। আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। সবাই এভাবে পাশে দাঁড়ালে নিপীড়কেরা ভয় পাবে। মামলার সত্য-মিথ্যা পরে দেখতে হবে। একজন নারী ধর্ষণ বা নির্যাতনের অভিযোগ জানালে প্রথমে মামলা নিতে হবে। মামলা নিয়ে তদন্ত করতে হবে।

আমরা দেখেছি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন হওয়ার পর মধুপুরে অসংখ্য ভুয়া মামলা হয়। সম্মানিত ব্যক্তিদের এসব মামলায় নানাভাবে হয়রানি করা হতো। তাই ভুয়া মামলা করার জন্য শাস্তি না হলে এগুলো উৎসাহিত হবে। এ জায়গায় আমাদের সজাগ থাকতে হবে। পারিবারিক সম্মানের কথা চিন্তা করে অনেক নারী নির্যাতনের ঘটনা জানান না। আমার এক চাকরি করা সহপাঠী অনেক নির্যাতন ও অত্যাচারের শিকার হয়েছে। আমি তাকে আলাদা হতে পরামর্শ দিলে সে বলে, ‘আমার দুটো মেয়ে থেকে যাওয়ার কথা বলেছে। সবাই বলবে ওর মা-ই সংসার করতে পারেনি, ওরা সংসার করবে কীভাবে।’ এ ধরনের নানান বিষয় আছে, যেগুলো অস্বীকার করার উপায় নেই।

নারীদের এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। সবাইকে কীভাবে সুরক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়, তা ভাবতে হবে। সবাইকে নিয়েই সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আপিল বিভাগের বিচারপতির সমমর্যাদায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত বিভাগীয় পর্যায়েও সে রকম ব্যবস্থা (সেটআপ) নিতে পারিনি।

কোভিড পরিস্থিতি না থাকলে আমরা হয়তো অনেক এগিয়ে যেতাম। আমাদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে (এসডিজি) নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে অনেক লক্ষ্য আছে। এ ক্ষেত্রে কতটুকু সহায়তা দিচ্ছি, তা বড় বিষয়। আমরা মানবাধিকার বিষয়ে একটা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করতে চাই, যেখানে নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সব মানবাধিকার সম্পর্কে জানতে পারে। প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণদের সনদ দেওয়া হবে। শিশুর মধ্যে শুরু থেকে নৈতিকতা সৃষ্টি করতে পারলে অনেক ধরনের সহিংসতা থেকে নারীরা পরিত্রাণ পাবেন। আমাদের এ রকম একটা উদ্যোগ রয়েছে। আমরা মানবাধিকার সুরক্ষা ক্লাব গঠন করতে চাই।

আরমা দত্ত

আরমা দত্ত

আজকের আলোচনায় আমরা সবাই নারী, যাঁরা অনেক চড়াই-উতরাই পার করে এখানে এসেছেন। এখানে কেউ বলতে পারব না যে কখনো নারী নির্যাতনের শিকার হইনি। প্রতি জেলায় মানবাধিকার কমিশনের অঙ্গসংগঠন করা প্রয়োজন। আলোচনায় বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারী যেন এই আইনের আওতায় সুরক্ষা পান, সে জন্য সংশোধনের প্রস্তাব এসেছে। এর সঙ্গে বিধবাদের আনা খুবই প্রয়োজন।

সংশোধনের সময় বিষয়টি যেন আমাদের মাথায় থাকে। আমাদের জাতীয় সংসদের ৩০০ সাংসদের তাঁদের নিজের এলাকায় এনজিও, নাগরিক সমাজ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে এ বিষয়ে কার্যকর উদে্যাগ নেওয়া উচিত। এ বিষয় প্যারা লিগ্যাল সহায়তা একটা বড় জায়গা। উপজেলা মহিলাবিষয়ক পরিদপ্তর থেকে এটা করা দরকার। আইনগুলো হওয়ায় আমাদের একটা প্ল্যাটফর্ম আছে। এসব বিষয়ে অনেক প্রকল্প ছিল এবং আছে। এসবে অগ্রগতিও হয়েছে। তাহলে এটা বাড়ছে কী করে? আমাদের আর করণীয় কী? আমরা সাংসদেরা এ ক্ষেত্রে কী করতে পারি? প্রতিটা মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে। সব সাংসদ সরকারের প্রতিটি সংগঠন, এনজিও ও সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনকে নিয়ে একত্রে কাজ করলে অবশ্যই এর একটা বাস্তব প্রভাব আসবে। আমাদের সামাজিক অবস্থান সে রকম নেই। কারণ, অর্থনৈতিক অবস্থা একটা বড় ঘটনা। সহিংসতার শিকার নারীরা ঘর ছাড়লে খাদ্য, বাসস্থান ও সন্তানের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কী—এসব ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের নেওয়া কর্মসূচিগুলো খুব কার্যকর হবে। আমাদের সমন্বয়হীনতার সংস্কৃতি রয়েছে। এটাকে সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণ করা দরকার। এগুলোকে একটা তথ্যভান্ডারে নিয়ে আসা প্রয়োজন।

এসব ক্ষেত্রে গণমাধ্যম খুব শক্তিশালী জায়গা। গণমাধ্যমের কারণেই আমরা এসব ঘটনা জানতে পারছি। গণমাধ্যমের সঙ্গে আমরা কীভাবে কাজ করতে পারি? আজকাল অনেক কমিউনিটি রেডিও হয়েছে। এগুলো খুব কার্যকর। কেননা, গ্রামের পুরুষ-নারী সবাই তা শোনেন।

পুরুষ, নারী ও পরিবারের সব সদস্যকে এ আইন সম্পর্কে জানতে হবে। আগে আমাদের সমাজে কমিউনিটি সাপোর্ট ছিল। ছোট বা বড় যেকোনো ঘটনায় ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে মানুষ সহায়তা করত। নারীদের প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে হবে। আমরা সহমর্মিতার জায়গাটা হারিয়ে ফেলছি। আমার পাশের ফ্ল্যাটে মারামারি হয়। আমি যাওয়ায় জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনি কে ভাই? আপনার কী ঠেকা পড়েছে? আমরা আমরা মারামারি করছি।’ তার কিছুক্ষণ পর তারা দামি গাড়িতে বেরিয়ে গেল।

এটা মেনে নিতে হয়। এ জায়গাটা থাকবে। কিন্তু সেটা কমিয়ে আনতে হবে। তাঁদের যত রকম হতাশা হয়, সেটা তাঁর স্ত্রী অথবা সন্তানের ওপর পড়ে। এই মনস্তাত্ত্বিক জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।

আমাদের মাননীয় স্পিকার অত্যন্ত মানবিক। তিনি একজন আইনজীবী। আমার যদি সুযোগ হয়, তাঁর সঙ্গে পারিবারিক সহিংসতা ও এর ন্যায়বিচারের বিষয়টি নিয়ে কথা বলব। তিনি মন্ত্রী থাকাকালে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। আমরা হয়তো সেভাবে তাঁর কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে পারিনি। সংসদীয় ককাসগুলো কীভাবে এ ক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে পারে, সেটাও দেখা দরকার।

ফারাহ্ কবির

ফারাহ্ কবির

আমরা অনেক সময় পরামর্শ দিই যে আইন থাকলে এ সমস্যাগুলো সমাধান হবে। পারিবারিক সহিংসতা রোধে ১০ বছর আগে এ আইন এল। আইন আসার পরের অবস্থা দেখা দরকার। সচেতনতা তৈরির বিষয়টা জরুরি।

আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক কিছু পেয়েছি। আজকের আলোচনায় দুটো বিষয় এসেছে। একটা হলো সহিংসতা ঘটে যাওয়ার পরে কোথায়, কীভাবে ব্যবস্থা নিতে পারি; আবার এটা খুব পরিষ্কারভাবে এসেছে যে আইনের প্রয়োগের মধ্যে হয়তো কিছুটা দুর্বলতা আছে। কিংবা আইন সম্পর্কে জানার ঘাটতি আছে। এখানে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রায় হয়ে যাচ্ছে। সেখানে কতটা বিনিয়োগ আছে? দ্বিতীয়টা হলো সহিংসতা যেন না ঘটে, সে জন্য আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। সামাজিক, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জায়গায়ও কাজ করতে হবে। আমরা সেই বাংলাদেশের কথা বলছি, যেখানে জেলা পর্যায়ে আইনি শিক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

সাংসদদের এসব ক্ষেত্রে আরেকটু সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। যে উদ্দেশ্যে আইন তৈরি হয়েছে, সেটা সফল হচ্ছে কি না, তার প্রতি নজর রাখা দরকার। যেকোনো দেশে অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যাকে পিছিয়ে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

উন্নয়ন হলেও পিছিয়ে পড়া মানুষেরা আর্থিক, সামাজিক, মানসিক— নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।সেখানে আমাদের সবাইকে অনেক বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

সুপারিশ

  • নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ব্যাপক গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে

  • বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া নারী ও বিধবাদের পারিবারিক সুরক্ষা আইনের আওতায় নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি

  • পারিবারিক সহিংসতা সুরক্ষা ও প্রতিরোধ আইন সম্পর্কে ভুক্তভোগীদের জানাতে এবং আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য স্থানীয় পর্যায়ে প্যারা লিগ্যাল কর্মীর ব্যবস্থা করা দরকার

  • মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি

  • প্রতিটি থানায় নারীবান্ধব সহায়তা ডেস্ক থাকা প্রয়োজন

  • এ–সংক্রান্ত সরকারি ও বেসরকারি সব উদ্যোগের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে

  • নারীর প্রতি সহিংসতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের তথ্যগুলো একটা তথ্যভান্ডারে নিয়ে আসা দরকার

  • এমন একটা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা প্রয়োজন, যেখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মানবাধিকার সম্পর্কে জানতে পারে।

  • আইন কার্যকর করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সহায়তা (ফ্রন্টলাইন সাপোর্ট) ও প্রচার প্রচারণা দরকার।