ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল

ডিজিটাল ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় আন্তসংযোগের সুযোগ ও ভবিষ্যৎ

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) ও প্রথম আলোর উদ্যোগে ‘ডিজিটাল ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় আন্তসংযোগের সুযোগ ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ৮ নভেম্বর ২০২০। গোলটেবিল বৈঠকের নির্বাচিত অংশ এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।

গোলটেবিলে অংশগ্রহণকারী

আহসান এইচ মনসুর

নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই)

দেবদুলাল রায়

নির্বাহী পরিচালক, প্রোগ্রামিং, বাংলাদেশ ব্যাংক

তহুরুল হাসান

প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ডিজিটাল অর্থনৈতিক সেবা, এটুআই

তানিয়া হক

অধ্যাপক, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কামাল কাদীর

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বিকাশ

আবেদুর রহমান সিকদার

উপব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক লি.

তানভীর এ মিশুক

ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নগদ

খন্দকার সাখাওয়াত আলী

প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী, নলেজ অ্যালায়েন্স, ইমেরিটাস ফেলো, উন্নয়ন সমন্বয়

মালিহা কাদির

প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সহজ

সূচনা বক্তব্য

আব্দুল কাইয়ুম

সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

সঞ্চালনা

ফিরোজ চৌধুরী

সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম

আমরা ডিজিটাল যুগে চলে এসেছি। একটা সময় ছিল যখন আর্থিক সেবা পেতে লাইন ধরে অনেক সময় নষ্ট করতে হতো। তারপর তো আমরা দেখলাম, ব্যাংক টু ব্যাংক ডিজিটাল আন্তসংযোগ হলো। আগে একটি ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংকে জমা দিয়ে টাকা তুলতে সাত দিন লাগত। এখন সকালে জমা দিলে বিকেলে পেয়ে যাচ্ছি। এরপর ইএফটি (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) এল। সেখানে ঘরে বসে মোবাইল বা অ্যাপের মাধ্যমে এক ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে আরেক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করতে পারছি। এসব ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা বিরাট ভূমিকা আছে। এটিএম কার্ড আসার শুরুর দিকে যে ব্যাংকের কার্ড, সেই ব্যাংকের বুথেই ব্যবহার করা যেত, এখন সেখানেও আন্তসংযোগ হয়েছে। কেনাকাটার সময়ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখন আন্তসংযোগ আছে।

এখন মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসে কতটা আন্তসংযোগ ঘটানো যায়, সে বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এখনো একটি মোবাইল ব্যাংক হিসাব থেকে আরেকটি মোবাইল ব্যাংক হিসাবে টাকা ট্রান্সফার বা পেমেন্ট করার সুবিধা নেই। ফলে ডিজিটাল লেনদেনে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এটা করতে পারলে একটা বিরাট অগ্রগতি সাধিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। সেসব নিয়েই আজকের আলোচনা।

আহসান এইচ মনসুর

আহসান এইচ মনসুর

আন্তসংযোগের তিনটি অ্যাঙ্গেল আছে। সেটা হলো, তাকে কত সহজে, মূল্যের দিক থেকে কত সস্তায় এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে বা কোনো ব্যক্তি থেকে অন্য যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে লেনদেনের সুযোগ দিতে পারি। এটা হলো ভোক্তার দৃষ্টিকোণ থেকে। আরেকটি হলো ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ। এটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে দেখতে হবে যে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য কী ধরনের সুযোগ আছে। এটা বাদ দিয়ে কোনো সমাধান করা সম্ভব হবে না। তৃতীয়ত, সরকার বা নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিকোণ আছে। সেটা হলো অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি (ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন)।

বাংলাদেশের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংকিং খাতের বাইরে । এ ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যাংকিং খাতকে সহজে তাদের কাছে নেওয়াও সম্ভব হবে না। সে জন্য আমাদের এই তিন পক্ষের ইন্টারেস্ট সমানভাবে দেখতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে আমাদের আন্তসংযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে তিনটা ভাগ আছে। মাল্টিলেটারাল অ্যারেঞ্জমেন্টস। যেখানে তিন বা তার অধিকসংখ্যক কোম্পানি একসঙ্গে কাজ করে। বাইলেটারালে দুটো কোম্পানি একসঙ্গে কাজ করতে পারে। আরেকটা হচ্ছে থার্ড পার্টি সল্যুশন। যেখানে একটি ইনডিপেনডেন্ট পার্টি সেবা দেবে এবং সেখানে সবাই যুক্ত হয়ে সুবিধা উপভোগ করতে পারবে। আমাদের এখন তিনটা ফাংশনাল এলিমেন্টের দিকে নজর দিতে হবে। সেগুলো হচ্ছে গভর্ন্যান্স অব দ্য অ্যারেঞ্জমেন্ট, বিজনেস মডেল ও টেকনিক্যাল ইন্টিগ্রেশন। তিনটিই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ।

আজকের আলোচনায় আমরা কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকতে চাই। তার এক নম্বর হচ্ছে আন্তসংযোগের বর্তমান অবস্থা। প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারলে আমাদের জন্য ভালো। দেবদুলাল রায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থানটা তুলে ধরা এবং সেটা কোন দিকে যাচ্ছে, তার ওপর আলোকপাত করলে একটু আশ্বস্ত বোধ করব।

দেবদুলাল রায়

দেবদুলাল রায়

আন্তসংযোগ কী? দুটি সিস্টেম কিংবা দুই বা ততোধিক সিস্টেমের মধ্যে ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ করা এবং সেটা করার পর ব্যবহারের একটা কার্যকর স্ট্র্যাটেজি। আমি আন্তসংযোগ করব তখনই, যখন দুটি সিস্টেম থেকে ডেটা শেয়ার এবং ব্যবহার করতে পারব। এটা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে।

এখানে সেবাদাতা, ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি ও গভর্নমেন্টের কিছু ভূমিকা আছে। সেবাদাতারা কেন আন্তসংযোগে আসতে চায়? তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, এখানে তাদের লেনদেনের পরিমাণ ও ব্যবসায়িক সুযোগ বাড়বে। আর্থিক লেনদেন গতিশীল হবে। ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি ও গভর্নমেন্ট চায় যে ইকোনমিক্যাল স্কোপ চেঞ্জ হোক। সবাই কিন্তু আন্তসংযোগ নিয়ে আগ্রহী নয়। কেউ মনে করে, আরেকজনকে নিজের সিস্টেমে অ্যাকসেস করার সুযোগ দিলে সে তো কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই সার্ভিস পেয়ে যাবে। ভাবে না যে এটা প্রতিযোগিতাও তৈরি করবে ও সমন্বয় তৈরি করবে। দেশের ক্যাশ মুভমেন্ট নন-ক্যাশ মুভমেন্টে নিতে চাইলে সে ক্ষেত্রে আন্তসংযোগ খুব দরকার। এটা সবারই বিবেচনা করা দরকার। আন্তসংযোগে মিউচুয়াল বেনিফিটের কারণে এই ভ্যালুটা সবাই গুরুত্ব দেয়। ইকোনমিক প্রিন্সিপালে যে মিউচুয়াল বেনিফিটটা বিবেচনা করা দরকার, সেটা এর মধ্যে আছে। এটা কো-অপারেটিভ মডেল, কম্পিটিটিভ মডেল নয়।

আন্তসংযোগ পরিবেশ যত বড় করতে পারব, লেনদেনের পরিমাণ তত বাড়বে। চেক ক্লিয়ারেন্স ও ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতি, এটিএম, পজ মেশিন ট্রানজেকশন ও আন্তব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফার দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। আন্তসংযোগ হলে অর্থের প্রবাহ বাড়বে। যেটা অর্থনীতিতে পজিটিভ প্রভাব ফেলবে। চুক্তিগুলো কী ধরনের হয়ে থাকে? দুটি কোম্পানির মধ্যে (বাইলেটারাল), দুয়ের অধিক কোম্পানির মধ্যে (মাল্টিলেটারাল) ও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে চুক্তিগুলো হতে পারে। অনেকেই অনেকভাবে এটা করার চেষ্টা করছে। এটিএম সেবায় বহুপক্ষীয় চুক্তি ছিল। সেবায় যুক্ত থাকা সব ব্যাংক তা ব্যবহার করবে।

আমাদের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রথম থেকেই আন্তসংযোগ আছে। কেননা তাদের এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে টাকা লেনদেন করতে হয়। ব্যবসার শুরু থেকেই তারা এটা করে রেখেছে। কিছু দেশে আন্তসংযোগ করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সহায়তা করে থাকে। আবার কিছু দেশে তৃতীয় পক্ষ সহায়তা করছে। এটা নির্ভর করে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর। বাংলাদেশে চেক লিংক সিস্টেম, ইএফটি, এমফিএস, আরটিজি—সবকিছুতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহায়তা করছে। কিছু সেবায় মাশুল নিচ্ছে, আবার কিছু সেবায় নিচ্ছে না। দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর্থিক সহায়তা দিয়ে এখানে আন্তসংযোগ চালু রেখেছে।

এমপিএসবিতে আমরা এটিএম পজ ও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের আন্তসংযোগ করেছি। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে মাত্র ২৫টি ব্যাংক এবং এটিএম পজে ৫০–এর বেশি ব্যাংক আছে। ২৭ অক্টোবরে আন্তসংযোগ চালু করার সব রকম প্রস্তুতি আমাদের ছিল। বিশেষ নীতিমালার কারণে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করতে হয়েছে।

তহুরুল হাসান

তহুরুল হাসান

আজকের আলোচনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বড় একটা উদাহরণ সৃষ্টি করছি। এটা আমাদের দেশে প্রায় ১০ বছর হতে চলছে। এই ১০ বছরে মার্কেট তার নিজের মতো ডেভেলপ হয়েছে। এই উন্নয়ন কয়েকটি ধাপে হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আমাদের লক্ষ্য ছিল ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (পিটুপি) লেনদেনে। পরবর্তী সময়ে সেখানে পিটুবি ও গভর্নমেন্ট টু পারসন (জিটুপি) পেমেন্টে মানুষকে উৎসাহিত করেছি। এখন অ্যাডভান্স কিছু ফাইন্যান্সিয়াল প্রডাক্ট এসেছে। যেমন সেভিংস, ক্রেডিট বা এই ধরনের আরও কিছু প্রডাক্ট। এখন এই মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের বড় একটা কাস্টমার গ্রুপকে অ্যাডভান্স ইউজার হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এই ১০ বছরে বিভিন্ন ধাপে মার্কেট গ্রো করেছে।

এখানে সেবাদাতা যারা আছে, বিশেষ করে শুরু থেকে বিকাশ ও রকেট এবং পরবর্তী সময়ে নগদ—তারা তাদের মতো করে বাজার কৌশল উন্নয়ন করেছে। তাদের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করার জন্য তাদের মতো করে একটা টেকনোলজি, আন্তসংযোগ—সবকিছুই ইতিমধ্যে করে ফেলেছে, যেটা আলোচনায় এসেছে। এই অবস্থায় দেখতে হবে যে আন্তসংযোগের ক্ষেত্রে আমাদের আসলে দরকারটা কী? আন্তসংযোগটা আমি দুভাবে দেখতে চাই। একটি হলো কেন্দ্রীয় অবকাঠামোর মাধ্যমে। যেটা সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে। আরেকটা হচ্ছে মার্কেট লেড। যেটা বাইলেটারাল, মাল্টিলেটারাল বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। আমাদের দেশে ইতিমধ্যে বিকাশ, রকেট মার্কেট লেড বাইলেটারাল, মাল্টিলেটারাল আন্তসংযোগ তার গ্রাহককে দেওয়া শুরু করেছে। এই অবস্থায় নতুন আন্তসংযোগে যদি সেন্ট্রাল প্ল্যাটফর্মের মধ্য দিয়ে যেতে চাই, তাহলে এটার ভ্যালু এডিশনটা কোথায়?

এই ইকোসিস্টেমে অতিরিক্ত কী সুবিধা দেবে? আমরা এমএফএস টু এফএফএস অর্থাৎ বিকাশ থেকে রকেট, রকেট থেকে বিকাশে লেনদেন করতে পারি না। এটা একটা বড় সমস্যা। ব্যাংক টু এমএফএস বা এফএফএস টু ব্যাংক এবং কার্ড টু ব্যাংক বা ব্যাংক টু এমএফএস, এটা বিভিন্ন পরিসরে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতারা দিচ্ছে। যেটা আমাদের নেই, বিকাশ থেকে রকেট বা রকেট থেকে নগদে লেনদেন, মার্চেন্ট পেমেন্ট অর্থাৎ বিকাশের মার্চেন্টে রকেট দিয়ে পেমেন্ট করা—এই দুটো আমাদের এখনো নেই। যেহেতু মার্কেট তার নিজের মতো করে গ্রো করেছে। যাঁরা কাস্টমার, তাঁরা তাঁদের চাহিদাটা নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।

তানিয়া হক

তানিয়া হক

অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি (ইনক্লুসিভ ইকোনমি) ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি (ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিজিটাল ব্যাংকিং পদ্ধতির ক্ষেত্রে এমএফএস (মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস) বাংলাদেশে একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণায় দেখা যায়, আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং খাতে নারীদের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক। গ্লোবাল ফিনডেক্স ২০১৭–এর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে ৬৫ শতাংশ নারীর এবং ৭২ শতাংশ পুরুষের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতে পুরুষ ও নারী অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের সংখ্যা বা ব্যবহারের পরিমাণ (ফ্রিকোয়েন্সি অব ইউজিং) বিচারেও নারী ও পুরুষের একটা অসম অবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতের সঙ্গে নারীদের বড় অংশই যুক্ত নেই। এর প্রধান কারণ কী, সেটা বিবেচনার বিষয়। আমরা এমন একটি সমাজব্যবস্থায় বসবাস করছি, যেখানে অন্যান্য বিষয়ের মতো সামাজিক–সাংস্কৃতিক নিয়মের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয় যে নারী ব্যাংকিং খাত থেকে কী ধরনের সেবা নেবেন এবং তাঁর সঙ্গে এ সেবার কী রকম সম্পর্ক হবে।

এর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, অর্থনৈতিক জ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষায় নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছেন। এ ছাড়া অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন, নেটওয়ার্কিং ও অ্যাকসেস টু নলেজের ক্ষেত্রেও নারীরা দুর্বল অবস্থায় রয়েছেন। শহর ও গ্রামের নারী-পুরুষের এবং নারী ও নারীর মধ্যে একটা অসম অবস্থা বিরাজ করছে। প্রান্তিক নারীরা এখনো প্রথাগত ব্যাংকিং পদ্ধতিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং পদ্ধতিতে তাঁদের মধ্যে একধরনের ভীতি কাজ করে। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাব খুলতে হলে বিভিন্ন কাগজপত্র জমা দিতে হয়। যেটাতে নারীরা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাই বলা চলে, মোবাইল ব্যাংকিং নারীর জন্য একটি নতুন সম্ভাবনা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

গবেষণায় এসেছে যে জেন্ডার স্টেরিওটাইপ মাইন্ডসেটের কারণে পরিবার থেকে বিশেষ করে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং খাতে যুক্ত হতে অনুৎসাহিত করেন। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় একটা পরিবর্তন আনা দরকার। ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেসিকে শিক্ষাব্যবস্থায় যুক্ত করা প্রয়োজন। তা ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে জরিপ করে নারী ও পুরুষের চাহিদা নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে শুধু একটি স্মার্টফোন থাকলে, তা সাধারণত পরিবারের পুরুষ সদস্যের কাছে থাকে। ফলে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়।

মালিহা কাদির

মালিহা কাদির

ডিজিটাল পেমেন্ট যত বাড়বে, তত আমাদের ব্যবসায় সুবিধা হবে। সেখানে অনেক সময় মানুষের ওয়ালেটে টাকা থাকে না। পেমেন্ট ফেল হয়। আর্থিক সেবায় আন্তসংযোগ চালু হলে ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে সেবা নেওয়ার পরিমাণ বাড়বে। এক ওয়ালেট থেকে আরেক ওয়ালেটে যত লেনদেন করতে পারব, প্রতিযোগিতাও তত বাড়বে। প্রতিযোগিতা যেকোনো জায়গায় সেবার মান বাড়ায়। সে ক্ষেত্রে একই রকম প্রযুক্তি থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অনেক নতুন ওয়ালেট সেবা আসছে। সবার প্রযুক্তি তো আর কখনোই একই রকম হয় না। গ্রাহক যেন সহজে ব্যাংক থেকে ওয়ালেটে বা অন্য যেকোনো জায়গায় আন্তসংযোগ করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক সফটওয়্যার ব্যবহারের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। ডিসপুট রেজল্যুশনে গ্রাহকেরা যেন একই রকম সেবা পান। অনেক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এ সেবা তৈরি করার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। সেখানে আন্তসংযোগের ফি যেন দেখা হয়। যেন কোনো বড় সেবাদাতার ক্ষতি না হয়। সব মিলিয়ে ডিজিটাল পেমেন্টের পরিমাণ বাড়ানো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি একই সঙ্গে সেবার মানও নিশ্চিত করতে হবে।

তানভীর এ মিশুক

তানভীর এ মিশুক

আন্তসংযোগ মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এনে দেবে। আমি আমার পছন্দমতো জায়গা থেকে লেনদেন করতে পারব। যেটা আমাদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি অনেক বাড়িয়ে দেবে। যে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আমরা এত বছর লড়ছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি আনার জন্য ৬০টির মতো ব্যাংক, ১৭টির মতো এফএফএস কাজ করছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা এখনো ৫০ শতাংশ কাভার করতে পারিনি। এখনো ৫০ শতাংশের বেশি অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি। এই বাধাগুলো আমরা যত কমাতে পারব, মানুষ তত উদ্বুদ্ধ হবেন, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি তত বাড়বে। কোভিডকালে এ সেবার ব্যবহার অনেক বেড়েছে। আন্তসংযোগ হলে এ পরিমাণ আরও বহুগুণে বেড়ে যাবে। আন্তসংযোগকে অবশ্যই আমরা স্বাগত জানাই এবং এটাকে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা উচিত।

এর কিছু চ্যালেঞ্জ আমি দেখেছি। প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো, ৬০টির মতো ব্যাংক ও ৩ থেকে ৪টির মতো অ্যাকটিভ এমএফএস আছে। এই ৬০ থেকে ৬৫টি প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি ৬০ থেকে ৬৫ রকম। তাদের ভেন্ডরও আলাদা। এই প্রযুক্তির মানেরও পার্থক্য রয়েছে। সে জন্য অনেক ব্যাংক ও এমএফএসের প্রযুক্তি হালনাগাদ করতে হবে। কারণ, গ্রাহকের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহক যেন কোনো ঝামেলায় না পড়েন। সে জন্য এটা নিশ্চিত করতে হবে যে সবার প্রযুক্তি হালনাগাদ হয়ে একই স্ট্যান্ডার্ডে যুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কোনো কিছু করতে গিয়ে অর্ধেক করলে সেটা সফল হবে না। কারণ, এটা শুধু দেখানোর জন্য করলে দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি হবে না।

আপনার ব্র্যাক ব্যাংকে টাকা আছে। এখন ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম কার্ড দিয়ে যদি ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে না পারেন, তাহলে সেটা প্রকৃত আন্তসংযোগ হবে না। সে জন্য নিশ্চিত করতে হবে যে আন্তসংযোগ মানে প্রকৃত আন্তসংযোগ এবং সেটা মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পুরোপুরি এনে দেয়। আমাদের কাছে গ্রাহকের যে পরিচিতি তথ্য (কেওয়াইসি) আছে, তা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। মুহূর্তের মধ্যে এটা যাচাই করে লেনদেন করা সম্ভব।

আবেদুর রহমান সিকদার

আবেদুর রহমান সিকদার

ডিজিটাল মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় আন্তসংযোগ—রকেটের দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা এটাকে সাধুবাদ জানাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা রেগুলেটরের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি সময়োপযোগী একটি বিষয়। এ ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান আন্তসংযোগে সম্পৃক্ত হবে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি থাকার বিষয় রয়েছে। কারণ, একেক প্রতিষ্ঠান একেক রকম সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩১ মার্চের মধ্যে সবাইকে এই সেবার আওতায় আসার নির্দেশনা দিয়েছে। সে জন্য আমাদের সিস্টেম হালনাগাদের কাজ চলছে। নির্দিষ্ট তারিখে যদি সবাইকে শুরু করতে হয়, আমরা এই সেবায় নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারব। আহসান এইচ মনসুর তিনটি বিষয়ের কথা বলেছেন। সেগুলো হলো গভর্ন্যান্স, বিজনেস কেস ও টেকনিক্যাল ইস্যুজ। কিন্তু এগুলো গ্রাহক বুঝতে পারবেন না। এসব অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাইরের দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি থাকা, সচেতনতা ও সহজে ব্যবহারযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহক সহজ পথ চান। এ সেবার জন্য মাশুল কত কাটা হচ্ছে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আন্তসংযোগ ছিল ভিন্ন পদ্ধতিতে। টাকা লেনদেন করার ব্যবস্থা কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে ছিল। সেটি ছিল ম্যানুয়াল পদ্ধতি। এরপরে ডিজিটাল লেনদেনের দিকে আমরা নজর দিলাম। আমাদের দেশে ডিজিটাল লেনদেনের একটা অফুরন্ত সম্ভাবনা আছে এবং এর ফলে ব্যাপক উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার মাশুল অনেক বেশি।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এ সেবায় অর্থ উত্তোলনের মাশুল অনেক বেশি। এক হাজার টাকা উত্তোলন করতে খরচ হয় ১৮.৫০ পয়সা। যেটা প্রান্তিক মানুষের জন্য চাপ হয়ে যায়। সব এমএফএসের মাধ্যমে এটা সহনীয় পর্যায়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কম খরচে যদি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে এ সেবা দেওয়া যায়, তবে এ সেবার মান আরও বাড়বে। আমরা সবাই যদি একে অন্যের মাধ্যমে এই লেনদেনগুলো করতে পারি, সেটা সেবাগ্রহীতা ও দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

কামাল কাদীর

কামাল কাদীর

বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তসংযোগ পদ্ধতি চালু করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলো; ২৭ অক্টোবর থেকে যেটা শুরু হওয়ার কথা ছিল। আমরা (বিকাশ) ওই দিন চালু করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। এই প্রস্তুত থাকা থেকেই আন্তসংযোগের প্রতি আমাদের আগ্রহ প্রমাণিত হয়। এ সেবায় লেনদেনের সমন্বয়টা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ব্যাংকের টাকা কার কাছে যাবে, কীভাবে যাবে, তা নিষ্পত্তির ভূমিকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সব মিলিয়ে আন্তসংযোগের বিষয়ে আমরা উচ্ছ্বসিত। এর ফলে এখন যে নমনীয়তা তৈরি হয়েছে, তার ওপর আরেক স্তরের নমনীয়তা তৈরি হবে। বর্তমানে ২১টি ব্যাংকের সঙ্গে বিকাশের সংযোগ আছে। ধরুন, কালিহাতী গ্রামের একজন ব্যক্তি একটি ব্যাংকিং সেভিংস প্রডাক্টের সুবিধা পেতে চাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে তিনি কোনো ব্রাঞ্চে না গিয়েই ব্যাংকের সেভিংস স্কিমের সুবিধা নিতে পারবেন।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা (এমএফএস) অবশ্যই জেন্ডারের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। বিকাশের নিবন্ধিত গ্রাহকের ৩৮ শতাংশ হলেন নারী। এটা আশার কথা। ক্যাশ আউটের বাইরে ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ ৭১ শতাংশ, যেটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। ডিজিটালি যখন কেউ পেমেন্ট বা লেনদেন করছেন, তখন প্রায় কোনো খরচ দিতে হচ্ছে না। ডিজিটাল লেনদেনের পরিমাণ যত বাড়বে, খরচের বিষয়টি তত গৌণ হবে। তবে এ সেবার মাধ্যমে যেন অর্থ পাচার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

খন্দকার সাখাওয়াত আলী

খন্দকার সাখাওয়াত আলী

দুটি বিষয়ের ওপর আমার জোর থাকবে। একটি গভর্ন্যান্স এবং অন্যটি গ্রাহক স্বার্থের জায়গা থেকে। আলোচনায় এসেছে ‘ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ’ ইতিমধ্যেই ব্যাংকিং খাতের আন্তসংযোগের জন্য ২০১২ সাল থেকে সফলতার সঙ্গে একটি ন্যাশনাল প্ল্যাটফর্ম গেটওয়ে হিসেবে পরিচালনা করে আসছে। ২০১৮ সালে আইসিটি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। সেখানে আইডিটিপি (ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম) হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই দুই প্ল্যাটফর্মের গুণগত পার্থক্য কোথায়। কী ভ্যালু অ্যাডিশন তারা করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে আমি দুটি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করতে চাই। প্রথমত, মালিকানার ধরনটি কেমন হবে এবং এটি কীভাবে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ সমন্বয় সাধন ঘটবে কীভাবে। কোনো বিরোধ হলে নিষ্পত্তি কীভাবে হবে। দ্বিতীয়ত, দেবদুলাল রায় ও আহসান এইচ মনসুর আন্তসংযোগের ক্ষেত্রে তিনটি মডেলের কথা বলেছেন। এ ক্ষেত্রে যদি প্রস্তাবিত আইডিটিপি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে থাকে, তাহলে গ্রাহক স্বার্থ কীভাবে রক্ষা হবে, এটাও দেখতে হবে। সেই জায়গায় গ্রাহকের পক্ষ নিয়ে আমি আওয়াজ তুলতে চাই। গ্রাহকের পরিচয়ের সুরক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অপারেটর ও আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিগত এক দশকে আমাদের ট্যাক্স বেসিন বা পরিধি বাড়ছে। ট্যাক্স দেওয়ার সংস্কৃতি ধাপে ধাপে শক্তিশালী হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও হবে। আমাদের ট্যাক্সবিষয়ক তথ্যগুলো আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে পারে। ট্যাক্সের তথ্য নাগরিকের ব্যক্তি তথ্য, তার নিরাপত্তার কীভাবে রক্ষা হবে। বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভেতর থেকে ব্যক্তি খাতের কোনো প্রতিষ্ঠান যেন আর্থিক আন্তসংযোগের এই সেবা পরিচালনা করতে না পারে। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক নাগরিক স্বার্থ এবং আর্থিক সুরক্ষার জন্য তাদের মূল অ্যাজেন্ডা রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট। নিয়ন্ত্রক হিসেবে আর্থিক সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে গ্রামের একজন সাধারণ নারী থেকে শুরু করে কোনো কোম্পানির সিও পর্যন্ত কিংবা শিল্পপতি নাগরিক হিসেবে এদের সবার অধিকার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সমান। এ জায়গায় আমরা সবাই যেন আর্থিক আন্তসংযোগের সুযোগ ব্যবহার করতে পারি। এমএফএস খাতের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মূল উদ্দেশ্য যেন স্মরণ রাখি।

দেবদুলাল রায়

সেবার মাশুল পুনর্বিবেচনা করার কথা এসেছে। আমরা বিভিন্নভাবে বিবেচনা করে দেখেছি, এই মাশুলের হার মোটামুটি ঠিক আছে। তবে যদি সবার পক্ষ থেকে দাবি থাকে, তাহলে সবাইকে নিয়ে আবারও বসে মাশুল নিয়ে আলোচনা করতে পারি। আমরা চাই, গ্রাহক যেন সুবিধা পান এবং এর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোও যেন টিকে থাকে। দেশের সাধারণ মানুষের আর্থিক সুরক্ষা যতটা সম্ভব দেওয়ার চেষ্টা করছি। সব কটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আইডিটিপি বাস্তবায়নের চেষ্টা করব। যেন কোনো অবস্থাতেই সেবাগ্রহীতার তথ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় এবং আর্থিক ক্ষতি না হয়।

আহসান এইচ মনসুর

এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ঐকমত্য তৈরি করা। সবাই কিন্তু আন্তসংযোগকে সমর্থন করেছেন। কেউ এখানে আপত্তি করেননি। সবাই এ সেবার বিপুল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথাও স্বীকার করেছেন। এটাকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নীতিমালার পার্থক্য একটা চ্যালেঞ্জ। এখন বাংলাদেশ ব্যাংককেই উদ্যোগ নিয়ে নীতিমালার পার্থক্য দূর করতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে। এটা স্থবির যেন না হয়ে পড়ে। আন্তসংযোগে সবাই প্রথম দিনই যুক্ত হবে, এটা ভাবা অমূলক। কোনো দেশেই তা হয় না। কিন্তু আগামী দিনে যেন যুক্ত হতে পারে, সেই সুযোগ রাখতে হবে।

ফিরোজ চৌধুরী

আজকের ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে যুগোপযোগী ও চমৎকার আলোচনা হয়েছে। আশা করি, সবার সহযোগিতায় ডিজিটাল ব্যাংকিং আরও এগিয়ে যাবে এবং সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হয়ে উঠবে। আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য সবাইকে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

আলোচনায় সুপারিশ

  • ভোক্তার পাশাপাশি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধার কথাও ভাবতে হবে।

  • দেশের ক্যাশ মুভমেন্ট নন-ক্যাশ মুভমেন্টে নিতে চাইলে সে ক্ষেত্রে আন্তসংযোগ খুব দরকার।

  • ডিজিটাল পেমেন্টের পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি সেবার মানও নিশ্চিত করতে হবে।

  • গ্রাহক যেন সহজে ব্যাংক থেকে ওয়ালেটে বা অন্য যেকোনো জায়গায় আন্তসংযোগ করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

  • দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবার মাশুল অনেক বেশি, এটি সহনীয় পর্যায়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

  • ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে যেন অর্থ পাচার না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

  • গ্রাহকের পরিচয়ের সুরক্ষার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে নিশ্চিত করতে হবে।

  • সেবার মান বাড়াতে হবে এবং কম খরচে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

  • বাংলাদেশ ব্যাংককেই উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে।