সুষম খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামসহ চিকিৎসকের পরামর্শে গলা–বুক জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ সম্ভব।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, বিশ্বে প্রতি ১০০ জনের ১৫ জন বুক-গলা জ্বালাপোড়া রোগে ভোগেন। আর বাংলাদেশে সংখ্যাটি প্রতি ১০০ জনে ৬ থেকে ২৫। সুষম খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়ামসহ চিকিৎসকের পরামর্শে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এই রোগ হলেও ভয়ের কিছু নেই। এটি প্রতিকারে দেশে উন্নত মানের ওষুধও আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ‘গলা ও বুক জ্বালাপোড়া (জার্ড) প্রতিরোধ ও প্রতিকার: দরকার সচেতনতা’ শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল আলোচনায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এ অভিমত দেন। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এই বৈঠকের আয়োজন করে। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও প্রথম আলো।
বৈঠকে বাংলাদেশ গ্যাস্ট্রোলজি সোসাইটির সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, গলা-বুক জ্বালাপোড়া রোগ দিন দিন বাড়ছে। মানুষের জীবনধারায় খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। চিনি-মিষ্টিজাতীয় খাবার কমিয়ে নিয়মিত ব্যায়াম জরুরি। দেশে গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট আছেন ২০০ এর মতো। অথচ ২ হাজার গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট দরকার।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি এ কে আজাদ খান বলেন, বুক জ্বালাপোড়া একটি সাধারণ সমস্যা। এটির পরিণতি ও চিকিৎসা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসচেতনতা আছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, গলা-বুক জ্বালাপোড়া রোগ দীর্ঘদিন থাকলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের প্রধান তৌহিদুল করিম মজুমদার বলেন, এই রোগের উপসর্গ হিসেবে কখনো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, মুখভরে পানি আসে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, কখনো কাশি ও অ্যাজমা হতে পারে। চিকিৎসা না হলে খাদ্যনালিতে ক্যানসারও হতে পারে। উপসর্গ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, অনেকেই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করেন। দীর্ঘ মেয়াদের জটিলতায় ওষুধে কাজ হয় না, পরীক্ষা প্রয়োজন। এন্ডোসকপি, গ্যাস্ট্রোসকপি করা যেতে পারে।
প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ৩০ বছর ধরে তাঁর বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা আছে। বুকে জ্বালাপোড়া সমস্যা কাটিয়ে উঠতে জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বলেন, বিশ্বে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৫ জন বুক জ্বালাপোড়া রোগে ভোগে। বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনে ৬ থেকে ২৫ জনের মধ্যে এই রোগ রয়েছে। গবেষণায় এসেছে, বুক জ্বালাপোড়া নিয়ে প্রতি দুজনের একজন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ নিয়মিত খান।
শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মীর জাকির হোসেন বলেন, ওজন বাড়া, ধূমপান, অ্যালকোহল, চা, কফি, তৈলাক্ত খাবার, মসলাযুক্ত খাবার এই রোগের ঝুঁকির অন্যতম কারণ। চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে অল্প করে বারবার খেতে হবে। রাতে খেতে হবে শোবার ২ থেকে ৩ ঘণ্টা আগে।
এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, বুক জ্বালাপোড়া রোধে সবচেয়ে আধুনিক ওষুধ হচ্ছে মাল্টিপল ইউনিট প্যালেট সিস্টেম (মাপস)। অসংখ্য মাইক্রোপ্যালেটস দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই ওষুধে ড্রাগ লস কম হয়, তেমনি দ্রুত অন্ত্রে পৌঁছায়। অধিক গবেষণার পর জার্মানির প্রযুক্তিতে ইভোনিক ও এসকেএফ যৌথভাবে বুক জ্বালাপোড়া রোধে ইসোরাল মাপস ওষুধ বাজারে এনেছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে এটি ব্যবহৃত হতে পারে।
অনুষ্ঠান পরিচালনাকালে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার শারমিন তাহমিনা খান বলেন, ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিবছর ১৭ থেকে ২৩ নভেম্বর গলা ও বুক জ্বালাপোড়া সপ্তাহ পালন করা হয়ে থাকে। গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।