২১ অক্টোবর এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ‘কমিউনিটি বেইজড মেন্টাল হেলথ সার্ভিসেস: শিশু ও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্প’, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট এবং প্রথম আলোর আয়োজনে ‘কোভিড-উত্তর বাংলাদেশে শিশু ও তরুণদের কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশন, ডিজঅ্যাবলড চাইল্ড ফাউন্ডেশন ও কমিক রিলিফ। বৈঠকের আলোচনা সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশিত হলো।
মো. সাইদুর রহমান
অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন), স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
অধ্যাপক রোবেদ আমিন
লাইন ডিরেক্টর, এনসিডিসি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
শফিকুল ইসলাম
কান্ট্রি ডিরেক্টর, এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
কামাল ইউ এ চৌধুরী
অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডা. মেখলা সরকার
সহযোগী অধ্যাপক
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
ড. মোর্শেদা চৌধুরী
পরিচালক, হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্রোগ্রাম, ব্র্যাক
হাসিনা মমতাজ
ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার (মানসিক স্বাস্থ্য), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
মনিরা রহমান
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক
ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশন
নাসরিন জাহান
প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক
ডিজ্যাবলড চাইল্ড ফাউন্ডেশন
অধ্যাপক জোবেদা খাতুন
চেয়ারম্যান, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
রফিক মৃধা
সভাপতি, মুক্তি প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থা
শিরিন আকতার
সদস্য, ডিজঅ্যাবলড চাইল্ড ফাউন্ডেশন
কোহিনুর বেগম
ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন, বাগেরহাট
নাসরিন আক্তার
মোল্লাপাড়া, যশোর
সূচনা বক্তব্য
আব্দুল কাইয়ুম
সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
সঞ্চালনা
ফিরোজ চৌধুরী
সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো
আব্দুল কাইয়ুম
বিশ্বব্যাপী প্রাত্যহিক জীবনে অনিশ্চয়তা ও চাপ বাড়ছে। যার ফলে অনেকেরই মানসিক স্বাস্থ্যহানি হচ্ছে। আবার অনেকেই মানসিক চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন না বা পাচ্ছেন না। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নে আমাদের কী করা দরকার? কোভিড–উত্তরকালে কোভিডে আক্রান্ত অনেকেই লং কোভিডে ভোগেন বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। ফলে একটা অনিশ্চিত জীবনযাত্রা, আয় কমে যাওয়া, চাকরি হারানো ইত্যাদি কারণে মানসিক দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।
এ বছরের মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য’।
দেশে ইতিমধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য নীতিমালা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি সামনে রেখে একটি জাতীয় কৌশলপত্রও হয়েছে। এসব জায়গায় অসমতার বিষয়টি কোনো না কোনোভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা গ্রাম, শহর—সব জায়গায়ই আছে। উন্নত দেশগুলোতে সবার জন্য যথেষ্ট মানসিক স্বাস্থ্যসেবা রয়েছে, সেটার নিশ্চয়তাও দেওয়া যাচ্ছে না। এ–সংক্রান্ত অনেক তথ্য–উপাত্তও রয়েছে।
এডিডি ইন্টারন্যাশনাল অনেক বছর ধরে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। বর্তমান প্রকল্পের আগেও আমরা একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। সেখানে আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের প্রকৃত তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। আমাদের বর্তমান প্রকল্পে শিশু ও যুবশ্রেণির মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি শুরুর সময়ে সারা বিশ্বে কোভিড মহামারি শুরু হয়। সে সময় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা শিশু ও যুবশ্রেণির মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমরা কিছু পর্যবেক্ষণ করি।
মহামারির নতুন পরিস্থিতিতে তাদের ওপর একধরনের নতুন চাপ পড়েছে। আমাদের চেষ্টা ছিল তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। তাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য পৌঁছানো ও সহযোগিতার জন্য এ প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার চেষ্টাও ছিল। মানসিক স্বাস্থ্য নীতিমালা ও কৌশলপত্রের আলোকে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অভিগম্যতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সেবাপ্রদানকারীর সংখ্যা বাড়ানো এবং সেবাগ্রহীতাদের এসব তথ্য জানানো প্রয়োজন।
আমাদের সেবাকেন্দ্র থেকে ইতিমধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ সেবা নিয়েছেন। করোনাকালে আমাদের অনলাইন সেবা চালু ছিল। এবার মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য’, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ‘মেন্টাল হেলথ ফর অল, লেটস মেক ইট রিয়েলিটি’র প্রচারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
আঁচল ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর একটি জরিপ করেছে। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভালো নেই বলে জানিয়েছেন। তাঁরা বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তার কথা বেশি বলেছেন। এখানে পুরুষ শিক্ষার্থী ৮০ শতাংশ ও নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৮৮ শতাংশ। ১৮ থেকে ৩৫ বছরের ২ হাজার ২৬ জনের ওপর আরেকটি গবেষণা করা হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের ৬১ দশমিক ২ শতাংশ বিষণ্নতায় ভুগছেন। জীবন, শিক্ষা, সামাজিক ও অন্যান্য দায়িত্বের প্রতি তাঁদের অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে।
আঁচল ফাউন্ডেশনের আরেকটি জরিপে এসেছে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৩৬ জন আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই তরুণ। এ ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা পুরুষের তুলনায় বেশি। আগে দেশে বছরে আত্মহত্যার পরিমাণ ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার, কিন্তু করোনাকালে এ সংখ্যা ৪৪ শতাংশ বেড়েছে। কোভিড প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আত্মহত্যা প্রতিরোধে আমরা সে রকম উদ্যোগ দেখতে পাই না।
আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়তে থাকা একটি নীরব মহামারি, যা দেশে সার্বিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্যহীনতার লক্ষণ। আমাদের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর প্রায় ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন৷ শিশুদের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় ১৪ শতাংশ। সব মিলিয়ে প্রায় তিন কোটি মানুষ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এদের বেশির ভাগই কোনো চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না।
আমরা যশোর, বাগেরহাট ও ঢাকার কিছু এলাকায় একটি বেজলাইন সার্ভে করেছিলাম। সেখানে অনেক মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত জীবনে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ আর্থিকভাবে পিছিয়ে গেছেন, ব্যবসায় ক্ষতি বা বন্ধ হয়ে গেছে।
আগের তুলনায় বৈবাহিক সম্পর্কের জটিলতা অনেক বেড়েছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর একটা গবেষণা হয়েছে। এ গবেষণায় তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি এসেছে। দেশে প্রতি দুই লাখ মানুষের জন্য মাত্র একজন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী রয়েছেন৷ এ বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে এ সংখ্যা যথেষ্ট নয়। এ জন্য সরকারি, বেসরকারি ও অন্যান্য সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে।
স্থানীয় পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কর্মী তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্য খাতে স্বাস্থ্য বাজেটের ১ শতাংশের কম বরাদ্দ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।
এবার মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অসম বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য’। দীর্ঘদিন ধরেই পৃথিবীতে অসমতা আছে। তবে এবার কোভিড-১৯ এসব অসমতার বিষয় প্রকটভাবে দেখিয়ে দিয়েছে। এই অতিমারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে শিশু-কিশোরেরা। কারণ, তারা একটা বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
মানসিক স্বাস্থ্যে অসমতাগুলোর প্রভাব সরাসরি পড়ে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞানের ক্ষেত্রে বিরাট ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি সব শ্রেণি–পেশার মানুষের মধ্যেই আছে। জরিপে এসেছে, দেশে ১৭ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছে। তাদের মধ্যে ১ থেকে ২ শতাংশ জটিল বা মারাত্মক মানসিক রোগে আক্রান্ত। বাকি বড় অংশই নানা রকম বিষণ্নতা ও মানসিক উদ্বেগজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে, যা আমাদের সম্ভাবনার পথগুলো রুদ্ধ করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে এসেছে, প্রায় ১৮ শতাংশ শিশু-কিশোর মানসিক রোগে আক্রান্ত। বয়স্কদের মতো বেশির ভাগ শিশু-কিশোরই উদ্বেগ ও বিষণ্নতাজনিত মানসিক রোগে আক্রান্ত। কোভিডের কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের মানিয়ে নিতে হচ্ছে। মানিয়ে নেওয়ার এ মানসিক সক্ষমতা শিশুদের তখনো তৈরি হয় না। মেয়েশিশুরা ছেলেশিশুর মতো বাইরে খেলাধুলার সুযোগ পায় না। ফলে মেয়েশিশুদের জীবন ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে না।
কোভিড–পরবর্তী সময়ে শিশু-কিশোরদের ইন্টারনেট আসক্তি অনেক বেড়েছে। এ জায়গায় অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইউনিটে শিশু ও কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য একটি বিভাগ রয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য শুধু মানসিক রোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটা সার্বিক স্বাস্থ্যের সঙ্গেই সম্পর্কিত। তরুণ ও কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকলে দেশে অনেক রকমের অপরাধ কমে যাবে।
আমি একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হিসেবে আমরা পরিবার ও সমাজের কাছে অবহেলিত। ফলে আমরা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাই। আমি খুবই মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম। প্রতিবন্ধিতার কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম।
আমার বাঁচতে ইচ্ছে হতো না। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আমরা জানতাম না। ডিজঅ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন আমাদের এলাকায় সচেতনতামূলক কর্মসূচি করেছে। এ রকম বিভিন্ন কর্মসূচিতে যাওয়ার কারণে মনে সাহস এসেছে। মনের মধ্য থেকে হতাশা দূর হয়েছে। এখন আমি জীবনে অনেক এগিয়ে যেতে চাই।
পারিবারিক অশান্তি, পড়াশোনার চাপ, স্কুলে শাস্তির ভয় ইত্যাদি শিশুদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে। পরিবারের প্রতিবন্ধী শিশুরা নানা রকম বৈষম্যের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আমি একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ছোটবেলায় নবম শ্রেণিতে পড়ার একপর্যায়ে মনে হয়েছে, আমার মা আমাকে বেশি আদর করে না। আমার বোনকে মার্কেটে নিয়ে যেত। আমাকে বলা হতো, তোমার শিক্ষক আসবেন, তুমি পড়ো। এটা আমার অনেক খারাপ লাগত।
অভিভাবক ও শিক্ষকেরা এটা বুঝতে চান না। শিশুদের অনেক নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। অভিভাবকদের উচিত শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা। স্কুলে প্রতিবন্ধী শিশুদের সমানভাবে মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। এ সচেতনতাবোধ পরিবার, সমাজসহ সব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে।
আমাদের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যকাঠামোটি এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। স্কুলপর্যায়ে একজন শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী থাকা খুবই প্রয়োজন। তাই প্রতিটি স্কুলে একজন শিক্ষা মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ করতে হবে। তাহলে শিশুরা মানসিকভাবে ভালো থাকবে। শিশুরাই আগামী দিনের নাগরিক। আগামী দিনের নাগরিকদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে মানসিকভাবে উৎফুল্ল রাখা অনেক প্রয়োজন।
আমরা তিনটি জেলায় প্রায় ৫ হাজার ৫০০ শিশু, কিশোর ও তরুণের সঙ্গে প্রকল্পে কাজ করছি। এ প্রকল্পে ভুক্তভোগীদের কাছে যাওয়া, সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি ওই এলাকার মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার মতো বা মানসিক স্বাস্থ্যসচেতন স্বাস্থ্যকর্মী পাইনি।
আমরা স্কুলগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। স্কুলের শিক্ষকেরাও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন নন। এ জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছি। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক চিকিৎসা একটি ১২ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ। এর মাধ্যমে তারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত এবং কখন পেশাদার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে, তা বুঝতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পেশাদার চিকিৎসকদের সহায়তা নিতে উদ্বুদ্ধ করছি৷ আমরা যেসব উপজেলায় কাজ করছি, সেগুলোকে একটা মডেল উপজেলা হিসেবে তৈরি করতে চাই। সেখানে যেন ৮০ শতাংশ মানুষ বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবাদাতারা মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন। যেন মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক পরিচর্যা সম্পর্কে তাঁদের জ্ঞান থাকে। সেখানে তাঁরা যেন মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা দিতে পারেন। আমরা কমিউনিটিতে সচেতনতা তৈরি করছি। এমন একটা কেয়ারিং সমাজ তৈরি করতে চাই, যেখানে সবার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহমর্মী পরিবেশ থাকবে। এ প্রকল্পকে আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।
আমার ছেলে পাঁচ বছর আগে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তারপর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে তার মানসিক চিকিৎসা করানো হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে ভুল ধারণা ও কুসংস্কার থাকায় আগে গ্রাম থেকে ঝাড়ফুঁক করানো হয়েছিল, তাতে কোনো লাভ হয়নি। পরে মানসিক চিকিৎসকের চিকিৎসায় সে এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছে। এডিডির মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্পের সঙ্গে কাজ করে আমাদের ভুল ধারণা কেটে গেছে। সে এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছে। এখন ডাকলে সে জবাব দেয়, আগে কোনো জবাব দিত না। আপনাদের পরামর্শে সে পুরোপুরি সুস্থ হলে আমি অনেক কৃতজ্ঞ থাকব।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের এলাকার মানুষের মধ্যে আগে অনেক কুসংস্কার ও ভুল ধারণা ছিল। সবাই বলত, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে তা কখনো ভালো হয় না। সচেতনতা বৈঠকে অংশ নিয়ে আমাদের ভুল ভেঙেছে। তা ছাড়া আমাদের এখানে চিকিৎসার ভালো ব্যবস্থা নেই। এডিডি আমাদের এলাকায় মানসিক স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন করেছিল। তাতে অনেকেই সেবা নিয়েছেন।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশ সরকার এ নিয়ে কাজ করছে। শিগগিরই একটা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলপত্র প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই দেশের মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে ব্র্যাক সরকারের সঙ্গে কাজ করছে৷
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়েও ব্র্যাক এগিয়ে এসেছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকর্মীর ঘাটতি রয়েছে। এক লাখ রোগীর জন্য দশমিক শূন্য ৭ জন দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকর্মী আছেন। সে জন্য আমরা একটা প্যারা কাউন্সেলর মডেল বের করেছি৷ প্যারা কাউন্সেলররা সচেতনতা তৈরি, শনাক্তকরণ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও রেফার করবেন।
বর্তমানে দক্ষ মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা বেশির ভাগই মেডিকেল কলেজে আছেন। প্যারা কাউন্সেলররা তাঁদের সঙ্গে ব্রিজ হিসেবে কাজ করবেন।
স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এখানে আমরা অনেক কাজ করতে পারি। শিশুরা খেলার মাধ্যমে শিখলে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ একসঙ্গে হয়৷ সে জন্য প্রি-স্কুলগুলোতে একটা মনোসামাজিক সাপোর্ট কর্নার রাখা যেতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। মানসিক স্বাস্থ্য অবস্থার জন্য আমেরিকায় প্রতিবছর ১৯৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসান হয়।
আমরা চাই, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের এলাকায় সেবা বাড়ানো হোক। আইডব্লিউএফ (ইনোভেশন ফর ওয়েলবিয়িং ফাউন্ডেশন) আমাদের নিয়ে যেসব সচেতনতা বৈঠক করছে, তাতে আমাদের ভুল ধারণা কেটে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই, আমাদের কমিউনিটিতে মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেওয়া হোক, যেন আমরা সুচিকিৎসা পেতে পারি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
কোভিড–উত্তর পরিস্থিতিতে শিশু ও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ১৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ও ১২ শতাংশ ৭ থেকে ১৭ বছর বয়সের শিশু কোনো না কোনো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। কোভিড-১৯ মহামারি এ স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি জরিপ অনুযায়ী কোভিডের কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৩০ দেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় এসেছে, কোভিড-১৯ বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলছে। এ ছাড়া ঘরবন্দী অবস্থায় অনলাইন ক্লাসের কারণে শিশু, কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ইন্টারনেট, গেম আসক্তি ও স্ক্রিনে সময় কাটানোর পরিমাণ বেড়েছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ সমস্যাগুলোর মধ্যে সিদ্ধান্তহীনতা, উদ্বিগ্নতা, ঘুমের সমস্যা, অস্থিরতা, মানসিক চাপ বেড়ে যাওয়া রয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই মানসিক স্বাস্থ্যে বিনিয়োগের স্বল্পতা রয়েছে। কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দক্ষ সেবাদাতার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশে মাত্র ৬ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করে।
এ ছাড়া মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে বৈষম্য, কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা অনেক বেশি। সমস্যাগুলো কমিয়ে আনতে ডব্লিউএইচও বাংলাদেশ বেশ কিছু কাজ করছে। শিশু ও তরুণদের কমিউনিটিভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য সবাই একযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
অনলাইনে আমাদের একটা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চালু ছিল। যেখানে শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক—সবাই সেবা পেত। সেখানে আমরা দেখেছি উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্নতা ভয়ানকভাবে বেড়েছে। শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য কতগুলো চাহিদা থাকে। অভিভাবকেরা সেদিকে খেয়াল রাখছেন না। অনেক সময় শিশুদের ঘরে বন্দী করে রাখছেন। অনেক শিশুর মধ্যে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণও দেখা গেছে।
দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকা, কোথাও বেড়াতে না যাওয়া, বন্ধুদের সংস্পর্শে না আসা ইত্যাদি কারণে এগুলো হচ্ছে। কোভিডকালে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। অনেকের বেতন কমে গেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে অভিভাবকেরা অনেক মানসিক চাপের মধ্যে থাকছেন। সেই প্রভাব শিশুদের ওপরও পড়ছে।
দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল। স্কুল খোলার পরে তারা আরেক ধরনের সমস্যায় পড়ছে। তারা নতুন পরিস্থিতিতে এখনো ঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারছে না।
কিশোর বয়সের পরিবর্তনগুলো বিকাশের একটা অংশ। এ ক্ষেত্রে প্যারেন্টিংয়ের জায়গাটা গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। তারা যেন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারে। শিশু সুস্থভাবে বড় হচ্ছে কি না, মানসিকভাবে সুস্থ আছে কি না—অভিভাবকদের তা খেয়াল রাখতে হবে।
গত বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের পর শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা বাসায় চলে গেল। এরপরে দেশে লকডাউন শুরু হলো। ফলে ভয় ও উদ্বিগ্নতা বাড়তে থাকে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের ওপর এ প্রভাব বেশি পড়েছে। শিশু–কিশোরদের ওপর করা একটি গবেষণায় এসেছে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা বেশির ভাগ মাইল্ড সমস্যায় ভুগছে।
মারাত্মক মানসিক সমস্যায় আক্রান্তের হার ৭ শতাংশের মতো। সরকারি বক্তব্য অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ কোটি মানুষ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। সে জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। মানসিক সমস্যাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত না করা পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান হবে না। প্রতিরোধ ও প্রচারণা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে।
শিশু-কিশোরদের মানসিক বৈকল্য বা অস্বাভাবিক আচরণের জন্য অভিভাবকদের শাস্তির ব্যবস্থা রেখে সম্প্রতি চীনে একটি আইন হয়েছে। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার কারণে শিশুদের শারীরিক কার্যক্রম কমে গেছে। ফলে তাদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধে সরকারের উদ্যোগ আছে। ইতিমধ্যে সরকার বেশ কিছু প্রকল্প নিয়েছে।
২০১৮ সালে এ নিয়ে আইন হয়েছে। কৌশলগত কর্মপরিকল্পনাটি খুব দ্রুতই আলোর মুখ দেখবে৷ তখনই হয়তো এ কার্যক্রমগুলো আমরা ছড়িয়ে দিতে পারব। আমরা দুটি উপজেলা ও জেলা হাসপাতাল ঠিক করেছি। মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে সেখানে মডেল প্রকল্প নেওয়া হবে।
আমাদের পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা জরুরি। প্রতিরোধ ও প্রচারণার জন্য প্রশিক্ষণগুলো আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের লক্ষ্য করে করা হয়। এগুলো সাধারণ মানুষের জন্য করা হচ্ছে না। সে জায়গায় আমরা এখনো যেতে পারিনি। চা–দোকান ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছানো গেলে প্রতিরোধ ও প্রচারণা কার্যক্রম অনেক সফল হবে।
অনেকগুলো বিষয় আলোচনায় এসেছে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আমরা যেভাবে অনুভব করি, সমস্যাটি তার চেয়েও প্রকট। কোভিডে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়তো অনেক পরিশ্রম করে পুষিয়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু শিক্ষা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া খুব কঠিন হবে। মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। করোনাকালে গ্রামের শিশুরা শহরের তুলনায় ভালো ছিল।
কারণ, শহরের শিশুরা অনেকটা কারাগারের মধ্যে ছিল। আমাদের সন্তানদের সারা রাত জেগে থাকার বদভ্যাস তৈরি হয়েছে। সে জায়গায় আমরা এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারিনি। এক অভিভাবক তাঁর সন্তানকে পড়ানোর জন্য প্রতি বইয়ে ২০০ টাকা পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। সন্তানের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য অভিভাবকদের কৌশল উন্নয়ন করতে হবে। স্থূলতার সমস্যা অনেক বেড়েছে। সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেক সময় দ্বন্দ্ব হয়। এ দ্বন্দ্বের প্রভাব সন্তানের ওপর পড়েছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের অনেক কষ্ট। তাদের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। সুস্থ দেহের জন্য সুস্থ মন দরকার। সে জন্য শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে। খোলা জায়গায় যেতে পারলে অনেক মানসিক সমস্যা এমনিতেই সমাধান হয়ে যাবে। শিশুদের সমস্যাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। তারপর সেটার সমাধান করতে হবে। একসঙ্গে খাবার খাওয়া এবং সকালে শিশুদের নিয়ে হাঁটতে বের হতে পারি।
মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। প্রত্যেক শিক্ষককেই একজন মনোরোগ চিকিৎসক হতে হবে। প্রতিটি শ্রেণিতেই কোনো না কোনো শিক্ষার্থী মানসিকভাবে অসুস্থ থাকে। এসব শিক্ষার্থীর সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার সুযোগ বাড়াতে হবে। মেয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো বলার মতো কাউকে পায় না৷ এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার পাবনা মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের করার উদ্যোগ নিয়েছে। জনবল বাড়ানোর বিষয়েও সরকার কাজ করছে। সচেতনতা বাড়াতে গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করলে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা অনেক কমে আসবে।
কোনো স্বাস্থ্য মানসিক স্বাস্থ্য ছাড়া নয়। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য আইন ও নীতিমালা আছে এবং একটি কৌশলগত পরিকল্পনাও তৈরি হয়েছে। এ বিষয়গুলো সবাইকে জানানো বড় রকম সচেতনতা তৈরির অংশ হতে পারে। এ প্রচারণার দায়িত্ব আমাদের সবার।
মানসিক স্বাস্থ্যে বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। এ বরাদ্দের সঠিক বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় লোকবল ঘাটতির কথা এসেছে। এ ক্ষেত্রে প্যারা কাউন্সেলর তৈরি এবং কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে শক্তিশালী করলে, ভ্রান্ত ধারণা দূর করার ক্ষেত্রে তারা অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।
আজকের আলোচনায় মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতার বিষয়টি অনেক গুরুত্বসহকারে এসেছে। শিশুদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার সুযোগ বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
■ কমিউনিটি পর্যায়ে প্যারা কাউন্সেলর তৈরি করে মানসিক সচেতনতা সৃষ্টি করা গুরুত্বপূর্ণ
■ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি
■ মানসিক স্বাস্থ্য সংস্থা ও সেবাদানকারীর সংখ্যা বাড়ানো এবং সেবাগ্রহীতাদের এসব তথ্য জানানো দরকার
■ স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি
■ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ও সেবাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার
■ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যমের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে
■ শিশু ও তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে স্কুলশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার
■ এ–সংক্রান্ত সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা প্রয়োজন
■ শিশুদের জন্য সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার সুযোগ বাড়ানো জরুরি
■ প্রতিবন্ধী ও মেয়েশিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে আলাদা নজর দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ