নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর—১০ ডিসেম্বর) উপলক্ষে একশনএইড বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২৪ নভেম্বর ২০২১। এর সম্প্রচার সহযোগী ছিল প্রথম আলো। গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা সংক্ষিপ্ত আকারে এ ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।
খুশী কবির
সমন্বয়কারী, নিজেরা করি
মীর আবু তৌহিদ
সহকারী ইন্সপেক্টর জেনারেল, এলআইসি সেল, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স
সাইদ নাসিরুল্লাহ
অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার, সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম বিভাগ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ
সারা হোসেন
অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট
চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন
প্রকল্প ব্যবস্থাপক, শিশুসহায়ক জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯৮
মমতাজ আরা বেগম
নির্বাহী পরিচালক, মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র, কুষ্টিয়া
কানিজ ফাতেমা
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক;
ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি
তাসলিমা ইয়াসমীন
সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সুমন রহমান
অধ্যাপক, মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস
ফাইজুল করিম
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষজ্ঞ
তৃষিয়া নাশতারান
প্রেসিডেন্ট, অগ্নি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; প্রতিষ্ঠাতা, মেয়ে নেটওয়ার্ক
সাদাত রহমান
আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার বিজয়ী; প্রতিষ্ঠাতা, সাইবার টিনস
লাবণ্য প্রজ্ঞা
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মরিয়ম নেচ্ছা
ম্যানেজার, উইমেন রাইটস অ্যান্ড জেন্ডার ইকুইটি, একশনএইড বাংলাদেশ
ফিরোজ চৌধুরী
সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো
সূচনা বক্তব্য
আব্দুল কাইয়ুম
সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
সঞ্চালনা
ফারাহ্ কবির
কান্ট্রি ডিরেক্টর, একশনএইড বাংলাদেশ
■ নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে একটি শক্তিশালী ‘সামাজিক সাপোর্ট সিস্টেম’ গড়ে তোলা খুব জরুরি
■ স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে যৌন হয়রানি ও অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের জানানো প্রয়োজন
■ পাঠ্যপুস্তকে অনলাইন হয়রানির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা দরকার
■ অনলাইনে হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করার বিষয়টিকে আরও সহজ ও নারীবান্ধব করা জরুরি
■ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জবাবদিহি নিশ্চিত করা দরকার
■ নারী ও শিশুর প্রতি অনলাইন সহিংসতা রোধে বেশ কটি প্ল্যাটফর্ম না করে একটি প্ল্যাটফর্মকে নির্দিষ্ট করতে হবে
■ তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ে নারীদের পড়াশোনার সুযোগ বাড়াতে হবে
■ এ–সংক্রান্ত সব উদ্যোগে সরকারি, বেসরকারি ও আন্তমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করা গুরুত্বপূর্ণ
■ নারীর প্রতি অনলাইন সহিংসতা রোধে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক প্রচারণা প্রয়োজন
■ নিরাপদ ইন্টারনেট এবং অনলাইনে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সময় ব্যবহার নির্দেশিকা দেওয়া যেতে পারে
আব্দুল কাইয়ুম
করোনার সময়ে অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতাও অনেক বেড়েছে। এ বিষয়ে আইন আছে। আইনে শাস্তির বিধানে কড়াকড়িও করা হয়েছে। তারপরও অনেক সময় বিচারের জন্য দীর্ঘ সময় লেগে যায়। নারী নির্যাতনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার ও রায় কার্যকর নিশ্চিত করার উদাহরণ তৈরি করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গেই এটা করতে চাই। আমাদের অনেকগুলো জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর আছে। সবাই যেন নম্বরগুলো খেয়াল রাখেন। কারণ, এখান থেকে আমরা একটা প্রতিকার পেতে পারি। প্রতিকারের পথ খুঁজে পেতে পারি।
ফারাহ্ কবির
নারী নির্যাতনের সব ধরনের বিষয়, সমস্যা ও সমাধান সামনে নিয়ে আসার জন্য প্রতিবছর ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ পালিত হয়। এ জায়গা থেকে আমরা প্রতিবছর নানান ধরনের আয়োজন ও কার্যক্রম পরিচালনা করি। নারী নির্যাতনের নানান ধরন আছে। আজ আমরা আলোচনা করব অনলাইন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংঘটিত নির্যাতন ও প্রতিকারের বিষয়গুলো নিয়ে। যেকোনো প্রযুক্তিই লিঙ্গ নিরপেক্ষ হওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের সমাজ কাঠামো ও দৃষ্টিভঙ্গির একটা প্রতিফলন প্রযুক্তিক্ষেত্রেও দেখা যায়। করোনাকালে প্রযুক্তি আমাদের অনেকভাবে সহায়তা করেছে। প্রযুক্তি আমাদের শিক্ষা, আলোচনাসহ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বসার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু সমাজে নারী ও প্রান্তিক মানুষের প্রতি বিরাজ করা সহিংসতা ও বৈষম্যের দৃষ্টিভঙ্গির একটা প্রতিফলন আমরা এসব প্ল্যাটফর্মে পেলাম। দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। কিন্তু নারী ও মেয়েশিশুরা এসব প্ল্যাটফর্মে বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছে। এসব বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এখন সুমন রহমান ও ফাইজুল করিমকে অনুরোধ করব গবেষণায় আসা বিষয়গুলো উপস্থাপন করার।
সুমন রহমান
ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক নির্দেশক। কিন্তু একই সঙ্গে তা সমাজে থাকা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব, আর্থসামাজিক রীতি ও অপর্যাপ্ত আইনি সুরক্ষার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির জ্বালানি জোগাচ্ছে। একশনএইড বাংলাদেশের উদ্যোগে অনলাইন কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ অর্গানাইজেশন ই-আরকি অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। অনলাইন এ জরিপে ৬১১ জন অংশ নেন। যার মধ্যে ৩৯৯ জন সব প্রশ্নের উত্তর দেন। এঁদের মধ্যে ২৬৯ জন নারী ও ১৩০ জন পুরুষ ও ২ জন ভিন্ন লিঙ্গের ছিলেন। নারীদের ৫০ শতাংশ অনলাইনে সহিংসতার শিকার হওয়ার কথা জানান। অনলাইনে সহিংসতার শিকার শিশু ও নারীদের মধ্যে ৬২ দশমিক ২২ শতাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে। ফেসবুকেই বেশির ভাগ নারী সহিংসতার শিকার হন। সহিংসতার শিকার এসব নারীর প্রতি চারজনের একজন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেন না। অনলাইন সহিংসতা নারীর জীবনকে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রায় ৭৬ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার কারণে হতাশা ও দুশ্চিন্তার মতো মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এ ক্ষেত্রে অনেক নারীই অভিযোগ করেন না। অভিযোগ করে কোনো লাভ হয় না বলে মনে করেন ৪৭ দশমিক ৪১ শতাংশ নারী। প্রায় ৩০ শতাংশ নারী কোথায় অভিযোগ করতে হয়, তা জানতেন না বলে জানান। অনলাইনে সহিংসতার শিকার নারীদের ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ সরকারের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগে অভিযোগ জানান।
ফাইজুল করিম
অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো জরুরি। নিরাপদ ইন্টারনেট ও অনলাইনে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সময় ব্যবহার নির্দেশিকা দেওয়া প্রয়োজন। কিশোর-কিশোরীরা ফোন কলের পরিবর্তে মেসেজিংয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই তাদের জন্য সে ব্যবস্থা চালু করা দরকার। সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাইবার অপরাধসংক্রান্ত আইনের ব্যবহার এবং এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার জন্য যথাযথ নির্দেশিকা তৈরি করা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্যচিত্রসহ সহজ ভাষায় প্রচারণা চালানো যেতে পারে।
লাবণ্য প্রজ্ঞা
জরিপে উঠে আসা বিষয়গুলো আমি নিজের ও বন্ধুদের সঙ্গে মেলাতে পারছি। করোনার কারণে পাঠদান, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, বিনোদনসহ প্রায় সবকিছুই এখন অনলাইনে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমার মতো শিক্ষার্থীদের অনলাইন ব্যবহারের হার অনেক বেশি। আমার কিছু বন্ধু অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছে। অনেকের ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বা একাধিক ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হচ্ছে। আমার কয়েকজন সহপাঠীর অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। প্রতিনিয়ত এ রকম হাজারো মানুষ অনলাইনে হয়রানির শিকার হয়েছে এবং হচ্ছে।
অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণকারী অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়টি জানে না। অনলাইনে কী কী নিয়ম মেনে চলতে হয়—সেসব তারা জানে না। সাইবারবুলিং ও অনলাইন হয়রানি সম্পর্কে খুব অল্পসংখ্যকের ধারণা রয়েছে। এ জন্য প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। পাঠ্যপুস্তকে অনলাইন হয়রানি থেকে প্রতিকারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এ ক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকেরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারেন। কিন্তু ইন্টারনেটের ভালো দিকগুলো আমাদের অনেক অভিভাবক এখনো জানেনই না। ইন্টারনেট ব্যবহারে কোনো সমস্যায় পড়লে তাঁরা ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধের পরামর্শ দেন। শিশুকে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত রাখার কারণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তারা অনেক পিছিয়ে যাচ্ছে। স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সম্পর্কে অনেক অভিভাবক জানেন না। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে অভিভাবকেরা শিশুদের অনলাইন কার্যক্রমসহ সবকিছু তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তাই শিক্ষক ও অভিভাবকদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।
সাদাত রহমান
একজন নারী ঘরের বাইরে যতটা অনিরাপদ, তারচেয়ে বেশি অনিরাপদ ইন্টারনেটে। পথেঘাটে, আশপাশে অনেক মানুষ থাকে, তাই নারীকে যা ইচ্ছা তা বলতে পারে না। আমরা জরিপে দেখলাম, বেশির ভাগ ভুক্তভোগী বন্ধুদের কাছে সমস্যাগুলো জানান। আমরা ‘সাইবার টিনস’ নামের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি। একজন ভুক্তভোগী সরাসরি পুলিশের কাছে গেলে হাতে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকলে সব সময় সাহায্য না–ও পেতে পারে। সাইবার টিনস শুধু কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে কাজ করে। তাদের কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন হলে আমরা ব্যবস্থা করে দিই। পুলিশের সহায়তা প্রয়োজন হলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিই। আমরা ‘মধ্যবর্তী সেতু’ হিসেবে কাজ করি।
তাসলিমা ইয়াসমীন
শিক্ষাক্ষেত্রে অনলাইন হয়রানি ও সহিংসতার বিষয়গুলো সম্পর্কে অসচেতনতার বিষয় আলোচনায় এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেওয়ার বিষয়টিতে আরও জোর দেওয়া উচিত। ২০০৯ সালের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যৌন হয়রানিবিষয়ক অভিযোগ কমিটি গঠনের বিষয়ে আমরা কিছুদূর এগিয়েছি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি ও ব্যাপ্তির অনুপাতে যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সংখ্যা নির্ধারণ করা উচিত। স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে যৌন হয়রানি ও অনলাইন নিরাপত্তার বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ওরিয়েন্টেশন প্রয়োজন। যৌন হয়রানির সংজ্ঞায়ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের আইনগুলোতে পরিবর্তন এসেছে। ২০১৯ সালে কাজের জগতে সহিংসতা ও হয়রানি বিলোপসংক্রান্ত আইএলও কনভেনশন হয়েছে। সেখানেও আমরা যৌন হয়রানিসহ জেন্ডার–ভিত্তিক সহিংসতার সংজ্ঞা পেয়েছি। কিন্তু যৌন হয়রানি বলতে আমরা ঠিক কী বুঝি, সে বিষয়গুলো এখনো আমাদের আইনি কাঠামোতে অস্পষ্ট।
নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই না সাইবার নিরাপত্তার অভাবে মেয়েশিশুরা ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকুক। সে জন্য শিশু-কিশোরদের জন্য অনলাইন সচেতনতাভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। অনলাইনে স্কুল চলাকালে হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনাও কোভিডকালের বৈশ্বিক গবেষণাগুলোয় এসেছে। তাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উদ্যোগে অনলাইনে শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। আমাদের প্রাসঙ্গিক আইনগুলোতে অনলাইনে যৌন হয়রানির বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে। অভিযোগ করার জন্য থানায় মামলা করার পাশাপাশি হয়রানির শিকার নারীকে আরও বেশি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিকার দ্রুততম সময়ে কী করে দেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়টিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
কানিজ ফাতেমা
২০০৬ সালে বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ১৬ শতাংশ। ২০১৯ সালে এ হার বেড়ে ৩৬ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ের মধ্যে শ্রমশক্তিতে ২০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ে নারীদের পড়াশোনার হার ২৫ শতাংশ। কিন্তু এ ধরনের পেশায় মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ মেয়ে যোগ দেয়। এখন আমরা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মুখোমুখি হচ্ছি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এ নতুন পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয়েছে। এ সময়ে প্রতিটি খাতে সবারই তথ্যপ্রযুক্তির সাধারণ বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে। নতুন বিষয়ে মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ ও ভয় থাকে। ইন্টারনেট, তথ্যপ্রযুক্তি, অনলাইনের ক্ষেত্রও তা–ই, এ বিষয়ে একই সঙ্গে আকর্ষণ ও ভীতি রয়েছে।
এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দক্ষতা ও জানায় ঘাটতি রয়েছে। এসব বিষয়ে আমাদের শিশুরা অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবক ও শিক্ষকদের চেয়ে বেশি জানে। অনলাইন ক্লাসে আমরা দেখেছি, অনেক সময় অযাচিত ব্যক্তি যুক্ত হয়ে গেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সেখানে অশ্লীল বার্তা ও ছবি দিয়েছে। ওই সব ব্যক্তিকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার উপায় আছে। কিন্তু এ বিষয়ে জানা না থাকা ও প্রশিক্ষণের অভাবে সব শিক্ষকের সেই দক্ষতা নেই। মহামারির সময় ক্লাসগুলো অনলাইনে চলে আসছে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকেরা কি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পেয়েছেন? নারীরা তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করতে আসছেন না। পড়াশোনা করলেও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে না। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রযুক্তি বাদ দিলে চলবে না। আমাদের নিরাপদ ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করতে হবে।
তৃষিয়া নাশতারান
‘মেয়ে নেটওয়ার্ক’ নামে আমাদের একটি সংগঠন রয়েছে। করোনা মহামারিতে অনলাইনে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় অনলাইনে হয়রানির মাত্রা বাড়তে থাকে। অনেকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আমাকে হয়রানিমূলক অশ্লীল ভিডিও, বার্তা দিতে থাকে। হয়রানির বিষয়টি জানিয়ে আমি সাইবার সিকিউরিটি ইউনিটের ফেসবুক পেজে মেসেজ দিলাম। তারা আমার কাছে কিছু তথ্য চায় এবং থানায় জিডি করতে বলে। আমি কাছের থানায় জিডি করে সব কাগজ জমা দিই। কিন্তু সেখান থেকে এক মাসেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা থেকে ব্লক করার কথা বলা হয়।
অনলাইন অপরাধ অনেক ক্ষেত্রেই অফলাইন অপরাধের চেয়ে মারাত্মক। উত্তর আমেরিকার এক গবেষণায় এসেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বুলিংয়ের তুলনায় সাইবার বুলিংয়ের কারণে শিশুরা বেশি আত্মহত্যা করে। অনলাইনের ঘটনাগুলো দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসবের সমাধানে সামগ্রিক পরিবর্তনের জন্য সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সুস্থ বিনোদনের পথ তৈরি করা, সঠিক যৌনশিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের সামনে সামাজিক রীতি, ডিজিটাল জ্ঞানের অভাব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সীমাবদ্ধতাসহ বেশ কটি দেয়াল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এটিকে সহজ ও দ্রুত করতে হবে।
মমতাজ আরা বেগম
জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম দেশে ২৫টি জেলায় কাজ করছে। ওই ২৫ জেলায় ২৬টি নেটওয়ার্ক রয়েছে। মহামারির আগে আমাদের অনেক ধরনের অপরাধ মোকাবিলা করতে হয়েছে। মহামারির আগে কুষ্টিয়ার এক গণিত শিক্ষক সব বিষয়ই পড়াতেন। অভিভাবকেরাও সবাই তাঁর কাছে শিক্ষার্থীদের পড়াতে ছুটে যেতেন। ওই শিক্ষক মেয়েদের ছবি তুলে ব্যবসা করছিলেন। ১৬৪ ধারায় তাঁর জবানবন্দি থেকে জানা যায়, তিনি সাত বছর ধরে এ কাজ করছেন। তাঁকে আইনের আওতায় আনতে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর ভূমিকা অগ্রগণ্য ছিল। ওই শিক্ষকের সঙ্গে আরও পাঁচজন জড়িত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন শিক্ষক ও দুজন ইঞ্জিনিয়ার। চার মাস পরে ওই শিক্ষককে আটক করা হয়। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও এক ছাত্রীকে একই বিভাগের এক শিক্ষক কুপ্রস্তাবে রাজি হতে নানান ভয়ভীতি ও লোভ দেখাতে থাকেন। শেষে মেয়েটি অভিযোগ জানান। অনেক বৈঠক করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। অনলাইনের এসব সমস্যা সমাধানে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পুরো বিষয়টি কীভাবে আরও সহজ ও নারীবান্ধব করা যায়, সে বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ভাবার অনুরোধ করছি।
চৌধুরী মোহাম্মদ মোহাইমেন
অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে একদিকে যেমন নতুন সুযোগের দরকার, পাশাপাশি বর্তমানে যে সুযোগগুলো আছে সেগুলো ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। শিশুসহায়ক জাতীয় হেল্পলাইন ১০৯৮ চব্বিশ ঘণ্টা সেবা দিচ্ছে। সাইবার বুলিং শুধু অনলাইনে নয়, অফলাইনের অনেক সমস্যাও অনলাইনে চলে আসে। অনেক সময় অফলাইনে কোনো নারীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে সাড়া না পেলে তাঁকে অনলাইনে আক্রমণ করা হয়। এরকম অনেক ঘটনা আছে। কোভিডকালে সাইবার অপরাধ অনেক বেড়েছে। শিশু বা নারী অনলাইনে সহিংসতার শিকার হলে প্রথমেই কাউন্সেলিংয়ের দরকার হয়। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। সরাসরি মানসিক সেবা দেওয়ার প্রয়োজন হলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজকর্মী বা আমাদের স্থানীয় টিম পাঠানো হয়। আইনি পরিত্রাণের ক্ষেত্রে পরিবারের সহায়তা প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে আমরা পরিবারকেও কাউন্সেলিং করি। এগুলোর ফলোআপ করে থাকি। অনলাইনে সহিংসতার শিকার অনেকেই অভিযোগ করেন না। এসবের সমাধানে অনেক প্ল্যাটফর্ম না করে একটি প্ল্যাটফর্মকে নির্দিষ্ট করে, তা ধরে এগোনো প্রয়োজন। শিশুরা এখন থেকে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্ষম হলে, পরবর্তী সময়ে সে নারী হিসেবে এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়ে আমরা শিশুসহ অভিভাবকদের নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে থাকি। শিশুসহায়ক হেল্পলাইন ১০৯৮ এসব নিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে।
সারা হোসেন
জরিপে এসেছে, অনলাইন সহিংসতার শিকার হওয়া নারীদের ১৪ শতাংশ সাহায্য–সহযোগিতা চাইছেন। যদিও এ জরিপ অনেক কমসংখ্যক নারীকে নিয়ে হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের মাত্র ২ শতাংশ সাহায্য চান। আমাদের আইনজীবীদের এসব বিষয়ে জানাশোনার ঘাটতি রয়েছে। সাইবার হয়রানির জন্য আইনি পরামর্শ চাইলে অনেক সময় আইনজীবীরা সরাসরি মামলা করতে বলেন। কিন্তু এ ধরনের ঘটনায় মামলা করে অনেক সময় সঠিক বা সময়মতো সমাধান পাওয়া যাবে না। একজনকে সাজা দেওয়ার চেয়ে আপত্তিজনক পোস্ট সরিয়ে দেওয়া বেশি জরুরি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এ আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা দরকার। এ ধরনের অপরাধের জন্য পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু অনেকে এ আইন সম্পর্কে জানেন না। সবাই শুনেছেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা। আদালত হলো শেষ আশ্রয়স্থল কিন্তু আদালতে যাওয়ার আগেই অনেক কিছু করা দরকার। ন্যায়বিচারের ব্যবস্থা না রেখে দ্রুত ও কঠোর শাস্তির আইন চাইলে আমরাই নানা রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী হয়ে যাব। যেমন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন রাজনৈতিকভাবে ও ব্যক্তিগত বিরোধের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কিছুটা সে ভূমিকা নিয়ে নিয়েছে। এমনকি ভূমিবিরোধ থাকলে সেখানেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে দেওয়া হয়। এ পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের ওয়াকিবহাল হওয়া উচিত। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধের উদ্দেশ্যে আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন বা হয়রানি শুরু করার কথা বলতে পারি না। অনেকক্ষেত্রে এ হয়রানি আবার নারীদের ওপরও হচ্ছে। নিরাপত্তার নামে যেন আমাদের সব স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া না হয়। এ ব্যাপারে আমাদের খুবই সতর্ক হতে হবে। এসব সমাধানে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বন্ধুসভাসহ আমাদের অনেক নাগরিক সংগঠন ও বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। সাইবার জগৎ নিরাপদ রাখতে ও সাইবার স্পেসে মতপ্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে এসব সংগঠনকে সম্পৃক্ত করা দরকার।
মীর আবু তৌহিদ
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের নারীরাও পিছিয়ে নেই। যেখানে মানুষের উপস্থিতি আছে, সেখানে অপরাধ থাকা খুব স্বাভাবিক। সে জায়গায় কাজ করতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেয়েরা সাইবার অপরাধের শিকার বেশি হচ্ছে। তাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য গত বছর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন নামে একটি অনলাইনভিত্তিক সেবা চালু করা হয়েছে। এখানে সরাসরি অভিযোগ নেওয়া হয়। এখানে নারী ভুক্তভোগীদের সেবা দেওয়া হয়। এই টিমে কাজ করা সব সদস্যও নারী। কারণ, নারীরা নারীদের কাছে বিষয়গুলো বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
পুলিশ বিভাগের পুরোনো সব প্রস্তুতি ছিল প্রথাগত অপরাধগুলো মাথায় রেখে। এখন নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। ভার্চ্যুয়াল জগতে বন্দুক, ইটপাটকেল, লাঠি নেই। কিন্তু অপরাধ আছে। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেই প্রস্তুতিটা নিতে হচ্ছে। প্রথাগত অপরাধে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভুক্তভোগী সরাসরি অভিযোগ জানান। কিন্তু সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীরা সহজে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে চান না। অভিযোগ না হলে কীভাবে পরিষেবা দেব? নারীদের সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারে নানা উদ্যোগ রয়েছে। প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি আলাদা হেল্প ডেস্ক চালু করা হয়েছে। এসব থানায় সাইবার অপরাধসংক্রান্ত বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংবেদনশীল বিষয়গুলো ব্যবস্থাপনার জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে এই সেবার আরও আধুনিকায়ন ও পরিষেবা বিস্তৃত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
সাইদ নাসিরুল্লাহ
তথ্য সংগ্রহসংক্রান্ত বিষয় আলোচনায় এসেছে। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনসংক্রান্ত তথ্য সেখান থেকেই সংগ্রহ করা যাবে। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার রয়েছে। সেখানে সারা বাংলাদেশের সব মামলার তথ্য আসে। তথ্যভান্ডার চাইলেই পাওয়া যায়। এ জন্য শুধু সাইবার ক্রাইম ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার বরাবর আবেদন করলে সব তথ্য পাওয়া যাবে। বাংলাদেশের ফেসবুকসংক্রান্ত বিষয়গুলো সিঙ্গাপুর থেকে দেখা হয়। সরকার চেয়েছিল ফেসবুক যেন বাংলাদেশে তাদের অফিস চালু করে। তারা সরাসরি না করে দেয়। এরপর ফেসবুক থেকে বাংলাদেশের স্থানীয় দুজন প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছে, যাঁরা আমাদের সংস্কৃতি বুঝবেন। যেন তাঁদের মাধ্যমে অভিযোগ দেওয়া যায় ও অভিযোগগুলোর বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে—তা জানা যায়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশ ও সরকারের দিক থেকে চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই। সারা দেশে সব বিভাগীয় শহরে সাইবার ট্রাইব্যুনাল চালু হবে। আমরা জঙ্গিবাদ ও সাইবার অপরাধ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছি। এ নিয়ে একটি প্রকল্পও চলমান। যেখানে ধর্মীয় নেতা, শিক্ষার্থী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্ত করে তিন থেকে পাঁচ দিনের কর্মশালা পরিচালনা করা হয়। সাইবারসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কর্মশালায় বিস্তর আলোচনা করা হয়। যেন পরবর্তী সময়ে শিক্ষকেরা সেগুলো ছড়িয়ে দিতে পারেন। অভিভাবকদের জন্য মোবাইলে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ফিচার রয়েছে। কোনো কোনো মোবাইলে যা ডিজিটাল ওয়েলবিইং নামে থাকে। এখান থেকে শিশুদের তদারকি করা যায়। পাঠ্যক্রমে অনলাইন হাইজিন, ডিজিটাল লিটারেসি, অনলাইন এথিকস অন্তর্ভুক্ত করতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করছি। অনলাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পুলিশ বিভাগের চেষ্টার কোনো ঘাটতি নেই।
খুশী কবির
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। নারীকে সহজভাবে নিয়ন্ত্রণে তার যৌনতাকে আক্রমণ করা হয়ে থাকে। যেন নারী ভয়ে চুপসে যায়। এটা একটা বৈশ্বিক চিত্র। বাংলাদেশের অবস্থা কোনোভাবেই এর থেকে ভিন্ন নয়। মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য কোনো বড়ি, অ্যান্টিবায়োটিক বা ইনজেকশন নেই। এ কাজটা যৌথভাবে করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে একটি শক্তিশালী ‘সামাজিক সাপোর্ট সিস্টেম’ গড়ে তোলা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এ শক্তিশালী সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে পারলে সহিংসতার শিকার নারীরা জানবে যে এখান থেকে তারা সহায়তা পেতে পারে।
ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে একটা বৈশ্বিক আন্দোলন করতে হবে। বাংলাদেশের একার পক্ষে এটা সম্ভব হবে না। একসময় অ্যাসিড নিক্ষেপের একটা ভয়াবহ রূপ ছিল। অ্যাসিড নিক্ষেপ কমে গেছে। এখন অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা এসেছে। সে জন্যই একটা সামাজিক সাপোর্ট সিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর সে ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা অবশ্যই দরকার। পুলিশ সদস্যদের অনেক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এরপরও এসব প্রশিক্ষণের ফল আমরা পুরোপুরি দেখছি না। বাংলাদেশের আন্তমন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় খুব প্রয়োজন। কারও একার পক্ষে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।
ফারাহ্ কবির
নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে একশনএইড বাংলাদেশের উদ্যোগে এই গোলটেবিল আয়োজিত হলো। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য একশনএইডের পক্ষ থেকে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।