সুরা মায়িদায় আল্লাহ্‌র নির্দেশনা

রাসুলুল্লাহ (সা.) সহচরদের যেমন সাহাবি বলা হয়, হজরত ইসা (আ.)-এর সহচরদের তেমনই বলা হয় হাওয়ারি। হাওয়ারিরা যখন হজরত ইসা (আ.)-কে বললেন, ‘আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, তিনি যেন আমাদের জন্য আসমান থেকে একটি খাবারে ভরা দস্তরখান নাজিল করেন। ইসা (আ.)-এর দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন এবং তাদের কাছ থেকে ওয়াদা নেন। সেই সঙ্গে এই ধমক দেন যে, কেউ ওয়াদা ভঙ্গ করলে তাকে কঠিন আজাব ভোগ করতে হবে। ফলে দস্তরখান এই ঘটনা ও এই ওয়াদার প্রতীক হয়ে যায়। আর সুরাটিতে যেহেতু এই ঘটনা ও ওয়াদার কথা এসেছে, বা দস্তরখান নামেই সুরাটির নামকরণ করা হয়েছে।

সুরা মায়িদা পবিত্র কোরআনের পঞ্চম সুরা। ষষ্ঠ হিজরিতে হুদাইবিয়ার চুক্তির পর মদিনায় অবতীর্ণ। ১৬ রুকু, ১২০ আয়াত। এতে ধর্মীয়, নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নির্দেশনা রয়েছে। হজের সময় হালাল-হারাম, অজু, গোসল ও তায়াম্মুম, মদ্যপান, জুয়া সম্পর্কে বিধান রয়েছে। মরিয়মপুত্র ঈসা ও হাওয়া বিবির উল্লেখ করা হয়েছে।

এই সুরার কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু হলো চুক্তি ও অঙ্গীকার পালন। এ ছাড়াও এসেছে হালাল-হারাম খাবার, পানীয়, শিকার ও জবাইকৃত পশু, বিয়ে ও পরিবার, কসম ও কাফফারা, ইবাদত, বিচার, দণ্ডবিধি ও সাক্ষ্য, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মুসলিমদের সম্পর্কের রূপরেখা।

সুরাটিতে ইসলামি শরিয়াহর মূলনীতিগুলো—অর্থাৎ দীন, প্রাণ–জ্ঞান-বুদ্ধি, সম্মান ও সম্পদের সুরক্ষা ইত্যাদি—তুলে ধরা হয়েছে।

প্রাণের সুরক্ষা সম্পর্কে বলা হয়েছে, মানুষের জীবন সংহার করা হারাম। বলা হয়েছে, ‘এ কারণেই বনি ইসরাইলের ওপর আমি এ বিধান দিলাম যে হত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্য করা হেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন তাতে পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারও প্রাণরক্ষা করলে সে যেন তাতে পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল । তাদের কাছে তো আমার রসূলরা স্পষ্ট প্রমাণ এনেছিল, কিন্তু এরপরও পৃথিবীতে অনেকেই সীমালঙ্গনকারী রয়ে গেল।’ (আয়াত: ৩২)

সম্মান সুরক্ষা নিয়ে এ সুরায় বলা হয়েছে, ‘আজ তোমাদের জন্য সব ভালো জিনিস হালাল করা হলো। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের খাদ্যদ্রব্য তোমাদের জন্য হালাল, আর তোমাদের খাদ্যদ্রব্য তাদের জন্য হালাল করা হলো। এবং বিশ্বাসী সচ্চরিত্রা নারী ও তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের সচ্চরিত্রা নারী। তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো, যদি তোমরা তাদেরকে মোহর প্রদান করো বিয়ের জন্য, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা উপপত্নী গ্রহণের জন্য নয়। যে-কেউ বিশ্বাস করতে অস্বীকার করবে তার কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে আর সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আয়াত: ৫)

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের আগে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের ধর্মকে হাসি-তামাশা ও খেলনা ভাবে তাদেরকে এবং অবিশ্বাসীদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ কোরো না। আর যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে আল্লাহকে ভয় করো।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত ৫৫-৫৮, কোরানশরিফ: সরল বঙ্গানুবাদ, অনুবাদ: মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন