মেরুদণ্ড ভঙ্গকারী

 পুণ্যবানদের জীবনে সুরা নিসা কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল, সে সম্পর্কে অনেক গল্প ও হাদিস আছে। তবে শুরুতে প্রিয় একটি হাদিস সবার সঙ্গে ভাগ করে নিই।

একবার রাসুল (সা.) আবু বকর সিদ্দিককে (রা.) বললেন, ‘হে আবু বকর, আপনি কি চান যে আমি আপনাকে আমার প্রতি অবতীর্ণ একটি আয়াত বলি?’ স্পষ্টতই আবু বকর (রা.) বললেন, ‘হ্যাঁ, বলুন আল্লাহর রাসুল আপনার প্রতি কি নাজিল হয়েছে?’ তখন রাসুল (সা.) সুরা নিসার ১২৩ নম্বর আয়াত পড়ে শোনালেন, ‘যে মন্দ কাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেওয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোনো অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।’ [৪: ১২৩]

সুতরাং এটি একটি অত্যন্ত ভীতিকর আয়াত: প্রত্যেককেই তাদের পাপের শাস্তি পেতে হবে। আবু বকর (রা.) এই আয়াত শোনার পর বলেন, ‘আমার মনে হলো আমার পিঠ ভেঙে গেছে, আমার সারা শরীর সংকুচিত হয়ে গেছে।’ আবু বকর (রা.) কাঁদতে লাগলেন আর বলতে লাগলেন, ‘মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলার মতো আয়াত চলে এসেছে, মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলার মতো আয়াত চলে এসেছে...।’

রাসুল (সা.) আবু বকরকে (রা.) আতঙ্কিত হতে দেখে বললেন, ‘আবু বকর আপনার কী হয়েছে?’ আবু বকর (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের মধ্যে কে খারাপ কাজ করে না? আমাদের মধ্যে কে নিষ্পাপ? আল্লাহ সত্যিই আমাদের প্রতিটি পাপের জন্য শাস্তি দেবেন?’

তাই রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে আবু বকর, আপনি, সাহাবিগণ এবং অন্য বিশ্বাসীরা আপনাদের পাপের জন্য এই পৃথিবীতেই তার প্রতিদান বা শাস্তি পাবেন, যতক্ষণ না আপনারা সম্পূর্ণ পাপমুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘অন্যরা অর্থাৎ পাপীরা তাদের সংগৃহীত সব খারাপ কাজ নিয়ে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এবং বিচার দিবসে তাদের প্রতিটি পাপ কাজের হিসাব নেওয়া হবে এবং এর জন্য তাদের শাস্তি পেতে হবে।’

 রাসুল (সা.) আবু বকরকে (রা.) খুব শক্তিশালী কিছু কথা বলছেন এবং এটি আমাদের বিশ্বাসের একটি ধারণা। এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আল্লাহ একজন বিশ্বাসীকে তার স্বাস্থ্য, তার সম্পদ, এবং তার যা কিছু আছে তা দিয়ে পরীক্ষা করবেন যতক্ষণ না সে সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র হয় এবং আমলনামায় কোনো ধরনের পাপের রেকর্ড ছাড়াই আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারে। 

প্রতিটি অসুস্থতা, প্রতিটি উদ্বেগ—আপনার কাছে আসবে এবং এগুলো হবে আপনার জন্য শুদ্ধির একটি উপায়, পরিশুদ্ধির উৎস। তাই এই পরীক্ষাগুলোকে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে ব্যবহার করুন। জীবনে চলার পথে কষ্ট এবং পরীক্ষাকে আলিঙ্গন করে নিন, যাতে আশা করা যায় আপনি আপনার পাপের পরিণতি এই দুনিয়ায় ভোগ করবেন, পরকালে নয়।

আল্লাহর প্রতি সাহাবাদের ভয়টা একবার লক্ষ করে দেখুন। আবু বকরের (রা.) মতো ব্যক্তি, যিনি পৃথিবীর বুকে হেঁটে যাওয়া সর্বকালের সর্বোত্তম মানুষদের একজন—এই আয়াতটা শুনে কতটা ভীত হয়েছিলেন। যখনই তিনি আয়াতটা শুনতেন, তখনই বলতেন পিঠ ভেঙে ফেলার মতো আয়াত চলে এসেছে, পিঠ ভেঙে ফেলার মতো আয়াত চলে এসেছে...

আমরা আশা করি, আল্লাহ যেন আমাদের এমন বোঝা না দেন, যা আমরা বহন করতে পারব না। আমাদের মর্যাদাকে উন্নীত করবেন এবং আমাদের কোরআনের মানুষে পরিণত করবেন।

অনুবাদ: ফাহমিনা হাসানাত