গুহা সম্পর্কিত সুরার শানে নজুল: ৭

ওদের ওইসব কথাবার্তা সম্পর্কে আল্লাহ্‌ আরও বলেছেন, ‘তোমার আগে আমি যে দূত পাঠিয়েছিলাম, তারাও আহারাদি করত, হাটে-বাজারে যেত। আমি তোমাদের মধ্যে কোনো কোনো জনকে অপরের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ তৈরি করে পাঠিয়েছি। তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে কি? তোমার প্রভু সব দেখেন।’ অর্থ, তোমাদের একজনকে অন্যের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ তৈরি করেছি, যাতে তোমরা দৃঢ় হতে পারো। আমি যদি চাইতাম যে, সমস্ত পৃথিবী আমার রাসুলের পক্ষে চলে আসবে, যাতে কেউ তার বিরোধিতা করতে না পারে, আমি তা-ও করতে পারতাম।

আবদুল্লাহ্‌ ইবনে উমাইয়ার বক্তব্য সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেছেন, ‘এবং তারা বলেছে, “তোমাতে আমরা কখনো বিশ্বাস স্থাপন করব না, যতক্ষণ না তুমি আমাদের জন্য ভূমি থেকে এক প্রস্রবণ নির্গত করাও, তোমার খেজুরের বা আঙুরের এক বাগান হবে এবং তার ফাঁকে ফাঁকে তুমি অজস্র ধারায় প্রবাহিত করবে নদীনালা, অথবা তোমারই কথা অনুযায়ী আকাশকে খণ্ড-বিখণ্ড করে আমাদের ওপর ফেলবে অথবা আল্লাহ্‌ ও ফেরেশতাদের আমাদের সামনে উপস্থিত করবে, অথবা তোমার একটি স্বর্ণনির্মিত গৃহ হবে, অথবা তুমি আকাশে আরোহণ করবে কিন্তু তোমার আকাশ আরোহণ আমরা কখনো বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ তুমি আমাদের জন্য এক কিতাব অবতীর্ণ না করবে, যা আমরা পাঠ করব।” আপনি বলুন, “পবিত্র মহান আমার প্রভু। আমি তো কেবল একজন মানুষ, একজন রাসুল।”’

ওরা বলেছিল, ‘আল-ইয়ামামার রহমান নামের এক লোক তোমাকে এসব কথাবার্তা শিখিয়ে দেয় বলে আমরা শুনেছি। ওর কথা আমরা কোনো দিন বিশ্বাস করব না।’ এ সম্পর্কে আল্লাহ্‌ বলেছেন, ‘অতীতে যেমন পাঠিয়েছি, তেমনি আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এক জাতির প্রতি, যার আগে বহু জাতি গত হয়েছে, পাঠিয়েছিলাম তাদের কাছে সেই কথা বলার জন্য, যে কথা তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করছি। তবু তারা দয়াময়কে অস্বীকার করে।’ বলুন, ‘তিনিই আমার প্রভু, যিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ নেই। তাঁরই ওপর আমি নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন হবে তাঁরই কাছে।’

আবু জেহেলের কথা ও বক্তব্যের বিষয়ে আল্লাহ্‌ বলেছেন, ‘সে যখন তার দাসকে নামাজ পড়ার সময় নামাজ পড়তে নিষেধ করে, তখন তাকে দেখেছ? তুমি কি দেখেছ, ও যথার্থ পরিচালিত হচ্ছিল কি না, অথবা আল্লাহ্‌র ভয়ে হুকুম জারি করেছিল কি না? সে মিথ্যা বলেছিল কি না, পশ্চাদপসরণ করেছিল কি না, তুমি দেখেছ? সে কি জানে না যে আল্লাহ্‌ সব দেখেন? যা সে করছে, তা করা যদি সে বন্ধ না করে, তাহলে আমরা তার কপালের চুল ধরে টেনে আনব, সেই মিথ্যাবাদী পাপাচারী চুলগুলো। ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ডাকুক না, আমরা ডাকব দোজখের প্রহরীদের। তুমি নিশ্চয়ই তার কথা শুনবে না। তুমি সেজদা করো, তোমার প্রভুর কাছে এসো।’

তাদের টাকাপয়সা সম্পর্কে রাসুলের (সা.) কাছে তারা যে প্রস্তাব দিয়েছিল, সে বিষয়ে আল্লাহ্‌ প্রত্যাদেশ করেছেন, ‘বলুন, আমি তোমাদের কাছে কোনো পুরস্কার চাই না, সে সম্পদ তোমাদের থাক। আমার পুরস্কার কেবল আল্লাহ্‌র চিন্তা এবং তিনি সমস্ত কিছুই প্রত্যক্ষ করেন।’

রাসুলে করিম (সা.) তাদের কাছে সত্য আনয়ন করলেন। সে যে সত্য, তা তারা বুঝতে পারল। তারা বুঝল, তিনি একজন প্রেরিত পুরুষ, অনেক অজ্ঞাত সংবাদ তিনি নিয়ে এসেছেন তাদের কথামতো। কিন্তু তখন তাদের হিংসা হলো, ফলে সেই সত্য তারা স্বীকার করল না, তারা আল্লাহ্‌র বিরুদ্ধে দুর্বিনীত হয়ে গেল, প্রকাশ্যে তাঁর নির্দেশকে তাচ্ছিল্য করতে লাগল, আশ্রয় নিল বহু-ঈশ্বরবাদের সীমার ভেতরে।

ওদের একজন বলল, ‘ওই সব কোরআনের কথা শুনবে না। ওটাকে বাজে জিনিস বলে ধরে নাও, তাহলেই ওটা বুঝতে কোনো অসুবিধা হবে না।’ তার অর্থ, ওটাকে বাজে এবং মিথ্যা বলে ধরে নাও, ধরে নাও ওটা উন্মাদের প্রলাপ—তাহলেই তোমার সুবিধা হবে। আর যদি এ নিয়ে কখনো ওর সঙ্গে এক করো, যুক্তি দেখাও, তাহলে সুবিধা পাবে ও।

অনুবাদ: শহীদ আখন্দ

প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ বই থেকে