আসলুম গোত্রের প্রখর স্মৃতিসম্পন্ন এক ভদ্রলোক আমার কাছে বলেছিলেন, আস-সাফাতে রাসুলে করিমের (সা.) পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আবু জেহেল রাসুলে করিমকে (সা.) খুব অপমান করে এবং তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে। তাঁর ধর্ম সম্পর্কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলে এবং তাঁর নামে কলঙ্ক রটানোর চেষ্টা করে। রাসুলে করিম (সা.) একটি কথাও বলেননি তার সঙ্গে। আবদুল্লাহ্ ইবনে জুদান ইবনে আমর ইবনে কাব ইবনে সাদ ইবনে তায়ম ইবনে মুররার এক মুক্তি পাওয়া দাস তখন তাদের বাড়িতে ছিল। সে সমস্ত অপমানের ভাষা স্বকর্ণে শুনল।
আবু জেহেল চলে গেলে পরে সেই মুক্ত দাস ছুটে গেল কাবার কাছে। ওখানে কোরাইশরা বসে জটলা করছিল। ওখানে গিয়ে বসল সে। কিছুক্ষণ পর ওখানে হাজির হলেন হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিব। তাঁর কাঁধে ঝোলানো তির-ধনুক। শিকার থেকে ফিরছেন হামজা। শিকার তাঁর প্রিয় নেশা। শিকার থেকে কোনো দিন সরাসরি বাড়ি ফিরতেন না, আগে কাবা তওয়াফ করতেন। আজও কাবা তওয়াফ করে ওখানে জমায়েত কোরাইশদের কাছে এসে থামলেন, সালাম জানিয়ে ওদের সঙ্গে গল্পগুজব শুরু করলেন। হামজা ছিলেন কোরাইশদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তসমর্থ মানুষ। যেমন শক্তিশালী, তেমনি জেদি।
রাসুলে করিম (সা.) তখন বাড়ি চলে গেছেন।
হামজার সঙ্গে পথে দেখা হলো সেই মুক্ত দাসের। হামজাকে সে জিজ্ঞেস করল, আবুল হাকাম ইবনে হিশাম [আবু জেহেল] তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র মুহাম্মদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তার খবর তিনি জানেন কি না। রাসুলে করিম (সা.) বসা ছিলেন। ওখানে সে তাঁকে অপমান করল, অভিসম্পাত দিল, গালিগালাজ করল। জবাবে রাসুলে করিম (সা.) একটি কথাও বলেননি। সব শুনে রাগে আগুন ধরে গেল হামজার শরীরে। কারণ, আল্লাহ্ তাঁকে ইজ্জত দিয়েছেন। শুনেই তিনি দৌড় দিলেন। কোনো দিকে তাকালেন না, কাউকে সালাম পর্যন্ত জানালেন না, তিনি আবু জেহেলকে ধরবেন, তারপর অন্য কথা। আবু জেহেলকে ধরবেন, শাস্তি দেবেন, তার আগে অন্য কোনো কথা নয়। কাবা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখলেন অন্য লোকজনের মধ্যে আবু জেহেল বসে আছে। ওর একেবারে কাছে গিয়ে গা ঘেঁষে তিনি দাঁড়ালেন। ধনু হাতে নিয়ে তা দিয়ে ওর ওপর লাগিয়ে দিলেন এক ঘা, বললেন, ‘আমি যদি ওর ধর্ম গ্রহণ করি, ওকে অপমান করতে পারবে তুমি? যা ওকে বলেছিলে, বলতে পারবে? আমি তোমাকে মারলাম, তুমি পাল্টা আমাকে মারো দেখি, মুরোদ কত!’
বনু মাখজুমের কিছু লোক উঠে দাঁড়াল। ওরা আবু জেহেলকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেল। কিন্তু আবু জেহেলই তখন বলে উঠল, ‘না, আবু ওমরাকে [হামজা ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে] আপনারা বাধা দেবেন না। আল্লাহ্র কসম, আমি তার ভাতিজাকে ভীষণ অপমান করেছি।’
হামজার ইসলাম গ্রহণ পূর্ণ হলো। তিনি রাসুলে করিমের (সা.) নির্দেশ মেনে চলতে শুরু করলেন। হামজা মুসলমান হয়ে গেলেন। কোরাইশরা বুঝতে পারল, রাসুলে করিমের (সা.) হাত মজবুত হচ্ছে, হামজার মধ্যে তাঁর শক্তি ও আশ্রয় নিহিত হয়েছে। কাজেই তারা হাল ছেড়ে দিল। তাঁকে হয়রানির কিছু কিছু পথ তারা ত্যাগ করল।
অনুবাদ: শহীদ আখন্দ
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ বই থেকে