সাইয়িদা খাদিজা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী। তিনিই ইসলামে প্রথম ঈমান এনেছেন। প্রথম দান-সাদাকা করেছেন। প্রথম অজু করেছেন। প্রথম নামাজ আদায় করেছেন। উম্মতে মুহাম্মাদির মধ্যে পেয়েছেন প্রথম জান্নাতের সুসংবাদ। (বুখারি, হাদিস: ৩,৮২০) খাদিজা (রা.) ছিলেন রাসুলুল্লাহকে (সা.) প্রথম সমর্থন দেওয়া নারী।
আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে লক্ষ্য করে একবার বলেছিলেন, ‘আল্লাহ–তায়ালা আমাকে খাদিজার চেয়ে উত্তম বিকল্প দান করেননি। কারণ মানুষ যখন কুফরি করেছে, খাদিজা তখন আমার প্রতি ঈমান এনেছে। মানুষ যখন আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, খাদিজা তখন আমাকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছে। মানুষ যখন আমাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করেছে, সে তখন নিজের সম্পদ নিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। কুরাইশ নারীদের সন্তানরা যখন আমাকে বঞ্চিত করছিল, আল্লাহ তখন আমাকে খাদিজার গর্ভে সন্তান দান করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৪,৮৬৪)
বিয়ের পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সংসারে এসে নিজেকে পূর্ণভাবে সঁপে দিয়েছিলেন খাদিজা (রা.)। পূর্ণভাবে ব্যবসায় মনোযোগী একজন নারী নিজেকে বানিয়ে নিয়েছিলেন ঘরের কেন্দ্রবিন্দু। ব্যবসার সব দায়িত্ব এবং সব ধনসম্পদ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাতে অর্পণ করেছিলেন। খাদিজা (রা.) সম্ভাব্য সব উপায়ে রাসুলুল্লাহকে (সা.) সহযোগিতা করতে সচেষ্ট ছিলেন। অন্য কোনো কোনো স্ত্রী প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সন্তোষের কিছু ঘটনা জানা গেলেও খাদিজার সঙ্গে এমন তথ্য পাওয়া যায় না। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ–তায়ালা আমাকে খাদিজার চেয়ে উত্তম বিকল্প দান করেননি।’ (সীরাত বিশ্বকোষ, ২/১৩৮)
ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (র.) তাফসিরে ফঅরুর রাজিতে সুরা দোহার ৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় একটি বর্ণনা তুলে ধরেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার খাদিজা (রা.)-র কাছে বিষণ্ন মুখে এলেন। খাদিজা জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার কী হয়েছে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘দুর্ভিক্ষ চলছে। আমি তোমার সম্পদ খরচ করতে থাকলে তো একদিন সব শেষ হয়ে যাবে। এটা আমার জন্য লজ্জার। আর যদি সম্পদ না ব্যয় করি, (তাহলে মানুষের জন্য খরচ করব কীভাবে?) আমি তো আল্লাহকে ভয় করি।’
এ কথা শুনে খাদিজা (রা.) কুরাইশের বড় নেতাদের ডাকলেন। আবু বকর সিদ্দিক (রা.)–ও সেখানে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘খাদিজা তার যত দিনার ছিল, সব বের করে আমাদের সামনে রাখতে লাগলেন। এর পরিমাণ এত বেশি ছিল যে আমার সামনে বসা লোকটিকে দিনারের প্রাচুর্য্যে দেখতে পাচ্ছিলাম না।’
এরপর খাদিজা (রা.) বললেন, ‘আপনারা সবাই সাক্ষী; আজ থেকে মুহাম্মাদ (সা.) এই সম্পদের মালিক। তিনি চাইলে এগুলোর কিছু ব্যয় করতে পারেন, চাইলে রেখেও দিতে পারেন।’ (তাফসীরে ফাখরুর রাজি. খণ্ড ৩১, পৃষ্ঠা ২১৯, সুরা দোহার ৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)