মক্কাবাসী আবদুল্লাহ্ ইবনে আবু নাজিহ, সাহাবি আতা ও মুজাহিদ অথবা অন্যান্য হাদিসবেত্তার সূত্রে বলেছেন, উমরের ধর্মান্তর সম্পর্কে তিনি নিজে যা বলতেন, তা হলো এরূপ:
আমি ইসলাম থেকে অনেক দূরে ছিলাম। সেই ধর্মবিহীন সময়ে আমি ছিলাম এক মদখোর মাতাল, দিনরাত মদে চুর হয়ে থাকতাম। তা আমার খুব ভালো লাগত। আমি বেশ ফুর্তিতে ছিলাম। আল-হাজওয়ারায় আমাদের একটা আড্ডা ছিল, ওখানে যেত সব কোরাইশ। জায়গাটা ছিল উমর ইবনে আবদ ইবনে ইমরান আল-মাখজুমির বাড়ির কাছে। একদিন রাতে আমি ওখানে গেলাম। আশা ছিল, ওখানে আমার প্রাণের দোসরদের পাব। কিন্তু গিয়ে দেখলাম, কেউ নেই ওখানে। ভাবলাম, ঠিক আছে, কী যেন নাম এক মদবিক্রেতার, তখন মদ বিক্রি করত, তার কাছে যাব, ওর কাছ থেকেই কিছু মদ কিনে খাব। ওখানে গিয়ে তাকেও পেলাম না। তখন ভাবলাম, তাহলে কাবাঘরের চারপাশে সাত কি সত্তর বার তওয়াফ করলে মন্দ হয় না।
মসজিদে এলাম, তওয়াফ করব, দেখি রাসুলে করিম (সা.) নামাজ পড়ছেন দাঁড়িয়ে। সিরিয়ার দিকে মুখ তাঁর। তাঁর এবং সিরিয়ার মাঝখানে ছিল কাবা শরিফ। তিনি ছিলেন হাজরে আসওয়াদ এবং দক্ষিণ কোণের মাঝখানে। ওঁকে দেখে ভাবলাম, ঠিক আছে, একটু শুনেই দেখি না মুহাম্মদ কী বলেন? শোনার জন্য ওঁর কাছে এলে তিনি ঘাবড়ে যাবেন। তাই আমি হিজরের দিক থেকে আড়াল দিয়ে দিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে চলে এলাম। ইতিমধ্যে মুহাম্মদ (সা.) নামাজের সুরা আবৃত্তি করছেন, আমি তাঁর কিবলার কাছে চলে এলাম। আমার ঠিক সামনেই তিনি, শুধু কাবার আড়াল। কোরআন পাঠ শোনার পর আমার মন নরম হয়ে গেল, আমি কেঁদে ফেললাম এবং তখনই ইসলাম প্রবেশ করল আমার অন্তরে। আমি ওখানে কিন্তু দাঁড়িয়েই রইলাম।
একসময় রাসুলের (সা.) নামাজ শেষ হলো। তিনি চলে গেলেন। যাওয়ার সময় তিনি যেতেন আবু হুসায়নের বাড়ির পাশ দিয়ে। সেটা তাঁর পথেই পড়ত। তাতে করে হাজিদের সাফা-মারওয়ায় দৌড়ানোর পথ তাঁকে পার হয়ে যেতে হতো। তারপর তিনি যেতেন আব্বাস আর ইবনে আজহার ইবনে আবদু আউফ আল-জুহরির বাড়ির মাঝখান দিয়ে। তারপর আল-আখনাস ইবনে শারিকের বাড়ির পাশ দিয়ে গিয়ে তিনি নিজের বাড়িতে ঢুকতেন। তাঁর বাসস্থান ছিল আল-দারুল রাকতায়। এটি ছিল মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের জিম্মায়। আমি তাঁকে অনুসরণ করে যেতে লাগলাম। যখন তিনি আব্বাস আর ইবনে আজহারের বাড়ির মাঝখানে, আমি তাঁকে ধরে ফেললাম।
আমার গলা তিনি চিনলেন। ভাবলেন, আমি তাঁকে অনুসরণ করেছি তাঁর সঙ্গে কোনো দুর্ব্যবহার করার জন্য। তাই তিনি তেড়ে উঠলেন, বললেন, ‘এমন সময় আপনি এখানে!’ আমি জবাব দিলাম, ‘আমি আল্লাহ্, তাঁর রাসুল এবং তাঁর আনীত জিনিসের ওপর ইমান আনার জন্য এসেছি।’ তিনি আল্লাহ্কে তক্ষুনি শোকরিয়া জানালেন। বললেন, “আল্লাহ্ আপনাকে হেদায়েত করেছেন।” তিনি আমার বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করলেন। প্রার্থনা করলেন যাতে আমার ঈমানের শক্তি অটুট থাকে। তারপর আমি চলে এলাম আমার পথে। তিনি চলে গেলেন নিজ বাড়িতে।’ আসল সত্য কে কি তা আল্লাহ্ জানেন।
অনুবাদ: শহীদ আখন্দ
প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘সিরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.)’ বই থেকে