ধনসম্পদ আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সম্পদশালী করেন বা গরিব রাখেন। আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা এবং অসহায়ের পাশে দাঁড়ানো সম্পদশালীর দায়িত্ব। আল্লাহর রাস্তায় বা মানুষের উপকারে ব্যয় না করে কার্পণ্য করা হারাম। কেউ তা করলে তাঁকে জাহান্নামের ভয় দেখানো হয়েছে।
সুরা মুহাম্মদ পবিত্র কোরআনের ৪৭তম সুরা। এই সুরা মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছিল। ৩৮ আয়াতবিশিষ্ট সুরা মুহাম্মদে মুমিন ও কাফেরদের মধ্যে চিরসংঘাত এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্বাসীদের সাহায্য, মুত্তাকিদের পুরস্কার, জিহাদ, আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয়ের কথা বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি কৃপণতা করতে নিষেধ করা হয়েছে।
কৃপণতার কারণে প্রাচীন বহু জাতি ধ্বংস হয়েছিল। নবীজি (সা.) উম্মতদের এ অভ্যাস ছাড়ার তাগিদ দিয়েছেন। তিনি কৃপণতা থেকে আল্লাহর কাছে মুক্তি চাইতেন। কারণ কৃপণতা আল্লাহ পছন্দ করেন না। মুমিনকে যেমন মিতব্যয়ী হতে হয়। অমিতব্যয়িতা ও কৃপণতা দুটেই মন্দ। আল্লাহ বলেছেন, ‘দেখো, তোমরাই তারা যাদের আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে, অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছ; যারা কার্পণ্য করে তারা কার্পণ্য করে নিজেদেরই প্রতি। আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত, যদি তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো তাহলে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন; তারা তোমাদের মতো হবে না।’ (সুরা মুহাম্মদ, আয়াত: ৩৮)
এই সুরার আরেক নাম ‘ক্বিতাল’। সুরাটির ২ ও ২০ আয়াতের আলোকে ‘মুহাম্মাদ ও কিতাল’ নামে নামকরণ করা হয়। সুরাটি হিজরতের পরে এমন এক সময় মদিনায় নাজিল হয়েছিল, যখন যুদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল বটে, কিন্তু কার্যত যুদ্ধ শুরু হয়নি।
সুরাটির প্রথমে বলা হয়েছে, দুটি দলের মধ্যে মোকাবিলা হচ্ছে। তাদের একটি সত্যকে মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অন্য দলটি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে তাঁর বান্দা মুহাম্মদ (সা.)–এর ওপর সত্য নাজিল হয়েছিল, তা মেনে নিয়েছিল। আল্লাহ এই সুরায় বলেছেন, প্রথম দলটির সব চেষ্টা তিনি নিষ্ফল করে দিয়েছেন, আর দ্বিতীয় দলটির অবস্থা সংশোধন করে দিয়েছেন।
অবিশ্বাসীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তারা আল্লাহর সাহায্য ও দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত। ইমানদারদের বিরুদ্ধে তাদের কোনো প্রচেষ্টাই কার্যকর হবে না। তারা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত খারাপ পরিণতির সম্মুখীন হবে। তারা আল্লাহর নবীকে মক্কা থেকে বের করে দিয়ে ভেবেছিল বিরাট সফলতা পেয়েছে। অথচ তা করে আসলে তারা নিজেদের জন্য বিপুল ধ্বংসই ডেকে এনেছে।
এ সুরায় মক্কার কাফেরদের ধ্বংসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে মদিনার মুনাফিকদের চক্রান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।