কাবা শরিফের পাশেই আছে স্ফটিকের একটা বাক্স। তার চারপাশে লোহার বেষ্টনী। তার ভেতরে বর্গাকৃতির একটি পাথর। পাথরটির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা সমান, প্রায় এক হাত। এই পাথরই মাকামে ইব্রাহিম।
মাকাম শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে দাঁড়ানোর স্থান। অর্থাৎ এটি হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর দাঁড়ানোর স্থান। এই পাথরে দাঁড়িয়ে তিনি ঠিক কী করতেন তা নিয়ে মতভেদ আছে। তবে যা সবচেয়ে বেশি প্রচলিত তা হলো, তিনি এর ওপর দাঁড়িয়ে কাবা শরিফ নির্মাণ করেছেন।
পাথরটির মাঝখানে একজোড়া পায়ের ছাপ আছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিশ্বাস করে, হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মোজেজার কারণে শক্ত পাথরটি ভিজে তাতে তাঁর পায়ের দাগ বসে গেছে। সেখানে আজও সেই ছাপ দেখা যায়।
তামা আর আয়নার তৈরি বাক্সে রাখার আগ পর্যন্ত মানুষেরা পাথরটি হাত দিয়ে ধরার সুযোগ পেত। এখন পাথরটি শুধু দেখা যায়, ধরা যায় না। মানুষের হাতের স্পর্শে ও জমজমের পানি দিয়ে ধোয়ায় পাথরটির ভেতরে কিছুটা ডিম্বাকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
চার হাজার বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হওয়ার পর মাকামে ইব্রাহিমে পায়ের চিহ্ন এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। ওপরে প্রতিটি ছাপের দৈর্ঘ্য ২৭ সেন্টিমিটার, প্রস্থ ১৪ সেন্টিমিটার। পাথরের নিচের অংশে রুপাসহ প্রতিটি পায়ের দৈর্ঘ্য ২২ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ১১ সেন্টিমিটার। দুই পায়ের মধ্যে ব্যবধান প্রায় এক সেন্টিমিটার। পাথরটিতে পায়ের দাগের গভীরতা পাথরটির উচ্চতার অর্ধেক, অর্থাৎ ৯ সেন্টিমিটার। দীর্ঘদিন ধরে লাখ লাখ মানুষের হাতের স্পর্শে আঙুলের চিহ্নগুলো মুছে গেছে। তবে ভালো করে খেয়াল করলে এখনো আঙুলের ছাপ বোঝা যায়। বোঝা যায় পায়ের গোড়ালির চিহ্ন।
আগে এই পাথরটি প্রয়োজনে স্থানান্তরিত করা যেত। জাহেলি যুগে লোকেরা বন্যার ভয়ে মাকামে ইব্রাহিমকে কাবা শরিফের মঞ্চে লাগিয়ে রাখত। হজরত উমর (রা.)-এর সময় এটিকে সরিয়ে বর্তমান জায়গায় বসানো হয়। মাকামে ইব্রাহিমের পাথরটিকে একটি মিম্বরের ওপর তুলে রাখা হয়েছে, যেন বন্যার পানি এর নাগাল না পায়।
যুগে যুগে বহু শাসক মাকামে ইব্রাহিম সংরক্ষণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। ১৬০ হিজরিতে খলিফা মুহম্মদ মাহদি হজে এসে মাকামে ইব্রাহিমের পাথরটিকে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত রুপা দিয়ে মজবুত করে মুড়িয়ে দেন।