দাউদ (আ.)-এর মতো রোজা রাখা

আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)–এর একজন সাহাবি। তিনি অনেক ইবাদত-বন্দেগি করতেন, প্রতিদিন রোজা রাখতেন। আর সারা রাত কোরআন তিলাওয়াত করতেন। একদিন নবীজির (সা.) কাছে কেউ তার ইবাদত-বন্দেগি সম্পর্কে জানাল। নবীজি (সা.) তাঁকে ডেকে পাঠালেন। তিনি নবীজির (সা.) ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁর মজলিশে উপস্থিত হলেন।

নবীজি (সা.) বললেন, আমি জানতে পারলাম, তুমি নাকি প্রতিদিন রোজা রাখো। আর প্রতিরাতেই সারা রাত কোরআন তিলাওয়াত করো?

তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর নবী! আমি প্রভূত কল্যাণ লাভ করার উদ্দেশ্যে এমন করে থাকি।

নবীজি (সা.) বললেন, প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা পালন করাই তোমার জন্য যথেষ্ট।

তিনি বললেন, আমি (মাসে) এর চেয়েও বেশি করতে সক্ষম।

নবীজি (সা.) বললেন, এমন কোরো না। কেননা তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। যারা তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসে, তাদেরও তোমার ওপর অধিকার রয়েছে। আর তোমার ওপর তোমার দেহেরও হক আছে। তাই তুমি আল্লাহর নবী দাউদ (আ.)-এর মতো রোজা রাখো। কেননা তিনি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইবাদত করতেন।

তিনি বললেন, আল্লাহর নবী দাউদ (আ.)-এর রোজা কেমন ছিল?

নবীজি (সা.) বললেন, দাউদ (আ.) একদিন রোজা রাখতেন এবং একদিন রোজা রাখতেন না। অর্থাৎ তিনি একদিন পরপর রোজা রাখতেন।

নবীজি (সা.) আরও বললেন, তুমি প্রতি মাসে একবার কোরআন খতম করো। তিনি বললেন, আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়েও বেশি পড়ার সামর্থ্য রাখি।

নবীজি (সা.) বললেন, তা হলে তুমি প্রতি বিশ দিনে একবার কোরআন খতম করো। তিনি বললেন, আল্লাহর নবী! আমি (বিশ দিনে) এর চেয়েও বেশি পড়তে সক্ষম।

নবীজি (সা.) বললেন, তা হলে তুমি প্রতি দশ দিনে একবার কোরআন খতম করো। তিনি বললেন, আল্লাহর নবী! (আমি দশ দিনে) এর চেয়েও বেশি পারি।

নবীজি (সা.) বললেন, তুমি সাত দিন অন্তর কোরআন খতম করো; তবে এর চেয়ে বেশি পড়বে না। কেননা তোমার ওপর তোমার স্ত্রীর হক আছে। তোমার সাক্ষাৎপ্রার্থীদেরও তোমার ওপর হক আছে। আর তোমার শরীরেরও তোমার ওপর হক আছে।

আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, আমি প্রতিদিন রোজা রেখে নিজের ওপর কঠোরতা করেছি। এ কারণেই আমার ওপর কঠোরতা চেপে বসেছে। তিনি আরও বলেছেন, নবীজি (সা.) আমাকে বলেছিলেন, তোমার জানা নেই, হয়তো বা তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করবে তখন তোমার পক্ষে এত বেশি আমল করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

নবীজি যা বলেছিলেন বাস্তবে তা-ই হলো। আমি যখন বৃদ্ধ হলাম তখন অনুশোচনা করে বলতাম, হায়! আমি যদি নবীজির দেওয়া অবকাশটুকু গ্রহণ করতাম! (মুসলিম, হাদিস: ১,১৫৯)