সুরা আহকাফ পবিত্র কোরআনের ৪৬তম সুরা। এই সুরায় আল্লাহর কাছ থেকে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার ঘোষণা দিয়ে একত্ববাদের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে শিরকের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।
মক্কায় অবতীর্ণ ৩৫ আয়াতবিশিষ্ট সুরা আহকাফে আল্লাহর একত্ববাদ, মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাত ও আখিরাত, মক্কার অবিশ্বাসীদের গোমরাহ, জিদ, গর্ব ও অহংকার, গোমরাহির ফলাফল সম্পর্কে কাফিরদের সতর্কবার্তা, মা–বাবার অনুগত বিশ্বাসী সন্তান এবং মা–বাবার অবাধ্য সন্তানের বিবরণ রয়েছে। আদ জাতি এবং তাদের ধ্বংসের ঘটনা, নবী করিম (সা.)–এর মুখে কোরআন শুনে জিনদের মুগ্ধ হওয়ার কাহিনির বর্ণনা রয়েছে।
এক ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে এবং তার পিতামাতার আহ্বান শোনে না। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এমন লোক আছে যে তার পিতামাতাকে বলে, তোমরা কি আমাকে ভয় দেখাতে চাও যে আমাকে আবার ওঠানো হবে, যদিও আমার পূর্বে বহু পুরুষ শেষ হয়েছে আর তাদেরকে আবার ওঠানো হয়নি? তখন তার পিতামাতা আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে বলে, দুর্ভোগ তোমার জন্য, বিশ্বাস করো আল্লাহর কথাই সত্য। কিন্তু সে বলে, এ তো সেকালের উপকথা ছাড়া কিছুই নয়।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত: ১৭)
সবাইকে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে ভাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেউ এ ব্যাপারে চিন্তা করলে সত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। কোরআনে আছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী আর উভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুই আমি যথাযথভাবে নির্দিষ্টকালের জন্য সৃষ্টি করেছি; কিন্তু অবিশ্বাসীরা তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা অবজ্ঞাভরে অস্বীকার করে।’
বলো, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তাদের কথা ভেবে দেখেছ কি? তারা পৃথিবীতে কিছু সৃষ্টি করে থাকলে আমাকে তা দেখাও। অথবা আকাশের সৃষ্টিতে কি তাদের কোনো অংশ আছে। (যদি থাকে) এর সমর্থনে পূর্ববর্তী কোনো কিতাব বা ঐতিহ্যগত কোনো জ্ঞান থাকলে তোমরা তা উপস্থিত করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সুরা আহকাফ, আয়াত: ৩, ৪)
আদ জাতি আল্লাহর নির্দেশ প্রত্যাখ্যান এবং আল্লাহর সঙ্গে কুফুরি করে সেই বিবরণ কোরআনে এসেছে, ‘স্মরণ করো আদদের ভাই হুদের কথা, যার আগে ও পরে সতর্ককারীরা এসেছিল, সে তার আহকাফবাসী সম্প্রদায়কে এ বলে সতর্ক করেছিল, আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা কোরো না। তোমাদের জন্য আমার মহাদিনের শাস্তির ভয় হয়।’
বাবা–মায়ের ব্যাপারে, বিশেষ করে মায়ের ব্যাপারে উপদেশ রয়েছে। কোরআনে আছে, ‘আমি মানুষকে তার মাতাপিতার সঙ্গে ভালো ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। কষ্ট করে তার জননী তাকে গর্ভে ধারণ করেছে, কষ্ট করে তাকে প্রসব করেছে, তার দুধ ছাড়ানো পর্যন্ত ত্রিশ মাস কষ্ট করে তাকে বহন করেছে। ক্রমে সে যখন সমর্থ হয় ও চল্লিশ বছরে পৌঁছে তখন বলে, হে আমার প্রতিপালক। তুমি আমাকে শক্তি দাও, যাতে আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি, আমাকে ও আমার মাতাপিতাকে তুমি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য, আর যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আমার সন্তানসন্ততিকে সৎকর্মপরায়ণ করো, আমি তোমারই দিকে মুখ ফেরালাম ও তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।’ (আয়াত: ১৫)
তারা বলেছিল, তুমি কি আমাদের দেবদেবীদের পূজা থেকে আমাদেরকে বিরত করতে এসেছ? তুমি সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ, তা নিয়ে এসো।’
‘সে বলল, এর জ্ঞান তো কেবল আল্লাহরই, আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি কেবল তা-ই তোমাদের কাছে প্রচার করি। আমি দেখছি, তোমরা তো এক অবুঝ সম্প্রদায়।’ ‘তারপর যখন তারা দেখল এক মেঘ তাদের উপত্যকার কাছে এসে পড়ছে তখন তারা বলতে লাগল, এ মেঘ আমাদের বৃষ্টি দেবে। হুদ বলল, এই তো সেই জিনিস, যা তোমরা তাড়াতাড়ি আনতে চেয়েছ, এ তো এক দারুণ শাস্তির ঝড় বয়ে নিয়ে আসছে।’ ‘আল্লাহর নির্দেশে এ সবকিছু ধ্বংস দেবে। তারপর তাদের পরিণাম এই হলো যে তাদের বসতিগুলো ছাড়া কিছুই রইল না। এভাবে আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ ‘আমি তাদেরকে যে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলাম, তোমাদেরকে তা দিইনি। আমি তাদেরকে দিয়েছিলাম কান, চোখ ও হৃদয়, কিন্তু তাদের কান, চোখ ও হৃদয় তাদের কোনো কাজে আসেনি; কেননা তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করেছিল। যা নিয়ে তারা ঠাট্টা–বিদ্রূপ করত তা-ই তাদের ঘিরে ফেলল।’ (আয়াত: ২১ থেকে ২৬)